Friday, October 13, 2017

স্রষ্টাকে জানার একমাত্র উপায়

       আল্লাহকে জানার কোন পথ তার বান্দার জন্য খোলা রাখেননি। একটি মাত্র পথ খোলা আছে-তাকে জানা সম্ভব নয়।এটাই জানার পথ।- হযরত আবু বকরের (রাঃ) এই কথাটি লেখাছিল আমার ছোটো বেলার নোট বইতে। বড় হলে আমি লিখব, লেখা ছাপা হবে সে চিন্তা তখন একদম ছিলনা। তাই রেফারেন্স লিখে রাখিনি। বেশ আগে নয়া দিগন্তে  আমার  লেখায় এটি জুড়ে দেই। ছাপা ও হয়। এক ফেসবুক বন্ধু প্রশ্ন করেন - এ কেমন ক্থা; পরস্পর বিরোধী কথা নয় কি? বললামঃ অসীম এর ধারনা কারো জানা নেই। মহাবিশ্ব অসীম কিন্ত আমরা জানিনা অসীম কি? অসীম সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সেই সৃষ্টিকে আমরা জানিনা বা জানার কোন পথ আমাদের কাছে একদম নেই। যেখানে একটা নগণ্য সৃষ্টি কেই আমরা জানিনা সেখানে এরই স্রষ্টাকে জানার সুযোগ আমাদের কোথায়!    'তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’........আইনস্টাইনের  ভাষায়ঃ

‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়। বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে যে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্তা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’
রাসুলুল্লাহ স্রষ্টাকে নিয়ে নয় বরং তার সৃষ্টি নিয়ে আমাদের গবেষনা, চিন্তা ভাবনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আসলে আল্লাহকে জানার একমাত্র পথ / উপায় হচ্ছে তার সৃষ্টিকে অনুধাবনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এটা হৃদয়ঙ্গম করা ~যিনি এর স্রষ্টা তিনি আরও কত বড়, মহান -আর সব প্রশংসা কেবলমাত্র তারই জন্য। 
 কেবলমাত্র চোখের দিকে তাকান। বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে, মানুষের একটি চোখ ৭০০ টি সুপার ডিজিটাল ক্যামেরার সমান। এই চোখ কে দিয়েছে আমাদের?
আমাদের ব্রেইন সম্পর্কে জানেন? গবেষণা মতে, একজন মানুষের ব্রেইনের ক্ষমতা কয়েক শ সুপার কম্পিউটারের চাইতেও বেশি।
আমাদের শরীরের DNA সম্পর্কে কতটুকু জানি? এমনকি  নাস্তিক বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স DNA সম্পর্কে বলেছেন,-
‘There is enough information capacity in a single human cell to store the Encyclopaedia Britannica, all 30 volumes of it , three or four Edittimes over’.
অর্থাৎ, একটি DNA তে এতো পরিমাণ স্পেস আছে যেখানে চাইলেই আপনি ৩০ ভলিউমের ৩-৪ টি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা লিখে রাখতে পারবেন। একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র DNA সেলের মধ্যে এই ক্ষমতা কে দিয়েছে? কোন মানুষ? কোন বিজ্ঞানী? নাহ! কে তিনি?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমরা এমন একজন দার্শনিকের শরণাপন্ন হতে পারি যাকে বিংশ শতাব্দীর নাস্তিকদের 'Spiritual Leader' বলা হতো। কিন্তু তিনি পরে নাস্তিকতা ছেড়ে আস্তিক হয়ে যান। তাঁর নাম Antony Flew..
DNA' র এই বিস্ময়কর কাজ দেখে তিনি বলেছেন,- ‘almost entirely because of the DNA investigations . What I think the DNA material has done is that it has shown, by the almost unbelievable complexity of the arrangements which are needed to produce( life ), that intelligence must have been involved in getting these extraordinarily diverse elements to work together'
অর্থাৎ, DNA ইনভেস্টিগেশন থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রাণ (Life) সৃষ্টিতে অবশ্য  অবশ্যই Intelligence তথা বুদ্ধিমান সত্ত্বার উপস্থিতি আবশ্যক। সেই বুদ্ধিমান সত্ত্বা কে?
পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানী?  তিনি হলেন স্রষ্টা।
এরকম মহাকাশের  গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সিগুলোর দিকে তাকাই। 
ওপেন স্ট্রীটম্যাপের মতো ফ্রিম্যাপ ব্যবহার করে কম্পিউটার ডাটার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বরফাচ্ছন্ন এলাকাসহ সব সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকার দৈর্ঘ্য ১১ লাখ কিলোমিটারের মতো।
যার মধ্যে তিন লাখ কিলোমিটার এলাকা বালুময় সৈকত।
এখন যদি তারার সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করতে হয়, তাহলে দেখা যাবে, মহাবিশ্বে তারার সংখ্যা ১০ সেক্সটিলিয়ন, যেখানে বালুকণার সংখ্যা হবে চার সেক্সটিলিয়ন। তাহলে এটি ঠিকই যে মহাবিশ্বে বালুকণার চেয়ে তারার সংখ্যা বেশি। সূত্র : বিবিসি।
 
NASA (13 October 2016 ) থেকে পাওয়া তথ্য,দুই ট্রিলিয়ণ ছায়াপথআছে মাত্র ১০শতাংশ মহাবিশ্বের  মধ্যে।  কিন্ত ছায়াপথগুলোর৯০শতাংশর খোজ এখনও বাকিছায়াপথ হচ্ছে  এমন একটি সিস্টেম যেখানে মিলিয়ন থেকে বিলিয়ন সংখ্যক তারা মাধ্যাকর্ষনের টানে  এক সাথে আটকে থাকে। গানিতিক মডেল ব্যবহার করে জ্যোতি বিজ্ঞানীরা অদৃশ্যমান’ ছায়াপথ গুলোকে 
 শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন  কেননা এই সব ছায়াপথ টেলিস্কোপের 
 আওতায় আসে না।সেখান থেকে  ধারনা করা হচ্ছে,মানুষের  
ধারনারওবাইরে রয়ে গেছে আরওলাখ লাখ ছায়াপথ।সূত্রঃগার্ডিয়ান।   তার মাণে দাড়ায় মহাবিশ্বে ২০ ট্রিলিয়ণ ছায়াপথ ছাড়িয়ে    যেতে পারে!              
         Kornreich (কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের 'Ask an Astronomer'  এর  ফাউনডার) মহাবিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথ ধরে একটি রাফ হিসাব বের করেছেন- ছায়াপথের ১০০ বিলিয়ন তারকার সাথে এই সংখ্যা গুণ করলে হয় ১০০ অকটিলিয়ন (octillion) তারকা। তার মানে এর সাথে ২৯টা শূন্য। Kornreich জোর দিয়ে বলেন, এটা সাধারণ হিসাব, তবে গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আরো বেশি।

 আবার সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের চেয়ে পাঁচ গুণ শুধু বড় নয়, সেই সাথে এক লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল তার ভর তিন মিলিয়ন সূর্যের সমান হয়ে থাকে। আপনি যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে তারকা গণনা করেন, সে ক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে। ছায়াপথগুলো মহাকাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না থেকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে একে অপর থেকে বহু দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে। সব ছায়াপথ এক করলে তারা মহাশূন্যের এক মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ স্থান দখল করবে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী পর্যন্ত এর কাছে হার মানবে।
 যে ছায়াপথটি যত দূরে অবস্থিত  তার দূরাপসারণের গতিও তত বেশি দেখা যায়এক মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে২২.৪ কিলোমিটার বেগে এবং দুই মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ৪৪.৮কিলোমিটার বেগে দূরাপসরণ করছে অবাক বিস্ময়ের সাথে   ভাবার বিষয়,বাস্তবে প্রতিনিয়ত মহাবিশ্ব আমাদের থেকে কত দূরে বিস্তৃতি লাভ করছে!

প্রত্যেক জায়গায় আমরা  দেখতে পাব তার অপার সৃষ্টি রহস্য।