আজকের বিশ্বের আটশো কোটির সব্বারই মা বাবা মাত্র কিনা একজনই ।
₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹₹€€€€€€€€€
সর্বশেষ বিজ্ঞান:বিশ্বের জনসংখ্যা আটশ কোটি ছাড়িয়েছে। আমাদের সব্বারই পিতা-মাতা মানে
আটশো কোটির কেবলমাত্র একজন মা ই নন, সবার বাবা ও কিন্ত একজনই মাত্র।
এ বছর জানুয়ারি তে বিশ্বে জনসংখ্যা আটশ কোটিতে পৌছেছে।আর সর্বশেষ বিজ্ঞান হচ্ছে: আমাদের মা-বাবা অদ্বিতীয় তার অর্থ আমরা সবাই ভাই-বোন, নিগ্রো-ককেশিয়ান এক বাবা- মায়েরই সন্তান। বিশ্ব ইতিহাসে সাড়া জাগানো ডারউইনের বিপ্লবী বিবর্তনবাদের সুত্র ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে আসছিলেন মানব জাতির পূর্বপুরুষদের এ ধরা পৃষ্ঠে আবির্ভাব হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে। বিবর্তনের ধারা হিসেবে তার অর্থ দাঁড়ায় আমাদের পূর্ব পুরুষদের সংখ্যা স্বভাবতই হবে অগনিত। বেবুন, গরিলা, শিম্পাঞ্জী, ওরাংওটাং এমনি সব প্রজাতির এক ধাপ হতে অপর ধাপে উত্তোরনের মাধ্যমে বিবর্তনের শেষ ধাপ ছিল আমাদের। তাই ধরে নেওয়া হয়েছিল আমাদের আদি মা-বাবার সংখ্যা ছিল অসংখ্য,অগনিত যার কারনে বলা হতো জাতিতে জাতিতে, বংশ ও গোত্রের মধ্যে কাঠামোগত, আকৃতিগত, চর্মবর্ণ, চুলের রঙ ইত্যাদিতে এত পার্থক্য। এতদিনের বিবর্তনের এসব জল্পনা কল্পনাকে ভেস্তে দিয়ে বিজ্ঞানাগারে প্রমাণিত হলো :-আমাদের মা-বাবা অদ্বিতীয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কী তা হলে বিবর্তনের ফসল নই? না কী ভীনগ্রহ, সেই পৌরাণিক বেহেশত থেকে আমাদের পূর্ব পুরুষদের আগমন?
গবেষণায় একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যা এএফপি, আল-জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর ১৯ অক্টোবর ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ১৮ লাখ বছরের পুরোনো একটি খুলির ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, মানুষের পূর্বসূরি আদি প্রজাতি (হোমিনিড) আসলে তিনটি নয়, বরং একটিই ছিল।
সায়েন্স সাময়িকীতে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
২০০৫ সালে জর্জিয়ার দামিনিসি প্রত্নস্থলে খুবই ভালো অবস্থায় থাকা পাঁচটি হোমিনিড খুলি উদ্ধার করা হয়। এগুলোর একটির সঙ্গে ২০০০ সালে পাওয়া একটি চোয়ালের হাড় ঠিকঠাক মিলে যায়। এতে একটি পরিপূর্ণ খুলি নিয়ে গবেষণার সুযোগ পান বিজ্ঞানীরা। ওই খুলির ধারকের মস্তিষ্কের আকার ছিল আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
সংশ্লিষ্ট গবেষক এবং সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত অ্যানথ্রোপলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞ মার্সিয়া পোন্স দো লিয়ঁ বলেন, চোয়াল জুড়ে সম্পূর্ণ করা খুলিটি হচ্ছে ওই যুগের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ করোটি।
গবেষকেরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেন, হোমিনিডের পাঁচটি খুলির গঠনে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। অথচ সেগুলো একই সময়ের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তবে কিছু পার্থক্যের কারণে সেগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা খুলিগুলোর চোয়াল, ভ্রু ও গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক পার্থক্য বিশ্লেষণ করেন। এতে সবগুলো খুলি একই প্রজাতিভুক্ত আদি প্রাণীর হতে পারে বলে জোরালো সম্ভাবনা দেখা যায়।
*************************
বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল নিউজ উইক জানুয়ারী ১১, ১৯৮৮ সংখ্যায় ‘আদম হাওয়ার অনুসন্ধানে’ শিরোনামে একটি নাতিদীর্ঘ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। (বিঃ দ্রঃ ২০০১ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়ার একটি টকশোতে জানতে পারি ১১/১/১৯৮৮ সংখ্যার নিউজউইকের কথাটি। আমি ডাইরীতে নোট করি। স্থানীয় এক লাইব্রেরী থেকে আমি প্রবন্ধটির কপি সংগ্রহ করি)
প্রবন্ধটির মূল বক্তব্যটি ভাষান্তর করা হচ্ছেঃ
আমাদের এজমালী মা: “পৌরাণিক কাহিনীর বর্ণনাকারীদের উপাখ্যান এখন বিজ্ঞানীদের মৌলিক গবেষণার ফলাফলের সাথে একীভূত হতে যাচ্ছে। আমরা সবাই অতীতের একস্থানে অভিন্ন পূর্ব-পুরুষের অংশ ভাগ করি।” এ আবেগময় বক্তব্যটি করেছেন নিউজ উইকে প্রকাশিত নিবন্ধ ‘The Search for Adam and Eve’ – এর লেখকেরা। তারা আস্থার সাথে বলেছেন, ‘এই সময়ে কিন্তু এই প্রমাণগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে যারা গবেষণা করেছিলেন আফ্রিকার চিড়ধরা শুষ্ক উপত্যকায় না বসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যামেরিকান ল্যাবরেটরিতে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, আমাদের সার্বজনীন মা হচ্ছেন এক মহিলা, যিনি ধরাপৃষ্ঠে দুই লাখ বছর আগে বাস করতেন এবং রেখে গেছেন ‘জিন’ যেটি মানবজাতির সবাই নিজ দেহে বহন করে চলছে। বর্তমান পৃথিবীতে যত লোক বসবাস করছে সকলেই এসেছে তার থেকে।’
আণবিক জীববিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীরা তল্লাশি চালিয়েছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে বিভক্ত বিভিন্ন শ্রেণীর জিনের মাঝে। আর পরীক্ষা করে তাদের মধ্য থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন একটি ডিএনএ, যেটা আমাদেরকে একজন মাত্র মহিলার দিকেই নিয়ে যায় – যার কাছ থেকে আমরা সবাই এসেছি।
আমাদের এজমালি মাকে খুজে বের করার লক্ষ্যে গবেষক রেবেকা ক্যান ১৪৭ জন গর্ভবতী মহিলাকে রাজী করান তাদের গর্তের ফুল বিজ্ঞান কেন্দ্রে দেওয়ার জন্য। তিনি বার্কলের উইলসন ল্যাবে জীব বিজ্ঞানী মার্ক স্টোন কিং-এর সাথে কাজ করছিলেন। ক্যান বাছাই করেন কিছু আমেরিকান মহিলাকে যাদের পূর্ব পুরুষ এসেছিলেন আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে। নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ায় তার সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করছিলেন তারা খুজে পেলেন সেখানকার আদিবাসীদের। শিশুরা জন্ম নিল, গর্ভের ফুল সংগ্রহ করে হিমায়িত করা হলো এবং বার্কের উইলসন ল্যাবে বিশ্লেষণ করা হলো। ব্লেন্ডারের সাহায্যে টিস্যুগুলো পরিণত করা হলো স্যুপে। সেন্ট্রিফিউজ কোষ বিভাজন ডিটারজেন্টের সাথে মেশানো হলো, স্ফুর জ্যোতিময় দিয়ে শুকিয়া আবারো সেন্ট্রিফিউজ করা হলো। ফলে পাওয়া গেলো স্বচ্ছ তরল পদার্থ যেটা ছিলো ডিএনএ-র খাঁটি উপাদানে তৈরী। বিস্ময়কর ব্যপার যেটা নজরে পড়ল, তা হচ্ছে এই ডিএনএ সেই ডিএনএ নয় যা শিশুর দেহকোষের নিউক্লিয়াসে এবং শিশুর দৈহিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারন করে থাকে। এটি উত্তরাধিকার সূত্রে আসে কেবল মা থেকে,বার্কলের গবেষকগণ প্রতিটা ডিএনএ নমুনাকে টুকরো টুকরো করে কর্তন করলেন যাতে এগুলোকে অপর সব শিশুর ডিএনএ-এর সাথে তুলনা করা সম্ভব হতে পারে। যে ফল পাওয়া গেল, তাতে দেখা যায় বিভিন্ন জাতির মধ্যকার পার্থক্যটা বিস্ময়কররুপে অতি সামান্য। স্টোন কিং বলেন “বিভিন্ন জাতির মধ্যে জেনেটিক পার্থক্যটা বাস্তবিকই খুব কম হয়ে থাকে।”
নিউগেনিদের ডিএনএ তে দেখা গেল তাদের ডিএনএ অপরাপর নিউগেনিদের চেয়ে বরং আর সব এশিয়ানদের ঢের বেশি কাছের। এটা অদ্ভুত মনে হতে পারে জাতি অথবা বংশগত বাস্তব পার্থক্য সত্ত্বেও। বাস্তবে দেখা যায়, জাতিগত অনেক পার্থক্যই মূলত গতানুগতিক, নিতান্ত সাধারণ।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, মানুষের ত্বকের রঙ কালো হয়ে থাকে আবহাওয়ার সাথে বড় ধরণের সামঞ্জস্যতা রেখে। আফ্রিকানদের কালো রঙ সূর্যের রশ্মি প্রতিরোধের জন্য হয়ে থাকে। তেমনি ইউরোপিয়ানদের গায়ের রঙ সাদা হওয়ার কারন হচ্ছে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ যেটা ভিটামিন ‘ডি’ তৈরিতে সাহায্য করে। ত্বকের রঙ্গের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হয় কয়েক হাজার বছরের। পক্ষান্তরে শত শত হাজার বছরের দরকার পড়ে ব্রেইন সাইজের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে। প্রতিটি শিশুর ডিএনএ গঠন শেষ পর্যন্ত মিলে যায় একজন মাত্র মহিলার সাথে। জেনেটিক উত্তরাধিকার এমন একটি বিষয় যেটা এমনকি পরিসংখ্যানবিদদের কাছেও তেমন বিস্ময়কর কিছু নয়। উইলসন ল্যাবের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘অবশ্যই একজন ভাগ্যবান মা ছিলেন।’ ইলোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডগলাস অলেস পরিচালিত গবেষণায় একদল প্রজনন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন যোগসূত্র থেকে ধারণা করেন, দুনিয়ার প্রথম এই মহিলার আবির্ভাব হয়ে থাকবে এশিয়া মহাদেশে। বিশ্বের ৪টি মহাদেশে ৭শ’ মানুষের রক্ত থেকে সংগৃহীত মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-এর উপর ভিত্তি করে তারা এ সিদ্ধান্তে পৌছেন। ‘ডিএনএ’ টুকরো টুকরো করে খণ্ডিত করার জন্য তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন এবং সেগুলোকে বংশ তালিকায় সাজান। এই তালিকা পরিশেষে অতীতের একজন মহিলার কাছে গিয়ে থেমে যায় যিনি দেড় থেকে দু’লক্ষ বছর আগে এই ধরাপৃষ্ঠে বসবাস করতেন, তাদের হিসেবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্ম বিজ্ঞানী স্টেফন জে গোল্ডের মতে, “এটা আমাদের এই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করে যে, বিশ্বের সব মানুষ তাদের বাহ্যিক ও আকৃতির পার্থক্য সত্ত্বেও একটা মাত্র সত্ত্বা থেকে এসেছে এবং মানব বংশের উৎপত্তি খুব কাছের একটি মাত্র যায়গায়। সব মানুষের মধ্যে জীবতাত্ত্বিক ভ্রাতৃত্ববোধ অনেক বেশি গভীর, যার ধারণা আগে কখনো ছিলো না।”
************************
যুক্তরাষ্ট্রের
দৈনিক বাল্টিমোর সান পত্রিকা Geneticists Reveal Human Family Trees শিরোনামে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে। আমি এখানে তার ভাষান্তর করছি।
মানবজাতির পিতাঃ
*****************
মানব দেহের জীবকোষে যে ‘Y’ – ক্রোমোজম রয়েছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে এমন সঙ্কেত পাওয়া যায় যে, গোটা মানবজাতির আদি পিতা মাত্র একজন। গবেষণার এই রিপোর্টটি উদঘাটন করেছে, আজকের প্রত্যেকটি পুরুষ যে ‘Y’ -ক্রোমোজম ধারণ করছে, তার লক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট এটি এসেছে একজন মাত্র পুরুষের কাছ থেকে, যিনি এ পৃথিবীতে বাস করতেন প্রায় এক লক্ষ নব্বই হাজার বছর আগে।
এ নতুন গবেষণার ফলাফল এ ধারণাটাই সমর্থন করে, আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল পৃথিবীর মাত্র একটা স্থানে। এ পুরনো ধারণা আর সঠিক নয় যে, পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের একাধিক স্থানে মানবজাতির পূর্ব পুরুষদের উদ্ভব ঘটেছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আগে বিশ্বাস করা হতো। ডারউইনের ঐতিহাসিক বিবর্তনবাদ অনুসারে অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করতেন, আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়ে থাকবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে। ‘Y’ - ক্রোমোজম হচ্ছে মানব বংশানুগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক উপাদান ‘জিন’ যে চব্বিশ প্রকার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সুতা দিয়ে গঠিত তার একটি হচ্ছে এটা একমাত্র পিতা থেকে পুত্রের দেহে সঞ্চারিত হয়। গবেষক মি. হেমার ‘Y’ - ক্রোমোজম এর অতি ক্ষুদ্র অংশের গঠনের বিশদ তুলনা করেন। সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিলো বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে লালিত ৮ জন আফ্রিকান, ২ জন অস্ট্রেলিয়ান, ৩ জন জাপানি এবং ২ জন ইউরোপীয়দের কাছ থেকে। গবেষকদের মনে যে ধারণাটি কাজ করছিল তা হলো – বিভিন্ন জাতির মধ্যে ক্রোমোজম-এর সামগ্রিক বিন্যাসের রকমফের কেমন ভিন্নরুপ গ্রহণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করা। তারপর নির্ণয় করা, যে বৈচিত্র ধরা পড়ল তার বিবর্তনের জন্য কতটা সময়ের দরকার। যে ফল পাওয়া গেল, তাতে দেখা যায়, যত মানব সন্তান আজকের দুনিয়ায় বসবাস করছে, তাদের সকলেরই ‘Y’ – ক্রোমোজম-এর যোগসূত্র মেলে কেবলমাত্র একজন পুরুষের সাথে যিনি জীবিত ছিলেন এক লক্ষ আটাশি হাজার বছর আগে।
No comments:
Post a Comment