Tuesday, June 23, 2020

বিজ্ঞানের সর্বশেষ প্রমানঃ মানব জাতির পিতা ও মাতা।

 বিজ্ঞানের সর্বশেষ প্রমানঃ মানব জাতির পিতা ও মাতা।

'হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে।[আল হুজুরাতঃ১৩]
মানবজাতির পিতাঃ
যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা দৈনিক বাল্টিমোর সান পত্রিকা 'Geneticists Reveal Human Family Trees' শিরোনামে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে, আমি তখন বালটিমোরে। এখানে লেখাটির ভাষান্তর উপস্থাপন করা হচ্ছে।
মানবজাতির পিতাঃ মানবদেহের জীবকোষে যে ‘ণ’ ক্রোমোজম রয়েছে তা পুঙ্খানু পুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে এমন সঙ্কেত পাওয়া যায় যে, গোটা মানবজাতির আদি পিতা মাত্র একজন। গবেষণার এই রিপোর্টটি উদঘাটন করেছে, আজকের প্রত্যেকটি পুরুষ যে ‘ণ’ ক্রোমোজম ধারণ করছে, তার লক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট, এটি এসেছে একজন মাত্র পুরুষের কাছ থেকে, যিনি এ পৃথিবীতে বাস করতেন প্রায় এক লাখ নব্বই হাজার বছর আগে।
এ নতুন গবেষণার ফলাফল এ ধারণাটাই সমর্থন করে, আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল পৃথিবীর মাত্র একটি স্থানে। এ পুরনো ধারণা আর সঠিক নয় যে, পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের একাধিক স্থানে মানবজাতির পূর্বপুরুষদের উদ্ভব ঘটেছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আগে বিশ্বাস করা হতো। ডারউইনের ঐতিহাসিক বিবর্তনবাদ অনুসারে অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করতেন, আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়ে থাকবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে। ‘ণ’ ক্রোমোজম হচ্ছে মানব বংশানুগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক উপাদান ‘জিন’, যে ২৪ ধরনের সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে গঠিত। তার একটি হচ্ছে এটা যা একমাত্র বাবা থেকে ছেলের দেহে সঞ্চারিত হয়। গবেষক মি. হেমার ‘ণ’ ক্রোমোজমের অতি ক্ষুদ্র অংশের গঠনের বিশদ তুলনা করেন। সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে লালিত আটজন আফ্রিকান, দু’জন অস্ট্রেলিয়ান, তিনজন জাপানি এবং দু’জন ইউরোপীয়দের কাছ থেকে। গবেষকদের মনে যে ধারণাটি কাজ করছিল তা হলো 'ন' বিভিন্ন জাতির মধ্যে ক্রোমোজমের সামগ্রিক বিন্যাসের রকমফের কেমন ভিন্নরূপ গ্রহণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করা। তারপর নির্ণয় করা, যে বৈচিত্র্য ধরা পড়ল তার বিবর্তনের জন্য কতটা সময়ের দরকার। যে ফল পাওয়া গেল, তাতে দেখা যায়, যত মানবসন্তান আজকের দুনিয়ায় বাস করছে, তাদের সবারই ‘ণ’ ক্রোমোজমের যোগসূত্র মেলে কেবলমাত্র একজন পুরুষের সাথে, যিনি জীবিত ছিলেন এক লাখ ৮৮ হাজার বছর আগে।
মানবজাতির এজমালি মা।
‘আদম হাওয়ার অনুসন্ধানে’ শিরোনামে একটি নাতিদীর্ঘ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল নিউজ উইক জানুয়ারি ১১, ১৯৮৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। (২০০১ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়ার একটি টকশোতে জানতে পারি ১১/১/১৯৮৮ সংখ্যার নিউজ উইকের কথাটি। ডাইরিতে নোট করে স্থানীয় এক লাইব্রেরি থেকে আমি প্রবন্ধটির কপি সংগ্রহ করি।
প্রবন্ধটির মূল বক্তব্যের ভাষান্তর:
আমাদের এজমালিমা :
‘পৌরাণিক কাহিনীর বর্ণনাকারীদের উপাখ্যান এখন বিজ্ঞানীদের মৌলিক গবেষণার ফলাফলের সাথে একীভুত হতে যাচ্ছে। আমরা সবাই অতীতের এক স্থানে অভিন্ন পূর্বপুরুষের অংশ ভাগ করি।’ এ আবেগময় বক্তব্যটি করেছেন নিউজ উইকে প্রকাশিত নিবন্ধ ‘The Search for Adam and Eve-এর লেখকেরা। এরা আস্থার সাথে বলেছেন, ‘এই সময়ে কিন্তু এই প্রমাণগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে যারা গবেষণা করেছিলেন আফ্রিকার চিড়ধরা শুষ্ক উপত্যকায় না বসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যামেরিকান ল্যাবরেটরিতে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, আমাদের সর্বজনীন মা হচ্ছেন এক মহিলা, যিনি ধরাপৃষ্ঠে দুই লাখ বছর আগে বাস করতেন এবং রেখে গেছেন ‘জিন’, যেটি মানবজাতির সবাই নিজ দেহে বহন করে চলছে। বর্তমান পৃথিবীতে যত লোক বাস করছে সবাই এসেছে তার থেকে।’
আণবিক জীববিদ্যায় প্রশিক্ষিত বিজ্ঞানীরা তল্লাশি চালিয়েছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে বিভক্ত বিভিন্ন শ্রেণীর জিনের মাঝে। আর পরীক্ষা করে তাদের মধ্য থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন একটি ডিএনএ, যেটা আমাদের একজনমাত্র মহিলার দিকেই নিয়ে যায়, যার কাছ থেকে আমরা সবাই এসেছি।
আমাদের এজমালি মাকে খুঁজে বের করার লক্ষ্যে গবেষক রেবেকা ক্যান ১৪৭ জন গর্ভবতী মহিলাকে রাজি করান তাদের গর্ভের ফুল বিজ্ঞানকেন্দ্রে দেয়ার জন্য। তিনি বার্কলের উইলসন ল্যাবে জীববিজ্ঞানী মার্ক স্টোন কিংয়ের সাথে কাজ করছিলেন। ক্যান বাছাই করেন কিছু আমেরিকান মহিলাকে, যাদের পূর্বপুরুষ এসেছিলেন আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে। নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ায় তার সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করছিলেন তারা খুঁজে পেলেন সেখানকার আদিবাসীদের। শিশুরা জন্ম নিল, গর্ভের ফুল সংগ্রহ করে হিমায়িত করা হলো এবং বার্কের উইলসন ল্যাবে বিশ্লেষণ করা হলো। ব্লেন্ডারের সাহায্যে টিস্যুগুলো পরিণত করা হলো স্যুপে। সেন্ট্রিফিউজ কোষ বিভাজন ডিটারজেন্টের সাথে মেশানো হলো, স্ফুর জ্যোতির্ময় দিয়ে শুকিয়ে আবারো সেন্ট্রিফিউজ করা হলো। ফলে পাওয়া গেল স্বচ্ছ তরল পদার্থ, যেটা ছিল ডিএনএ’র খাঁটি উপাদানে তৈরি। বিস্ময়কর ব্যাপার যেটা নজরে পড়ল, তা হচ্ছে এই ডিএনএ সেই ডিএনএ নয়, যা শিশুর দেহকোষের নিউকিয়াসে এবং শিশুর দৈহিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে থাকে। এটি উত্তরাধিকার সূত্রে আসে কেবল মা থেকে। বার্কলের গবেষকেরা প্রতিটি ডিএনএ নমুনাকে টুকরো টুকরো করে কর্তন করলেন, যাতে এগুলোকে অপর সব শিশুর ডিএনএ’র সাথে তুলনা করা সম্ভব হতে পারে। যে ফল পাওয়া গেল, তাতে দেখা যায় বিভিন্ন জাতির মধ্যকার পার্থক্যটা বিস্ময়কররূপে অতি সামান্য। স্টোন কিং বলেন, ‘বিভিন্ন জাতির মধ্যে জেনেটিক পার্থক্যটা বাস্তবিকই খুব কম হয়ে থাকে।’
নিউগিনিদের ডিএনএতে দেখা গেল তাদের ডিএনএ অপরাপর নিউগিনিদের চেয়ে বরং আর সব এশিয়ানদের অনেক বেশি কাছের। এটা অদ্ভুত মনে হতে পারে জাতি অথবা বংশগত বাস্তব পার্থক্য সত্ত্বেও। বাস্তবে দেখা যায়, জাতিগত অনেক পার্থক্যই মূলত গতানুগতিক, নিতান্ত সাধারণ।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মানুষের ত্বকের রঙ কালো হয়ে থাকে আবহাওয়ার সাথে বড় ধরনের সামঞ্জস্যতা রেখে। আফ্রিকানদের কালো রঙ সূর্যের রশ্মি প্রতিরোধের জন্য হয়ে থাকে। তেমনি ইউরোপিয়ানদের গায়ের রঙ সাদা হওয়ার কারণ হচ্ছে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ যেটা ভিটামিন ‘ডি’ তৈরিতে সাহায্য করে। ত্বকের রঙের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হয় কয়েক হাজার বছরের। পান্তরে শত শত হাজার বছরের দরকার পড়ে ব্রেইন সাইজের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে। প্রতিটি শিশুর ডিএনএ গঠন শেষ পর্যন্ত মিলে যায় একজন মাত্র মহিলার সাথে। জেনেটিক উত্তরাধিকার এমন একটি বিষয়, যেটা এমনকি পরিসংখ্যানবিদদের কাছেও তেমন বিস্ময়কর কিছু নয়। উইলসন ল্যাবের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘অবশ্যই একজন ভাগ্যবতী মা ছিলেন।’ ইলোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডগলাস অলেস পরিচালিত গবেষণায় একদল প্রজনন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন যোগসূত্র থেকে ধারণা করেন, দুনিয়ার প্রথম এই মহিলার আবির্ভাব হয়ে থাকবে এশিয়া মহাদেশে। বিশ্বের চারটি মহাদেশে ৭০০ মানুষের রক্ত থেকে সংগৃহীত মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ’র ওপর ভিত্তি করে তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেন। ‘ডিএনএ’ টুকরো টুকরো করে খণ্ডিত করার জন্য তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন এবং সেগুলোকে বংশতালিকায় সাজান। এই তালিকা পরিশেষে অতীতের একজন মহিলার কাছে গিয়ে থেমে যায় যিনি দেড় থেকে দুই লাখ বছর আগে এই ধরাপৃষ্ঠে বাস করতেন, তাদের হিসেবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্ম বিজ্ঞানী স্টেফন জে গোল্ডের মতে, ‘এটা আমাদের এই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করে যে, বিশ্বের সব মানুষ তাদের বাহ্যিক ও আকৃতির পার্থক্য সত্ত্বেও একটিমাত্র সত্তা থেকে এসেছে এবং মানব বংশের উৎপত্তি খুব কাছের একটিমাত্র জায়গায়। সব মানুষের মধ্যে জীবতাত্ত্বিক ভ্রাতৃত্ববোধ অনেক বেশি গভীর, যার ধারণা আগে কখনো ছিল না।’


Sunday, June 14, 2020

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের ভিন্নমাত্রিক ব্যাখ্যা

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের ভিন্নমাত্রিক ব্যাখ্যা 

         নয়া দিগন্ত ২৭ অক্টোবর ২০১৭,শুক্রবার,


                                              আলী রেজা

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে ইসলামের তুলনা নয়, 

এখানে করা হয়েছে টপ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের সাথে 

পাঁচ স্তম্ভের। বালটিমোরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি 

বিল্ডিং রয়েছে, দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্র্রচারপত্রে লেখা  [TOP OF THE WORLD]. 

বিল্ডিংয়ের ছাদে রক্ষিত  টেলিস্কোপ দিয়ে সম্পূর্ণ 

শহর দেখার সুযোগ রয়েছে। মনে প্র্রশ্ন জাগলঃ এটা কী করে TOP OF THE WORLD হয়? 

বিল্ডিংটা বড়জোর ৩৯ তলা, আর এটা কি-না 

TOP OF THE WORLD? বিশ্বে ১০১ তলা বিল্ডিং থাকার পরও এই পুচকি বিল্ডিং কে কিভাবে TOP OF THE WORLD বলা যায়। বিষয়টা তাহলে কী? আর চুপ থাকা সম্ভব হলো না। প্র্রশ্ন করে জানতে পারলাম এই বিল্ডিং চার কোণা আকৃতির নয়, এটা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু PENTAGONAL 

BUILDING, , আর সে জন্য এই নামকরণ।

মূলত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একদম ভুল ব্যাখ্যা 

সাধারণ জনমনে প্রচলিত। প্রচলিত ধারণা এই 

পাঁচটি কাজ বা দায়িত্ব পালনের নাম ইসলাম। 

আসলে হাদিসে উপমাটি দিয়ে ইসলামকে একটি 

বাড়ির সাথে তুলনা করে বলা হয়: স্তম্ভ ছাড়া 

যেমন কোনো বাড়ির কল্পনা সম্ভব নয়, তেমনি ইসলাম পাঁচ (ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত) স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন আসেঃ শুধু স্তম্ভ থাকলেই কি বাড়ির অস্তিত্ব বাস্তবে কল্পনা করা যায়? বাড়ির পরিপূর্ণতার জন্য দরকার ছাদ, দেয়াল, জানালা-দরজা, আসবাবপত্র, রান্নাঘর, শয়নকক্ষ আরো কত কি? এ সব কিছু মিলেই না হয় একটা বাড়ি! তবে সব কিছুর আগে দরকার স্তম্ভ, যার ওপর গড়ে উঠবে বাড়িটি। ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সামগ্রিক ইসলামের বুনিয়াদ বা ভিত। কুরআনে একটি আয়াতও পাওয়া যাবে না যেখানে বলা হয়েছে, এই পাঁচটি কাজের মাধ্যমে জান্নাত 

পাওয়া যাবে? কুরআন পাকে জান্নাতে যাওয়ার 

শর্ত হিসেবে যত আয়াত দেখা যায়, সেগুলোতে 

আরো একটি গুণের অধিকারী হতেই হবে জান্নাত 

লাভের জন্য। না হলে জান্নাত কপালে জুটবে না। 

জান্নাত লাভের জন্য তাকে অবশ্যই সৎকর্মশীল 

হতেই হবে। মূলত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের 

লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সৎকর্মশীল হিসেবে তৈরি 

করা।  জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে বিশ্বাসের সাথে 

সর্বত্র সৎকর্মের কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে। জান্নাত 

লাভের সব আয়াতেই বিশ্বাসের সাথে সৎকর্মশীল 

হওয়াটা জরুরি ধরা হয়েছে।

‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির 

সেরা। তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে ঝরনা প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে।’ [৯৮(৭,৮)‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে; বরং বড় সৎকাজ হলো এই ঈমান আনবে আল্লাহর 

ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের 

ওপর এবং সব নবী-রাসূলের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির- ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা 

নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দান করে এবং যারা 

কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী, তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী আর তারাই পরহেজগার।’ [2 (১৭৭)] 

‘যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যই 

করে, আর যে অসৎ কর্ম করে, তা তার ওপরই 

বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি 

মোটেই জুলুম করেন না’। [৪১(৪৬)]

‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, তাদের 

জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।’ [৪১(৮)]

জান্নাত লাভের জন্য ঈমান আনার সাথে সাথে 

সৎকর্ম করার কথা যে সব আয়াতে রয়েছে, তার 

একটি তালিকা এখানে দেয়া হলো :

 ১) সুরাহ(২ঃ ১৪৮);

২)   "  (২০ঃ১১২);

৩) "  (২১ঃ৮৫-৮৬);

৪)   " (২২ঃ১৪,৫০);

 ৫)   "  (২৮ঃ৬৭,৮০,৮৪);

৬)    "(২৯ ঃ৭,৯,৫৮);

৭)    "(৩০ঃ১৫,৪৫);

৮)   "(৩১ঃ৮,৯,২২);

৯)    "(৩২ঃ১৯);

১০)    "(৩৩ঃ৩১);

১১)    "(৩৪ঃ৪);

১২)  "(৩৭ঃ১৯,৮০,১২০,১২১,১৩০-৩২);          ১৩)  "  (৪১ঃ৮,৩৩,৪৬);

১৪)  " (৪০ঃ৪০,৫৮);

১৫ )  "(৪৫ঃ১৫);

 ১৬)  " (৪৭ঃ১২);

 ১৭)  "(৫২ঃ২১);

 ১৮)  "(৮৪ঃ২৪);

 ১৯)  "(৮৫ঃ১১);

 ২০)  "(৯৮ঃ৭,৮)।


এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে  সৎকর্মশীল 

ব্যক্তিকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এবং কাজে সৎ 

হতে হবে বা সততার পরিচয় দিতে হবে। 

সৎকর্মশীলতার প্রতিযোগিতা সারাজীবন করে 

যেতে হবে। দিনের কিছু সময় সৎ থেকে অন্য সময় 

অসৎ থাকলে সৎকর্মশীল হিসেবে পরিচয় দেয়ার 

সুযোগ একেবারেই নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সৎ 

হতে হবে। দিনের কিছু কাজে সৎ আর বাকিটায় 

অসৎ এই প্রতারণার সুযোগ একেবারেই নেই। 

সৎকর্মশীল মানুষ সারাজীবন সৎকর্মের ওপর 

অবিচল থাকবে। শেষ বিচারের দিন সব ফাঁস হয়ে 

পড়বে। মসজিদের দেশ যার প্রতিটি জায়গায় 

আজানের ধ্বনি শোনা যায়, সে দেশ যদি দুর্নীতিতে 

শিরোপা লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, 

তার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্বের সব দেশ থেকে বেশি 

অসৎকর্মশীল মানুষ এ দেশে বাস করে। 

দুর্নীতিবাজদের আখড়া। জান্নাতে যাওয়ার 

অন্যতম শর্ত হচ্ছে সৎকর্ম। আর সব গুণ থাকলেও 

অসৎকর্মশীল ব্যক্তি জান্নাতের ধারেকাছেও যেতে 

পারবে না। নামাজি, দ্বীনদার হওয়ার মূল কথা 

হচ্ছে সৎকর্মশীলতা। বাহ্যিকভাবে যত বড় বুজর্গ, 

পীর, দ্বীনদার হোক না কেন একমাত্র  ঈমানদার ও 

সৎকর্মশীলরাই জান্নাতে যাবে। জান্নাতে যাওয়ার 

শর্ত হচ্ছে সারাজীবন পার্টটাইম নয় ফুলটাইমই 

সৎকর্মশীল হতেই হবে। কারণ প্রতিটি কাজের, 

মুহূর্তের এবং নিয়তের ওপরই নির্ভর করবে সে 

কোন ধরনের সৎকর্মশীল। সুবিধাবাদী সৎকর্মশীল 

না মন-মানসিকতা ও কাজে প্রকৃত অর্থে জীবনে 

সার্বক্ষণিক ভাবে সৎকর্মশীল।

প্রায় এক যুগ আগে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশ 

কমিউনিটির একটি সমাবেশের শুরুতে আমি এ 

বিষয়ের উপর কোরান পাকের সংক্ষিপ্ত  তাফসীর দিয়েছিলাম। 

Tuesday, June 2, 2020

ইসলামিক দেশগুলো নৈতিকতা ও মুল্যবোধে আজ কোথায়? সমাধান কি?

           ইসলামিক দেশগুলোর বর্তমান বিশ্বে নৈতিকতা ও মুল্যবোধের তুলনামূলক মাপকাঠিতে নিম্ন অবস্থানঃ  সবারই মনে যেন খুব সাঙ্ঘাতিক জটিল প্রকাণ্ড একটি প্রশ্নঃ কেন এমনটি হচ্ছে? সমাধান আদৌ আছে কি?একমাত্র সমাধানেরই বা অতি সহজ পথ কোণটি!           

  সুদানের নাগরিক আব্দুল বাতিন কানাডাতে একটি মেডিকেল পরীক্ষায় অংশ নেন এবং দুইশত দশ ডলারের মানিঅর্ডার পরীক্ষার ফি বাবদ জমা দেন। প্রায় মাস দেড়েক পর আব্দুল বাতিনের বাসার ঠিকানায় একটা এক ডলারের চেক আসে।

চেকের সাথে ইনবয়েস। সাথে একটা নোটঃ পরীক্ষার ফি দুইশত নয় ডলার । আপনি জমা দিয়েছেন দুইশত দশ ডলার। বাড়তি এক ডলারের চেক আপনার ঠিকানায় পাঠানো হলো।

 আব্দুল বাতিন কানাডা আসার পর -ঘর ভাড়া নিয়েছেন, বাড়ির মালিক হয়েছেন, বিদ্যুত, গ্যাস, পানির লাইন নিয়েছেন। কোথাও তাকে কারো সুপারিশ নিতে হয়নি। কোথাও তাকে একটা ডলার কাউকে ঘুষ দিতে হয়নি।

অথচ কানাডা আসার আগে- নিজ দেশে পাসপোর্ট প্রাপ্তি থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ নাই। যেখানে তাকে ঘুষ দিতে হয়নি। সুপারিশ নিতে হয়নি। একটা কাজ সমাপ্ত করতে মাসের পর মাস অফিসের অফিসার থেকে কেরানীর টেবিলে টেবিলে ঘুরতে হয়নি। শুধু সুদানের একটা মাত্র অফিসে আব্দুল বাতিনকে কোনো ঘুষ দিতে কিংবা সুপারিশ নিতে হয়নি। সেটা হলো- খার্তুমে অবস্থিত কানাডার এ্যাম্বেসি।

আব্দুল বাতিন হাতে এক ডলারে চেক নিয়ে ভাবছেন- এক ডলারের চেক ফেরত পাঠাতে পোস্টাল, মেইল, স্ট্যাপ ইত্যাদি বাবদ ওদের নিশ্য়চই আরো অনেক বেশি খরচ হয়েছে। খামোখা এক ডলার ফেরত না পাঠালে কি এমন ক্ষতি হতো।

আসরের নামাজের পর ঈমামের সাথে ব্যাপারটি শেয়ার করেন। ঈমাম শিকান্দার হাসমি যিনি শুধু ইসলামিক স্কলারই নন, কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্নালিজমের উপর এবং কার্লেটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলানথ্রপি এবং নন প্রফিট লিডারশীপের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়েছেন।

তিনি বলেন- এখানে এক ডলার ব্যাপার না। ব্যাপার হলো- নৈতিকতা আর নিয়মতান্ত্রিকতা। এই নীতির কারণেই এক ডলার কেউ তো ঘুষ নেয়ই না। বরং অতিরিক্ত এক ডলার গ্রহণ করলেও নিজ দায়িত্বে সেটা ফেরত দেয়।

ঘুষ-দুর্নীতির সিস্টেম দেশকে ধ্বংস করে আর নীতি, নৈতিকতার সিস্টেম এক দেশকে উন্নত করে। আমরা মুসলিম দেশে কম ওয়াজ তো করি না। এমন দিন তো নেই নীতি, আদর্শের কথা বলি না। সবাই শুধু শুনেই যায়। কিন্তু কারো চরিত্রের বদল হয়না।

আর এরা কোনো ওয়াজই শুনলো না। কিন্তু নীতির দিক দিয়ে কত উন্নত হয়ে গেলো। ইহুদি নাসারা বলে যাদের গালমন্দ করি- তাদের দেশে একটা অফিস খুঁজে পাওয়া যায়না- যেখানে দূর্নীতি আর ঘুষের লেনদেন হয়।

আর মুসলমানের দেশে এমন একটা অফিস পাওয়া যায়না - যেখানে ঘুষ আর দূর্নীতি না হয়। সুতরাং ঈমানদার বলতে- আসলে কাদেরকে বুঝবেন। ভাবেন। একটু গভীর ভাবে উপলব্ধি করেন।

ইহুদি নাসারার দেশে মুসলমান নেই। কিন্তু ইসলামের সবকিছু আছে। আর আমাদের দেশে ইহুদি নাসারাও নেই, নৈতিকতাও নেই,আসলে ইসলামও নেই। নামের সাথে মুহম্মদ আর ইসলাম জড়ানো শুধু কোটি কোটি মুসলমান আছে।

মহম্মদ (সাঃ) এই পবিত্র নাম সাথে নিয়ে সব অপবিত্র কাজ করি। ইসলাম নাম সাথে নিয়ে ইসলামকে বিক্রি করি। মুহম্মদ (সাঃ) নাম সাথে আছে মুহম্মদ (সাঃ) এর আদর্শ সাথে নাই। ইসলাম নাম সাথে আছে ইসলামের কোনো ন্যায়নীতি আর আমাদের মাঝে নাই।[ঘটনাটি সংগৃহীত]

     ইসলামিক দেশগুলি কতখানি ইসলামিক এই নিয়ে গবেষণা করেন জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হুসেন আসকারী। ইসলাম ধর্মে রাষ্ট্র ও সমাজ চলার যে বিধান দেয়া হয়েছে তা যে দেশগুলি প্রতিদিনের জীবনে মেনে চলে তা খুঁজতে যেয়ে দেখা গেলো,-- যারা সত্যিকার ভাবে ইসলামিক বিধানে চলে তারা কেউ বিশ্বাসী মুসলিম দেশ নয়।
স্টাডিতে দেখা গেছে সবচেয়ে ইসলামিক বিধান মেনে চলা দেশ হচ্ছে নিউজিল্যান্ড এবং দ্বিতীয় অবস্থানে লুক্সেমবার্গ। তারপর এসেছে পর্য্যায়ক্রমে আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ষষ্ঠ ও কানাডা সপ্তম অবস্থানে। মালয়েশিয়া ৩৮তম, কুয়েত ৪৮তম, বাহরাইন ৬৪তম, এবং অবাক করা কান্ড সৌদি আরব ১৩১ তম অবস্থানে। গ্লোবাল ইকোনমি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বাংলাদেশের অবস্থান সৌদীদেরও নীচে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মুসলমানরা নামাজ, রোজা, সুন্নাহ, কোরআন, হাদিস, হিজাব, দাড়ি, লেবাস নিয়ে অতি সতর্ক কিন্তু রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে ইসলামের আইন মেনে চলেনা।এর একটা বড় কারন, প্রতিদিনের ইবাদত দু শ্রেণীর হলেও সে সম্পর্কে সকলে গভীরভাবে সচেতন না হওয়ার কারনে ধরে নেয় হক্কুল্লাহ ই একমাত্র ইবাদত। আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত বিষয়টাকে কেবলমাত্র ইবাদত মনে করা হয়। 
আসলে কিন্ত হক্কুল ইবাদ ( সৃষ্টি কুলের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য ) ক্ষেত্র বিশেষে হক্কুল্লাহর চেয়ে বেশি গুরুত্বের দাবি রাখে।কেননা দুই প্রকার ইবাদতই আল্লাহকে খুশী করার জন্য। হক্কুল্লাহ ঠিকমত পালন করা না হলে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চাইলে যেহেতু তিনি গাফুরুর রহিম, তিনি চাইলে মাফ করেও দিতে পারেন। কিন্ত হক্কুল ইবাদতে গাফিলতি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে প্রথমে মাফ চাইতে হবে।এমনকি তাদেরকে নিজের অর্জিত সওয়াব প্রদান করে নিজেকে মাফ করে নিতে হবে। নিজের ভাণ্ডারে যথেষ্ট সওয়াব আর অবশিষ্ট না থাকলে তখন তাদের পাপের বোঝা কাঁধে বহন করে ক্ষেত্র বিশেষে জান্নাতে যাবার  শেষ আশা টুকুও ছেড়ে দিতে হতে পারে। দৃষ্টান্ত রয়েছে, বিড়ালের সাথে সঠিক আচরণ না করার জন্য জনৈক দ্বীনদার মহিলাকে পর্যন্ত জাহান্নামে যেতে হয়।সেখানে মানুষের সাথে হলে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল গীবত কি জেনার চেয়েও মারাত্মক? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, কারণ কোনো ব্যক্তি জেনার (রেপ নয়) পর (বিশুদ্ধ) তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে, তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না। (মুসলিম)  
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত , হজরত মুহাম্মাদ(সাঃ)  বলেছেন, তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল  ভালো জানেন। তিনি বলেন, তোমার কোনো ভাই  সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গীবত করলে আর তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দি্লে (মুসলিম)।অন্যদিকে কিন্ত ইসলামে অপবাদ কারীর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ।
    নবী(সঃ) বলেছেন, "আসল সর্বহারা আর রিক্ত মানুষ হচ্ছে তারা, যারা কেয়ামতের দিন রোজা, নামাজ, অনেক হজ্জ্ব, দান খয়রাত নিয়ে হাজির হবে কিন্তু দুর্নীতি করে সম্পদ দখল, অন্যদের হক না দেয়া, মানুষের উপর অত্যাচারের কারণে রিক্ত হস্তে জাহান্নামে যাবে।"
ইসলামের দুটি অংশ, একটি হচ্ছে বিশ্বাসের প্রকাশ্য ঘোষণা যাকে 'ঈমান' বলা হয়, আর একটি হচ্ছে বিশ্বাসের অন্তর্গত বিষয় যাকে 'এহসান' বলা হয়,-- যা ন্যায়গতভাবে সঠিক সামাজিক নিয়ম কানুন মেনে চলার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়। দুটোকে একত্রে প্র্যাকটিস না করলে ইসলাম অসম্পূর্ন থেকে যায় যা প্রতিটি নামের মুসলমান দেশে হচ্ছে।
ধর্মীয় বিধি নিষেধ মানা যার যার ব্যক্তিগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং এটি আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার বিষয়। কিন্তু সামাজিক বিধি নিষেধ মেনে চলা একজন বান্দার সাথে অন্য বান্দার মধ্যকার বিষয়। অন্য কথায় ইসলামিক নীতিমালা যদি মুসলমানরা নিজেদের জীবনে ব্যবহারিক প্রয়োগ না করে, মুসলিম সমাজ দুর্নীতিতে ছেয়ে যাবে যার ভয়াবহ চিত্র মুসলিম দেশ গুলোতে।
এক পলকে জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চিত অদ্বিতীয় চাবিঃ
আমরা কি কখনও গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখছি,কার্যত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একদম ভুল ব্যাখ্যা সাধারণ জনমনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। প্রচলিত ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, পাঁচটি কাজ বা দায়িত্ব পালনের নাম ইসলাম। আসলে হাদিসে উপমাটি দিয়ে ইসলামকে একটি বাড়ির সাথে তুলনা করে ধারনা দেওয়া হয়েছে: স্তম্ভ ছাড়া যেমন কোনো বাড়ির কল্পনাও সম্ভব নয়, তেমনি ইসলাম পাঁচ (ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত) স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন আসেঃ শুধু স্তম্ভ থাকলেই কি বাড়ির অস্তিত্ব বাস্তবে কখনও কল্পনা করা সম্ভব? বাড়ির পরিপূর্ণতার জন্য দরকার ছাদ, দেয়াল, জানালা-দরজা, আসবাবপত্র, রান্নাঘর, শয়নকক্ষ আরো কত কি? এ সব কিছু মিলেই না হয় একটা বাড়ি!তবে সব কিছুর আগে দরকার স্তম্ভ, যার ওপর গড়ে উঠবে বাড়িটি।ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সামগ্রিক ইসলামের বুনিয়াদ বা ভিত। কুরআনে একটি আয়াতও পাওয়া যাবে না যেখানে বলা হয়েছে, এই পাঁচটি কাজের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যাবে? কুরআন পাকে জান্নাতে যাওয়ার শর্ত হিসেবে যত আয়াত দেখা যায়, সেগুলোতে মূলত দুটি গুণের অধিকারী হতেই হবে জান্নাতের জন্য।না হলে জান্নাত কারও কপালে কক্ষনও জুটবেই না। জান্নাত লাভের জন্য তাকে অবশ্যই ঈমানের সাথে সাথে সৎকর্মশীল হতেই হবে। মূলত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সৎকর্মশীল হিসেবে তৈরি করা। জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে বিশ্বাসের সাথে সর্বত্র সৎকর্মের কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে। জান্নাত লাভের সব আয়াতেই বিশ্বাসের সাথে সৎকর্মশীল হওয়াটা্ একান্ত আবশ্যকীয় ধরা হয়েছে। এটা ছাড়া কোনো অবস্থতাতেই আর কোনোভাবে ফাঁকি  দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ নেই বা রাখা হয়নি্।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বা বিষয় হচ্ছে সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এবং কাজে সৎ হতে হবে বা সততার পরিচয় দিয়ে চলতে হবে। সৎকর্মশীলতার প্রতিযোগিতা সারাজীবন অনুশীলন করে যেতে হবে। দিনের আংশিক কিছু সময় সৎ থেকে অন্য সময় অসৎ থাকলে সৎকর্মশীল হিসেবে পরিচয় দেয়ার সুযোগ একেবারেই নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সৎ হতে হবে। দিনের কিছু কাজে সৎ আর বাকিটায় অসৎ এই প্রতারণার সুযোগ একেবারেই নেই। সৎকর্মশীল মানুষ সারাজীবন সৎকর্মের ওপর অবিচল থাকবে। শেষ বিচারের দিন সব ফাঁস হয়ে পড়বে। মসজিদের দেশ যার প্রতিটি জায়গায় আজানের ধ্বনি শোনা যায়, সে দেশ যদি কখনও দুর্নীতিতে বিশ্ব শিরোপা লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, তার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্বের সব দেশ থেকে বেশি অসৎকর্মশীল মানুষ এ দেশে। অবাক কাণ্ডঃ মসজিদের দেশ কি করে দুর্নীতিবাজদের ঘাটি হয়? জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে সৎকর্ম। আর সব গুণ থাকলেও অসৎকর্মশীল ব্যক্তি জান্নাতের সীমানার ধারে্র কাছেও ঘেষতে পারবে না। নামাজি, দ্বীনদার হওয়ার মূল কথা হচ্ছে সৎকর্মশীল হওয়া। বাহ্যিকভাবে যত বড় বুজর্গ, পীর, মস্তবড় দ্বীনদার হোক না কেন একমাত্র ঈমানদার ও সৎকর্মশীলরাই জান্নাতে যায়গা পাবে। জান্নাতে যাওয়ার শর্ত হচ্ছে সারাজীবন পার্টটাইম নয় ফুলটাইমই সৎকর্মশীল হতে হবে। কারণ প্রতিটি কাজের, মুহূর্তের এবং নিয়তের ওপরই নির্ভর করবে সে কোন ধরনের সৎকর্মশীল। সুবিধাবাদী সৎকর্মশীল না মন-মানসিকতা ও কাজে,কর্মে প্রকৃত অর্থে জীবনের সব সময়ে ও তৎপরতায় সার্বক্ষণিক ভাবে সৎকর্মশীলঃ শেষ বিচার দিবসে এ সবই পরখ করে দেখা হবে,ফাঁস হয়ে পড়বে।
অসৎ ব্যাক্তির ইবাদত মূল্যহীন আর জান্নাত লাভের জন্য ঈমানের সাথে সৎকাজ করার দৃঢ় মানসিকতা অবশ্য থাকতেই হবে যেটা কোরআন পাকে বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। প্রশ্ন আসে বিশ্বের অন্যান্য জাতির চেয়ে মুসলমানরা কি করে ক্ষেত্র বিশেষে অধিকতর অসৎ ও দুর্নীতিপরায়ণ হতে পারে? এর একটি সহজ ব্যাখ্যা হতে পারেঃসাধারন মুসলমানরা কোরআন আবৃত করে কিন্ত বুঝে পড়ার সংস্কৃতি সমাজে গড়ে উঠেনি। ইমাম হাসান আল বসরী (৬৪২-৭২৮ খৃঃ) বলেনঃ 'কুরআনকে নাযিল করা হয়েছে এর নির্দেশনা বলীর ভিত্তিতে কাজ করার জন্য কিন্ত তা না করে তারা এর আবৃতিকে কাজ হিসাবে ধরে নিয়েছে।' দুনিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, তুলনামুলক ভাবে পশ্চিমা বিশ্বের লোকদের মুসলিম সমাজের চেয়ে অধিক সামাজিক এবং সৎকর্মশীল হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে।যারা ইউরোপ, আমেরিকা গিয়েছেন বা থাকেন, তাদের ধারনাও নিঃসন্দেহে এমনটিই হয়ে থকার কথা। প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক, আমাদের চলমান ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতি কেন আমাদেরকেও সেভাবে তৈরি করতে আপাত ব্যর্থ প্রমানিত হচ্ছে,কোনো ভাবেই কেন যেন পাশ্চাত্ত্যের সাথে প্রতিযোগিতায় পারছেনা।গভীর বিশ্লেষণে দেখা যাবে মূল কারন কিন্ত অতি সুক্ষ এক স্থানেঃ {বেহেশত লাভের ত্রুটিপূর্ণ গতানুগতিক ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ,শিক্ষা,প্রথা,ও নির্দেশনা।}
    ফলে প্রচলিত সংস্কৃতির ঘূর্ণিপাকে যেন হাবু ডুবু খাচ্ছে সমাজের সকলেই। অসৎ কর্মশীল হয়ে জান্নাত লাভের কোনো রকম সুযোগ ইসলামে একেবারেই না থাকার পরেও কেন যেন এক শ্রেণীর মুসলিমদের ভিতরে  চলে আসছে দাড়ি, টুপি, নামাজি, হাজি সেজে অঘোষিত এই দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় নামতে। জীবনে একবার হজ করলেই যেন কেল্লাহ ফতেহঃ সারা জীবন ভর আবার সৎ থাকা? আসমান উচু পরিমাণ নেকী অর্জন করেও সঠিক কথা হচ্ছে, সারা জীবন যাদের হক নষ্ট করা হয়েছে নিজের অর্জিত মূলধন নেকী দিয়ে তাদের সাথে বিনিময় করতে হবে। আর এভাবে পরিশোধ করতে করতে আগেই নেকী সব শেষ হয়ে যায় সেক্ষত্রে প্রাপকের গুনাহ নিজের কাঁধে নিয়ে দোযোগে যেতে হবে। প্রথমে দেখা যাক কোরআনের আলোকে সৎকাজের ব্যাখ্যাঃ        সৎকাজ কী?----
পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারা আয়াত১৭৭ : ‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সব  নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী,আর তারাই পরহেযগার।"
  এখন আমরা স্পষ্ট ধারনা লাভের জন্য বিশ্লেষণ করতে পারি, আমাদের কি বার্তা পরিবেশন করছে জান্নাত লাভের আয়াত সমূহ? সব আয়াতেই কিন্ত পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা রয়েছেঃ ঈমানদার সৎকর্মশী্লদের জন্যই  কেবলমাত্র জান্নাত।ঈমানের সাথে সৎকর্মশী্ল না হলে আর সব গুন থাকলেও কিন্ত কারও কপালে কস্মিনকালেও জান্নাত জুটবেইনা।
১] আর সবার জন্যই রয়েছে কেবলা একেক দিকে, যে দিকে সে মুখ করে (এবাদত করবে)। কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।[বাকারা ২:১৪৮ ]
২] যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুত: আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।[ ইমরান ৩:১৩৪ ]
]আর যারা তাঁর কাছে আসে এমন ঈমানদার হয়ে যায় সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে সুউচ্চ মর্তবা।[ত্বা-হা২০:৭৫]
৪] যে ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে,সে জুলুমওক্ষতির আশঙ্কা করবে না।[ত্বা-হা ২০:১১২]
৫]এবং ইসমাঈল, ই'দ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন,তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী। আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ।[আম্বিয়া২১:৮৫-৮৬]
৬] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।[হাজ্জ্ব ২২:১৪]
৭] সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে আছে পাপ মার্জনা এবং সম্মানজনক রুযী।     [হাজ্জ্ব২২:৫০]
৮] তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ কে খুব স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে।নিপীড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ।[শু’য়ারা ২৬:২২৭]
৯] তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়,সে সফলকাম হবে।[কাসাস২৮:৬৭]
১০] আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিল,তার বলল, ধিক তোমাদেরকে, যারা ঈমানদারএবংসৎকর্মী,তাদের জন্যে আল্লাহর দেয়া সওয়াবই উৎকৃষ্ট।এটা তারাই পায়, যারা সবরকারী।[কাসাস ২৮:৮০]
১১] যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তদপেক্ষা উত্তম ফল পাবে এবং যে মন্দ কর্ম নিয়ে আসবে, এরূপ মন্দ কর্মীরা সে মন্দ কর্ম পরিমানেই প্রতিফল পাবে।[কাসাস ২৮:৮৪]
১২]আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।[আনকাবুত২৯:৭]
১৩]যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে,আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব।[আনকাবুত২৯:৯]
১৪] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদে স্থান দেব, যার তলদেশে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কত উত্তম পুরস্কার কর্মীদের। [ আনকাবুত ২৯:৫৮]
১৫] যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে; [ রূম ৩০:১৫ ]
১৬] যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে যাতে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে প্রতিদান দেন। নিশ্চয় তিনি কাফেরদের ভালবাসেন না। [রূম ৩০:৪৫]
১৭] যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত।[ লুকমান ৩১:৮]
১৮] সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর ওয়াদা যথার্থ।তিনি পরাক্রমশালীওপ্রজ্ঞাময়।[ লুকমান ৩১:৯]
১৯] যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে। [ লুকমান ৩১:২২ ]
২০] যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত           [ সাজদা৩২:১৯]
২১] তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মান জনক রিযিক প্রস্তুত রেখেছি। [ আহযাব ৩৩:৩১]
২২]তিনি পরিণামে যারা মুমিন ও সৎকর্ম পরায়ণ, তাদেরকে প্রতিদান দেবেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক।[ সা’বা ৩৪:৪]
২৩] তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করবে না। তবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে,তারা তাদের কর্মের বহুগুণ প্রতিদান পাবে এবং তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।                    [সা’বা ৩৪:৩৭]
২৪] আমি এভাবেই সৎকর্ম পরায়নদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।[ সাফফাত৩৭:৮০]
২৫] এভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।       [ সাফফাত ৩৭:১২১]
২৬]যে মন্দ কর্ম করে, সে কেবল তার অনুরূপ প্রতিফল পাবে, আর যে, পুরুষ অথবা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তথায় তাদেরকে বে-হিসাব রিযিক দেয়া হবে।[মু’মিন ৪০:৪০]
২৭] 'অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়, আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং কুকর্মী। তোমরা অল্পই অনুধাবন করে থাক।'   [ মু’মিন ৪০:৫৮]
২৮] 'নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।'[সুরা হা-মীম৪১:৮]
২৯] 'যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ,তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?' [ হা-মীম ৪১:৩৩]
৩০] 'যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না।'            [হা-মীম ৪১:৪৬]
৩১]'যে সৎকাজ করছে, সে নিজের কল্যাণার্থেই তা করছে, আর যে অসৎকাজ করছে, তা তার উপরই বর্তাবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।'     [ যাসিয়া ৪৫:১৫]
৩২] 'যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম।' [ মুহাম্মাদ ৪৭:১২]
৩৩]'যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না।প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী।'              [তুর ৫২:২১]               
৩৪]'কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।' [ ইনশিকাক ৮৪:২৫]
৩৫] 'যারা ঈমান আনেওসৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নির্ঝরিণীসমূহ। এটাই মহাসাফল্য।' [বুরূজ ৮৫:১১]
৩৬]‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।’  [বাইয়্যেনাহ ৯৮:৭]
৩৭]‘তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর।’[বাইয়্যেনাহ ৯৮:৮]        আল্লাহ আমাদেরসকলকে ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যেয়ে জান্নাত লাভের তৈফিক দিন। আমিন।
লেখক:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের  সাবেক শিক্ষক।