ইসলাম: বিজ্ঞান চর্চা ও সময়ের challenge.
***1001 Inventions করেছে মুসলিম সভ্য তা।
***প্রচলিত আজকের বিজ্ঞানের Invention করেছে মুসলিম জাতি যে রেকর্ডটি ওয়াসিংটন ডিসি লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে রয়েছ ।
#@&#@&#@&#@&#@&#@#
যুগ যুগ ধরে মুসলিম বিশ্বে এই প্রচলিত ধারণা এবং বিশ্বাস দানা বেঁধে আছে যে, ইসলামে ইলম তথা জ্ঞান অর্জনে যে ছওয়াব লাভের সুযোগ রয়েছে তা কেবলমাত্র কোরআন, হাদীস এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যদিও একজন ধার্মিক মুসলমানকে তার নিজের এবং সমাজের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনে চিকিৎসা প্রকৌশল, কৃষি, জীব, রসায়ন ইত্যাদি বিজ্ঞানের সকল শাখার যে কোনটির উপরে ব্যাপক অধ্যয়ন, অনুশীলন ও গবেষণা চালাতে হতে পারে অথবা হতে বাধ্য হতে হয় কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাধারণত দেখা যায় হয়ত তিনি জানেন না/খোঁজ রাখেন না বা তার কাছে ব্যাখ্যা করে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয় না যে, নিজ জীবনে ধর্মের প্রয়োজনীয় জ্ঞানলাভের পর ব্যবহারিক জীবনের প্রয়োজনের স্বার্থে এই জ্ঞান অর্জনেও কোরআন-হাদীস পড়ার মত একই রকম হওয়াবের অধিকারী হওয়া যেতে পারে। একজন সুফি সাধক মুজাদ্দেদ ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) 'খুলুকে মুসলিম' গ্রন্থে তাঁর সেই মধ্য যুগে বসে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, 'অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কতিপয় লোক ইলম অর্জনকে শুধু কোরআন-হাদীসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান। অথচ যে বিদ্যা মুখের জীবন ধারণ হয় এবং জীবনের উপাদান গৃহীত হয় তা কোন অংশেই কম মূল্যবান নয়। কোন মুসলমান যদি প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষা শেষে মানুষের মঙ্গল চিন্তা করে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে, তবে সে ধর্মীয় শিক্ষারই ছওয়াব লাভ করবে।' হাদীস শরীফে আছে, 'জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র।' আধুনিককালে জীবনযাত্রায় মুসলিম বিশ্ব যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় বাদবাকি বিশ্বের সাথে দারুণভাবে মার খেয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য অগত্যা অনন্যোপায় হয়ে আত্মঘাতী শহীদের রক্তকে মনে করে নিতে বাধ্য হচ্ছে বেশী পবিত্র, মুসলিম জাতির সেই ক্রান্তিলগ্নে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদের অতিসম্প্রতিক বক্তব্য ইমাম গাজ্জালীর কথার কেবলই প্রতিধ্বনি যদিও রয়েছে, যুগের বিস্তর ব্যবধান। ।
তার বক্তব্যটি হচ্ছে- 'বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সহজেই নির্যাতন ও যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ ভ্রান্ত ধর্মীয় শিক্ষা যা তাদের পশ্চাৎপদ করে রেখেছে। সারা দুনিয়ার মুসলমানরা আল্লাহর কাছে ইরাকি মুসলমানদের রক্ষা করতে মোনাজাত করে। কিন্তু তাদের প্রার্থনার জবাব আসেনি। এর কারণ এই নয় যে, আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে পরিত্যাগ করেছেন; করং এর কারণ তারা জ্ঞান এবং যোগ্যতায় উন্নত বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারেনি। প্যালেস্টাইনের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা শহীদ হিসেবে বহু মুসলমানের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু যারা বিজ্ঞান, গণিত, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় অধ্যয়ন করেন তাদের কাছে এর কোনই মূল্য নেই। মুসলমানরা ইসলামের সঠিক পথ বেছে না নিয়ে বর্তমানে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করে নিজেদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।' কিন্তু পশ্চাৎপদ কিছু গোঁড়া লোক সব যুগে বিজ্ঞান চর্চাকেও ইলম-এর অন্তর্ভুক্ত করতে প্রস্তুত না থাকলেও ইসলামের ঊষাকালে আমরা বিজ্ঞান অনুশীলন ও গবেষণার এক উজ্জ্বল চিত্র দেখতে পাচ্ছি। ইতিহাসে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসারীরা তাদের পবিত্র ইবাদত গৃহকে বিজ্ঞান চর্চা র কাজে ব্যবহার করেনি ।অনেকে রয়েছেন যারা বিজ্ঞান চর্চার কাজে নিয়োজিত থাকার পরও প্রচলিত ধারণার বশবর্তী হয়ে স্বভাবতই মনে করেন না বা একেবারে ওয়াকিবহাল ও নন যে, তারাও ধর্মীয় ইলমের মত এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের কাজে নিবেদিত রয়েছেন। বিষযটি আলোকপাতের পূর্বে আমরা প্রথমে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি: ইসলাম ধর্মের ইবাদতের এই ইউনিক কৌশল ও পন্থায় আজকের প্রচলিত মডার্ন সাইন্স কিভাবে প্রভাবিত এবং উপকৃত হয়েছে। 'ইসলামের এক গৌরবময় কীর্তি হচ্ছে- কোরআন, হাদীস ও মুসলিম বিধান শাস্ত্র ফিকহার অধ্যয়ন-অনুশীলনের অনুরূপ অন্যসব জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনাকেও সমান আসন ও মর্যাদা দান করেছে এবং মসজিদের মধ্যেই তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।'- পাশ্চাত্য চিন্তাবিদের ইসলামের উপর এ ধরনের স্মরণীয় ঐতিহাসিক মূল্যায়ন থাকার পরেও দুর্ভাগ্যবশত অনেক আল্লাহভীরু মুসলমান ইসলামের সামগ্রিক ইবাদতে বিজ্ঞান গবেষণার বিষয় টি একেবারেই ওয়াকেফহাল নন। ইসলাম ধর্মে এটি এত বেশী গুরুত্ব ও মর্যাদা পেয়েছে যে, এটি মসজিদের মত একটি পবিত্র যায়গাতেও আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছিল।বিস্ময়কর মনে হলেও ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে: আজকের বিজ্ঞান এমনকি তার নিজ অস্তিত্বের জন্য একান্তভাবে ঋণী ইসলামের ইবাদতের এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কাছে। রবার্ট ব্রিফল্ট তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ, 'দি মেকিং অফ হিউম্যানিটি'-তে অনেক উদাহরণ পরিবেশন করে সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে, 'আমাদের বিজ্ঞান আরব মুসলমানদের কাছে ঋণী শুধু এতটুকুর জন্য নয় যে, বিজ্ঞানকে তারা কেবলমাত্র চমকপ্রদ আবিষ্কার অথবা বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপহার দিয়েছে। বিজ্ঞান আরবীয় সংস্কৃতির কাছে আরও অনেক বেশী ঋণী- বিজ্ঞান তার অস্তিত্বের জন্যই ঋণী।' এই একই লেখক তার বক্তব্যটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, 'গ্রীকরা নিয়মাবদ্ধ ও সর্বজনীন করা এবং তত্ত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ বাতলিয়েছেন কিন্তু ধৈর্য ধরে গবেষণার পদ্ধতি, সন্দেহাতীত জ্ঞানকে পুঞ্জীভূতকরণ, বিজ্ঞানের প্রতি ক্ষুদ্র ব্যাপারেও বিশদ পরীক্ষণ পদ্ধতি, বিস্তারিত ও দীর্ঘ প্রসারিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান এসব কিছুই গ্রীক মানসিক ধাত/মেজাজে ছিল বহিরাগত, আমরা যেটাকে বিজ্ঞান বলে থাকি তার উত্থান ইউরোপে হয়েছিল নতুন পদ্ধতির গবেষণার ফলশ্রুতিতে এবং পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপন এবং গণিত শাস্ত্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে পদ্ধতিগুলো গ্রীকদের কাছে অজানা ছিল...।
এসব মূলনীতি ও পদ্ধতিগুলো ইউরোপকে আরবীয় মুসলমানরা পরিচয় করিয়ে দেয়।' এখানে লেখকের এই উক্তি 'আমরা যেটাকে বিজ্ঞান বলে থাকি..... যার সমর্থন মিলে বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ লাইব্রেরী, লাইব্রেরী অফ কংগ্রেসের একটি রেকর্ড থেকেও। ওয়াশিংটনে অবস্থিত এই লাইব্রেরীর জেফারসন বিল্ডিং-এর (যেটি একমাত্র বিল্ডিং, যেটা দর্শনার্থী এবং পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত) গম্বুজের ভিতরে অংকিত শিল্পকর্মের মাধ্যমে দেখান হয়েছে, পদার্থ বিজ্ঞানের উদ্ভাবন করেছে ইসলাম। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্যঃ বিভিন্ন বস্তু বা বিষয় ইনভেনশনের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশের নাম এক একটি শিল্পকর্মের নিচে লেখা থাকলেও একমাত্র ইসলাম ছাড়া অপর কোন ধর্মের নাম সেখানে নেই। বিজ্ঞানের বিকাশ পদার্থ বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমেই শুরু। হয়। তাই আদিতে মূল বিজ্ঞানকে পদার্থ বিজ্ঞান রূপে বিবেচনা করা হত। 'পদার্থ বিজ্ঞানের উদ্ভাবন করেছে ইসলাম'- লাইব্রেরী অফ কংগ্রেসের এই রেকর্ডের সাথে রবার্ট ব্রিফন্টের আমরা যেটাকে আজ বিজ্ঞান বলে থাকি... ইউরোপকে আরবীয় মুসলমানরা পরিচয় করিয়ে দেয়' প্রদত্ত তথ্যের সাথে একটা যোগসূত্র বের করা যায়। বস্তুত দেখা যাচ্ছে ইসলাম ধর্মে স্রষ্টার ইবাদতের প্রয়োজনে মুসলমানদের মধ্যে যে বিজ্ঞান গবেষণা ও অনুশীলনের আগ্রহ এবং উৎসাহ সৃষ্টি, পরিশেষে তারই বাই প্রডাক্ট হিসেবে আজকের বিজ্ঞান বিকাশ ঘটে ইউরোপে। ওদিকে মুসলিম উম্মাহ খরগোশ-কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার মত ঘুমিয়ে কাটিয়ে অধুনা প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় দারুণভাবে মার খেয়ে ধরাশায়ী। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বকে তারা এখন কিছু দিতে পারছে না এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি যা বিকশিত হচ্ছে। তার থেকে ছিটেফোঁটা হাতড়িয়ে নিয়ে তাতেই খুশি। সম্প্রতি প্রকাশিত আমেরিকার একটি বেস্ট সেলার পুস্তক 'এ হিস্টরি অফ গড'-এ বিশিষ্ট লেখিকা ক্যারেন আর্ম স্ট্রং লিখেছেন। কুরআনে সবসময়ই বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আল্লাহর নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্যোদঘাটনের জন্য। এ কারণে মুসলিম যুক্তি ও কারণকে এড়িয়ে না যেয়ে গভীর মনোযোগ এবং বিশেষ কৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সবকিছুকে পর্যবেক্ষণ করেছে। এই মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে দেখা যায়, মুসলমানদেরকে সামর্থ। দিয়েছে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের (Natural Science) এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে তোলার যেটা কখনও ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘর্ষ বা বিরোধ ঘটায়নি। যেমনটি দেখা যায় খৃস্টান ধর্মের ক্ষেত্রে। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) 'খুলুকে মুসলিম' গ্রন্থে সেই সময়ে জোর দিয়ে বলে গেছেন, 'ধর্মীয় শিক্ষার সাথে যদি বিজ্ঞানের ব্যুৎপত্তি না জন্মে তাহলে অনেক ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীসের সাথে পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিরোধিতা দেখা দিতে পারে।' জাতীয় গড় আয়ু বৃদ্ধিতে সফলতা, টেস্টটিউব বেবী প্রসঙ্গ, ক্লোনিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের প্রাণীর সৃষ্টি ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে ধর্মীয় বক্তব্য আসার আগে বিজ্ঞানে ব্যুৎপত্তি থাকা অবশ্যই জরুরী। ইমাম গাজ্জালী সমকালীন দর্শন বিজ্ঞানের ওপর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করে দেখিয়েছেন, গ্রীক দর্শন বিজ্ঞানের প্রভাবে ইসলামের ভিত ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এই ধারণাটি অলীক এবং ইসলামের গতিশীল ধ্যান- ধারণার পরিপন্থী। ইসলামের উষাকাল থেকে মুসলমানরা বিজ্ঞান অনুশীলন এবং গবেষণার উপর অপরিসীম গুরুত্ব আরোপ করেছিল এ কারণে যে এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ এই দু'ভাবেই ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ দু'টি দিক একই সাথে সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে পালন করার সুবর্ণ সুযোগ এটা তৈরী করে দেয় যা অন্য উপায়ে এতটা সহজ এবং সুন্দরভাবে করা সম্ভব নয়। ইবাদতের দু'টি অংশের একটি হচ্ছে হককুল এবাদত আর অন্যটি হককুল্লাহ। মানব বা প্রাণীকূল উপকৃত হয় এমন কাজ দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আর আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভই ইবাদতের মুখ্য উদ্দেশ্য। ইসলামের দৃষ্টিতে যে শিক্ষার দ্বারা মানব জাতির উপকার হয় উহাই প্রয়োজনীয় এবং প্রশংসনীয়। হাদীস শরীফে আছে, সমগ্র মখলুক আল্লাহর পরিবার। সে ব্যক্তি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় যে তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সদয়। ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা, রসায়ন, মৃত্তিকা, জীব তথা বিজ্ঞানের সকল শাখাই মানবের ব্যবহারিক জীবনের প্রয়োজন পূরণ করতে কাজ করছে। আধুনিক কালের জীবনযাত্রায় প্রত্যেক মানুষের জীবনের অতি ক্ষুদ্র, ছোট-খাট বিষয় থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন পূরণ বিজ্ঞানের সহায়তা ছাড়া একেবারেই সম্ভব নয়। কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্যই হোক অথবা পরিবহন, চিকিৎসা সম্পর্কিত হোক, সমাজ জীবনের প্রত্যেকটি কাজে বা বিষয়ে প্রয়োজন অবশ্য বিজ্ঞানের। বর্তমানে হজের জন্য যে পরিবহন ব্যবহৃত হয়, তার পিছনেও কাজ করছে বিজ্ঞান যার কোন বিকল্প নেই আমাদের হাতে। হাদীস শরীফে আছে, যে কোন ব্যক্তির যৎসামান্য উপকার করা এমন কি মসজিদে নববীতে দশ বছর এতেকাফ করা থেকেও উত্তম। যে কোন স্থানের মসজিদে মাত্র একদিন এতেকাফ করলে তার থেকে জাহান্নাম তিন খন্দক দূরে চলে যায়। এর এক এক খন্দের দূরত্ব হচ্ছে আসমান ও জমিনের দূরত্বের চেয়েও বেশী। সুতরাং একজন ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, রসায়নবিদ, ফার্মাসিস্ট, কৃষিবিদ হয়ে অর্থাৎ বিজ্ঞানের যে কোন শাখায় দক্ষতা অর্জন করে মানুষ ও সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধনে আত্মনিয়োগ করলে তার ছওয়াবের পরিমাণ এত বেশী হতে পারে যে, একজন নিবেদিত সাধকও হয়ত তার ধরা-ছোঁয়া স্পর্শের বাইরে অবস্থান করবে। মুসলিম শরীফে এই হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে যে, মানবের মৃত্যুর পর তার সব আমল-খতম হয়ে যায় (অর্থাৎ নতুন করে আমল করার শক্তি মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয়) কেবলমাত্র তিনটি আমল ছাড়া যার ছওয়াব মৃত্যুর পরও জারি থাকবে। তিনটির অন্যতম একটি হচ্ছে জ্ঞান যদ্দারা লোকের উপকার হয়। হাশরের দিন অনেকে তার আমলনামার পাল্লা এত বেশী ভারী দেখবে যে তারা অবাক বিশ্বয়ে হতবাক হয়ে জানতে আগ্রহী হবে: আমরা তো এত বেশী প্রার্থনা করিনি কিন্তু এত অঢেল পরিমাণ ছওয়াবের অধিকারী হলাম কি ভাবে? তাদের জানানো হবে যে, পৃথিবীতে তারা এমন কিছু কাজ করে এসেছে যার ফলে মানুষ দীর্ঘকাল ধরে। বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে। তাদের সেই কাজের ফলশ্রুতিতে তারা আজ এত বিপুল ছওয়াবের মালিক হয়েছে। বাতি, ঘড়ি, গাড়ি, বিমান থেকে শুরু করে অগণিত জিনিস বিজ্ঞানীদের সাধনা ও গবেষণার ফসল। মানুষ কেয়ামত পর্যন্ত এগুলো ব্যবহার করবে। যে ব্যক্তি নতুন কিছু ইনভেন্ট করে তার যদি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস থাকে, সে সৎ কর্মশীল হয়ে আর মানুষের কল্যাণসাধনের জন্য সে বিজ্ঞান সাধনায় নিয়োজিত হয়ে থাকে, তবে তিনি কেয়ামত পর্যন্ত অফুরন্ত গুত্তযাবের অধিকারী হবে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ী, হাসপাতাল, স্কুল, টেলিফোন, মোবাইল থেকে শুরু করে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অপরিহার্য অজস্র বিষয় অজস্র বিষয় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যও প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর জ্ঞান ও দক্ষতা। প্রত্যেকটি ব্যবহারিক জীবনের প্রয়োজনে এই জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য একজন ছওয়াব পাবে। অপরদিকে আবার যতকাল ধরে মানুষ এগুলো থেকে উপকৃত হবে অবস্থাভেদে ততকাল পর্যন্ত তাদের আমল নামায় ছওয়াব জমা হতে থাকবে।'
ইসলামের ইবাদতে বিজ্ঞান অনুশীলন ও গবেষণার ক্ষেত্রে যে অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান করেছে তার আর একটি কারণ হল এর মাধ্যমে এবাদতের হককুল্লাহর দিকটিও হক্কল এবাদের মত পালন করা সহজতর। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, সামান্য সময় আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি রহস্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা দুই শত রাকাত নফল নামাজ থেকেও উত্তম। বস্তুত বিজ্ঞান চর্চা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি রহস্য নিয়ে গবেষণা করা। সাধারণত বিজ্ঞানীরা এই গবেষণালব্ধ জ্ঞানকেই ব্যবহার করে থাকেন। মানব কল্যাণের বহুমুখী কাজে। আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের একটি সূত্র হচ্ছে। শূন্য থেকে যেমন কোন কিছু সৃষ্টি করা একেবারেই অসম্ভব তেমনি কোন কিছু (ভর অথবা শক্তি) একেবারেই বিলীন করাও কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব নয়। আল্লাহ তা'আলার বেঁধে দেয়া নির্ধারিত নিয়মে চলছে বিশ্ব জাহান, বড়জোর আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে এ নিয়ম সম্পর্কে একটা ধারণা অর্জন সম্ভব হতে পারে। তবে অবশ্যই এ নিয়মকে কেউ ভাঙ্গতে পারে না, বদলাতে পারে না বা নতুন করে তৈরি করতেও পারে না।
মূলকথা, প্রকৃতির নির্ধারিত এই আইন এতটুকুই করার বা গড়ার সুযোগ করে দেয় যেটা প্রকৃতির নিয়মের মধ্যে নিহিত রয়েছে এবং প্রকৃতির পূর্ব নির্ধারিত নিয়ম এটা অনুমোদন করে। আসলেই বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ পাকের ক্ষমতা, শক্তি,কুদরত ইত্যাদি অনুধাবন ও হৃদয়ঙ্গম করার একমাত্র সহজ পথ হচ্ছে তার সৃষ্টিকে জানার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে এতটুকু উপলব্ধি করা যে, যার সৃষ্টি এতো রহস্যময়এবং মানবের চিন্তা ও কল্পনাশক্তির এত নাগালের বাইরে তিনি তাহলে হবেন কত বড় প্রজ্ঞাময়, ক্ষমতাবান, বিচক্ষণ, সুকৌশলী; আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ভাষায়: 'নিশ্চয় এর পিছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্ত্বার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়- বিজ্ঞানের সমাগত চূড়ান্ত অগ্রগতি ও সেখান থেকে স্তম্ভিত হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এ নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে যে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্ত্রা আছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়। তার সৃষ্টিকে অনুভব করা যায় কিন্তু তাকে কল্পনাই করা যায় না।
প্রকৃত প্রস্তাবে যে যতটুকু আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে অবহিত হয়। সৃষ্টি রহস্যকে উপলব্ধি করতে পারে, সেই ততটুকু আল্লাহর ক্ষমতা এবং সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আল্লাহ তা'আলার পরিচয় লাভে সক্ষম হয়। বস্তুত সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণুর সৃষ্টি কৌশল মহান আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্বের সাক্ষ্যবহন করে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি নিদর্শন জানার গবেষণায় আত্মনিয়োগ করে। তার পক্ষে আল্লাহর মারেফত (তত্ত্বজ্ঞান) অর্জন একজন সুফীর চেয়েও অনেক সহজতর হবে যদি সে দৃষ্টিভঙ্গিতা স্পষ্ট রেখে অগ্রসর হয়। মুজাদ্দেদ ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) একজন উচু স্তরের সুফীও ছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে এখানে তার একটি উপমা তুলে ধরা যেতে পারে। বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানের যে বিশাল বিকাশ ঘটেছে সে তুলনায় তার সময় সেই মধ্যযুগে এই বিজ্ঞানের অবস্থান কোন পর্যায়ে ছিল তা সকলের সহজেই অনুমেয়। তার এই উপমাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, তিনি তার যুগের এবং পরবর্তী সব কালের মানুষদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর প্রতি ঈমান সুদৃঢ় করার প্রকৃত সহজ পথের সন্ধান উপমাটির মাধ্যমে। এটি হচ্ছে: জ্যোতির্বিজ্ঞান/মহাকাশ সম্পর্কে যে ব্যক্তির কোন রকম ধারণা নেই আল্লাহ তা'আলার উপর তার ঈমানের স্বাদ বা ওর হচ্ছে একজন Impotent ব্যক্তির মত যিনি কোনভাবেই বুঝবেন না যে নর- নারীর যৌন সহবাস আনন্দ কেমন হয়ে থাকে। যৌনানুভুতি যেমন অন্য কিছুর সাথে তুলনা করে বুঝানো সম্ভব নয় তেমনি মহাকাশ সম্পর্কে কোন রকম ধারণা না থাকলে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ বা স্তর যে কি সেখানে পৌঁছা সম্ভব নয়। প্রকৃত সত্য হল: আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠত্ব, শক্তি, ক্ষমতা, কুদরত, করুণা এসব কিছুই তার র সৃষ্টির অগণিত নিদর্শন থেকে বিশেষভাবে মহাকাশ সম্পর্কে জানায় প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে কিছুটা আঁচ করা সম্ভব। আর কোন পন্থায় এত সহজে সম্ভব নয় এটা। আর এ জন্যই কোরআন পাকে বার বার মহাবিশ্ব, পৃথিবী এবং সমগ্র সৃষ্টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ, চিন্তা ভাবনা ও গবেষণার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের ক্ষমতা, কুদরত ও শক্তিকে অনুধাবন করতে বলা হয়েছে।
'এবং নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা সৃষ্টির ব্যাপারটি তাঁর অন্যতম নিদর্শন। নিশ্চয়ই এরমধ্যে তাদের জন্য ইঙ্গিত রয়েছে যারা জ্ঞানী।' 'দেখ নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল প্রষ্টিতে রাত ও দিনের পরিবর্তন। মানুষের লাভ লভ্যের জন্য নৌযানের সমুদ্রাভিযানে, আসমান হতে আল্লাহ যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন ও তদ্বারা তিনি মৃত যে প্রাণের সঞ্চার করেন তার মধ্যে বায়ু মৃত্তিকাতে প্রবাহের গতি পরিবর্তনে যা মেঘমালাকে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে অনুগত ভূত্যের ন্যায় টেনে নিয়ে বেড়ায়- নিশ্চয়ই জ্ঞানী লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।'
'পৃথিবীর মধ্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে। বিশ্ববাসীর জন্য এবং তোমাদের নিজেদের সৃষ্টির মধ্যেও। তা কি তোমাদের নজরে পড়ে না।' ' তারা কি নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের ব্যবস্থা গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে না? আল্লাহ যে বন্ধু পয়দা করেছেন, তার উপরও কি তারা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না।'
প্রসঙ্গক্রমে যে বড় প্রশ্নটি এখানে উত্থাপিত হতে পারে তা হচ্ছে- বিজ্ঞান অনুশীলন ও গবেষণা যদি মানুষকে মারেফাত অর্জনেও ভূমিকা রাখতে পারে তবে বর্তমান বিশ্বে যারা বিজ্ঞানের গবেষক ও বিজ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত তারা কেন দৃঢ় ইমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত হয না? বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রচলিত এই বিজ্ঞান শিক্ষা ইসলামী আকীদা ও আমল থেকে দূরে ঠেলে দিতে প্ররোচিত করছে। দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞান চর্চা ক্ষেত্রবিশেষে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের ভিতকে নাড়া দিচ্ছে বা নষ্ট করছে। কেউ কেউ এই শিক্ষার বদৌলতে চিন্তার দিক থেকে নাস্তিকদের দলভূক্তও হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞান শিক্ষা-গবেষণা ও অনুশীলন যদি আল্লাহর মারেফাত অর্জন ও তার ইবাদতের সহজ রাস্তা হয় তাহলে বিজ্ঞান শিক্ষার এরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় কেন?
বাস্তবে কিন্ত দেখা যায়, এ সমস্যার আসল হেতু কিন্ত আদৌ বিজ্ঞান অনুশীলনের মধ্যে নিহিত নয়। এর মূল কারণ অন্যত্র লুকায়িত। বিজ্ঞানের সকল তত্ত্ব ও তথ্য খোদাদ্রোহী নাস্তিক বিজ্ঞানীরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সুবিন্যস্ত ও বিশ্লেষণ করেছে বলেই এসব পাঠ কবে শিক্ষার্থীরা উল্টা জড়বাদী বা নাস্তিকতার দিকে ধাবিত হয়। একটি অতি পরিচিত পদার্থের উদাহরণের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি সুস্পষ্ট করে তুলতে পারি। পানি: আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।... (আল নূর-৪৫)
বর্তমানে জীব বিজ্ঞানে এ ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত যে, বিশ্বের সব প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে পানি হতে। আমাদের দেহের ৭০ ভাগই পানি। আর কথায় বলে, জীবনের অপর নাম পানি। এই পানি জীবনের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান এবং পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশই হচ্ছে পানি। এই পানির সূত্রগত ওজন ১৮। অ্যামোনিয়ার সূত্রগত ওজন ১৭ হওয়া সত্ত্বেও বায়ুমণ্ডলের চাপে ৩৩ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ইহা গ্যাসে পরিণত হয়। অ্যামোনিয়ার চেয়ে পানির সূত্রগত ওজন কেবল মাত্র এক বেশি হওয়ায় যে কেউ সহজেই এ রকম সিদ্ধান্তে উপনীত হবে সামান্য তাপ ও চাপে পানিও গ্যাসে পরিণত হবে। কিন্তু বাস্তবে পানি বায়ুমণ্ডলের চাপে ১০০° সেন্টিগ্রেড তাপ গ্যাসে পরিণত। হয়। এর থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, পানিকে একটি বিশেষ উদ্দেশে এ রকমটি করা হয়েছে। আবার পিরিয়ডিক টেবিলে অবস্থানের দিক থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড পানির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ৫৯০ সেন্টিগ্রেড তাপে ইহা গ্যাসে পরিণত হয়; কিন্তু যে বিশ্বয়কর ব্যাপারটি সকলকে একদণ্ড থমকে দিয়ে ভাবিত করে তুলছে তা হচ্ছে ৫৯° সে.মে. হতে ১০০° সে.মে. পর্যন্ত পানি তরল অবস্থাতেই থাকে। একমাত্র পানি এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বা কেন? আর একটা বিশ্বয়কর ব্যাপার হলো, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সকল পদার্থের মধ্যে একমাত্র পানিই একটি পদার্থ, যার ওজন ৪° সে. গ্রে.-এর নিচে নামালে আরও হালকা হয়। আর এই একটি মাত্র কারণে বরফ হ্রদ বা নদীর তলদেশে তলিয়ে না যেয়ে পানির উপর ভাসতে থাকে এবং ক্রমশ কঠিন একটা আবরণে পরিণত হয়। পানির উপর বরফের এই আবরণ-আস্তরণের (Insulator) কাজ করে। ফলে আবরণের নিচেকার পানির তাপমাত্রা সকল সময়ে ০° সে.মে.-এর উপর থাকে। মাছ বা কোটি কোটি জলজ প্রাণী এই কারণেই বরফ জমা নদী বা সমুদ্রের তলদেশে জীবন রক্ষা করতে পারে। প্রকৃতিতে আর কোন পদার্থ শীতল হয়ে হালকা হয় না বলেই একমাত্র পানি ছাড়া অপর কোন পদার্থের পক্ষে জলজ প্রাণীদের রক্ষা করা সম্ভব নয়। সকল পদার্থের মধ্যে একমাত্র পানির এই বিশ্বয়কর ব্যতিক্রমধর্মী আচরণের কি ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে? যেহেতু জীবন সৃষ্টির জন্য পানির উল্লিখিত গুণগুলো অস্বাভাবিক রকম গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে, নিজ সৃষ্টির প্রতি যথেষ্ট সচেতন সৃষ্টিকর্তার পক্ষেই একমাত্র এসব বিশ্বয়কর বিশেষ ধর্মের ব্যবস্থা আগে থেকে করে রাখা সম্ভব। উপরের এই বাস্তব ঘটনাটিকে একজন এভাবে বর্ণনা দিতে পারেন যে, পানি তার নিজস্ব বিশেষত্বের কারণে এ রকম গুণপ্রাপ্ত হয় এবং এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। এই বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখিত বিজ্ঞানের বই পুস্তক অধ্যয়ন করে বা শ্রেণীকক্ষে এরকম বিশ্লেষণ শুনলে একজন শিক্ষার্থীও এই দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। আর অপর একজন এই ঘটনার বর্ণনা দিতে যেয়ে বলবেন, মহান আল্লাহ তার নিজস্ব বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ও রবুবিয়াতের অধীনে পানির মধ্যে এই বিশেষত্ব এজন্য রেখেছেন, যাতে মানুষ এবং নদী সমুদ্রের প্রাণীকুল জীবন ধারণ করতে পারে। এই দু'ধরনের বিশ্লেষণ ভঙ্গির এক পদ্ধতিতে পাঠক মাত্রেরই মনে আল্লাহর একত্ব, তার সৃষ্টি কুশলতা এবং লালন পালনের ধারণা বিশ্বাস মনে বদ্ধমূল হয়। আর অপরটিতে মনে আল্লাহ সম্পর্কে কোনই ধারণা জন্মে না। বরং মনে এই ধারণাটাই প্রবল হয় কোন বিজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার মহাকৌশল ও কোন মহাশক্তিমান প্রতিপালনকারীর প্রতিপালন ব্যবস্থার কার্যকারিতা ছাড়াই সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনা আপনি ঘটে যাচ্ছে। বাস্তবে কথা হচ্ছে, বিজ্ঞানের কোন শাখায়ই এমন নেই যা মানুষের অন্তরে ঈমানকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয় না। পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা- যে বিদ্যারই নাম করা হোক না কেন, তার মাধ্যমে এমন সব বাস্তব সত্য উদঘাটিত হবে যা মানুষকে খাঁটি ও প্রকৃত ঈমানদার বানাবার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আর প্রকৃত প্রস্তাবে কোরআনের আলোকেই একথা বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক সূক্ষ্ম তত্ত্ব ও তথ্যের তুলনায় মানুষের হৃদয়-মনে অধিক ঈমান সৃষ্টিকারী দ্বিতীয় কোন জিনিস নেই। সুতরাং কালবিলম্ব না করে মুসলিম জাতি হিসেবে আমাদের বর্তমান অভীষ্ট লক্ষ্য কি এই হওয়া উচিত নয় যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় বর্তমানে প্রচলিত দর্শন বিন্যাসের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন সাধন করে বিজ্ঞানের সব শাখাতেই ইসলামী দৃষ্টিকোণ ও ঈমানী চেতনার আলোকে শিক্ষা প্রদান। এটি আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে মুসলিম সমাজ সচেতনতার পরিবেশ সৃষ্টি করা যে, আমাদের বর্তমান দুর্ভোগ থেকে বাঁচার প্রকৃত সহজ পথ হচ্ছে একমুখী অর্ধেক ইবাদতের পথ ও শিক্ষাকে পরিহার করে দ্বিমুখী পূর্ণাঙ্গ সত্যিকার ইবাদতের পথ ও শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করে বাকি বিশ্বের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
.
No comments:
Post a Comment