Sunday, July 12, 2020

স্রষ্টাকে জানার একমাত্র উপায়

 

  

          স্রষ্টাকে জানার একমাত্র  সহজ উপায়

আল্লাহকে জানার কোন পথ তার বান্দার জন্য খোলা রাখেননি। একটি মাত্র পথ খোলা আছে-তাকে জানা সম্ভব নয়। এটাই জানার পথ।' হযরত আবু বকরের (রাঃ) এই কথাটি লেখাছিল আমার ছোটো বেলার নোট বইতে। বড় হলে আমি লিখব, লেখা ছাপা হবে সে চিন্তা তখন একদম ছিলনা। তাই রেফারেন্স লিখে রাখিনি। বেশ আগে নয়া দিগন্তে  আমার  লেখায় এটি জুড়ে দেই। ছাপা ও হয়। এক ফেসবুক বন্ধু প্রশ্ন করেন - এ কেমন ক্থা; পরস্পর বিরোধী কথা নয় কি? বললামঃ অসীম এর ধারনা কারো জানা নেই। মহাবিশ্ব অসীম কিন্ত আমরা জানিনা অসীম কি? অসীম সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সেই সৃষ্টিকে আমরা জানিনা বা জানার কোন পথ আমাদের কাছে একদম নেই।বিস্ময়কর বিষয়ঃ কনা, তরঙ্গ, শক্তি একই জিনিষের তিন রুপ হলেও এসব দিয়েই মহাবিশ্বের সব কিছুই তিরী কিন্ত  কেউই জানেনা এসব  কোত্থেকে এসেছে, কে্ন বা এরা এ রকম আচরণ করে।এ গুলো এক থেকে অন্য আকৃতিতে রূপান্তর করা যায় মাত্র কিন্ত কোনো অবস্থায় একেবারে বিনাশ সম্ভব নয় কেন? অত্যাধুনিক বিজ্ঞান বলছেঃ শূন্য থেকে কিছুই বানানো কক্ষনও সম্ভব নয়্।সেখানে  সব কিছুই শূন্য থেকে সৃষ্টি যার কোণ ব্যাখ্যা  বিজ্ঞানের নাগালের বাইরে।সবচেয়ে মজাদার বা কৌতূহলজনক প্রশ্নঃ শূন্য/ Empty space কোত্থেকে কিভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসল আর তারপর সব কিছু শূন্য থেকে এক এক করে সৃষ্টি হল? যেখানে এমনকি যে কোনো একটা নগণ্য সৃষ্টি কেই আমরা ভালোমতো জানিনা বা বুঝিনা, সেখানে এরই স্রষ্টাকে প্রত্যক্ষভাবে  জানার সুযোগ আমাদের কোথায়! মানুষ কেবলমাত্র সেটুকুই পারে যা প্রকৃতি বা সৃষ্টিকর্তা তাকে সুযোগ দিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে বাস্তবে,   'তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’........আইনস্টাইনের  ভাষায়ঃ   ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়। বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে যে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্তা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’

রাসুলুল্লাহ স্রষ্টাকে নিয়ে নয় বরং তার সৃষ্টি নিয়ে আমাদের গবেষনা, চিন্তা ভাবনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবিকে এ রূপ চিন্তাভাবনা ও আলোচনা করতে দেখে বললেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করো। কিন্তু আল্লাহকে নিয়ে চিন্তা করো না।’ -কানজুল উম্মাল : ৫৭০৮ 
আসলে আল্লাহকে জানার একমাত্র পথ / উপায় হচ্ছে তার সৃষ্টিকে অনুধাবনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এটা হৃদয়ঙ্গম করা ~~~যিনি এর স্রষ্টা তিনি আরও কত বড় উচ্চতায় সমাসীন,আর সব প্রশংসা কেবলমাত্র তারই কাম্য। 

 কেবলমাত্র চোখের দিকে তাকান। বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে, মানুষের একটি চোখ ৭০০ টি সুপার ডিজিটাল ক্যামেরার সমান। এই চোখ কে দিয়েছে আমাদের?

আমাদের ব্রেইন সম্পর্কে জানেন? গবেষণা মতে, একজন মানুষের ব্রেইনের ক্ষমতা কয়েক শ' সুপার কম্পিউটারের চাইতেও বেশি।

আমাদের শরীরের DNA সম্পর্কে কতটুকু জানি? এমনকি  নাস্তিক বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স DNA সম্পর্কে বলেছেন,-

'একটি DNA তে এতো পরিমাণ স্পেস আছে যেখানে চাইলেই আপনি ৩০ ভলিউমের ৩-৪ টি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা লিখে রাখতে পারবেন।' 

একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র DNA সেলের মধ্যে এই ক্ষমতা কে দিয়েছে? 

এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমরা এমন একজন দার্শনিকের শরণাপন্ন হতে পারি যাকে বিংশ শতাব্দীর নাস্তিকদের 'Spiritual Leader' বলা হতো। কিন্তু তিনি পরে নাস্তিকতা ছেড়ে আস্তিক হয়ে যান। তাঁর নাম Antony Flew..
DNA' র এই বিস্ময়কর কাজ দেখে তিনি বলেছেন,- ‘almost entirely because of the DNA investigations . What I think the DNA material has done is that it has shown, by the almost unbelievable complexity of the arrangements which are needed to produce( life ), that intelligence must have been involved in getting these extraordinarily diverse elements to work together'
 DNA ইনভেস্টিগেশন থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রাণ (Life) সৃষ্টিতে অবশ্য  অবশ্যই Intelligence তথা বুদ্ধিমান সত্ত্বার উপস্থিতি আবশ্যক। সেই বুদ্ধিমান সত্ত্বা  হলেন স্রষ্টা।
এরকম মহাকাশের  গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সিগুলোর দিকে তাকাই। 
ওপেন স্ট্রীটম্যাপের মতো ফ্রিম্যাপ ব্যবহার করে কম্পিউটার ডাটার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বরফাচ্ছন্ন এলাকাসহ সব সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকার দৈর্ঘ্য ১১ লাখ কিলোমিটারের মতো।যার মধ্যে   তিন লাখ   কিলোমিটার এলাকা বালুময় সৈকত।
এখন যদি তারার সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করতে হয়তাহলে দেখা যাবেমহাবিশ্বে তারার সংখ্যা ১০ সেক্সটিলিয়নযেখানে বালুকণার সংখ্যা হবে চার সেক্সটিলিয়ন। তাহলে এটি ঠিকই যে মহাবিশ্বে বালুকণার চেয়ে তারার সংখ্যা বেশি। সূত্র : বিবিসি।

NASA(13October2016)থেকে পাওয়া তথ্যঃদুই ট্রিলিয়ণ ছায়াপথ আছে মাত্র ১০শতাংশ মহাবিশ্বের  মধ্যে কিন্ত ছায়াপথগুলোর৯০শতাংশর খোজ এখনও বাকিছায়াপথ হচ্ছে  এমন একটি সিস্টেম যেখানে মিলিয়ন থেকে বিলিয়ন সংখ্যক তারা মাধ্যাকর্ষনের টানে  এক সাথে আটকে থাকে। গানিতিক মডেল ব্যবহার করে জ্যোতিবিজ্ঞানীরা‘অদৃশ্যমান’ছায়াপথ গুলোকে   সনাক্ত করার চেষ্টা করছেন কেননা এই সব ছায়াপথ টেলিস্কোপের   আওতায় আসে না।সেখান থেকে  ধারনা করা হচ্ছে,মানুষের  
ধারনারও বাইরে রয়ে গেছে আরও লাখ   লাখ ছায়াপথ। সূত্রঃগার্ডিয়ান      

তার মাণে দাড়ায় মহাবিশ্বে২০ট্রিলিয়ণ ছায়াপথ ছাড়িয়ে  যেতে পারে! Kornreich   (কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের'Ask an Astronomer' এর ফাউনডার)   মহাবিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথ ধরে একটি রাফ হিসাব বের করেছেনছায়াপথের ১০০ বিলিয়ন তারকার সাথে এই সংখ্যা গুণ করলে হয়১০০অকটিলিয়ন(octillion)তারকা। তার অর্থ  এর সাথে ২৯টা শূন্য। Kornreich জোর দিয়ে বলেনএটা সাধারণ হিসাব,তবে গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আরো অনেক  বেশি।
আবার সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের   চেয়ে পাঁচ  গুণ শুধু বড় নয়, সেই সাথে  এক লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল তার ভর তিন মিলিয়ন সূর্যের  সমান হয়ে থাকে।
 মহাবিশ্বে বালুকনা তুল্য আমাদের সূর্য হলেও  দশমিক  মিলিয়নপৃথিবী   এর মধ্যে ভরে রাখা যায়।
 আপনি যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে   তারকা গণনা করেন,সে ক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে। ছায়াপথগুলো মহাকাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থেকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে একে অপর থেকে বহু দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে।
এক আলোকবর্ষ=৯দশমিক৪ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। আমরা এমন একটি ছায়াপথে থাকি, যেটা আড়াআড়ি মাপেপ্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ।
     এডউইন হাবল ১৯২৯সালে প্রকাশ করেন, মহাবিশ্ব স্থিতাবস্থায় নেই। যে ছায়াপথটি যত দূরে অবস্থিত, তার দূরে সরে যাওয়ার গতিও তত বেশি। দেখা যায় ১০লাখ আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ২২.৪ কিলোমিটার বেগে এবং ২০ লাখ আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ৪৪.৮ কিলোমিটার বেগে দূর সরছে। অবাক বিস্ময়ের সাথে ভাবার বিষয়,বাস্তবে প্রতিনিয়ত মহাবিশ্ব আমাদের থেকে কত দূরে বিস্তৃতি লাভ করছে! 
 সব ছায়াপথ এক করলে তারা মহাশূন্যের এক মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ স্থান দখল  করবে,যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী   পর্যন্ত এর কাছে হার মানবে।
  'তোমাদের সৃষ্টি করা বেশী কঠিন কাজ , না আকাশের ? আল্লাহই তাকে সৃষ্টি করেছেন' - [ সূরা নাজিয়াত ২৭ ]
'মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না।' [ সুরা মু’মিন ৪০:৫৭ ] 
প্রত্যেক জায়গায় আমরা  দেখতে পাব তার অপার সৃষ্টি রহস্য।  






















































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































No comments:

Post a Comment