ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের ভিন্নমাত্রিক ব্যাখ্যা
নয়া দিগন্ত ২৭ অক্টোবর ২০১৭,শুক্রবার,
আলী রেজা
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে ইসলামের তুলনা নয়,
এখানে করা হয়েছে টপ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের সাথে
পাঁচ স্তম্ভের। বালটিমোরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি
বিল্ডিং রয়েছে, দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্র্রচারপত্রে লেখা [TOP OF THE WORLD].
বিল্ডিংয়ের ছাদে রক্ষিত টেলিস্কোপ দিয়ে সম্পূর্ণ
শহর দেখার সুযোগ রয়েছে। মনে প্র্রশ্ন জাগলঃ এটা কী করে TOP OF THE WORLD হয়?
বিল্ডিংটা বড়জোর ৩৯ তলা, আর এটা কি-না
TOP OF THE WORLD? বিশ্বে ১০১ তলা বিল্ডিং থাকার পরও এই পুচকি বিল্ডিং কে কিভাবে TOP OF THE WORLD বলা যায়। বিষয়টা তাহলে কী? আর চুপ থাকা সম্ভব হলো না। প্র্রশ্ন করে জানতে পারলাম এই বিল্ডিং চার কোণা আকৃতির নয়, এটা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু PENTAGONAL
BUILDING, , আর সে জন্য এই নামকরণ।
মূলত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একদম ভুল ব্যাখ্যা
সাধারণ জনমনে প্রচলিত। প্রচলিত ধারণা এই
পাঁচটি কাজ বা দায়িত্ব পালনের নাম ইসলাম।
আসলে হাদিসে উপমাটি দিয়ে ইসলামকে একটি
বাড়ির সাথে তুলনা করে বলা হয়: স্তম্ভ ছাড়া
যেমন কোনো বাড়ির কল্পনা সম্ভব নয়, তেমনি ইসলাম পাঁচ (ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত) স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন আসেঃ শুধু স্তম্ভ থাকলেই কি বাড়ির অস্তিত্ব বাস্তবে কল্পনা করা যায়? বাড়ির পরিপূর্ণতার জন্য দরকার ছাদ, দেয়াল, জানালা-দরজা, আসবাবপত্র, রান্নাঘর, শয়নকক্ষ আরো কত কি? এ সব কিছু মিলেই না হয় একটা বাড়ি! তবে সব কিছুর আগে দরকার স্তম্ভ, যার ওপর গড়ে উঠবে বাড়িটি। ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সামগ্রিক ইসলামের বুনিয়াদ বা ভিত। কুরআনে একটি আয়াতও পাওয়া যাবে না যেখানে বলা হয়েছে, এই পাঁচটি কাজের মাধ্যমে জান্নাত
পাওয়া যাবে? কুরআন পাকে জান্নাতে যাওয়ার
শর্ত হিসেবে যত আয়াত দেখা যায়, সেগুলোতে
আরো একটি গুণের অধিকারী হতেই হবে জান্নাত
লাভের জন্য। না হলে জান্নাত কপালে জুটবে না।
জান্নাত লাভের জন্য তাকে অবশ্যই সৎকর্মশীল
হতেই হবে। মূলত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের
লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সৎকর্মশীল হিসেবে তৈরি
করা। জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে বিশ্বাসের সাথে
সর্বত্র সৎকর্মের কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে। জান্নাত
লাভের সব আয়াতেই বিশ্বাসের সাথে সৎকর্মশীল
হওয়াটা জরুরি ধরা হয়েছে।
‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির
সেরা। তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে ঝরনা প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে।’ [৯৮(৭,৮)‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে; বরং বড় সৎকাজ হলো এই ঈমান আনবে আল্লাহর
ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের
ওপর এবং সব নবী-রাসূলের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির- ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা
নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দান করে এবং যারা
কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী, তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী আর তারাই পরহেজগার।’ [2 (১৭৭)]
‘যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যই
করে, আর যে অসৎ কর্ম করে, তা তার ওপরই
বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি
মোটেই জুলুম করেন না’। [৪১(৪৬)]
‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, তাদের
জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।’ [৪১(৮)]
জান্নাত লাভের জন্য ঈমান আনার সাথে সাথে
সৎকর্ম করার কথা যে সব আয়াতে রয়েছে, তার
একটি তালিকা এখানে দেয়া হলো :
১) সুরাহ(২ঃ ১৪৮);
২) " (২০ঃ১১২);
৩) " (২১ঃ৮৫-৮৬);
৪) " (২২ঃ১৪,৫০);
৫) " (২৮ঃ৬৭,৮০,৮৪);
৬) "(২৯ ঃ৭,৯,৫৮);
৭) "(৩০ঃ১৫,৪৫);
৮) "(৩১ঃ৮,৯,২২);
৯) "(৩২ঃ১৯);
১০) "(৩৩ঃ৩১);
১১) "(৩৪ঃ৪);
১২) "(৩৭ঃ১৯,৮০,১২০,১২১,১৩০-৩২); ১৩) " (৪১ঃ৮,৩৩,৪৬);
১৪) " (৪০ঃ৪০,৫৮);
১৫ ) "(৪৫ঃ১৫);
১৬) " (৪৭ঃ১২);
১৭) "(৫২ঃ২১);
১৮) "(৮৪ঃ২৪);
১৯) "(৮৫ঃ১১);
২০) "(৯৮ঃ৭,৮)।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে সৎকর্মশীল
ব্যক্তিকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এবং কাজে সৎ
হতে হবে বা সততার পরিচয় দিতে হবে।
সৎকর্মশীলতার প্রতিযোগিতা সারাজীবন করে
যেতে হবে। দিনের কিছু সময় সৎ থেকে অন্য সময়
অসৎ থাকলে সৎকর্মশীল হিসেবে পরিচয় দেয়ার
সুযোগ একেবারেই নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সৎ
হতে হবে। দিনের কিছু কাজে সৎ আর বাকিটায়
অসৎ এই প্রতারণার সুযোগ একেবারেই নেই।
সৎকর্মশীল মানুষ সারাজীবন সৎকর্মের ওপর
অবিচল থাকবে। শেষ বিচারের দিন সব ফাঁস হয়ে
পড়বে। মসজিদের দেশ যার প্রতিটি জায়গায়
আজানের ধ্বনি শোনা যায়, সে দেশ যদি দুর্নীতিতে
শিরোপা লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে,
তার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্বের সব দেশ থেকে বেশি
অসৎকর্মশীল মানুষ এ দেশে বাস করে।
দুর্নীতিবাজদের আখড়া। জান্নাতে যাওয়ার
অন্যতম শর্ত হচ্ছে সৎকর্ম। আর সব গুণ থাকলেও
অসৎকর্মশীল ব্যক্তি জান্নাতের ধারেকাছেও যেতে
পারবে না। নামাজি, দ্বীনদার হওয়ার মূল কথা
হচ্ছে সৎকর্মশীলতা। বাহ্যিকভাবে যত বড় বুজর্গ,
পীর, দ্বীনদার হোক না কেন একমাত্র ঈমানদার ও
সৎকর্মশীলরাই জান্নাতে যাবে। জান্নাতে যাওয়ার
শর্ত হচ্ছে সারাজীবন পার্টটাইম নয় ফুলটাইমই
সৎকর্মশীল হতেই হবে। কারণ প্রতিটি কাজের,
মুহূর্তের এবং নিয়তের ওপরই নির্ভর করবে সে
কোন ধরনের সৎকর্মশীল। সুবিধাবাদী সৎকর্মশীল
না মন-মানসিকতা ও কাজে প্রকৃত অর্থে জীবনে
সার্বক্ষণিক ভাবে সৎকর্মশীল।
প্রায় এক যুগ আগে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশ
কমিউনিটির একটি সমাবেশের শুরুতে আমি এ
বিষয়ের উপর কোরান পাকের সংক্ষিপ্ত তাফসীর দিয়েছিলাম।
No comments:
Post a Comment