Wednesday, May 22, 2024

ঈমান মজবুত পাকা করার স্বার্থে যা করতে হবে

 ঈমানকে পাকাপোক্ত,  দৃঢ় মজবুতের জন্য নভোমণ্ডল/মহাকাশের  ধারনা থাকাটা প্রত্যেকের জন্যই কেন গুরুত্বপূর্ণ/আবশ্যিক ?

ইমপটেনট ব্যক্তি তুল্য ঈমান বনাম সজীব তরতাজা ঈমানের পার্থক্যটি খুজলে বিষয়টি বুঝতে অতি সহজ হবারই কথা! ইমাম গাজ্জালির মতেঃ মহাকাশ সম্পর্কে যাদের কোনো রকম ধারনাই নেই তাদের ঈমানের স্তর হচ্ছে একজন ইমপটেনট ব্যাক্তির মতই যার মেকিং লাভের অপার মজা সম্পর্কে কোনো ধারনা/অনুভুতি একদমই নেই। কাজেই ভেবে দেখুন না একবারঃ- ঈমানের সত্যিকার স্বাদ/ তৃপ্তি পেতে হলে নভোমণ্ডল সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারনা থাকাটা প্রত্যেক ভালো ঈমানদারদের জন্য একান্ত আবশ্যক/ অপরিহার্য নয় কি?

স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন; 'মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝেনা।'[সুরামু’মিন৪০:৫৭] ঈমানকে সুদৃঢ়, মজবুত ও পাকাপোক্ত করতে দরকার আল্লাহর অসীম শক্তি, ক্ষমতা সম্পর্কে মোটামুটি একটা স্পষ্ট ধারনা থাকা/ তার অসীম সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে কমপক্ষে কিছ্টা হলেও উপলব্ধি।আল্লাহ পাকের সৃষ্ট দৃশ্যমান প্রকৃতি তথা মহাকাশ/ নভোমণ্ডলের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এটা সহজেই অনুধাবন কিন্ত সম্ভব।
মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানের সর্বশেষ চিত্রঃ
[১] সমুদ্র তীরের বালুকণার চেয়ে তারা বেশি। আবার সবচেয়ে ছোট তারাটিও ক্ষুদ্র বালুকনার চেয়ে যে কত প্রকাণ্ড বড় তা কখন ওকি কল্পনা করাও সম্ভব? হাতের মাত্র এক মুষ্টি বালুকনায় বালুকনার সংখ্যা কত হবে? সে ক্ষেত্রে সব সমুদ্রতীরের বালুর সংখ্যা!
প্রথমে দেখা যেতে পারে- সব সমুদ্র তীরের বালুকনার সংখ্যা কত?
শুরুতেই ধরে নিতে হবে,বিশ্বের    সাগরের   তীরে   ঠিক   কি পরিমাণ বালু থাকে।এজন্য সমুদ্র পৃষ্ঠের দৈর্ঘ্য,   প্রস্থ এবং   গভীরতা পরিমাপ করতে হবে।
সেজন্য সাগরের তীরের হিসাব করলে হবে নাহিসাব   করতে   হবে উপকূলীয়   এলাকার   পরিমাপের।
 নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারেন না তেমন,   কারণ উপকূলীয়     এলাকার মাপ বাড়ে কমেস্থির থাকে না।
তারপরেও বিবিসি একজনের সঙ্গে কথা বলেছে যিনি একটি সংখ্যা জানিয়েছেন। উপকূল নিয়ে গবেষণা করে এমন  প্রতিষ্ঠান ডেল্টারসের গবেষক জেনা ডিডনসিটস বলছেনপুরো পৃথিবীর উপকূলের পরিমাপ করা বিশাল দুঃসাধ্য এক      কাজ। ওপেন স্ট্রীটম্যাপের মতো ফ্রিম্যাপ  ব্যবহার   করে   কম্পিউটার  ডাটার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে  বরফাচ্ছন্ন  এলাকা সহ উপকূলীয়  এলাকার দৈর্ঘ্য ১১ লাখ   কিলোমিটারের মতো।
যার মধ্যে তিন লাখ কিলোমিটার এলাকা বালুময় সৈকত।এখন যদি তারার সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করতে হয়,   তাহলে দেখা যাবেমহাবিশ্বে তারার সংখ্যা১০ সেক্সটিলিয়ন,যেখানে  বালুকণার সংখ্যা হবে চার সেক্সটি লিয়ন 
তাহলে এটি ঠিকই যে মহাবিশ্বে  বালুকণার চেয়ে   তারার   সংখ্যা বেশি। সূত্র : বিবিসি
আমাদের সূর্য একটি অতি সাধারণ তারকা। এর আকার তারকাগুলোর গড় আকারের মতোই।আমাদের বাসভূমির তারকা সূর্যের ব্যাস ১৪ লাখ কিলোমিটার। এর অর্থ হলো ১০৯টি পৃথিবী সূর্যের পৃষ্ঠে সাজিয়ে রাখা যায়। এটি এত বড় যে, ১৩ লাখ পৃথিবী এর মধ্যে ভরে রাখা যায়। একটি তারকার বর্ণনা যদি এমন হয়, সেক্ষেত্রে মহাবিশ্বে তারকার সংখ্যা কত? বাস্তবে বিশাল সংখ্যার তারকা নিয়ে একটি ছায়াপথ। তাহলে মহাবিশ্বে তারকা ও ছায়াপথ আসলে কয়টি? Kornreich মহাবিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথ ধরে একটি মোটামুটি হিসাব বের করেছেন ছায়াপথের ১০ হাজার কোটি তারকার সাথে এই সংখ্যা গুণ করলে হয় ১০০অকটিলিয়ন (octillion) তারকা। তার মানে দাঁড়ায়, ১- এরসাথে ২৯টি শূন্য। Kornreich জোর দিয়ে বলেন, এটা সাধারণ হিসাব, তবে গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আরো বেশি। ১৩ অক্টোবর ২০১৬, নাসা থেকে পাওয়া তথ্য হচ্ছে, দুই ট্রিলিয়ন ছায়াপথই আছে মাত্র ১০ শতাংশ মহাবিশ্বের মধ্যে; কিন্তু ছায়াপথগুলোর ৯০ শতাংশের খোঁজ এখনো বাকি। আবার দেখা যায়, সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের চেয়ে ৫০০ গুণ শুধু বড় নয়, সেই সাথে একলাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল, তার ভর ৩০ লাখ সূর্যের সমান হয়ে থাকে। যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে তারকা গণনা করা হয়, সেক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে। সব ছায়াপথ এক করলে সে সব মহাশূন্যের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ স্থান দখল করবে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী পর্যন্ত এর আওতার অনেক বাইরে।
{২} আপনি কি কখনও ভাবতে/কল্পনাও করতে পারেনঃ সেকেন্ডে মহাবিশ্বের পরিধি বাড়ছে ৪৫ মাইল । মুলত মহাবিশ্ব অবিরাম সম্প্রসারিত হয়ে চলছে তা আবার সেকেন্ডে ৭০ মাইলের ও বেশি গতিতে। মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে কেবল এটাই কিন্ত মানুষের কল্পনায়ও ভাবা একেবারেই অসাধ্য/ অসম্ভব। সর্বশেষ বিজ্ঞান কিন্ত বলছেঃ সেকেন্ডে ৭০ মাইলের ও বেশি বেগে মহাবিশ্ব দূরে প্রসারিত হচ্ছে।
১৩ দশমিক  বিলিয়ন বছর আগে ঘটা বিগব্যাঙ থেকে পাওয়া বিকিরণ পরিমাপ করে যে হিসাব বের করা হয়েছিলতার সাথেমিলছে না বর্তমানে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার।নাসা ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সির দেয়া তথ্য অনুযায়ীধারণার চেয়ে  থেকে  শতাংশ দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে।প্রতিসেকেন্ডে৭০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি   প্রতিমেঘাপারসেকে ( মেঘাপারসেক হচ্ছে প্রায়   মিলিয়ন আলোক বর্ষছায়াপথগুলো দুরাপসরএকরছে।দেখাযাচ্ছেঃ  প্রত্যাশিত হিসাবের  চেয়েও দ্রুতগতিতে  সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। প্রসারণশীল মহাবিশ্বের এই অভিক্রিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার উপমার মাধ্যমে সহজেই কিন্ত উপলব্ধি করা যাবে। রাস্তায় চলন্ত একটি গাড়ি যখন কাছে এগিয়ে আসে তখন এর ইঞ্জিনের শব্দের তীব্রতা তীব্রতর হয় এবং গাড়িটি যখন কাছে এসে দূরে অপসারণ করে,তখন শব্দের তীব্রতা নিম্নতর হয়ে থাকে। আলোকের তরঙ্গের আচরণও একইরকম।আলোকের স্পন্দাঙ্ক খুব বেশিসেকেন্ডে চার থেকে সাত লাখ মিলিয়ন। এর রয়েছে বিভিন্নধরনের স্পন্দাঙ্ক। আমাদের দৃষ্টিতে যা বিভিন্ন বর্ণ হিসেবে প্রতিভাত হয় সেগুলো হলো-আলোকের বিভিন্ন স্পন্দাঙ্ক। সর্বনিম্ন স্পন্দাঙ্ক দেখা যায় বর্ণালীর লালের দিকে।তারকা যদিআমাদের দিকে আসে  তাহলে প্রতি সেকেন্ডে আমরা যে স্পন্দাঙ্ক পাব তা বেড়ে যাবে,   যেমনটি শব্দ শ্রোতার   দিকে এগিয়ে আসার সময় ঘটে থাকে। অনুরূপভাবে তারকা যদি আমাদের কাছথেকে দূরে অপসারমাণ হয়সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছেযে   তরঙ্গগুলো পৌঁছাচ্ছে তার  স্পন্দাঙ্ক  হবে দ্রুততর।তারকার আলোর স্পন্দাঙ্ক মেপে এর লাল বিচ্যুতি হলে স্পষ্টত বোঝা যাবে,তারকাগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরাপসরণ   করছে।
এবার একবার ভেবে দেখি- আজ থেকে হাজার বছরের ও আগে নাযিলকৃত কোরআনের সূরা আজ জারিয়ার ৪৭ আয়াতে নভোমণ্ডল প্রসারিত হচ্ছে উল্লিখিত হয়েছে :
‘নভোমণ্ডল নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।’[৫১ঃ৪৭]
একজন জান্নাতবাসির সবচেয়ে ছোট জান্নাতের আকৃ্তি/পরিধি হবে আমাদের পৃথিবীর ১০ গুন। জান্নাতে যারা যাবেন তাদের সুখের ধরন কেউ কল্পনাও করতে পারে কি?
ঈমানদারদের সাধারণত অনেকটা তাচ্ছিল্য করে প্রচলিত কথায় বলা হয়ে থাকেঃ ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ’! কিন্তু আমরা ক’জন ওয়াকিবহাল; ইসলামের সোনালী  যুগে- সমরকন্দ, দামেস্ক, কায়রো আর করডোভায় প্রথম বড় বড় মানমন্দির গড়ে তোলেন আরব মুসলমানেরা। মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ  চালিয়েছেন, যে সব ১২ বছরের ওপরে দীর্ঘায়িত হয়েছিল। সে সময়ের মুসলিম বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞান কোন অবস্থানে পৌঁছেছিল তার বর্ণনা একটি ঘটনায় ফুটে ওঠে। সন্ন্যাসী গারভাট (দ্বিতীয় সিলভেস্ট নামে তিনি ৯৯৯ সালে পোপ হন) যখন কর্ডোভার  মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে খ্রিষ্ট ধর্মাচরণে পুনরায় ফিরে এলেন তখন লোক মুখে প্রচার হয়ঃ তিনি নাকি সেখানে শয়তানের সাথে দহরম পর্যন্ত করে এসেছেন।       
মূলতঃ ঈমানকে শক্তিশালী করার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে  আল্লাহ্‌র ক্ষমতা, শক্তি সর্বোপরি তার সৃষ্টিকে অবলোকন করে এই ধারনা  পাওয়া / বিশ্বাস অর্জন করা- যিনি এসব অলৌকিক কাজ অনায়াসেই সম্পন্ন করতে পারেন বা এসব কিছুই একেবারে শূন্য থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি তা হলে কত বড় ক্ষমতাবান /  অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী?আইনস্টাইনের  ভাষায়ঃ   ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়। বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে যে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্তা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’

আটশো কোটি র মাবাবা অদ্বিতীয়

 আজকের  বিশ্বের আটশো কোটির সব্বারই মা বাবা মাত্র কিনা একজনই । 

₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹€€€€€€€€€

সর্বশেষ বিজ্ঞান:বিশ্বের জনসংখ্যা আটশ কোটি ছাড়িয়েছে।  আমাদের সব্বারই পিতা-মাতা  মানে 

আটশো কোটির  কেবলমাত্র  একজন  মা ই নন, সবার বাবা ও কিন্ত একজনই মাত্র। 

এ বছর জানুয়ারি তে বিশ্বে জনসংখ্যা আটশ কোটিতে পৌছেছে।আর সর্বশেষ বিজ্ঞান হচ্ছে: আমাদের মা-বাবা অদ্বিতীয় তার অর্থ আমরা সবাই ভাই-বোন, নিগ্রো-ককেশিয়ান এক বাবা- মায়েরই সন্তান। বিশ্ব ইতিহাসে সাড়া জাগানো ডারউইনের বিপ্লবী বিবর্তনবাদের সুত্র ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে আসছিলেন মানব জাতির পূর্বপুরুষদের এ ধরা পৃষ্ঠে আবির্ভাব হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে। বিবর্তনের ধারা হিসেবে তার অর্থ দাঁড়ায় আমাদের পূর্ব পুরুষদের সংখ্যা স্বভাবতই হবে অগনিত। বেবুন, গরিলা, শিম্পাঞ্জী, ওরাংওটাং এমনি সব প্রজাতির এক ধাপ হতে অপর ধাপে উত্তোরনের মাধ্যমে বিবর্তনের শেষ ধাপ ছিল আমাদের। তাই ধরে নেওয়া হয়েছিল আমাদের আদি মা-বাবার সংখ্যা ছিল অসংখ্য,অগনিত  যার কারনে বলা হতো জাতিতে জাতিতে, বংশ ও গোত্রের মধ্যে কাঠামোগত, আকৃতিগত, চর্মবর্ণ, চুলের রঙ ইত্যাদিতে এত পার্থক্য। এতদিনের বিবর্তনের এসব জল্পনা কল্পনাকে ভেস্তে দিয়ে বিজ্ঞানাগারে প্রমাণিত হলো :-আমাদের মা-বাবা অদ্বিতীয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কী তা হলে বিবর্তনের ফসল নই? না কী ভীনগ্রহ, সেই পৌরাণিক বেহেশত থেকে আমাদের পূর্ব পুরুষদের আগমন?

 গবেষণায় একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যা এএফপি, আল-জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর ১৯ অক্টোবর ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ১৮ লাখ বছরের পুরোনো একটি খুলির ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, মানুষের পূর্বসূরি আদি প্রজাতি (হোমিনিড) আসলে তিনটি নয়, বরং একটিই ছিল।

সায়েন্স সাময়িকীতে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।


২০০৫ সালে জর্জিয়ার দামিনিসি প্রত্নস্থলে খুবই ভালো অবস্থায় থাকা পাঁচটি হোমিনিড খুলি উদ্ধার করা হয়। এগুলোর একটির সঙ্গে ২০০০ সালে পাওয়া একটি চোয়ালের হাড় ঠিকঠাক মিলে যায়। এতে একটি পরিপূর্ণ খুলি নিয়ে গবেষণার সুযোগ পান বিজ্ঞানীরা। ওই খুলির ধারকের মস্তিষ্কের আকার ছিল আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।


সংশ্লিষ্ট গবেষক এবং সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত অ্যানথ্রোপলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞ মার্সিয়া পোন্স দো লিয়ঁ বলেন, চোয়াল জুড়ে সম্পূর্ণ করা খুলিটি হচ্ছে ওই যুগের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ করোটি।


গবেষকেরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেন, হোমিনিডের পাঁচটি খুলির গঠনে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। অথচ সেগুলো একই সময়ের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তবে কিছু পার্থক্যের কারণে সেগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা খুলিগুলোর চোয়াল, ভ্রু ও গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক পার্থক্য বিশ্লেষণ করেন। এতে সবগুলো খুলি একই প্রজাতিভুক্ত আদি প্রাণীর হতে পারে বলে জোরালো সম্ভাবনা দেখা যায়।

*************************

বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল নিউজ উইক জানুয়ারী ১১, ১৯৮৮ সংখ্যায় ‘আদম হাওয়ার অনুসন্ধানে’ শিরোনামে একটি নাতিদীর্ঘ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। (বিঃ দ্রঃ ২০০১ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়ার একটি টকশোতে জানতে পারি ১১/১/১৯৮৮ সংখ্যার নিউজউইকের কথাটি। আমি ডাইরীতে নোট করি। স্থানীয় এক লাইব্রেরী থেকে আমি প্রবন্ধটির কপি সংগ্রহ করি)


প্রবন্ধটির মূল বক্তব্যটি ভাষান্তর করা হচ্ছেঃ


আমাদের এজমালী মা: “পৌরাণিক কাহিনীর বর্ণনাকারীদের উপাখ্যান এখন বিজ্ঞানীদের মৌলিক গবেষণার ফলাফলের সাথে একীভূত হতে যাচ্ছে। আমরা সবাই অতীতের একস্থানে অভিন্ন পূর্ব-পুরুষের অংশ ভাগ করি।” এ আবেগময় বক্তব্যটি করেছেন নিউজ উইকে প্রকাশিত নিবন্ধ ‘The Search for Adam and Eve’ – এর লেখকেরা। তারা আস্থার সাথে বলেছেন, ‘এই সময়ে কিন্তু এই প্রমাণগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে যারা গবেষণা করেছিলেন আফ্রিকার চিড়ধরা শুষ্ক উপত্যকায় না বসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যামেরিকান ল্যাবরেটরিতে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, আমাদের সার্বজনীন মা হচ্ছেন এক মহিলা, যিনি ধরাপৃষ্ঠে দুই লাখ বছর আগে বাস করতেন এবং রেখে গেছেন ‘জিন’ যেটি মানবজাতির সবাই নিজ দেহে বহন করে চলছে। বর্তমান পৃথিবীতে যত লোক বসবাস করছে সকলেই এসেছে তার থেকে।’


আণবিক জীববিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীরা তল্লাশি চালিয়েছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে বিভক্ত বিভিন্ন শ্রেণীর জিনের মাঝে। আর পরীক্ষা করে তাদের মধ্য থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন একটি ডিএনএ, যেটা আমাদেরকে একজন মাত্র মহিলার দিকেই নিয়ে যায় – যার কাছ থেকে আমরা সবাই এসেছি।


আমাদের এজমালি মাকে খুজে বের করার লক্ষ্যে গবেষক রেবেকা ক্যান ১৪৭ জন গর্ভবতী মহিলাকে রাজী করান তাদের গর্তের ফুল বিজ্ঞান কেন্দ্রে দেওয়ার জন্য। তিনি বার্কলের উইলসন ল্যাবে জীব বিজ্ঞানী মার্ক স্টোন কিং-এর সাথে কাজ করছিলেন। ক্যান বাছাই করেন কিছু আমেরিকান মহিলাকে যাদের পূর্ব পুরুষ এসেছিলেন আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে। নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ায় তার সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করছিলেন তারা খুজে পেলেন সেখানকার আদিবাসীদের। শিশুরা জন্ম নিল, গর্ভের ফুল সংগ্রহ করে হিমায়িত করা হলো এবং বার্কের উইলসন ল্যাবে বিশ্লেষণ করা হলো। ব্লেন্ডারের সাহায্যে টিস্যুগুলো পরিণত করা হলো স্যুপে। সেন্ট্রিফিউজ কোষ বিভাজন ডিটারজেন্টের সাথে মেশানো হলো, স্ফুর জ্যোতিময় দিয়ে শুকিয়া আবারো সেন্ট্রিফিউজ করা হলো। ফলে পাওয়া গেলো স্বচ্ছ তরল পদার্থ যেটা ছিলো ডিএনএ-র খাঁটি উপাদানে তৈরী। বিস্ময়কর ব্যপার যেটা নজরে পড়ল, তা হচ্ছে এই ডিএনএ সেই ডিএনএ নয় যা শিশুর দেহকোষের নিউক্লিয়াসে এবং শিশুর দৈহিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারন করে থাকে। এটি উত্তরাধিকার সূত্রে আসে কেবল মা থেকে,বার্কলের গবেষকগণ প্রতিটা ডিএনএ নমুনাকে টুকরো টুকরো করে কর্তন করলেন যাতে এগুলোকে অপর সব শিশুর ডিএনএ-এর সাথে তুলনা করা সম্ভব হতে পারে। যে ফল পাওয়া গেল, তাতে দেখা যায় বিভিন্ন জাতির মধ্যকার পার্থক্যটা বিস্ময়কররুপে অতি সামান্য। স্টোন কিং বলেন “বিভিন্ন জাতির মধ্যে জেনেটিক পার্থক্যটা বাস্তবিকই খুব কম হয়ে থাকে।”


নিউগেনিদের ডিএনএ তে দেখা গেল তাদের ডিএনএ অপরাপর নিউগেনিদের চেয়ে বরং আর সব এশিয়ানদের ঢের বেশি কাছের। এটা অদ্ভুত মনে হতে পারে জাতি অথবা বংশগত বাস্তব পার্থক্য সত্ত্বেও। বাস্তবে দেখা যায়, জাতিগত অনেক পার্থক্যই মূলত গতানুগতিক, নিতান্ত সাধারণ।

উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, মানুষের ত্বকের রঙ কালো হয়ে থাকে আবহাওয়ার সাথে বড় ধরণের সামঞ্জস্যতা রেখে। আফ্রিকানদের কালো রঙ সূর্যের রশ্মি প্রতিরোধের জন্য হয়ে থাকে। তেমনি ইউরোপিয়ানদের গায়ের রঙ সাদা হওয়ার কারন হচ্ছে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ যেটা ভিটামিন ‘ডি’ তৈরিতে সাহায্য করে। ত্বকের রঙ্গের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হয় কয়েক হাজার বছরের। পক্ষান্তরে শত শত হাজার বছরের দরকার পড়ে ব্রেইন সাইজের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে। প্রতিটি শিশুর ডিএনএ গঠন শেষ পর্যন্ত মিলে যায় একজন মাত্র মহিলার সাথে। জেনেটিক উত্তরাধিকার এমন একটি বিষয় যেটা এমনকি পরিসংখ্যানবিদদের কাছেও তেমন বিস্ময়কর কিছু নয়। উইলসন ল্যাবের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘অবশ্যই একজন ভাগ্যবান মা ছিলেন।’ ইলোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডগলাস অলেস পরিচালিত গবেষণায় একদল প্রজনন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন যোগসূত্র থেকে ধারণা করেন, দুনিয়ার প্রথম এই মহিলার আবির্ভাব হয়ে থাকবে এশিয়া মহাদেশে। বিশ্বের ৪টি মহাদেশে ৭শ’ মানুষের রক্ত থেকে সংগৃহীত মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-এর উপর ভিত্তি করে তারা এ সিদ্ধান্তে পৌছেন। ‘ডিএনএ’ টুকরো টুকরো করে খণ্ডিত করার জন্য তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন এবং সেগুলোকে বংশ তালিকায় সাজান। এই তালিকা পরিশেষে অতীতের একজন মহিলার কাছে গিয়ে থেমে যায় যিনি দেড় থেকে দু’লক্ষ বছর আগে এই ধরাপৃষ্ঠে বসবাস করতেন, তাদের হিসেবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্ম বিজ্ঞানী স্টেফন জে গোল্ডের মতে, “এটা আমাদের এই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করে যে, বিশ্বের সব মানুষ তাদের বাহ্যিক ও আকৃতির পার্থক্য সত্ত্বেও একটা মাত্র সত্ত্বা থেকে এসেছে এবং মানব বংশের উৎপত্তি খুব কাছের একটি মাত্র যায়গায়। সব মানুষের মধ্যে জীবতাত্ত্বিক ভ্রাতৃত্ববোধ অনেক বেশি গভীর, যার ধারণা আগে কখনো ছিলো না।”

************************

 যুক্তরাষ্ট্রের

দৈনিক বাল্টিমোর সান পত্রিকা Geneticists Reveal Human Family Trees শিরোনামে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে। আমি এখানে তার ভাষান্তর করছি।

মানবজাতির পিতাঃ

*****************

 মানব দেহের জীবকোষে যে ‘Y’ – ক্রোমোজম রয়েছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে এমন সঙ্কেত পাওয়া যায় যে, গোটা মানবজাতির আদি পিতা মাত্র একজন। গবেষণার এই রিপোর্টটি উদঘাটন করেছে, আজকের প্রত্যেকটি পুরুষ যে ‘Y’ -ক্রোমোজম ধারণ করছে, তার লক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট এটি এসেছে একজন মাত্র পুরুষের কাছ থেকে, যিনি এ পৃথিবীতে বাস করতেন প্রায় এক লক্ষ নব্বই হাজার বছর আগে।

এ নতুন গবেষণার ফলাফল এ ধারণাটাই সমর্থন করে, আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল পৃথিবীর মাত্র একটা স্থানে। এ পুরনো ধারণা আর সঠিক নয় যে, পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের একাধিক স্থানে মানবজাতির পূর্ব পুরুষদের উদ্ভব ঘটেছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আগে বিশ্বাস করা হতো। ডারউইনের ঐতিহাসিক বিবর্তনবাদ অনুসারে অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করতেন, আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়ে থাকবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে। ‘Y’ - ক্রোমোজম হচ্ছে মানব বংশানুগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক উপাদান ‘জিন’ যে চব্বিশ প্রকার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সুতা দিয়ে গঠিত তার একটি হচ্ছে এটা একমাত্র পিতা থেকে পুত্রের দেহে সঞ্চারিত হয়। গবেষক মি. হেমার ‘Y’ - ক্রোমোজম এর অতি ক্ষুদ্র অংশের গঠনের বিশদ তুলনা করেন। সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিলো বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে লালিত ৮ জন আফ্রিকান, ২ জন অস্ট্রেলিয়ান, ৩ জন জাপানি এবং ২ জন ইউরোপীয়দের কাছ থেকে। গবেষকদের মনে যে ধারণাটি কাজ করছিল তা হলো – বিভিন্ন জাতির মধ্যে ক্রোমোজম-এর সামগ্রিক বিন্যাসের রকমফের কেমন ভিন্নরুপ গ্রহণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করা। তারপর নির্ণয় করা, যে বৈচিত্র ধরা পড়ল তার বিবর্তনের জন্য কতটা সময়ের দরকার। যে ফল পাওয়া গেল, তাতে দেখা যায়, যত মানব সন্তান আজকের দুনিয়ায় বসবাস করছে, তাদের সকলেরই ‘Y’ – ক্রোমোজম-এর যোগসূত্র মেলে কেবলমাত্র একজন পুরুষের সাথে যিনি জীবিত ছিলেন এক লক্ষ আটাশি হাজার বছর আগে।

Tuesday, May 7, 2024

একেবারেই কিন্ত ভিন্ন ধর্মী বিষয়/

 একেবারেই কিন্ত  ভিন্ন   ধর্মী বিষয়/  উপস্থাপনা-

জোতির্ময় মহাবিশ্বের  সাথে  quantum physics এর  ঐক্য তান:-

বিশ্বের সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর সাড়াজাগানো  সাংঘাতিক  ঐতিহাসিক ঘটনা:সব ধর্মের আধ্যাত্মিক বক্তব্যের সাথে ( অদৃশ্য লোকের  জোতির্ময়    মহা বিশ্ব)-- সর্ব শেষ  Quantum physics একই সুরে ঐকমত্য পোষন করছে যা আসলে বাস্তবে একেবারে  কোন ভাবেই  কি বোঝা/বোঝানোর উপায় আছে? হাজার হাজার বছর আগে ভাগে  কি ভাবে  প্রায় সব ধর্মের ই তাত্ত্বিক গন এই নিগূঢ় সর্বশেষ কোযানটাম   তত্ত্বের  মূল কথার সন্ধান পেয়েছেন? শেষে কিনা নোবেলজয়ী আইনস্টাইন  পর্যন্ত তালগোল পাকিয়ে ফেলেন প্রতিষ্ঠিত  হাইজনবর্গের অনিশ্চয়তা  তত্ত্বে।তিনি quantum mechanics এর এই  uncertainty principles  এর বিরোধীতা করে দাবি  করেন: সৃষ্টিতে কোন  রকম অনিশ্চয়তা/ লটারি থাকার কোন প্রশ্নই উঠে না-(বাস্তবে তিনি কিন্ত  কঠিন  আস্তিক  ছিলেন)। তার মতে:গড তার সৃষ্টির   সব কিছু ই স্বাভাবিক নিয়মে যথাযথ ভাবে  করেছেন-লটারি বা অনিশ্চয়তার কোন রকম অবকাশ ই সৃষ্টি তে রাখেননি ।বিষয়টির  সার্বিক ফয়সালার জন্য তিনি বরং  সরাসরি হাইজেনের সাথে দেখা করে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দেন এটি ।কিন্ত হাইজেন যুক্তি সহকারে আইনস্টাইন কে উল্টো দেখিয়ে দেন: তিনি যদি তার অনিশ্চয়তা নীতি মানতে রাজী  না হন তাহলে যেটার জন্যে তিনি নোবেল পেয়েছেন সেটিও প্রমান করতে পারবেন না। "আপনার নোবেল তত্ত্বের স্বার্থে আমার এই অনিশ্চয়তার নীতি আপনাকে মেনে নিতেই হবে । " হাইজেনের অনিশ্চয়তা নীতির সাথে  আইনস্টাইনের "ফটো ইলেকট্রিক এফেক্ট " নোবেল তত্ত্বের  সাথে  গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল বিধায়  আইনস্টাইনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় ।তিনি কথার মারপ্যাঁচের আশ্রয় নিয়ে এই যাত্রায় সরাসরি বললেন:এ বিষয়ে বিজ্ঞান একেবারে প্রাথমিক অবস্থা য় রয়েছে ।সে জন্যে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে ।

-----------------------------

(২৪ঃ৩৫)'আল্লাহ আকাশমন্ডলীওপৃথিবীর জ্যোতি।' প্রসঙ্গত  আলোচণায়  এসেছেঃ  'মধ্যযুগে মনসুর আল হাজ্জাজের আনাল হক দাবি।'


  পৃথিবীর সব শক্তির উৎস হচ্ছে সূর্য রশ্নি। আলো কে বলা হয় তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ। এই আলো উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে মূখ্য ভূমিকা রাখে আর সব প্রাণিজগৎ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বেঁচে আছে উদ্ভিদের দ্বারা। খনিতে যে কয়লা, গ্যাস, তেল পাওয়া যায় তারও উৎস হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ। ঘুরে ফিরে যে বিষয়টি এসে দাঁড়ায় সেটি হচ্ছে সব শক্তির মূলে রয়েছে  আলো।


স্পষ্টত আমরা দেখতে পাচ্ছি আলো সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আলো দেখতে কেমন? মূলত আলো হচ্ছে এক প্রকার তরঙ্গ /ঢেউ। ফরাসী পদার্থবিদ ডিব্রোগলি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন আলো তরঙ্গ হয়েও কোন পদার্থের উপর পড়লে এটি সেই পদার্থের সাথে মিশে যায়। পদার্থ এটাকে আত্মস্থ করে ফেলতে সক্ষম হয়। এতে তাঁর মাথায় আসেঃ আলোক রশ্নি তরঙ্গ হবার পরেও এটা যদি কোন পদার্থ শোষণ করে নিতে পারে তাঁর অর্থ দাঁড়ায় পদার্থ ও আলো একই প্রকৃতির কারণেই এটি সম্ভবপর হয়। ১৯২৪ সালে তিনি সারা দুনিয়ার বিজ্ঞানী সমাজের প্রতি সনির্বন্ধ আবেদন জানান এই বিষয়টার প্রতি দৃষ্টি প্রদর্শনের জন্যঃ আলো হচ্ছে তরঙ্গ কিন্তু এটা যখন পদার্থে শক্তি এবং ভরবেগ সরবরাহ করতে সমর্থ হয় তাহলে একই যুক্তিতে পদার্থ ও রশ্নি এবং  প্রকৃতপক্ষে  আলোর  মতই তরঙ্গ প্রকৃতি প্রদর্শন করবে। বিজ্ঞানী ডিব্রোগলি এই প্রস্তাবের মাধ্যমে আসলে বলতে চেয়েছিলেন, বাস্তবে আমরা  কেন ভাবতে পারব না যে একটি চলমান ইলেকট্রন অথবা অপর কোন কণাকে ও পদার্থ তরঙ্গ হিসেবে যেটাও কিন্ত অন্য পদার্থকে আলো রশ্নির মতো শক্তি ও দ্রুতি প্রদান করবে। ইতিহাসের ঐ সময়টিতে প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল ডিব্রোগলির এক যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণীঃ পদার্থ  ও   কার্যত জল তরঙ্গ, আলো তরঙ্গ ইত্যাদির মতো তরঙ্গ প্রকৃতি প্রদর্শন করবে। ইতিহাসে  পদার্থের তরঙ্গায়িত রুপ বা প্রকৃতিটি সর্বপ্রথম চোখে ধরা পড়ে ডেভিসন এবং গারমানের হাতে। এ দু’বিজ্ঞানী পরীক্ষাগারে নিকেল ধাতু ফলকের উপর ইলেকট্রন রশ্নি ফেলে তাঁর সাহায্যে ইলেকট্রনের বিক্ষেপন সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা করছিলেন। আকস্মিকভাবে বায়ুর সংস্পর্শে এসে নিকেলের উপর অক্সাইডের আবরণ পড়ায় নিকেল ফলক হতে তাপ প্রয়োগে অস্কাইডের আবরণ অপসারণ করা হলো। কিন্তু ঘটে গেলো এক অভূতপূর্ব আশ্চর্যজনক ঘটনা - বিজ্ঞানীদ্বয় ইলেকট্রনের পরিমাত্রা এর রশ্নির মত একবার সর্বাধিক আর একবার সর্বনিম্ন হতে দেখে এ থেকে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন - ডিব্রোগলির মতবাদ অনুসারে পদার্থ কণা তরঙ্গ সদৃশ বিধায় নিকেল স্ফটিক দিয়ে ইলেকট্রন রশ্নির ব্যতিচার হয়েছে। তাঁর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ইলেকট্রন আসলে ঢেউ বা তরঙ্গ। কিন্তু ঢেউ বা তরঙ্গ বলতে কিন্তু আমরা কী বুঝিয়ে থাকি? পানিতে সৃষ্ট তরঙ্গ সহজে আমাদের চোখে ধরা দিলেও অন্যান্য তরঙ্গ যেমন শব্দ, আলো বা বেতার তরঙ্গ কিন্তু আমরা দেখতে পাই না। একটি স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের যে কোন অংশে আন্দোলন তৈরী হলে আন্দোলন টি মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হলে তাকে তরঙ্গ (Wave) বলে অভিহিত করা হয়। আলো তরঙ্গের বেলায় যে আন্দোলন অগ্রসর হয় তা কোন জড় পদার্থের গতির জন্য হয় না। এটা হয়ে থাকে তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের গতির জন্য। এ কারণে মাধ্যমের কোন সাহায্য ছাড়াই সূর্য থেকে পৃথবী পর্যন্ত মুক্তভাবে আলোর বিস্তার লাভ সম্ভব হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ্য, তরঙ্গ যখন পথ চলে সেই সাথে কিন্তু সংশ্লিষ্ট মাধ্যমটি সামগ্রিকভাবে স্থানান্তর হয় না। মাধ্যমের বিভিন্ন অংশগুলো কেবল সীমিত পথে তাদের সাম্য অবস্থানের দু পাশে এদিক-ওদিক স্পন্দিত হতে থাকে। পদার্থ কণিকা ইলেকট্রন আসলে  ঢেউ/তরঙ্গ ছাড়া আর কিছু নয় এই অদ্ভূত আবিষ্কারের  পর অন্য সব কণিকার ক্ষেত্রে যেমন প্রোটন, নিউট্রন এবং বাকি সব ধরণের পরমাণুর বেলায়ও পর্যায়ক্রমে এই তরঙ্গের আচরন  আবিষ্কৃত  হতে থাকে। ১৯৯৪ তে আয়োডিন অণুর ক্ষেত্রে তরঙ্গায়িত এই ধর্ম পরিদৃষ্ট হয় যে অণুটি ইলেকট্রনের চেয়ে কেবলমাত্র পাঁচ লাখ গুন ভারীই নয়, গঠনে তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। এদিকে ১৯৯৯ সালে ৬০ অথবা ৭০ টি কার্বণ অণু দিয়ে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের রসায়নবিদরা দেখতে ফুটবলের মতো যে কৃত্রিম অণু ফুলারেঞ্জ (বাকীবলস) তৈরী করেন এরাও আলোর মতো তরঙ্গ ধর্ম প্রদর্শন করে। সম্প্রতি নভোচারীরা বাস্তবে মহাকাশেও প্রকৃতিতে এই অণুর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। উল্লেখ্য, ক্ষুদ্র কণা যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, অণু, পরমাণু তরঙ্গ প্রকৃতি প্রদর্শন করলেও বড়  এবং জটিল বস্তুর ক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের ফিরে যেতে হয় সেই অতি পরিচিত নন কোয়ান্টাম জগতে। এর অর্থ দাঁড়ায় ইলেকট্রন বা অন্য সব কণা, অণু বা পরমাণু নিজেদের মধ্যে ব্যতিচার তৈরীতে সফল হলেও বড় ধরণের বস্ত উদাহরণ স্বরুপ কাঠ বিড়ালি কিন্তু পরস্পরের মধ্যে ব্যতিচার তৈরীতে অক্ষম। আর এটা প্রকৃতিতে এজন্য সম্ভব নয় যা প্রানীদের অস্তিত্ব রক্ষারই মোক্ষম উপায় এবং বেচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক।সুবিখ্যাত বিজ্ঞানী শ্রোয়েডিংগার তার পরমাণুবাদে জড় স্বভাবকে একদম বাদ দিয়ে পরমাণু এবং তার উপাদান ইলেকট্রন, প্রোটনকে শুধু ঢেউ বা তরঙ্গের গুচ্ছরুপে কল্পনা করেন, যা পরিশেষে তরঙ্গ বলবিদ্যার উদ্ভব ঘটায়। পদার্থের তরঙ্গায়িত এই ধর্মের জন্য আজকের কোয়ান্টাম বিজ্ঞান বলছেঃ কণিকা এবং তরঙ্গের মধ্যে দ্বিত্ব রয়েছে। কোন কোন উদ্দেশ্যে কণিকাগুলোকে তরঙ্গরুপে চিন্তা করলেই উত্তম। অন্যদিকে কোয়ান্টামের অনিশ্চয়তা নীতিটি আবার দাবী করে যে, কোন কণিকার অবস্থানও দ্রুতি নির্ভুল ভাবে জানা বা নির্ণয় করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।  এর কারণ কোন কিছুকে সঠিক/নিশ্চিত ভাবে জানার জন্য তার অবস্থান এবং সেই অবস্থানে তার বেগও জানতে হবে। কিন্তু কোয়ান্টামের অনিশ্চয়তা তত্ত্বটি পরিস্কার ভাবে বলে দিচ্ছেঃ প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন একটি কণার অবস্থান যত নির্ভুল ভাবে মাপার চেষ্টা করা যাবে, তার দ্রুতির মাপও হবে তত কম নির্ভুল এবং এর বিপরীত ও সত্য হবে। আবার অনিশ্চয়তার এই সীমা কনিকাটির অবস্থান মাপনের উপরও নির্ভরশীল নয়। সুতরাং হাইজেনের এই তত্ত্বটি হয়ে দাড়িয়েছে বিশ্বের একটি মূলগত অনতিক্রমণীয় ধর্ম। প্রকারন্তরে তাই স্পষ্টত মনে হচ্ছে সব কিছু যেন এক অদৃশ্য জগতের হাতছানিতে বিদ্যমান, এর রহস্য ভেদ আমাদের এই সর্বশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমেও সম্ভব হবে না এবং তার কোন সুযোগ প্রকৃতি আমাদের জন্য খোলা রাখেনি। প্যানইথিজম বা অদ্বৈতবাদের ধারণার সাথে আজকের কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের কোথাও যেন একটা যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায়। দুনিয়ার বিভিন্ন ধর্মের সূফী/যোগীদের মধ্যে অদ্বৈতবাদের একটি ধারা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। প্যানইথিজম এর এই ধারার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি দার্শনিক মতবাদও, ইসলামে সূফীদের এই অদ্বৈতবাদ বা ফানাহফিল্লাহর (আত্ম বিলুপ্তির) পথকে সাংঘাতিক পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অদ্বৈতবাদের একটি ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ঘটনা হচ্ছে মধ্যযুগে মনসুর আল হাজ্জাজের আনাল হক দাবি। এ দাবির মাধ্যমে তিনি সমাজে তুলকালাম বাধিয়ে দেন। হক আল্লাহ তাআলার গুনবাচক নাম হওয়ায় আনাল হকের তাৎপর্য মনে করা হয় নিজেকে খোদা বলে দাবি করা যেটা কুফরি বা খোদাদ্রোহীতার সমপর্যায়ে পড়ে।  হাল্লাজের একটি কবিতা হচ্ছে, “আমি সে (স্রষ্টা) যাকে ভালোবাসি আমি। যাকে আমি ভালোবাসি সে আমি (স্রষ্টা)।” এ দাবি প্রত্যাহারের জন্য প্রচন্ডভাবে চাপ প্রয়োগ করা হলে  অস্বীকার করে তিনি বলেন, “যে সত্যের খোজ আমি লাভ করেছি তাকে মিথ্যা বলব কীভাবে?” যখন তাকে মৃত্যুদন্ডের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, সেখানে জড়ো হওয়া লোকদের দিকে তাকিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে এই প্রার্থনাটি তিনি করেন - “যারা তাদের ধর্মের প্রতি প্রবল ভাবাবেগের বশবর্তি হয়ে এবং তোমার আনুকূল্য লাভের আশায় এভাবে জড়ো হয়েছে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে, হে প্রভু তাদের মাফ করে দাও এবং তাদের প্রতি করুনা করো। আমার কাছে যথার্থই তুমি যা ফাঁস করেছো, যদি তাদের কাছে ফাঁস হতো, তারা এটা করত না, যা করছে। তাদের কাছে যা গোপন রেখেছ আমার কাছে তা গোপন না করলে আমাকে এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হত না।” (সুত্রঃ  ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর “অ্যা হিস্ট্রি অব গড” যেটি যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ বিক্রিত একটি বই।) ইসলামি বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদ মুজাদ্দিদ ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) যুক্তি দেখান, “হাল্লাজ ব্লাসফেমাসের (খোদাদ্রোহীতার) অভিযোগে অভিযুক্ত না হলেও তার কাজটি ছিলো অবিজ্ঞের মতো।” আনাল হক (আমি স্রষ্টা) অথবা ফানাফিল্লাহ (আত্মবিলুপ্তি) এসব ব্যপারে মুজাদ্দিদ আলফেমানি (রহঃ) এর অভিমত, “আধ্যাতিক সাধনার এক পর্যায়ে সাধক দেখতে পান সৃষ্টি এবং স্রষ্টাতে কোন বিভেদ নেই। সব কিছুতেই সে শুধু স্রষ্টাকে দেখতে পায়। এর পরের স্তরটি জিল্লিয়াত, যেখানে সাধক দেখতে পান সব কিছুই মহান আল্লাহ রব্বুলের নূরে (আলোতে/তরঙ্গে) দোল খেয়ে ফিরছে” নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডলের সব কিছুই আল্লাহ পাকের নূরে সৃষ্ট - অনেকের কাছে এটা প্রবাদও। “আল্লাহু নূরু ছামাওয়াতি অল আরদ” - আয়াতটির ব্যাখ্যায় অনেকে এরকমটি বুঝিয়ে থাকেন বা মনে করেন। মুজাদ্দিদ আলফেসানির (রহঃ) মতে, “আধ্যাত্মিক সাধনার তৃতীয় বা শেষ স্তরটি হচ্ছে আবদিয়াত, যে স্তরে সাধক বুঝবে আল্লাহ পাক মহা মহীয়ান, চির গরীয়ান। অনুভূতি দিয়ে তাকে ধরা যায় না। সব চিন্তা, অনুভূতি ব্যর্থ হয়ে তার দুয়ার হতে ফিরে আসে।”


স্পষ্টত এখানে লক্ষণীয় - অত্যাধুনিক কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের সাথে আধ্যাত্মিক সাধনা জগতের মধ্যকার এক গভীর যোগসুত্র আমাদের চোখে ভেসে উঠেছে। পদার্থ ও শক্তি দিয়ে গঠিত মহাবিশ্ব; শক্তি ও ভরের নতুন করে সৃষ্টি নেই, নেই কোন বিনাশ, আছে শুধু রুপান্তর। তার অর্থ সবই অবিনশ্বর।  এ সবই আবার অদৃশ্য জগতের থেকে আগত। আর সবই আলো/তরঙ্গ/নূর। সর্বত্রই স্রষ্টা বিরাজমান। সব চিন্তা, সাধনা, গবেষণা তার দুয়ার হতে ফিরে আসে। “তাকে জানা সম্ভব নয়। এটাই তাকে জানার একমাত্র পথ।” - প্রথম খলিফা আবুবকর (রাঃ)।মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ভাষায়, “নিশ্চই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্ত্বার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দুরভিসারি জিজ্ঞাসা সেখানে বিমুঢ় হয়ে যায় - বিজ্ঞানের সমাগত চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে, এই মহা বিশ্বের একজন নিয়ন্ত্রা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায় - কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।” বিশিষ্ট প্রানপদার্থবিদ ইবারসোল্ডের মতে, “বিজ্ঞানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা, পরমাণু, নক্ষত্র, ছায়াপথ, প্রাণ ও সকল অলীক গুণের অধিকারী মানুষ কেন রয়েছে এই প্রশ্ন কখনও ব্যাখ্যা করবে না। বিজ্ঞান এই মহাবিশ্বের জন্ম সম্পর্কে আপাত দৃষ্টিতে খুবই যুক্তিযুক্ত মহাপ্লাবনিক একটা তত্ত্ব দাঁড় করাতে পারে, তারই ফলে ছায়াপথ, নক্ষত্র, সবকটি গ্রহও পরমাণু সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করতে পারে। কিন্তু কোথা থেকে এই সৃষ্টির জন্য জড় পদার্থ আর শক্তি এসেছে এবং কেন এই মহাবিশ্ব এমনভাবে গঠিত ও সুশৃঙ্খলাবদ্ধ, সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা বা ধারনা বিজ্ঞানে জুটবে না।”

Thursday, May 2, 2024

ধর্মের সাথে বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবার কিনা নারীর সম্পর্ক!

 ধর্মের সাথে বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবার কিনা নারীর সম্পর্ক?

বিশ্বের ক'জন  ঐতিহাসিক এই সত্যিটা অবহিত/সজাগ  : আদি  বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আজ সারা বিশ্ব যা পেয়েছে তা মুসলিম জাতি এবং কোরাআনেরই সরাসরি  অবদান,ফসল-- আর কিনা 200 বছর পরে ইউরোপ বিশ্ব বিদ্যালয়ের মুখ দেখে--কেন এবং কিভাবে এসব ঘটে/ ঘটেছে ?

আরও অবাক করা একেবারেই বিস্ময়কর ঘটনা-- অন্য  কোন ধর্ম তাদের এবাদত/উপাসনা গৃহকে বিশ্বের সেরা বিশ্ব বিদ্যালয়ে উন্নীত করতে পারেনি।কিন্ত প্রাচীনতম প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  আদিতে মসজিদ ছিল।                                আরবিতে‘জুমলাহ’অর্থ বাক্য হলেও দুনিয়ার সব মুসলমান কুরআন পাকের বাক্যকে বাক্য (জুমলাহ) না বলে আয়াত বলে থাকে। আসলে আয়াত অর্থ নিদর্শন।যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধিক বিক্রীত বই হচ্ছে,ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়ের ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’। এতে বর্ণিত হয়েছে,‘কুরআন পাকে সব সময়ই বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আল্লাহ পাকের নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্য উদঘাটনের বিষয়কে আর এ কারণেই ইসলামের অনুসারীরা যুক্তি ও কারণকে এড়িয়ে না গিয়ে গভীর মনোযোগ এবং বিশেষকৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ করছে।এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পরে দেখা যায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারাল সায়েন্স) মুসলমানদের এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, যা কখনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ বা সংঘর্ষ ঘটায়নি।অথচ খ্রিষ্টান ধর্মে সেটা দেখা গেছে।’

           ‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’গ্রন্থে প্রফেসর রাও লিখেছেন, "কুরআন পাকে যতগুলো আয়াত মৌলিক ইবাদত সম্পর্কিত তার চেয়ে অনেক গুন বেশি সেই সম্পর্কিত আয়াত যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রকৃতি বা সৃষ্টিরহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা, পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের। আরবীয় মুসলমানেরা এইপ্রেরণায় প্রকৃতির রহস্য নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শুরু করে দিয়েছিলেন, যেটা বর্তমান সময়ের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও গবেষণার মূলনীতির ভিত্তি নির্মাণ করে, যা অজ্ঞাত ছিল গ্রিকদের কাছে।'' এটা কি ভাবে সম্ভব হয়েছে-পবিত্র কোরআন সরাসরিভাবেই বলছেঃ "যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে‏ গবেষণা করে, (তাঁরা বলে) হেআমাদের প্রভু, আপনি এসব কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সকল পবিত্রতা আপনার-ই। আমাদেরকে আপনি দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করুন"।[সূরাআলেইমরান,১৯১]

  আসল কথা হচ্ছেঃবাস্তবে কিন্ত প্রকৃতির সব কিছুই আল্লাহর নিদর্শন; যেমন বায়ু, পানি, গাছপালা, মাটি, প্রাণী, সমুদ্র, পাহাড় এবং আরো কত অগণিত জিনিস। এসবই আল্লাহ পাকের বিশেষ উপহার। এগুলোর কোনো কিছুই মানুষ বানাতে পারে না, তেমনি কিন্ত কুরআন পাকের কোনো বাক্যের সমতুল্য কোনো বাক্যও মানুষের পক্ষে বানানো সম্ভব হয়নি বা নয়। জগতের সব মুসলমান কুরআনের বাক্যকে শুধু ‘বাক্য’ না বলে এ কারণে ‘আয়াত’(আল্লাহ পাকের নিদর্শন) বলে অভিহিত করেন বলে উল্লেখ করেছেন ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার বই ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’এ; বইটি আমেরিকায় সর্বাধিক পঠিত বইয়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত। আজকের বিজ্ঞানের উদ্ভাবক একটি ধর্ম, এই ঐতিহাসিক রেকর্ডটি সংরক্ষিত রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগার ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’-এ।আসলে ঐতিহাসিকভাবে আদিতে বিজ্ঞান বলতে শুধু পদার্থবিজ্ঞানকে বোঝানো হতো। বর্তমানেও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, তত্ত্ব এবং আবিষ্কৃত কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি ব্যতিরেকে বিজ্ঞানের অপরাপর শাখাগুলো হয় ‘ভোঁতা’, না হয় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, রোবট, ইন্টারনেট অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সব কিছু প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পদার্থবিজ্ঞানেরই ফসল বা অবদান।                         প্রাণ পদার্থবিজ্ঞান, ভূপদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি হরেকরকম নামকরণ থেকে সহজেই ধারণা করা যায়, মূল বিজ্ঞান পরিবারে পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থান তার কেন্দ্র বিন্দুতে। চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় জন্স হপকিন্সে প্রাণ পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করেছি কিন্তু কোথাও শুনিনি, দেখিনি, পাইনি পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবক একটি ধর্ম! বিশ্বের সচেতন এবং অভিজ্ঞ মহল অবগত যে, রসায়ন, গণিত এবং জ্যোতিষশাস্ত্রে ইসলামের অনুসারীরা অভূতপূর্ব যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন, কিন্তু একই সাথে পদার্থবিজ্ঞানের ও উদ্ভাবক ইসলাম ধর্ম এ রেকর্ডটি কোথায় লিপিবদ্ধ রয়েছে তা দেখার জন্য লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে ঘুরে আসা যেতে পারে। ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই পাঠাগারের সব বই ওয়াশিংটন ডিসির তিনটি ভবনে সংরক্ষিত। ১৮৯৭ সালের জেফারসন ম্যাগনিফিসেন্ট ভবনটি শুধু দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিশাল সংগ্রহশালার মধ্য থেকে ২০০টি ঐতিহাসিক পুস্তক ভবনটির দ্বিতীয় তলার ট্রেজারি গ্যালারিতে সংরক্ষিত রয়েছে।এই তলার মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ। গম্বুজের মধ্যে একেকটি চিত্রের নিচে একেকটি দেশের নাম। ব্যতিক্রম চোখে পড়ল, এত দেশের মধ্যে এক স্থানে শুধু একটি ধর্মের নাম। কোন দেশ কী উদ্ভাবন করেছে, সেটি গাইড আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। দেশের নামের বদলে যে চিত্রের নিচে ‘ইসলাম’ লেখা ছিল, সেটি দেখিয়ে গাইড আমাদের বললেন, এটার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবন করেছে ইসলাম ধর্ম।ওই সময়ে বাল্টিমোরে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকার বার্ষিক সম্মেলন চলছিল।প্রফেসর রাওয়ের লেখা ‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ বইটি হাতে পাই।লেখকের বর্ণনা মতে, রবার্ট ব্রিফল্ট তার বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য মেকিং অব হিউম্যানিটিতে অনেক উদাহরণ পরিবেশন করে সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে- ‘আমাদের বিজ্ঞান আরব মুসলমানদের কাছেঋণী শুধু এটুকুর জন্য নয় যে,বিজ্ঞানকে তারা কেবল চমকপ্রদ আবিষ্কার অথবা বৈপ্লবিকবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপহার দিয়েছে বিজ্ঞান আরবীয় সংস্কৃতির কাছে আরো অনেক বেশি ঋণী বিজ্ঞান তার নিজের অস্তিত্বের জন্য ঋণী।’ একই লেখক কথাটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, গ্রিকরা নিয়মাবদ্ধ ও সর্বজনীন করা এবং তত্ত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ বাতলে দিয়েছিল,কিন্ত ধৈর্য ধরে গবেষণার পদ্ধতি, সন্দেহাতীত জ্ঞানকে পুঞ্জীভূতকরণ, বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষুদ্রব্যাপারেও বিশদ পরীক্ষণ পদ্ধতি, বিস্তারিত ও দীর্ঘ প্রসারিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষামূলক অনুসন্ধানএসবই গ্রিক মানসিক ধাত বা মেজাজে ছিল বহিরাগত। আমরা যেটাকে আজ বিজ্ঞান বলি, তার উত্থান ইউরোপে হয়েছিল নতুন পদ্ধতি গবেষণার ফলে এবং পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপন ও গণিতশাস্ত্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে পদ্ধতিগুলো গ্রিকদের কাছে অজানা ছিল... ইউরোপকে আরবীয় মুসলমানেরা এসব মূলনীতি ও পদ্ধতিগুলো পরিচয় করিয়ে দেয়। রবার্ট ব্রিফল্ট যেসব উদাহরণ থেকে এই মন্তব্যে পৌঁছেছেন সেসবের মধ্যে রয়েছে : মুসলিম উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইবনে বতুতা বিশ্বের সব অঞ্চল থেকে উদ্ভিদ সংগ্রহ করে যে গ্রন্থ লিখেছেন সেটিকে World famous : The Giant Bible & The Giant Bible of Maing-তে অধ্যবসায়ের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অপর দিকে আল বিরুনি ৪০ বছর ভ্রমণ করেছিলেন মানিকবিদ্যা সম্পর্কিত (মিনারোলজি) নমুনা সংগ্রহের জন্য এবং মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত চালিয়েছেন, যেসব পর্যবেক্ষণ ১২ বছর দীর্ঘায়িত হয়েছিল। পক্ষান্তরে অ্যারিস্টটল পদার্থবিজ্ঞানের ওপর একটি বই লিখেছেন, এমনকি কোনো পরীক্ষা না চালিয়েই এবং প্রকৃতির ইতিহাসের ওপর গ্রন্থ রচনা করেছেন একেবারেই নিশ্চিত না হয়ে, অসতর্কতার সাথে বলেছেন প্রাণীদের চেয়ে মানুষের অর্ধেক দাঁত রয়েছে এ তথ্য অতি সহজেই অনুসন্ধান করা যেত। গ্যালেন, যিনি ক্লাসিক্যাল অ্যানাটমির নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ, জানিয়েছিলেন যে নিচের চোয়াল দু’টি হাড় দিয়ে গঠিত। এ প্রতিবেদনটি শতাব্দী ধরে গ্রহণ করে নেয়া হয়েছিল একেবারে কোনো আপত্তি ছাড়াই, যখন পর্যন্ত না আবদুল লতিফ কষ্ট স্বীকার করে মানুষের কঙ্কাল পরীক্ষা করে এর সত্যমিথ্যা যাচাই করলেন। নিচের তালিকা বলে দিচ্ছে বিজ্ঞান জগতে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানঃ

* রসায়নের জনক— জাবির ইবনে হাইয়ান

* বিশ্বের সেরা ভূগোলবিদ— আল-বিরুনি

* আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক— ইবনে সিনা

* হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল আবিষ্কারক—ইবনুল নাফিস

* বীজগণিতের জনক— আল-খাওয়ারিজমি

* পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী— আল-ফারাবি

* আলোক বিজ্ঞানের জনক— ইবনে আল-হাইসাম

* এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক— ওমর খৈয়াম

* সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী— আল-কিন্দি

* গুটিদবসন্ত আবিষ্কারক— আল-রাযী

* টলেমির মতবাদ ভ্রান্ত প্রমাণকারী —আল-বাত্তানি

* ত্রিকোণমিতির জনক — আবুল ওয়াফা

* স্টাটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা — ছাবেত ইবনে কোরা

* পৃথিবীর আকার ও আয়তন নির্ধারণকারী—বানু মুসা

* মিল্কিওয়ের গঠন শনাক্তকারী — নাসিরুদ্দিন তুসি

* এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী — আবু কামিল

* ল’ অব মোশনের পথ প্রদর্শক— ইবনে বাজ্জাহ

* ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক — ইবনে ইউনূস

* পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী— আল-ফরগানি

* পৃথিবীর প্রথম নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কনকারী— আল-ইদ্রিসী

* বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবিষ্কারক —আল-জাজারি

* সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমাণকারী—আল-জারকালি

* বীজগণিতের প্রতীক উদ্ভাবক — আল-কালাসাদি

   স্পষ্টত ঐতিহাসিক বাস্তবতা বলছে, ধর্ম বিজ্ঞানবিরোধী এবং এ দুয়ে সহাবস্থান সাংঘর্ষিক, অন্যান্য ধর্মের সাথে এ ধরনের বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলেও ইসলামের ব্যাপারে এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, সত্যিকার বিজ্ঞান বলতে আজ আমরা যেটাকে বলে থাকি এবং বুঝে থাকি, ঐতিহাসিক রেকর্ড প্রমান করছে, প্রকৃতপক্ষে ইসলামের অনুসারীরাই সেই আদি বিজ্ঞানের উদ্ভাবক।

    আবার ইতিহাস বলছে, বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৮৫৯সালে একটি মসজিদের অংশ হিসেবে।মরক্কোর এই কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয়টি হচ্ছে ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্বেরপ্রথমবিশ্ববিদ্যলয়। গিনেস বুকের রেকর্ড অনুসারেও মরক্কোর ফেজ নগরীর কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়।ফাতেমা নামে এক মহীয়সী নারী পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সব অর্থ ব্যয় করেছিলেন তার সমাজের লেখকদের জন্য একটি মসজিদ তৈরির পেছনে এই মসজিদ হয়ে ওঠে ধর্মীয় নির্দেশনা এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোচনার স্থান।মসজিদটি পুরোপুরি নির্মাণে লেগে যায় ২৭৮ বছর। পৃথিবীর সর্বপ্রথম কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও দুইশত বছরের অনেক পরে ইতালির বোনায় ১০৮৮ সালে প্রথম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।তারও আগে কারওয়াইন হয়ে ওঠে এক বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। ফেজকে তখন বলা হতো ‘বাগদাদ অব দ্য ওয়েস্ট’। ইন্টারনেটের বক্তব্যঃ The oldest existing, and continually operating educational institution in the world is the University of Karueein, founded in 859 AD in Fez, Morocco. The University of Bologna, Italy, was founded in 1088 and is the oldest one in Europe.

  বৃটিশ গোয়েন্দা ও লেখক উইলিয়াম হান্টার তার দি ইন্ডিয়ান মুসলমান্স বইতে লিখেছেন, মুর্শিদাবাদের মতো এমন সুন্দর নগরী সেকালে ইউরোপে ছিল না। তিনি আরো লিখেছেন, দিল্লীর এক মাদ্রাসা শিক্ষকের সাথে আলাপ হলো। অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি তিনি। বিজ্ঞান, দর্শনসহ সব বিষয়ে এমন পন্ডিত ব্যক্তি আমি খুব কম দেখতে পেয়েছি। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে স্বনামধন্য আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মূলত আদিতে ছিল একটি মসজিদ। একটি মসজিদ হিসেবে এটির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক ভাবে এটি বিশ্বের প্রাচীনতম দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় । প্রাচীনতম প্রাথম এবং দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুটি ই তা আবার ইসলামের ইবাদত গৃহে । 

যেহেতু মসজিদ জ্ঞানচর্চার মূলকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো এটি ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয়ে শেষে একটি বিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।‘ইসলামের এক গৌরবময় কীর্তি হচ্ছে কুরআন, হাদিস ও মুসলিম বিধানশাস্ত্র ফিকাহর অধ্যয়ন অনুশীলনের অনুরূপ অন্যসব জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনাকেও সমান আসন ও মর্যাদা দিয়েছে এবং মসজিদের মধ্যেই তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’ পাশ্চাত্য চিন্তাবিদের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্টত উপলব্ধি করা যায় দুনিয়ার সুখ, কল্যাণেরজন্য মুসলমানেরা কাজ করছে আর তার বিনিময়ে আখেরাতের কল্যাণ লাভে তারা সফল হবে। ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে মেকিং লাভের জন্য পুরস্কৃত হবে’ রাসূলুুল্লাহ সা:-এর কাছ থেকে এ কথা শোনার পর সাহাবিরা জানতে চাইলেন, ‘যে কাজে আমরা সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি এবং মজা পাই তাতেও আমরা প্রতিদান পাবো?’ উত্তরে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তোমরা যদি এটা অনির্ধারিত পন্থায় নিতে তাহলে কি সে জন্য শাস্তি পেতে না?’ জবাবে উপস্থিত সাহাবিরা যখন বললেন ‘অবশ্যই পেতাম’, শুনে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তোমরা যে নির্ধারিত পন্থায় এটা উপভোগ করছো, সে জন্য তোমাদের পুরস্কৃত করা হবে।’ ইসলামে এমনকি জ্ঞানীদের ঘুমকেও ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লেখক:সাবেক শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।