Tuesday, June 26, 2018

এক নজরে দুটি অমিমাংসিত প্রশ্ন ২২জুন ২০১৮ শুক্রবার নয়া দিগন্তে ছাপা


লেখাটি গত ২২জুন  ২০১৮ শুক্রবার নয়া দিগন্তে ছাপা হয়েছেঃ আপনার প্রতিক্রিয়া?
  এক নজরে দুটি অমিমাংসিত প্রশ্ন
                               
}*এই ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট বিশ্বের জন মুসলিম অবগত বা ধারনা রাখেঃ কেন মুসলিমরা শুরু থেকেই প্রচলিত অর্থে শুধুমাত্র ধর্মের কাজ ( নামাজ, রোজা) না করে সেই সাথে বিজ্ঞান চর্চা গবেষণা করে আজকের বিজ্ঞান, বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়ে বিজ্ঞানের বিকাশ/যাত্রা শুরু করে?
মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলামগ্রন্থে প্রফেসর রাও লিখেছেন,কোরআন পাকে যতগুলো আয়াত মৌলিক ইবাদত সম্পর্কিত তার চেয়ে অনেক গুন বেশি সেই সম্পর্কিত আয়াত যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রকৃতি বা সৃষ্টিরহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা, পর্যবেক্ষণ অনুসন্ধানের। আরবীয় মুসলমানেরা এই প্রেরণায় প্রকৃতির রহস্য নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শুরু করে দিয়েছিলেন, যেটা বর্তমান সময়ের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা গবেষণার মূলনীতির ভিত্তি নির্মাণ করে, যা অজ্ঞাত ছিল গ্রিকদের কাছে।যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধিক বিক্রীত বই হচ্ছে, ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়েরঅ্যা হিস্ট্রি অব গড এতে বর্ণিত হয়েছে, ‘কুরআন পাকে সব সময়ই বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আল্লাহ পাকের নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্য উদঘাটনের বিষয়কে। আর কারণে ইসলামের অনুসারীরা যুক্তি কারণকে এরিয়ে না গিয়ে গভীর মনোযোগ এবং বিশেষ কৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ করছে। এই মনোভাব দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পরে দেখা যায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারাল সায়েন্স) মুসলমানদের এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, যা কখনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ বা সংঘর্ষ ঘটায়নি। অথচ খ্রিষ্টান ধর্মে সেটা দেখা গেছে।

সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা হল কোরআনের বাক্যকে বিশ্বের সব মুসলমানরা বাক্য (আরবী জুমলাহ) না বলে বলেন নিদর্শন যার আরবী হচ্ছে আয়াত। প্রকৃতিতে আল্লাহর সৃষ্ট সব নিদর্শন খোজার  ফলশ্রুতিতে মুসলিমরা পরিশেষে বিশ্ববাসীকে আজকের বিজ্ঞান উপহার দিতে সমর্থ হয়। মুসলিমরা মনে করে কোরআনের বাক্য ও আল্লাহ্‌র আর এক নিদর্শন /আয়াত। কারন এর সমতুল্য কোন কিছু কারও পক্ষে রচনা সম্ভব হয়নি বা সম্ভব নয়। কাজেই এটাও আল্লাহর আর এক নিদর্শন। সেহেতু জগতের সব মুসলমান কোরআনের বাক্যকে কেবলমাত্র বাক্য/জুমলাহ না বল্য,  আয়াত বলে থাকেন।

}*এই ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট  সমগ্র বিশ্বের জন অবগত এবং বিশ্বাস করেন।
·
মুসলিম জাতি আজকের বিজ্ঞানের ইনভেনশন করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগার লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত তথ্যঃ আজকের বিজ্ঞানের ইনভেনশন করেছে ইসলাম।
[
বিশ্বে আমি সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যে এটা ঘটনাক্রমে দেখতে/জানতে সক্ষম হয়েছিলাম কারন আমার ব্যাকগ্রাউনডঃ আমি পদার্থ বিজ্ঞানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষক এবং ইসলাম নিয়ে চিন্তাভাবনাও কিছু গবেষণা করেছি। তা না হলে এটি আমার দৃষ্টিতেও পড়ত না যেমনটি সেখানে অগণিত দর্শকদের নজরে পড়ে না ]

১৮০০ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে লাইব্রেরি অব কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।এই পাঠাগারে ১৬ বিলিয়ন বই এবং ১২০ মিলিয়ন অন্যান্য ইনফরমেশন সংগৃহীত য়েছে। এখানের সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার এতে ৫৪০ মাইল দীর্ঘ সেলফ রয়েছে যাতে ৯০ মিলিয়ন বই রাখা যায়। ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই পাঠাগারের সব বই ওয়াশিংটন ডিসির তিনটি ভবনে সংরক্ষিত। ১৮৯৭ সালের জেফারসন ম্যাগনিফিসেন্ট ভবনটি শুধু দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিশাল সংগ্রহশালার মধ্য থেকে ২০০টি ঐতিহাসিক পুস্তক ভবনটির দ্বিতীয় তলার ট্রেজারি গ্যালারিতে সংরক্ষিত রয়েছে। এই তলার মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ। গম্বুজের মধ্যে একেকটি চিত্রের নিচে একেকটি দেশের নাম যে সব দেশ কোন আবিস্কার বা ইনভেন্শন করেছে। ব্যতিক্রম চোখে পড়ল, এত দেশের মধ্যে এক স্থানে শুধু একটি ধর্মের নাম। কোন কোন দেশ কি কি আবিস্কার বা উদ্ভাবন করেছে, সেটি গাইড আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। দেশের নামের বদলে যে চিত্রের নিচে কেবল মাত্র ধর্মের নামইসলামলেখা ছিল, সেটি দেখিয়ে গাইড বলেন, এটার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, পদার্থবিজ্ঞানের ইনভেনশন করেছে ইসলাম ধর্ম। ইতিহাস বলছে, শুরুতে কিন্ত বিজ্ঞান বলতে একমাত্র পদার্থবিজ্ঞানকে বোঝানো হতো। বর্তমানেও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, তত্ত্ব এবং আবিষ্কৃত কলকব্জা যন্ত্রপাতি ব্যতিরেকে বিজ্ঞানের অপরাপর শাখাগুলো হয়ভোঁতা’, না হয় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, রোবট, ইন্টারনেট অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সব কিছু প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পদার্থবিজ্ঞানেরই ফসল বা অবদান। প্রাণ পদার্থবিজ্ঞান, ভূপদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি হরেকরকম নামকরণ থেকে সহজেই ধারণা করা যায়, মূল বিজ্ঞান পরিবারে পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থান তার কেন্দ্রবিন্দুতে।মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলামবইটির লেখকের বর্ণনা মতে, রবার্ট ব্রিফল্ট তার বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য মেকিং অব হিউম্যানিটিতে অনেক উদাহরণ পরিবেশন করে সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে- ‘আমাদের বিজ্ঞান আরব মুসলমানদের কাছে ঋণী শুধু এটুকুর জন্য নয় যে, বিজ্ঞানকে তারা কেবল চমকপ্রদ আবিষ্কার অথবা বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপহার দিয়েছে। বিজ্ঞান আরবীয় সংস্কৃতির কাছে আরো অনেক বেশি ঋণী। বিজ্ঞান তার নিজের অস্তিত্বের জন্য ঋণী।একই লেখক কথাটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, গ্রিকরা নিয়মাবদ্ধ সর্বজনীন করা এবং তত্ত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ বাতলে দিয়েছিল, কিন্তু ধৈর্য ধরে গবেষণার পদ্ধতি, সন্দেহাতীত জ্ঞানকে পুঞ্জীভূতকরণ, বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষুদ্র ব্যাপারেও বিশদ পরীক্ষণ পদ্ধতি, বিস্তারিত দীর্ঘ প্রসারিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান- এসবই গ্রিক মানসিক ধাত বা মেজাজে ছিল বহিরাগত। আমরা যেটাকে আজ বিজ্ঞান বলি, তার উত্থান ইউরোপে হয়েছিল নতুন পদ্ধতি গবেষণার ফলে এবং পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপন গণিতশাস্ত্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে পদ্ধতিগুলো গ্রিকদের কাছে অজানা ছিল... ইউরোপকে আরবীয় মুসলমানেরা এসব মূলনীতি পদ্ধতিগুলো পরিচয় করিয়ে দেয়
লেখকঃ 
  সাবেক সিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়