Thursday, May 26, 2016

বুশের ‘৯-১১’ সুপার ড্রামা

Thursday, September 11, 2014


বুশের ‘৯-১১’ সুপার ড্রামা

বিষয়টি আপাত-দুর্বোধ্য ও জটিল মনে হলেও বাস্তবতা হচ্ছে- তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের সুদূর পরিকল্পিত ৯-১১ সুপার নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় প্রচণ্ড তোলপাড় শুরু হয়ে যায় : [সর্বনাশ!] ইসলাম এ দেশে দ্রুত সম্প্রসারণশীল ধর্ম। এটি আরো তীব্র হয়ে ওঠে যখন কিনটন সরকার হোয়াইট হাউজে স্থায়ীভাবে ইসলামের প্রতীক চাঁদ-তারা পতাকা ওড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতার পর থেকে দু’টি ধর্মীয় পতাকা হোয়াইট হাউজে উঠানো হতো। দেখতে দেখতে মুসলমানদের সংখ্যা ইহুদিদের টপকিয়ে যেতে দেখা যায়। এখন তিন ধর্মের পতাকা হোয়াইট হাউজে উড়ছে। জন্স হপকিন্স যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি। বাল্টিমোরে এর দু’টি ক্যাম্পাস। হোমউড ক্যাম্পাসের লাইব্রেরির নিচ তলার দেয়ালে পরিবেশিত একটি নিউজ আমার নজরে পড়েছিল : প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। মিডিয়ায় দেখি : এই ধর্মান্তরিতদের মধ্যে বেশির ভাগ মহিলা। এ সময় একটা বই হাতে পাই : ‘ডটার অব অ্যানআদার পথ’। লিখেছেন একজন খ্রিষ্টান মা। বইটিতে বিবৃত হয়েছে লেখিকা মিসেস অ্যানওয়ের অভিজ্ঞতাসহ নিজ কন্যা ও আমেরিকান অন্যান্য রমণীর মুসলমান হতে চাওয়ার কাহিনী। বইটি এত জনপ্রিয়তা পায় যে, প্রকাশের পরপরই ফরাসি ভাষায় ছাপা হয় ফ্রান্স থেকে। পরে বাংলাদেশে এসে এর বাংলা অনুবাদ ‘অন্য পথের কন্যারা’ দেখতে পাই।
তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে আল গোরের প্রতিদ্বন্দ্বী বুশ। নির্বাচনের বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি ছিল রোমাঞ্চকর। বিতর্কের একটি বিষয় থেকে এটা স্পষ্ট। পরবর্তীকালে কেন বুশ সেই বিতর্কিত ক্রুসেডের ঘোষক এবং নাইন-ইলেভেনের পরিকল্পক হলেন? ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বেছে নিলেন গোঁড়া ইহুদি লিবারম্যানকে। বুশের কাছে স্পষ্ট হলো, ইহুদি ভোট আল গোর পাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি লবি খুবই সক্রিয় ও সুসংগঠিত। সে দেশে সাধারণত খ্রিষ্টান ভোট দুই ভাগে প্রায় সমানভাবে বিভক্ত হয়ে ভোটের ভারসাম্য বজায় রাখে দুই দলের মধ্যে। ব্যতিক্রম হচ্ছে, ইহুদি ভোট যে দিকে মোড় নেয়, তারাই বিজয়ের হাসি হাসে। ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো ইহুদি (অখ্রিষ্টান) হোয়াইট হাউজের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বুশ জয়ের বিকল্প পথ খোলা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে মুসলমানদের দ্বারস্থ হন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই প্রথম একজন প্রার্থী সরাসরি মুসলমানদের কাছে ভোট চাইলেন। সেই সময়ে মুসলমানদের প্রাণের দাবি ছিল, জননিরাপত্তা আইনে সংযুক্ত ‘সিক্রেট এভিডেন্স’ রহিত করা। আইনটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংযুক্ত হয়েছিল মুসলমানদেরকে সামাজিকভাবে জব্দ এবং কোণঠাসা করার জন্যই। এই সিক্রেট এভিডেন্সের দোহাই দিয়ে বা এর ফাঁকফোকড় তৈরি করে শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের জেলে পাঠানো হতো। বুশ দেখলেন, এ বিষয়ে কথা বললে সব মুসলমান ভোটারের ভোট বাগানো সম্ভব হবে। বিতর্কের সময় তিনি সরাসরি বললেন : ‘নিরাপত্তা আইনে সিক্রেট এভিডেন্সকে বৈষম্যমূলক মনে করি। ক্ষমতায় গেলে এটি বাতিল করব।’ জবাবে আল গোর বলেছিলেন : ‘আমি এটাকে বৈষম্যমূলক মনে করি না।’ মুসলমান ভোটারদের মনে হলো, বুশ তাদের পক্ষ নিয়েছেন। এই প্রথম মুসলমানেরা জোটবদ্ধভাবে একদিকে ভোট প্রয়োগ করেন। এমনকি বুশের পক্ষে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারে জড়িয়ে পড়েন। শেষে ইহুদি লবির সাথে প্রতিযোগিতায় বিজয় ছিনিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, মুসলমানেরাও মার্কিন মাটিতে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে সক্ষম। মুসলিম ভোট ব্যাংকের শক্তির মহড়া, এটাকে দেখা হলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে। প্রচারমাধ্যম এটা লুফে নিলো। ইনভেস্টরস বিজিনেস ডেইলি এক নিবন্ধে লিখেছিলন ‘আমেরিকান মুসলমানদের জন্য এটা ছিল বিজয়ের চেয়ে অনেক বেশি।’ এর কপি বিভিন্ন মসজিদে বিলি করা হয়, যার একটি কপি আমার কাছেও আছে।
‘নয়-এগারো’তে ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম হামলা হলেও এর নীলনকশা শুরু হয়েছিল ১৯৯৩-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি এই একই প্রতিষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। এভাবে তখন এটা প্রমাণ করার চেষ্টা চলে যে, জাতি হিসেবে মুসলমানরাই সন্ত্রাসী। তখন রিডার্স ডাইজেস্ট এক নিবন্ধে লিখেছিল, হামলার জন্য বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র বাছাই করার লক্ষ্য হলো, বিশ্ব সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালানো। কারণ, এখানে সব দেশের লোকেরা অবস্থান করে। সিএনএন-এর প্রথম রিপোর্টে স্বীকার করা হয়ঃ যদি বোমা হামলাকারীরা বাণিজ্যকেন্দ্র সমূলে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করত, তাহলে বিস্ফোরক রাস্তার সমতলে বসাত। ফলে শত শত মানুষ নিহত বা জখম হতো। বাল্টিমোর নিউট্রেন্ড পত্রিকা লিখেছে, বোমা হামলাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়, যার ফলে সবচেয়ে কম ক্ষতি হয় এবং এর আওতার মধ্যে পড়ে সবচেয়ে কম লোক। সামগ্রিকভাবে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে প্রথম হামলাটি আসলেই ছিল এক আগাম কৌশল। এর একমাত্র লক্ষ্য ছিল, প্রচারমাধ্যমে স্পর্শকাতর অনুভূতি সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলমানদের ‘সন্ত্রাসী’ ব্রান্ডে চিহ্নিত করে তাদের ব্যাপারে আমেরিকানদের সতর্ক ও উত্তেজিত করা। ১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে বিরামহীন মিডিয়াক্রুসেড, যার লক্ষ্য ছিল মুসলমানদেরকে ‘সন্ত্রাসী জাতি’ হিসেবে চিহ্নিত করা।
নাইন-ইলেভেনে মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে দু’টি যাত্রীবাহী বিমান আছড়ে পড়েছিল নিউ ইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে। অতঃপর আগুন, ধোঁয়া; তাসের ঘরের মতো দু’টি টাওয়ার ভেঙে পড়ে। ‘নয়-এগারো’র ভয়াল সন্ত্রাসী হামলার দশক পূর্তির পরেও বিবিসি, রয়টার, এএফপি পরিবেশিত সংবাদে প্রশ্ন করা হলো : আসলে কী ঘটেছিল ২০০১-এর এই দিনে? সত্যিই কি আলকায়েদা মার্কিন শৌর্যে আঘাত হেনেছিল, নাকি সবই পাতানো?  বিষয়টি রহস্যময় রয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন জোন্সের নেতৃত্বে ৭৫ জন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর অভিযোগ নিউইয়র্ক ও পেন্টাগনে সে হামলা যাত্রীবাহী বিমানের নয়, এটা ছিল ভেতর থেকেই সংঘটিত। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে অধ্যাপক স্টিভেন বলেন, ভেঙে পড়া টুইন টাওয়ারে ধ্বংসস্তূপ পরীক্ষার পর নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে সেখানে ভবন ধসিয়ে দেয়ার বিস্ফোরক ব্যবহারের। জোন্স বলেন, আফগান গুহায় বসে কিছু লোক এবং ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারী এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের এই তত্ত্বের বিরুদ্ধে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। ‘ওপেন’ হলো ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এর সদস্যদের মধ্যে আছেন নোয়াম চমস্কি, পিট সিগার, আছেন সাংবাদিক, সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, সন্ত্রাসবাদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা। সিএনএন-এর ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ‘ওপেন’ দাবি করেছেন বিমানের নাক টাওয়ারে স্পর্শের মুহূর্তেই বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছে ককপিটে। বিমানের ককপিটে কী এমন থাকতে পারে যার ফলে সেখানে এ রকম বিস্ফোরণ ঘটতে পারে  ‘ওপেনের’ প্রশ্ন। ট্রেড সেন্টারের দু’টি টাওয়ারে প্রতিটি বিমানের ধাক্কা লাগার ঠিক আগমুহূর্তেই একই ধরনের আগুনের ঝলকানি দেখা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া কোনোমতেই এ রকম নিয়ন্ত্রিতভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব নয়। বিমানে কি তাহলে ক্ষেপণাস্ত্র ছিল? গোটা বিশ্ব টিভিতে দেখেছে, গল গল করে ঘন সাদা ধোঁয়ার আস্তরণের মধ্যে ভেঙে পড়েছে ট্রেড সেন্টারের টাওয়ার। ‘ওপেন’-এর প্রশ্ন ' সাদা ধোঁয়া কেন?' তাদের দুই বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ কানাডার কারবেল এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ফ্রেডি সি¤প্যাকসান জানাচ্ছেন, বিস্ফোরকের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই অ্যামোনিয়াম হাইড্রেট, কার্বন ও সালফারের মিশ্রণ ছিল। তা না হলে এই পরিমাণ ছাইবিহীন সাদা ধোঁয়ার জন্ম হতে পারে না। তাহলে কি দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল টাওয়ারে? একটি অত্যাধুনিক নজরদারি ক্যামেরায় তোলা একটি ছবির প্রতিটি ফ্রেম এক সেকেন্ডের ৮০০ ভাগে ভাগ করে ‘ওপেন’ দেখাচ্ছে, নীল আকাশ আর তার পরেই পেন্টাগনের এক বাহুতে বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ; ভয়াবহ আগুন। কিন্তু বিমানের কোনো চিহ্ন নেই। তা হলে বিমান ভেঙে পড়ল কোত্থেকে?
কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ট্রোর মতে, ৯-১১ ঘটনাটি ছিল একটি ষড়যন্ত্র। পেন্টাগনে আসলে বিমান নয়, রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছিল। কারণ, বিমানের যাত্রীদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, যাত্রী ও ক্রুদের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। যাত্রী ও ক্রুদের মৃত দেহ পাওয়া গেলে DNA পরীক্ষা দ্বারা অবশ্যই তাদের শনাক্ত করা হতো। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে ইরানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বলেন, ‘নয়-এগারো’ হামলা ছিল গোয়েন্দা সংস্থার জটিল দৃশ্যকল্প ও কর্মকাণ্ড। এ হামলায় তিন হাজার মানুষের প্রাণহানির কথা বলা হলেও তাদের নাম ও তালিকা কখনো প্রকাশ করা হয়নি।’ মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ টুইন টাওয়ার হামলার দশক পূর্তিতে বলেন, ুব্ধ আরব মুসলমানদের পক্ষে গোয়েন্দা সংস্থাকে ফাঁকি দিয়ে একসাথে চারটি বিমান ছিনতাই করে হামলা চালানো কোনো পরিস্থিতিতেই সম্ভব হতে পারে না।’ টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য বর্ণনা করে তিনি বলেন, এ দু’টি দালান আশপাশে হেলে বা কাত হয়ে পড়ার বদলে ভেঙে নিচের দিকে দেবে গেছে। বিমানের আঘাতেই ধসে পড়েছে বলে মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে ভবন দু’টি ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় একটি ভবন একই কায়দায় ধসে পড়লেও এই ভবনে কিন্তু কোনো বিমানই আঘাত হানেনি। আশপাশের ভবনগুলোর কোনো ক্ষতি ছাড়া কিভাবে তৃতীয় ভবনটি ধসে পড়ল? আর পেন্টাগনে যে বিমানটি হামলা করেছিল, তার ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া গেল না’ কিংবা আরোহীদের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহের খোঁজ মিলল না কেন? একই দিনে আর একটি বিমান যুক্তরাষ্ট্রের একটি খেলার মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও তার কোনো ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি  এর উল্লেখ করে মাহাথির বলেন যে, বিমানটি কি শেষ পর্যন্ত হাওয়ায় মিলিয়ে গেল? মার্কিন গণমাধ্যম ‘৯-১১’ ঘটনায় রহস্যজনক নীরবতা বজায় রাখে। এর উদ্দেশ্য কী?
২৮-৯-২০০১ করাচির দৈনিক উম্মতের সাথে এক সাক্ষাৎকারে উসামা বিন লাদেন বলেছিলেন : ইতঃপূর্বে বলেছি, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্ঘটিত ৯-১১ হামলায় জড়িত নই। মুসলিম হিসেবে যথাসম্ভব মিথ্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এ হামলাগুলো সম্পর্কে কোনো কিছুই জানতাম না। তা ছাড়া নিরীহ মহিলা, শিশু ও অন্যান্য মানুষের হত্যাকাণ্ডকে প্রশংসনীয় বিষয় বলে মনে করি না। নিরীহ মহিলা, শিশু ও অন্য লোকজনকে ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকার জন্য ইসলামের কঠোর নির্দেশ রয়েছে। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও এই নীতি প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্রই মহিলা, শিশু ও সাধারণ মানুষের সাথে সব ধরনের দুর্ব্যবহার করছে।’ অনেকেই মনে করেন, বিন লাদেনকে আটক না করে হত্যা করা হয়েছে শুধু এ জন্য যে, তার 
বিচার হলে অনেক তথ্য বা রহস্য ফাঁস হয়ে যেত, যা কখনো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুখকর 
হওয়ার নয়।
অনেকের অভিমত, বুশের নির্বাচনী আশ্বাস পেয়ে মুসলিম আমেরিকানরা একজোটে ভোট দিয়ে বুশকে ক্ষমতায় আনে বিধায় তারা আর কখনো যাতে আমেরিকার মাটিতে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করতে না পারে, তা চিরস্থায়ীভাবে নিশ্চিত করার জন্য ঘটানো হয় ৯-১১ নারকীয় তাণ্ডব। কানাডার দি গেজেট পত্রিকায় ডেভিড গোল্ডস্টেইন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য খোদ বুশকে দায়ী করে একাধিক বাস্তবসম্মত যুক্তি দিয়ে বলেছেন এ কাজ কোনোভাবেই বিন লাদেনকে দিয়ে সম্ভব নয়। 
লেখক : সাবেক শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

লেখাটি দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত। 
http://www.dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=Njk3NTU=&s=Nw==

প্যারিস সন্ত্রাস ও বুশের ৯/১১ কি একই সূত্রে গাঁথা?

Friday, December 18, 2015

প্যারিস সন্ত্রাস ও বুশের ৯/১১ কি একই সূত্রে গাঁথা?

প্যারিস সন্ত্রাস ও বুশের ৯/১১ কি একই সূত্রে গাঁথা?
- মুহাম্মাদ আলী রেজা

ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করে সাড়া জাগানো আলোচিত ওয়েবসাইট ‘উইকিলিকস’ প্যারিসে হামলার জন্য আমেরিকা ও তার মিত্রদের অভিযুক্ত করেছে। অনলাইনে এক টুইট বার্তায় আরো বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও লিবিয়ায় চরমপন্থীদের অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়ার ফল এটি। পরের দিন আর এক টুইট বার্তায় ওয়েব সাইটটি বলে, প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক নিহত হয়েছে। অন্য দিকে ইরাক ও সিরিয়ায় দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এই দুই মৃত্যুর সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যে উগ্রপন্থীদের প্রতিপালন করছে তার সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে।
প্যারিসে একযোগে ছয়টি স্থানে হামলা। এতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় প্যারিস। ১২৮ জন নিহত ও কয়েক শ’ মানুষ আহত হয়। ইসলামি স্টেটের ছদ্মাবরণে এই যে ভয়াল তাণ্ডব, প্রশ্ন ওঠে আইএসের এ ভয়ঙ্কর রূপের সাথে এক হাজার ৩০০ বছরের ইসলামি সভ্যতা ও জগতের সাথে কোনো ধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়! নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ এবং হত্যার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সরব হয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ইমাম (বিবিসি)।
‘ইতঃপূর্বে আমি বলেছি ৯/১১ হামলায় আমি জড়িত নই। মুসলিম হিসেবে আমি যথাসম্ভব মিথ্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। বিশ্ব বাণিজ্য-কেন্দ্রে হামলার ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না। তা ছাড়া নিরীহ মহিলা, শিশু ও অন্য লোকজনের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোর নির্দেশ আছে ইসলামের। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও এ নীতি প্রযোজ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই মহিলা, শিশু ও সাধারণ মানুষের সাথে সব ধরনের দুর্ব্যবহার করে যাচ্ছে।’
(পাকিস্তানি দৈনিক উম্মতের (করাচি) সাথে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে সাক্ষাৎকারে ওসামা বিন লাদেন।) প্রকৃত প্রস্তাবে নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার জন্য লেলিয়ে দিয়ে দুনিয়ার সব মুসলিম উম্মতের গায়ে আইএস বর্বরতার মোহর দেয়ার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠী।
প্রকৃত পক্ষে প্যারিসে যে বর্বরতা ঘটানো হয়েছে সেই একই চিত্র ফুটে উঠেছিল বুশের ৯/১১ নাটক মঞ্চস্থে। ৯/১১ ভয়াল সন্ত্রাসী হামলার এক দশক পূর্তিতে বিবিসি, রয়টার ও এএফপি পরিবেশিত সংবাদ হচ্ছে- ‘আসলে কী ঘটেছিল ২০০১ সালের এ দিনে? সত্যিই কী আল কায়েদা সে দিন মার্কিন শৈর্যে আঘাত হেনেছিল নাকি সবই পাতানো। সে প্রশ্ন রয়ে গেছে অনেকের কাছে।’
প্রেসিডেন্ট ডব্লিউ বুশকে কেন ৯/১১ নাটক মঞ্চস্থ করতে বিশ্ববাসী দেখল, আর কেনই বা তিনি এ পথ বেছে নিয়েছিলেন?
জন্মলগ্ন থেকেই য্ক্তুরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন ও রাজনীতি ইহুদিলবি প্রভাবিত এবং বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত। বুশ যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন সে সময় বড় ধরনের এক অঘটন ঘটে যায়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আলগোর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কট্টর ইহুদি লিবারম্যানকে মনোনীত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন অখ্রিষ্টান প্রার্থী হন। নিশ্চিতভাবে আমেরিকান ইহুদিদের সব ভোট আলগোরের পাল্লায় যাচ্ছে আর এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার একটি মাত্র পথ অবশিষ্ট ছিল- ইহুদিদের ভোটের বিপরীতে সব আমেরিকান মুসলিমদের ভোট। আর ঠিক এই সময়ে হোয়াইট হাউসে চাঁদ-তারা পতাকা ওঠানো হয়েছে। স্বাধীনতার পর হোয়াইট হাউজে খ্রিষ্টান ও ইহুদি এই দুই ধর্মের পতাকা উড়ত। কারণ তারা সংখ্যায় অনেক ছিল। দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে ইহুদিদের সংখ্যা টপকিয়ে যায় মুসলমানেরা। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয় এখন থেকে তিন ধর্মের পতাকা উড়বে হোয়াইট হাউসে। ওই সময় মিডিয়ায় সাড়া জাগিয়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত বেড়ে চলা ধর্ম ইসলাম। জাস হপকিন্স যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়। বাল্টিমোরে এর দুইটি ক্যাম্পাস। আমি হোম উড ক্যাম্পাসে গবেষণা করছি। এখানে লাইব্রেরির বেসমেন্টের দেয়ালে একটি নিউজ আমার দৃষ্টিতে আসে। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করছেন। বাইরে এসে পরে জানতে পারি পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন। 'Daughters of Another Path' নামে একটি বই হাতে পাই। দেখতে পাই এই বইটিতে ফুটে উঠেছে আমেরিকান রমণীদের ইসলাম গ্রহণের কথামালা। বইটি এত জনপ্রিয় যে, সাথে সাথে ফ্রেঞ্চ ভাষায় ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত হয়। ইন্টারনেটে একটি মেয়ে লিখেছে- ‘বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি। এ তো আমারই কথা। প্রথমে আব্বা আম্মাকে পড়তে দিয়ে বলি, এ বইতে পাবে, কেন আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছি।’ বইটি আমার এত ভালো লেগেছিল যে ঠিক করলাম অনুবাদ করব। এসে দেখি ২০০০ সালেই বইটি বাংলায় ঢাকা থেকে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইট। বইটিতে আছে আমেরিকান মেয়েরা কেন পরিত্যাগ করছে তাদের এত দিনকার খ্রিষ্টীয় পরিবেশ আর পছন্দ করছে ইসলামকে। যে ধর্মে আছে শৃঙ্খলা, আত্মসমর্পণ ও ভিন্নরূপ হওয়ার বিধান।
আমেরিকায় দ্রুত বেড়ে চলা ধর্ম হওয়ায় মুসলমানদেরকে সমাজে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে বা কোণঠাসা করার মানসে আইনে প্রয়োগ করা হয় Secret evidence। এই গোপনীয়তার সুযোগ নিয়ে মুসলমানদের জেলে ঢোকান হতো। আর এই Secret evidence-এর প্রয়োগ শুধু মুসলমানদের ক্ষেত্রেই দেখা যেত। এখানকার সব আমেরিকান মুসলিমদের একমাত্র দাবি ছিল এটির অবসান। বুশের নির্বাচনে জেতার জন্য দরকার ছিল মুসলিম ভোট। তিনি এই সুযোগটি কাজে লাগান। আলগোরের সাথে নির্বাচনী বিতর্কে তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিক্রেট এভিডেন্সকে তিনি Discriminitory (পক্ষপাত/ বৈষম্যমূলক) মনে করেন। আলগোর জবাবে বললেন, তিনি তা মনে করেন না। বাস্তবে ঐতিহাসিকভাবে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জাতীয় নির্বাচনী বিতর্কে মুসলমানদের পক্ষে কথা বললেন। তার বিনিময়ে আমেরিকান মুসলমানেরা এক জোট হয়ে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে বুশের পক্ষ নেন। দরজায় কড়া নেড়ে শেষে ইহুদি লবির বিপরীতে বুশকে বিজয়ী করেন। আগে মুসলমানেরা ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে ভোট দিতেন; জোটবদ্ধভাবে এক পাল্লায় এবারই প্রথম। নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ইনভেস্টরস ডেইলি এক নিবন্ধে মন্তব্য করে আমেরিকান মুসলমানদের জন্য এটা বিজয়ের চেয়ে বেশি ছিল। মসজিদে এটি বিতরণ হচ্ছিল যার একটি আমি পাই।
মুসলিম আমেরিকান ভোটে বিজয়ী বুশ উপলব্ধি করলেন- এভাবে চললে একদিন মুসলমানেরা ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট ব্যাংকই মূল ক্ষমতা। দ্রুত বেড়ে ওঠা ধর্ম ইসলামকে ঠেকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।
ডেভিড গোল্ডস্টেইন কানাডার মন্ট্রিল থেকে প্রকাশিত ‘দ্য গেজেট’ পত্রিকায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য খোদ বুশকে দায়ী করে বিন লাদেনকে বেকসুর খালাস দিয়ে বাস্তবসম্মত যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন- এ কাজ বিন লাদেনকে দিয়ে সম্ভব নয়।’ বুশের অনেক উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি ইসলামকে নির্মূল করা। আর সে কারণে তার প্রথম ভাষণে ক্রুসেডের ডাক দিয়েছিলেন।
হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা চার্লিশি বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসন টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগন ভবনে ৯/১১ এর তাণ্ডব চালিয়েছে। ২০ মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘ্য এক চলচ্চিত্রে এই হামলার অষ্টম বার্ষিকীর প্রাক্কালে এ দাবি করেন। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ও সোচ্চার হওয়ার জন্য মার্কিন জনগণের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মতে ৯/১১ এর ঘটনা ছিল একটি ষড়যন্ত্র। বিশ্বের মানুষকে এ ঘটনা দিয়ে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। বিমানের যাত্রী ও ক্রুদের মৃতদেহ পাওয়া গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের অবশ্যই শনাক্ত করা হতো।
জাতিসঙ্ঘের ৬৫তম অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনিজাদ বলেন- ৯/১১ একটি মিথ্যা ঘটনা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম অজুহাত। এ হামলা ছিল গোয়েন্দা সংস্থার জটিল দৃশ্যকল্প ও কর্মকাণ্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন জেন্সের নেতৃত্বে ৭৫ জন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর অভিযোগ- নিউ ইয়র্ক ও পেন্টাগনে হামলা যাত্রীবাহী বিমানের নয়। এটা ছিল ভেতর থেকেই সংঘটিত। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে অধ্যাপক স্টিভেন বলেন, আফগান গুহায় বসে কিছু লোক এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের এ তত্ত্বকে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। টুইন টাওয়ারের ধ্বংস্তূপ পরীক্ষায় নিশ্চিত প্রমাণ মিলেছে ভবন ধসিয়ে দেয়ার বিস্ফোরক ব্যবহারের।
লেখক : জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক
- See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/77901#sthash.moVkKRBw.dpuf

সাতশ বিশ কোটির মাত্র একজন মা, বাবাও একজন

সাতশ বিশ কোটির মাত্র একজন মাবাবাও একজন
29 January, 2014
এই মুহুর্তে বিশ্বে জনসংখ্যা ৭২০ কোটিতে পৌছেছে। আমাদের মা-বাবা অদ্বিতীয় তার অর্থ আমরা সবাই ভাই-বোন, নিগ্রো-ককেশিয়ান এক মায়েরই সন্তান। বিশ্ব ইতিহাসে সাড়া জাগানো ডারউইনের বিপ্লবী বিবর্তনবাদের সুত্র ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে আসছিলেন মানব জাতির পূর্বপুরুষদের এ ধরা পৃষ্ঠে আবির্ভাব হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে। বিবর্তনের ধারা হিসেবে তার অর্থ দাঁড়ায় আমাদের পূর্ব পুরুষদের সংখ্যা স্বভাবতই হবে অগনিত। বেবুন, গরিলা, শিম্পাঞ্জী, ওরাংওটাং এমনি সব প্রজাতির এক ধাপ হতে অপর ধাপে উত্তোরনের মাধ্যমে বিবর্তনের শেষ ধাপ ছিল আমাদের। তাই ধরে নেওয়া হয়েছিল আমাদের আদি মা-বাবার সংখ্যা ছিল অসংখ্য যার কারনে বলা হতো জাতিতে জাতিতে, বংশ ও গোত্রের মধ্যে কাঠামোগত, আকৃতিগত, চর্মবর্ণ, চুলের রঙ ইত্যাদিতে এত পার্থক্য। এতদিনের বিবর্তনের এসব জল্পনা কল্পনাকে ভেস্তে দিয়ে বিজ্ঞানাগারে প্রমাণিত হলো আমাদের মা-বাবা অদ্বিতীয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কী তা হলে বিবর্তনের ফসল নই? না কী ভীনগ্রহ, সেই পৌরাণিক বেহেশত থেকে আমাদের পূর্ব পুরুষদের আগমন?

skullসাম্প্রতিক গবেষণায় একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যা এএফপি, আল-জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর ১৯ অক্টোবর ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ১৮ লাখ বছরের পুরোনো একটি খুলির ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, মানুষের পূর্বসূরি আদি প্রজাতি (হোমিনিড) আসলে তিনটি নয়, বরং একটিই ছিল।

সায়েন্স সাময়িকীতে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

২০০৫ সালে জর্জিয়ার দামিনিসি প্রত্নস্থলে খুবই ভালো অবস্থায় থাকা পাঁচটি হোমিনিড খুলি উদ্ধার করা হয়। এগুলোর একটির সঙ্গে ২০০০ সালে পাওয়া একটি চোয়ালের হাড় ঠিকঠাক মিলে যায়। এতে একটি পরিপূর্ণ খুলি নিয়ে গবেষণার সুযোগ পান বিজ্ঞানীরা। ওই খুলির ধারকের মস্তিষ্কের আকার ছিল আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

সংশ্লিষ্ট গবেষক এবং সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত অ্যানথ্রোপলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞ মার্সিয়া পোন্স দো লিয়ঁ বলেন, চোয়াল জুড়ে সম্পূর্ণ করা খুলিটি হচ্ছে ওই যুগের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ করোটি।

গবেষকেরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেন, হোমিনিডের পাঁচটি খুলির গঠনে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। অথচ সেগুলো একই সময়ের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তবে কিছু পার্থক্যের কারণে সেগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা খুলিগুলোর চোয়াল, ভ্রু ও গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক পার্থক্য বিশ্লেষণ করেন। এতে সবগুলো খুলি একই প্রজাতিভুক্ত আদি প্রাণীর হতে পারে বলে জোরালো সম্ভাবনা দেখা যায়।

বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল নিউজ উইক জানুয়ারী ১১, ১৯৮৮ সংখ্যায় ‘আদম হাওয়ার অনুসন্ধানে’ শিরোনামে একটি নাতিদীর্ঘ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। (বিঃ দ্রঃ ২০০১ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়ার একটি টকশোতে জানতে পারি ১১/১/১৯৮৮ সংখ্যার নিউজউইকের কথাটি। আমি ডাইরীতে নোট করি। স্থানীয় এক লাইব্রেরী থেকে আমি প্রবন্ধটির কপি সংগ্রহ করি)

প্রবন্ধটির মূল বক্তব্যটি ভাষান্তর করা হচ্ছেঃ

আমাদের এজমালী মাঃ “পৌরাণিক কাহিনীর বর্ণনাকারীদের উপাখ্যান এখন বিজ্ঞানীদের মৌলিক গবেষণার ফলাফলের সাথে একীভূত হতে যাচ্ছে। আমরা সবাই অতীতের একস্থানে অভিন্ন পূর্ব-পুরুষের অংশ ভাগ করি।” এ আবেগময় বক্তব্যটি করেছেন নিউজ উইকে প্রকাশিত নিবন্ধ ‘The Search for Adam and Eve’ – এর লেখকেরা। তারা আস্থার সাথে বলেছেন, ‘এই সময়ে কিন্তু এই প্রমাণগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে যারা গবেষণা করেছিলেন আফ্রিকার চিড়ধরা শুষ্ক উপত্যকায় না বসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যামেরিকান ল্যাবরেটরিতে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, আমাদের সার্বজনীন মা হচ্ছেন এক মহিলা, যিনি ধরাপৃষ্ঠে দুই লাখ বছর আগে বাস করতেন এবং রেখে গেছেন ‘জিন’ যেটি মানবজাতির সবাই নিজ দেহে বহন করে চলছে। বর্তমান পৃথিবীতে যত লোক বসবাস করছে সকলেই এসেছে তার থেকে।’

আণবিক জীববিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীরা তল্লাশি চালিয়েছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে বিভক্ত বিভিন্ন শ্রেণীর জিনের মাঝে। আর পরীক্ষা করে তাদের মধ্য থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন একটি ডিএনএ, যেটা আমাদেরকে একজন মাত্র মহিলার দিকেই নিয়ে যায় – যার কাছ থেকে আমরা সবাই এসেছি।

আমাদের এজমালি মাকে খুজে বের করার লক্ষ্যে গবেষক রেবেকা ক্যান ১৪৭ জন গর্ভবতী মহিলাকে রাজী করান তাদের গর্ভের ফুল বিজ্ঞান কেন্দ্রে দেওয়ার জন্য। তিনি বার্কলের উইলসন ল্যাবে জীব বিজ্ঞানী মার্ক স্টোন কিং-এর সাথে কাজ করছিলেন। ক্যান বাছাই করেন কিছু আমেরিকান মহিলাকে যাদের পূর্ব পুরুষ এসেছিলেন আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে। নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ায় তার সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করছিলেন তারা খুজে পেলেন সেখানকার আদিবাসীদের। শিশুরা জন্ম নিল, গর্ভের ফুল সংগ্রহ করে হিমায়িত করা হলো এবং বার্কের উইলসন ল্যাবে বিশ্লেষণ করা হলো। ব্লেন্ডারের সাহায্যে টিস্যুগুলো পরিণত করা হলো স্যুপে। সেন্ট্রিফিউজ কোষ বিভাজন ডিটারজেন্টের সাথে মেশানো হলো, স্ফুর জ্যোতিময় দিয়ে শুকিয়া আবারো সেন্ট্রিফিউজ করা হলো। ফলে পাওয়া গেলো স্বচ্ছ তরল পদার্থ যেটা ছিলো ডিএনএ-র খাঁটি উপাদানে তৈরী। বিস্ময়কর ব্যপার যেটা নজরে পড়ল, তা হচ্ছে এই ডিএনএ সেই ডিএনএ নয় যা শিশুর দেহকোষের নিউক্লিয়াসে এবং শিশুর দৈহিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারন করে থাকে। এটি উত্তরাধিকার সূত্রে আসে কেবল মা থেকে,বার্কলের গবেষকগণ প্রতিটা ডিএনএ নমুনাকে টুকরো টুকরো করে কর্তন করলেন যাতে এগুলোকে অপর সব শিশুর ডিএনএ-এর সাথে তুলনা করা সম্ভব হতে পারে। যে ফল পাওয়া গেল, তাতে দেখা যায় বিভিন্ন জাতির মধ্যকার পার্থক্যটা বিস্ময়কররুপে অতি সামান্য। স্টোন কিং বলেন “বিভিন্ন জাতির মধ্যে জেনেটিক পার্থক্যটা বাস্তবিকই খুব কম হয়ে থাকে।”

নিউগেনিদের ডিএনএ তে দেখা গেল তাদের ডিএনএ অপরাপর নিউগেনিদের চেয়ে বরং আর সব এশিয়ানদের ঢের বেশি কাছের। এটা অদ্ভুত মনে হতে পারে জাতি অথবা বংশগত বাস্তব পার্থক্য সত্ত্বেও। বাস্তবে দেখা যায়, জাতিগত অনেক পার্থক্যই মূলত গতানুগতিক, নিতান্ত সাধারণ।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, মানুষের ত্বকের রঙ কালো হয়ে থাকে আবহাওয়ার সাথে বড় ধরণের সামঞ্জস্যতা রেখে। আফ্রিকানদের কালো রঙ সূর্যের রশ্মি প্রতিরোধের জন্য হয়ে থাকে। তেমনি ইউরোপিয়ানদের গায়ের রঙ সাদা হওয়ার কারন হচ্ছে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ যেটা ভিটামিন ‘ডি’ তৈরিতে সাহায্য করে। ত্বকের রঙ্গের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হয় কয়েক হাজার বছরের। পক্ষান্তরে শত শত হাজার বছরের দরকার পড়ে ব্রেইন সাইজের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে। প্রতিটি শিশুর ডিএনএ গঠন শেষ পর্যন্ত মিলে যায় একজন মাত্র মহিলার সাথে। জেনেটিক উত্তরাধিকার এমন একটি বিষয় যেটা এমনকি পরিসংখ্যানবিদদের কাছেও তেমন বিস্ময়কর কিছু নয়। উইলসন ল্যাবের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘অবশ্যই একজন ভাগ্যবান মা ছিলেন।’ ইলোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডগলাস অলেস পরিচালিত গবেষণায় একদল প্রজনন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন যোগসূত্র থেকে ধারণা করেন, দুনিয়ার প্রথম এই মহিলার আবির্ভাব হয়ে থাকবে এশিয়া মহাদেশে। বিশ্বের ৪টি মহাদেশে ৭শ’ মানুষের রক্ত থেকে সংগৃহীত মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-এর উপর ভিত্তি করে তারা এ সিদ্ধান্তে পৌছেন। ‘ডিএনএ’ টুকরো টুকরো করে খণ্ডিত করার জন্য তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন এবং সেগুলোকে বংশ তালিকায় সাজান। এই তালিকা পরিশেষে অতীতের একজন মহিলার কাছে গিয়ে থেমে যায় যিনি দেড় থেকে দু’লক্ষ বছর আগে এই ধরাপৃষ্ঠে বসবাস করতেন, তাদের হিসেবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্ম বিজ্ঞানী স্টেফন জে গোল্ডের মতে, “এটা আমাদের এই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করে যে, বিশ্বের সব মানুষ তাদের বাহ্যিক ও আকৃতির পার্থক্য সত্ত্বেও একটা মাত্র সত্ত্বা থেকে এসেছে এবং মানব বংশের উৎপত্তি খুব কাছের একটি মাত্র যায়গায়। সব মানুষের মধ্যে জীবতাত্ত্বিক ভ্রাতৃত্ববোধ অনেক বেশি গভীর, যার ধারণা আগে কখনো ছিলো না।”
দৈনিক বাল্টিমোর সান পত্রিকা Geneticists Reveal Human Family Trees শিরোনামে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে। আমি এখানে তার ভাষান্তর করছি।
মানবজাতির পিতাঃ মানব দেহের জীবকোষে যে ‘Y’ – ক্রোমোজম রয়েছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে এমন সঙ্কেত পাওয়া যায় যে, গোটা মানবজাতির আদি পিতা মাত্র একজন। গবেষণার এই রিপোর্টটি উদঘাটন করেছে, আজকের প্রত্যেকটি পুরুষ যে ‘Y’ -ক্রোমোজম ধারণ করছে, তার লক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট এটি এসেছে একজন মাত্র পুরুষের কাছ থেকে, যিনি এ পৃথিবীতে বাস করতেন প্রায় এক লক্ষ নব্বই হাজার বছর আগে।
এ নতুন গবেষণার ফলাফল এ ধারণাটাই সমর্থন করে, আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল পৃথিবীর মাত্র একটা স্থানে। এ পুরনো ধারণা আর সঠিক নয় যে, পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের একাধিক স্থানে মানবজাতির পূর্ব পুরুষদের উদ্ভব ঘটেছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আগে বিশ্বাস করা হতো। ডারউইনের ঐতিহাসিক বিবর্তনবাদ অনুসারে অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করতেন, আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়ে থাকবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে। ‘Y’ - ক্রোমোজম হচ্ছে মানব বংশানুগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক উপাদান ‘জিন’ যে চব্বিশ প্রকার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সুতা দিয়ে গঠিত তার একটি হচ্ছে এটা একমাত্র পিতা থেকে পুত্রের দেহে সঞ্চারিত হয়। গবেষক মি. হেমার ‘Y’ - ক্রোমোজম এর অতি ক্ষুদ্র অংশের গঠনের বিশদ তুলনা করেন। সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিলো বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে লালিত ৮ জন আফ্রিকান, ২ জন অস্ট্রেলিয়ান, ৩ জন জাপানি এবং ২ জন ইউরোপীয়দের কাছ থেকে। গবেষকদের মনে যে ধারণাটি কাজ করছিল তা হলো – বিভিন্ন জাতির মধ্যে ক্রোমোজম-এর সামগ্রিক বিন্যাসের রকমফের কেমন ভিন্নরুপ গ্রহণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করা। তারপর নির্ণয় করা, যে বৈচিত্র ধরা পড়ল তার বিবর্তনের জন্য কতটা সময়ের দরকার। যে ফল পাওয়া গেল, তাতে দেখা যায়, যত মানব সন্তান আজকের দুনিয়ায় বসবাস করছে, তাদের সকলেরই ‘Y’ – ক্রোমোজম-এর যোগসূত্র মেলে কেবলমাত্র একজন পুরুষের সাথে যিনি জীবিত ছিলেন এক লক্ষ আটাশি হাজার বছর আগে।
                                                                                                              
                                                                       -মুহাম্মাদ আলী রেজা
                             লেখকঃ সাবেক পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

নয়া দিগন্তে প্রকাশিত নিউজ লিঙ্কঃ http://www.dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=NjE3OTI=&s=Nw==&c=MQ==

বুশের টুইন টাওয়ার হামলার কৌশল ও কারণ

Wednesday, September 11, 2013


বুশের টুইন টাওয়ার হামলার কৌশল ও কারণ


মুহাম্মদ আলী রেজা

ঐতিহাসিক নয়-এগারোর মহা আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিশ্ব কম্পিত হামলার নেপথ্যে যে যৌক্তিক কারণ ও কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল তার গভীর বিশ্লেষণের জন্য প্রথমেই মনোযোগ এবং দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন আমেরিকার যুগপৎ অভ্যন্তরীণ ঘটনাপ্রবাহের দিকে। ক্লিনটন  তখন মসনদে। আমি বাল্টিমোরে, ঘুম থেকে উঠে একদিন এক অবিশ্বাস্য নাটকীয় সংবাদ জানতে পারি। হোয়াইট হাউজে ইসলামের চাঁদ তারা পতাকা উড়ছে। ভয়ের কিছু ছিল না, কারণ আলকায়েদার জন্ম তখনো হয়নি এবং বিন লাদেনেরও পাত্তা ছিল না যিনি হোয়াইট হাউজে এসে এ ধরনের অঘটন ঘটানোর হিম্মত রাখেন। তবে সে সময় এখানকার মিডিয়ায় একটি ঝড় বয়ে যাচ্ছিল : যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত সম্প্রসারণশীল ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। এ সময়টিতে আমি বাল্টিমোর জন্স হপকিন্সে গবেষণা করছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাল্টিমোরের হোমউড ক্যাম্পাসের লাইব্রেরির বেসমেন্টের ওয়ালের একটি তথ্য আমার চোখে পড়ে : প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে এক শত হাজার মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করছে। মিডিয়ার অন্য সূত্রে জানতে পারি, এই এক লাখ নও মুসলিমের মধ্যে মহিলার সংখ্যা বেশি। পাশ্চাত্য ভাবধারায় লালিত পালিত মুক্ত হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মেয়েরা এত ঝুঁকি নিয়ে কেন ইসলামকে পছন্দ করছে যেখানে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, আত্মসমর্পণ ও ভিন্ন রূপ হওয়ার বিধান। আমেরিকার স্বাধীনতাপ্রাপ্তির সময় জনসংখ্যার বেশির ভাগ ছিল খ্রিষ্টান। এর পর ছিল ইহুদি। অন্যান্য ধর্মের লোক আনুপাতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল না। সরকারিভাবে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, খ্রিষ্টান ও ইহুদি এই দুই ধর্মের পতাকা হোয়াইট হাউজে উড়ানো হবে। ক্লিনটনের  সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি সংখ্যা যেখানে ছয় মিলিয়ন ছিল সে ক্ষেত্রে মুসলমানের সংখ্যা ছয় মিলিয়ন থেকে ধীরে ধীরে সাত মিলিয়নও ছাপিয়ে যায় বলে শোনা যায়। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে হোয়াইট হাউজে তিনটি ধর্মের পতাকা উড়বে। বড় প্রশ্ন হলো : এই হারে ধর্মান্তরিত হলে এর প্রভাব তো অচিরে হোয়াইট হাউজের নির্বাচনের ওপরও পড়তে বাধ্য। মুসলমানদের ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে বা এখানকার মুসলমান অধিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও মন্থর গতি অনায়াসে কার্যকর করা গেলেও ধর্মান্তরিত হওয়ার এই হার বন্ধ করার তো কোনো আইনগত উপায় খোলা নেই। বছরে এক লাখ মানুষের ধর্মান্তরের এই হার যে সময়ের সাথে সাথে আরো গতি পাবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? ভয়ঙ্কর, দানবীয় এমন কোনো ঘটনা সংঘটিত করতে হবে যাতে আমেরিকানরা  সহজে বুঝতে পারবে মুসলমানেরা তাদের এক নম্বর শত্রু, জাতি হিসেবে তারা পৈশাচিক, দানবীয়, বর্বর, ভয়ঙ্কর। কাজেই আমেরিকানদের ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করার উপায় এটিই। এর সাথে যুক্ত হবে মিডিয়ার ব্যাপক প্রচার। ইহুদি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। রেডিও, টিভি, পত্রপত্রিকা, মুভি, ধারাবাহিক নাটক, টকশো, প্রেক্ষাগৃহ সর্বত্রই শুরু করে দেয়া হয় মুসলিম ও আরববিরোধী প্রপাগান্ডার তুফান, যেটি হয়ে দাঁড়ায় টুইন টাওয়ারে ভয়ঙ্কর হামলার মতোই বীভৎস। সিগ ও ওয়্যাগ দ্য ডগ এ দু’টি মুভি থিয়েটারে আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল যা ছিল খুব বেশি মুসলিমবিরোধী। এমনকি পাবলিক টিভিতে এক ঘণ্টার ডকুমেন্টারি ফিল্ম ' জিহাদ ইন আমেরিকা'  শিরোনামে দেখানো হয়। মূল কথা, মিডিয়া সুকৌশলে একটি বার্তা আমেরিকানদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নেয় যে, মুসলমানেরা সন্ত্রাসী, মুসলমান হওয়া মানে সন্ত্রাসী হওয়া এবং এই লক্ষ্যে তারা জিহাদ করছে এই ভূখণ্ডে। এসব প্রপাগান্ডা থেকে এটা সহজেই উপলব্ধি করা যায় ইসলাম ফোবিয়া ইহুদি লবি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে কত বেশি প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০১ সালে নয়-এগারোতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম হামলা হলেও এই একই জায়গায় প্রায় আট বছর আগে ১৯৯৩-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুসলমানেরা সন্ত্রাসী এটা প্রমাণের সূচনার মাধ্যমে নীলনকশা প্রণীত হয়। বিশ্বনন্দিত সাময়িকী রিডার্স ডাইডেস্টে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে এই বিস্ফোরণের ওপর একটি নিবন্ধে বলা হয় : বোমা হামলার জন্য এ কেন্দ্রটি বেছে নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল- এই টুইন টাওয়ারে বিশ্বের সব দেশের এবং সব জাতির লোক অবস্থান করে এবং তাদের সংখ্যা একটি শহরের লোকসংখ্যার কাছাকাছি হবে। অতএব এ কেন্দ্রে কিছু হওয়ার অর্থ হচ্ছে এটি বিশ্বের সব জাতি ও দেশের এবং বিশ্ব অর্থনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। এফবিআই পরিচালক ১৯৯৩ তে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার জন্য অভিযুক্ত করেন ওমর আবদেল রহমানের অনুসারী মুহাম্মাদ সালেহকে। পরে প্রমাণিত হয় ইসরাইলের মোসাদ অপারেটিভ এই হামলার নেপথ্য নায়ক (সূত্র : সঙ্কটাপন্ন সময়ে বিব্রতকর প্রশ্ন- জেমস এস অ্যাডাম)। সিএনএনের প্রথম রিপোর্টে স্বীকার করা হয়, যদি বোমা হামলাকারীরা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ধ্বংস সাধনের পরিকল্পনা করত তাহলে বিস্ফোরক রাস্তার সমতলে বসাত, যার ফলে শত শত লোকের প্রাণহানি হতে পারত বা আহত হতো। বাল্টিমোর নিউট্রেন্ড পত্রিকা লেখে : বোমা হামলাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল, যার ফলে সবচেয়ে কম ক্ষতি হয়, সবচেয়ে কম লোক এর আওতায় পড়ে। অন্য দিকে আবার ভীষণভাবে বৃদ্ধি পায় প্রবলভাবে সাড়া জাগানো খবরের গুরুত্ব। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আসলে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে প্রথমে হামলা ছিল একটি আগাম অভ্যন্তরীণ কৌশল, যার লক্ষ্য ছিল প্রচারমাধ্যমে স্পর্শকাতর অনুভূতি তৈরি করে মুসলমানদের সন্ত্রাসী ব্র্যান্ডে চিত্রিত ও পরিবেশিত করা এবং মুসলমানদের ব্যাপারে আমেরিকানদের সতর্ক ও উত্তেজিত করা। ১৯৯৩ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয় মিডিয়া প্রপাগান্ডা বা সন্ত্রাস। নীলনকশার শেষ বা চূড়ান্ত পর্যায়টি ছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে আছড়ে পড়ল নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে দু’টি যাত্রীবাহী বিমান। অতঃপর আগুন, ধোঁয়া, তাসের ঘরের মতো দু’টি টাওয়ার ভেঙে পড়ল। এ ছবি গোটা বিশ্ব কতবার দেখেছে হিসাব নেই। যেমনটি দেখেছে পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে আর একটি বিমান ভেঙে পড়ার স্থির চিত্র; তবে শুধু স্থির চিত্র। পেন্টাগনের ওপর বিমান ভেঙে পড়ার ভিডিও ফুটেজ বুশ প্রশাসন প্রকাশ করেনি। ‘ওপেন’ ক্যালিফোর্নিয়ার একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যার সদস্যদের মধ্যে আছেন নোয়াম চমস্কি, পিট সিগার, আছেন সাংবাদিক, সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, সন্ত্রাসবাদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা। সিএনএনের একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ‘ওপেন’ দাবি করেছেÑ বিমানের নাক টাওয়ারে স্পর্শের মুহূর্তেই বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছে ককপিটে। ওপেন-এর বক্তব্য বিমানের ককপিটে কী এমন থাকতে পারে যাতে সেখানে ওই রকম বিস্ফোরণ ঘটে। ট্রেড সেন্টারের দু’টি টাওয়ারের প্রতিটি বিমানের ধাক্কা খাবার ঠিক আগ মুহূর্তেই একই ধরনের আগুনের ঝলকানি দেখা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া এরকম নিয়ন্ত্রিতভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব নয়। বিমানে কি তা হলে ক্ষেপণাস্ত্র ছিল? যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন জোন্সের নেতৃত্বে ৭৫ জন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর অভিযোগ নিউ ইয়র্ক ও পেন্টাগনে হামলা যাত্রীবাহী বিমানের নয়, এটা ছিল ভেতর থেকে সংঘটিত ঘটনা। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে অধ্যাপক স্টিভেন বলেন, ভেঙে পড়া টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপ পরীক্ষার পর সেখানে ভবন ধসিয়ে দেয়ার বিস্ফোরক ব্যবহারের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে। জোন্স বলেন, আফগান গুহায় বসে কিছু লোক এবং ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারী এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের এই তত্ত্বকে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মতে, নয়-এগারোর ঘটনা একটি ষড়যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে তা সত্য নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন : পেন্টাগনে আসলে বিমান নয়, রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছিল। কারণ বিমানের যাত্রীদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। কথিত বিমানের জ্যামিতিকভাবে গোলাকার মুখ সৃষ্টি কেবল কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যেই করা সম্ভব। বিশ্বের মানুষকে এ সম্পর্কে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। যাত্রী ও ক্রুদের মৃতদেহ পাওয়া গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অবশ্যই তাদের শনাক্ত করা হতো। যাত্রীবাহী জেট বিমানের ব্লাক বক্স থেকে প্রাপ্ত ড্যাটার সাথে গণিত শাস্ত্রবিদ, ভূকম্পন বিশারদ ও ধ্বংসের ঘটনা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের অভিমতের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের দি বাল্টিমোর সান 'CIA Could be Behind 11 September Terrorist Attack' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কানাডার মন্ট্রিল থেকে প্রকাশিত দি গেজেট পত্রিকায় ডেভিড গোল্ডস্টেইন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য খোদ প্রেসিডেন্ট বুশকে দায়ী করে বিন লাদেনকে এ অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে একাধিক বাস্তবসম্মত যুক্তি দিয়ে বলেছেন, এ কাজ কোনোভাবেই বিন লাদেনকে দিয়ে সম্ভব নয়। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য বর্ণনায় বলেন, এ দু’টি দালান আশপাশে হেলে বা কাত হয়ে পড়ার বদলে ভেঙে নিচে দেবে গেছে। বিমানের আঘাতে ধসে পড়েছে বলে মনে হয়নি বরং মনে হয়েছে পরিকল্পিতভাবে ভবন দু’টি ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ভবনটি একইভাবে ধসে পড়েছে; কিন্তু এই ভবনে কোনো বিমান আঘাত হানেনি। আশপাশের ভবনগুলোর কোনো রকম ক্ষতি ছাড়া কিভাবে তৃতীয় ভবনটি ধসে পড়ল? পেন্টাগনে যে ভবনটি হামলা করেছিল তার ধ্বংসাবশেষের খোঁজ কেন পাওয়া গেল না বা আরোহীদের ছিন্ন ভিন্ন মৃতদেহ ও বিমানের ব্লাক বক্সের খোঁজ মিলল না কেন? ওপেন প্রশ্ন তুলেছে  গোটা বিশ্ব টিভিতে দেখেছে, গল গল করে ঘন সাদা ধোঁয়ার আস্তরণের মধ্যে ভেঙে পড়েছে ট্রেড সেন্টারের টাওয়ার; কিন্তু সাদা ধোঁয়া কেন? ওপেনের দুই বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ কানাডার কারবেল ও ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজির ফ্রেডি সিম্প্যাকসান জানাচ্ছেন, বিস্ফোরকের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড, কার্বন ও সালফারের মিশ্রণ ছিল। তা না হলে এই পরিমাণ ছাইবিহীন সাদা ধোঁয়ার জন্ম হতে পারে না। তা হলে কি দূর নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণও ঘটানো হয়েছিল টাওয়ারে? ওপেন গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে পেন্টাগন বিস্ফোরণ নিয়েও। একটি অত্যাধুনিক নজরদারি ক্যামেরায় তোলা একটি ছবির প্রতিটি ফ্রেম এক সেকেন্ডের ৮০০ ভাগে ভাগ করে ওপেন দেখাচ্ছে নীল আকাশ আর তার পরেই পেন্টাগনের একটি বাহুতে বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ, ভয়াবহ আগুন; কিন্তু বিমানের কোনো চিহ্নই নেই। তা হলে বিমান ভেঙে পড়ল কোথা থেকে? নয়-এগারোর ভয়াল সন্ত্রাসী হামলার দশক পূর্তির পরেও বিবিসি, রয়টার, এএফপি পরিবেশিত সংবাদ : ‘আসলে কী ঘটেছিল ২০০১-এর এই দিনে? সত্যিই কী আলকায়েদা সে দিন মার্কিন শৈর্যে আঘাত হেনেছিল নাকি সবই পাতানো। সে প্রশ্নটি রহস্যময় রয়ে গেছে আজো অনেকের কাছে।’ নাইন-ইলেভেনের কে মূল নায়ক  বুশ না লাদেন? ২০০৫ সালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি স্বীকার করেন, লাদেন কোথায় সে সম্পর্কে তারা প্রাথমিক ধারণা রাখেন; কিন্তু তাকে কৌশলগত কারণে আটক করা হচ্ছে না। তার যুক্তি ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় লাদেন জড়িত এ অভিযোগের সপক্ষে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। আর সে জন্যই তাকে শেষে গ্রেফতার না করে অ্যাবোটাবাদ সেনানিবাসে অভিযান চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ পথ বেছে নিয়েছে কারণ লাদেনের বিচার হলে নাইন-ইলেভেনের এমন কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে যেত, যা আমেরিকানদের জন্য সুখবর হতো না।  ক্লিনটনের  মেয়াদ শেষে জুনিয়র বুশ রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হন। ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হন আলগোর যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রার্থী বেছে নেন কট্টর ইহুদি লিবারম্যানকে। পরিস্থিতির নাটকীয় মোড়ে জুনিয়র বুশ স্পষ্টত দেখতে পান সব ইহুদি ভোট ডেমোক্র্যাটদের পাল্লায় যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবারই কোনো ইহুদি হোয়াইট হাউজের নির্বাচনে প্রার্থিতার মনোনয়ন পায়। নির্বাচনে ভরাডুবি থেকে বাঁচার তার একমাত্র উপায় অবশিষ্ট ছিল মুসলিম আমেরিকানদের ভোট। তিনিই একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যিনি সরাসরি ভোট ভিক্ষা করলেন আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে। তিনি মুসলমান সম্প্রদায়ের অনুকূলে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা আইনে সংযোজন করা হয়েছিল সিক্রেট ইভিডেন্স আর কথিত এই ইভিডেন্সের ফাঁদে ফেলা হতো শুধু মুসলমানদের এবং তাদের বেছে বেছে জেলে ভর্তি করা হতো। বুশ আলগোরের সাথে টিভি বিতর্কে সরাসরি বললেন, তিনি জয়ী হলে সিক্রেট ইভিডেন্স আইন তুলে দেবেন। কারণ তিনি এটাকে পক্ষপাতমূলক মনে করেন। আলগোর জবাবে বলেন, তিনি এটাকে পক্ষপাতমূলক মনে করেন না। [সূত্র : লেখক তখন যুক্তরাষ্ট্রে, টিভি বিতর্ক দর্শক] অতীতে আমেরিকান মুসলিম ভোট অপরিকল্পিতভাবে দুই দলে পড়ত, ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী তারা ভোট দিত; কিন্তু এবারই প্রথম মুসলমানদের ভোট এক পাল্লায় পড়ল। বুশ জয়ী হলেন, নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে ইনভেস্টরস বিজনেস ডেইলি এক নিবন্ধে লিখল : আমেরিকান মুসলমানদের জন্য এটা বিজয়ের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। বুশ ক্ষমতার মসনদে গিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে সিক্রেট ইভিডেন্স বহাল রাখেন আর হোয়াইট হাউজ নির্বাচনকে চিরতরে মুসলিম ভোট প্রভাব বলয়মুক্ত রাখার নীলনকশা হিসেবে নাইন-ইলেভেন নাটক মঞ্চস্থ করেন। মুসলিম উম্মাহর এবং আমেরিকান মুসলমানদের অবশ্য করণীয় হচ্ছে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ধারা সৃষ্টি করা।

লেখক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক

লেখাটি দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় ১১/৯ তারিখে প্রকাশিত।
 নয়াদিগন্তের লিঙ্ক এখানে

বিজ্ঞানেও ভবিষ্যতবাণীঃ রহস্য উন্মোচন

Friday, March 25, 2016


বিজ্ঞানেও ভবিষ্যতবাণীঃ রহস্য উন্মোচন

মুহাম্মাদ আলী রেজা
২৫ ও ২৭ মার্চ ২০১৬,দৈনিক নয়াদিগন্ত। 

ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা ঠিক ঠিক বলে দেয়া আর যথারীতি  সেসব সংঘটিত হওয়া ভবিষ্যদ্বাণীর আওতাভুক্ত। আবার বহু শ্রেণীভুক্ত হতে পারে ভবিষ্যদ্বাণী। যুগে যুগে বিজ্ঞাননির্ভর ভবিষ্যদ্বাণী, জ্যোতিষী, রাশিফল ও হস্তরেখা বিশারদদের ভবিষ্যদ্বাণী, বিভিন্ন যুগে মহাপুরুষ, নবী-রাসূলদের ভবিষ্যদ্বাণী। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে এটা খুব সহজেই ধরা পড়বে, আজকের সভ্যতা যত বেশি অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে তত বেশি হারে ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। আজকাল ভোরে ঘুম থেকে উঠলেই শুরুর আগেভাগে জেনে নিতে হয়, দিনটি কেমন যাবে। মানুষের সার্বিক কর্মব্যস্ততা এবং জীবনযাত্রা পাল্টে যাওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ছুটতে হচ্ছে শহর থেকে শহরে এবং দেশ থেকে দেশে। হরেক রকমের আবহাওয়ার মোকাবেলা করতে হয়। তুষারপাত, শূন্যের নিচে তাপমাত্রা, প্রচণ্ড গরম বা তাপদাহ, প্রবল বৃষ্টি, ঝড়, অর্থাৎ যে রকম আবহাওয়ায় ভবিষ্যদ্বাণী থাকুক, আগেভাগে জেনে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হবে। ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে রক্ষা করা সহজ হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপদ্রুত অঞ্চলের লোকদের আগেভাগেই নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে। ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে জানমালের ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে।
আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপে এল নিনো ও লা নিনার গতিবিধি পরীক্ষা করে বাংলাদেশী রাশেদ চৌধুরী বন্যা পূর্বাভাসের এক নতুন পদ্ধতি বা মডেল উদ্ভাবন করেছেন। তার এই উদ্ভাবিত ‘এনসো ভিত্তিক পূর্বাভাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্ভরযোগ্য। এই পদ্ধতিতে ছয় মাস আগেই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব। আট বছর ধরে এই সাফল্য বজায় রেখেছে রাশেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত পদ্ধতি। [প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩]
সমগ্র বিশ্বের কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের বার্ষিক পঞ্জিকা বা ভবিষ্যদ্বাণী এখন অনায়াসে পাওয়া যায়। নামাজ, রোজার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার বলে দেয় প্রাত্যহিক জীবনে আমরা কত বেশি ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছরই প্রকাশিত হচ্ছে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যালম্যানাক (জ্যোতির্বিদ্যার বর্ষপঞ্জি) যার সাহায্যে পৃথিবীর যে স্থানে আপনি থাকুন না কেন, সেই স্থান থেকে কখন কোন মুহূর্তে কোন কোন নত্র, ছায়াপথ গ্রহ ও নক্ষত্ররাজি ইত্যাদি দেখা যাবে তা জানতে পারবেন এবং অনায়াসে সেগুলো দেখতে পাবেন। জ্যোতির্বিদ্যার বর্ষপঞ্জিতে পৃথিবীর সব জায়গার বছরব্যাপী নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ রয়েছে, যে সময়ে ওই স্থান থেকে কোন কোন নক্ষত্র , ছায়াপথ, গ্রহ-উপগ্রহ ইত্যাদি দৃষ্টিগোচর হবে। তার অর্থ কোটি কোটি ছায়াপথ ও নক্ষত্ররাজি একটি পরিকল্পিত নিয়মেই মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছে; শুধু সে কারণেই এ ধরনের চুলচেরা হিসাব করে ঠিক ঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হচ্ছে।
এর একটি উজ্জ্বল প্রমাণ ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ নাসার ভবিষ্যদ্বাণী : ১৬ মার্চ ২৮৮০ সালে একটি গ্রহাণু (DA-১৯৬০) মহাকাশ থেকে আছড়ে পড়বে। এটা প্রতি সেকেন্ডে ৯ মাইল (১৫ কিমি) বেগে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। এই সংঘর্ষের সম্ভাবনার অনুপাত ৩০ শতাংশ বলা হয়েছে। বাস্তবে বিজ্ঞানীরা এসব ভবিষ্যদ্বাণী করেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং তাত্ত্বিক চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে। অকাট্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকলে এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী দেয়া যায় না। বাস্তব দুনিয়ায় আমরা তখনই কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা, বিষয় বা ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম , যদি মূল ঘটনা বা বিষয়টি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত হয়। এ ছাড়া ভবিষ্যদ্বাণী করার প্রশ্ন ওঠে না। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক একটি মহাশূন্য যানকে মঙ্গল গ্রহের মাটি, আবহাওয়া, গঠন প্রকৃতি ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহের জন্য পৃথিবী থেকে পাঠানো হলো। যানটির সব যন্ত্রপাতি সেভাবেই তৈরি, সন্নিবেশিত ও নিয়ন্ত্রিত করা হবে যাতে এটি পূর্বপরিকল্পিত সব কাজ ঠিক ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সম হয়। যানটি যেহেতু পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত তাই সহজেই এর মিশনের প্রতিটি মুহূর্তের সব খবরাখবর যেমন এটি কোথায়, কখন থাকবে এবং কী করবে তা আগেই বলে দেয়া যায়। ওপরের উদাহরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, শুধু পরিকল্পিত ঘটনার ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী দেয়া বাস্তব এবং যুক্তিসম্মত। একই যুক্তিতে আমাদের মহাবিশ্ব যদি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে শুধু সে ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান বা যুক্তিসম্মতভাবে ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব হবে। অতএব, মহাবিশ্বের যেকোনো ব্যাপারে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হওয়ার অর্থ দাঁড়ায়, মহাবিশ্ব নিছক দুর্ঘটনার ফসল নয় বা স্বয়ংক্রিয়ভাবেও এটা সৃষ্ট নয়। ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়। বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে যে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্তা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’
সাম্প্রতিক বিশ্বে বিজ্ঞান পরিমণ্ডলে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তোলপাড় সৃষ্টি করা সংবাদ হলো, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিজ্ঞানীদের মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলার ঘোষণা। মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্বের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আইনস্টাইন আজ থেকে ১০০ বছর আগে। 
লাইগো শনাক্তকরণ যন্ত্র এই সঙ্কেত পায়। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, এটা পৃথিবীর কোনো নিজস্ব তরঙ্গ সঙ্কেত নয়, এটি হচ্ছে ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দু’টি কৃষ্ণ গহ্বরের মিলনের ফলে সৃষ্ট মহাকর্ষ তরঙ্গেরই সঙ্কেত। 
বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণী : যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানীরা যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং পরে বর্তমান সময় পর্যন্ত সেসব ফলপ্রসূ হয়েছে; তার কিছু বর্ণনা এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
১. বৈজ্ঞানিক মেন্ডেলিফ ১৮৬৯ সালে বিজ্ঞানের সূক্ষ্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে পিরিয়ডিক টেবিলে বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের অস্তিত্ব, ধর্ম, আণবিক ওজন ইত্যাদির বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যেগুলোর অস্তিত্বের কোনো রকম ধারণাই ওই সময় পর্যন্ত কারো বিন্দুমাত্র ছিল না। বর্তমান সময় পর্যন্ত সেসব মৌলিক পদার্থ ঠিকই আবিষ্কৃত হয়েছে আর সবাই হতবাক এবং বিস্ময়াভিভূত হয়েছে এটা দেখে যে, এই মৌলিক পদার্থগুলোর ধর্ম, গুণাবলি এবং আণবিক ওজন হুবহু মিলে যায় মেন্ডেলিফের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একটা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মেন্ডেলিফ রাসায়নিক পদার্থের আণবিক ওজন বৃদ্ধির জন্য শতাধিক বছরেরও বহু আগে যে পদ্ধতি তৈরি করেছেন, তার জন্য একই প্রকার ধর্মের অধিকারী মৌলিক পদার্থের সংগঠনের পর্যায়বৃত্তি বা পিরিয়ডিক টেবিলকে কেউ কি যুক্তিসম্মতভাবে শুধু আকস্মিক ব্যাপার অথবা নিছক অপরিকল্পিত বিগ ব্যাং অর্থাৎ সেই মহাবিস্ফোরণ নামে দুর্ঘটনার মতো কিছু বলে মেনে নিতে পারে?
২. জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক ১৯০০ সালে প্রস্তাব করেন যে, আলো বিকিরিত হতে পারে শুধু বিশেষ প্যাকেটে (Packet)। এর নাম দিয়েছিলেন তিনি কোয়ান্টা। ১৯২৬ সালে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ তার বিখ্যাত অনিশ্চয়তাবাদে (Uncertainty Principle) প্রয়োগের মাধ্যমে সর্বপ্রথম এর যথার্থতা প্রমাণ করেন।
৩. আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে আলোর বিচ্যুতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এর চার বছর পর ১৯১৯ সালে এক ব্রিটিশ অভিযাত্রী দল একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, আলো সত্যি সত্যি সূর্য দ্বারা বিচ্যুত হয়।
৪. আইনস্টাইনের ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদ (১৯১৫) একটি ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে, পৃথিবীর মতো ভরসম্পন্ন কোনো বস্তুপিণ্ডের সন্নিকটে সময়ের গতি শ্লথ বলে মনে হবে; খুব উঁচুতে অবস্থিত কোনো ব্যক্তির মনে হবে নিচের সব ঘটনাই একটু দেরিতে ঘটছে। ৪৭ বছর পর ১৯৬২-তে এই ভবিষ্যদ্বাণীটি পরিক্ষা করা হয়। একটি জলধারের স্তম্ভের ওপরে ও নিচে এক জোড়া নির্ভুল ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছিল। যে ঘড়িটা নিচে ছিল অর্থাৎ পৃথিবীর নিকটতর; দেখা গেলো এর গতি ধীরতর। এ তথ্যের সাথে ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদের নির্ভুল মিল রয়েছে। আধুনিককালে পৃথিবীর ওপরে বিভিন্ন উচ্চতায় স্থাপিত বিভিন্ন ঘড়ির দ্রুতির পার্থক্যের যথেষ্ট ব্যবহারিক গুরুত্ব রয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে আগত সঙ্কেতের ভিত্তিতে নির্ভুল নৌ এবং বিমান চালনা ব্যবস্থার প্রচলনের সাথে সাথে এর গুরুত্বও বেড়েছে। ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদ ভবিষ্যদ্বাণী অগ্রাহ্য করা হলে অবস্থানের হিসাবে কয়েক মাইল পর্যন্ত ভুল হতে পারে।
৫. ফরাসি পদার্থবিদ ডি ব্রোগলি ১৯২৪ সালে বিশ্বের বিজ্ঞানী সমাজের কাছে সনির্বন্ধ আবেদন জানিয়েছিলেন : আলোক রশ্মি হচ্ছে তরঙ্গ কিন্তু এটা যখন পদার্থের শক্তি এবং ভরবেগ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়, তাহলে একই যুক্তিতে আলোক রশ্মির মতো পদার্থ রশ্মিও কেন এই একই ধরনের আচরণ দেখাবে না? ওই সময় এটি ছিল ব্রোগলির এক যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণী : আলোক তরঙ্গ, জল তরঙ্গ অর্থাৎ অন্যসব তরঙ্গের মতোই পদার্থও একই ধর্ম প্রদর্শন করবে। তিন বছর পর ১৯২৭ সালে পদার্থের তরঙ্গায়িত রূপটি সর্বপ্রথম চোখে পড়ে ডেডিসন এবং গারমানের পরীক্ষা। বর্তমান সময় পর্যন্ত সব পদার্থের অণু-পরমাণুর তরঙ্গ ধর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। আজকের কোয়ান্টাম বিজ্ঞান বলছে : কণিকা ও তরঙ্গের মধ্যে দ্বিত্ব রয়েছে। পদার্থ কার্যত তরঙ্গের স্বচ্ছ রূপ মাত্র। ওদিকে হাজার বছরেরও অনেক আগে সূরা আন নূরের আয়াত ৩৫ বলছে, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল তথা মহাবিশ্বের সব কিছুই তরঙ্গ, নূর অথবা আলো। 
৬. বিজ্ঞানী ডিরাক ১৯৩০ সালে প্রোটনের অস্তিত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করে এক বিস্ময়কর ফল পেয়েছেন। এই গণনায় ক্ষুদ্র একদল কণিকার অস্তিত্বের সন্ধান মিলল। কোনো পরীক্ষার সাহায্য না নিয়েই শুধু খাতা-কলমের সাহায্যে ডিরাক নতুন এই কণিকার অস্তিত্ব সম্পর্কে এক মতবাদ প্রকাশ করেন। দুই বছর পর এন্ডারসন ডিরাকের কল্পিত এই কণিকার অস্তিত্ব প্রমাণ করলেন। মূলত এই কণিকাটি আর কিছু নয়, পজিটিভ চার্জবিশিষ্ট ইলেকট্রন যার নামকরণ হয়েছে পজিট্রন।
৭. জাপানি বিজ্ঞানী ইউকাওয়া ১৯৩৬ সালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন যে, এক নতুন মৌল কণিকা রয়েছে যা নিউকিয়াসে নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে শক্তির আদান-প্রদান ঘটাচ্ছে। কণিকাটির নাম রাখা হলো মেসন। পরে নভোরশ্মি নিয়ে গবেষণা করাকালে এই কণিকাটির অস্তিত্ব পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
৮. নিউট্রিনো কণিকার অস্তিত্বের ঘোষণা দিলেন বৈজ্ঞানিক পাউলি। তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে বিটা কণিকা নির্গমনের বিষয় নিয়ে পরীক্ষা করতে কতগুলো সমস্যার উদয় হলো, যার সমাধান কোনো প্রকারেই হচ্ছিল না। এ কারণে পাউলি প্রস্তাব করলেন, বিটা নির্গমন প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনের সাথে নিউকিয়াস থেকে আরো একটি তড়িৎবিহীন ক্ষুদ্র কণিকার নির্গমন যদি ধরে নেয়া হয় তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি ১৯৩০ সালে ওই কণিকার নাম দিলেন নিউট্রিনো। তবে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় ১৯৫০ সালে, যখন পারমাণবিক চুল্লিগুলো নানা ধরনের কণা উৎপাদন শুরু করেছিল। এতদিন ধারণা করা হতো, নিউট্রিনো ভারবিহীন একটি কণা। কিন্তু ২০১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী দুই বিজ্ঞানী নিউট্রিনোর রহস্য ভেদ করে প্রমাণ করেন নিউট্রিনোর ভর আছে। নোবেল কমিটি ঘোষণা দিয়েছে- কণা সম্পর্কিত পদার্থবিজ্ঞান ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে এই তাকাকি ও আর্থারের গবেষণায় বড় ধরনের সাফল্য এসেছে। 
৯. জর্জ গ্যামো এবং ব্যালয় আলফার ১৯৪৮ সালে তাদের একটি বিখ্যাত গবেষণাপত্রে মহাবিশ্বের উত্তপ্ত প্রাথমিক অবস্থার একটি চিত্র প্রকাশ করেন যেখানে তারা একটি উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মহাবিশ্বের আদি পর্বের অতি উত্তপ্ত অবস্থার বিকিরণ (ফোটনরূপে) এখনও থাকা উচিত। তবে তার তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে চরম শূন্যের (২৭৩ ডিগ্রি) কয়েক ডিগ্রি বেশি হতে পারে। ১৯৬৫ সালে এই বিকিরণই পেঞ্জিয়াস ও উইলসন আবিষ্কার করেন।
১০. মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী মারে গেলমান ১৯৬১ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, এক বিশেষ ধরনের কণিকার অস্তিত্বের, যার নাম ওমেগা মাইনাস। এর তিন বছর পর সত্যি সত্যি একটি কণিকার সন্ধান মিলে যায়, যার ধর্ম ও গুণাবলি গেলমানের দেয়া বর্ণনার অনুরূপ।
১১. রহস্যময় ঈশ্বর কণার ভবিষ্যদ্বাণী : বিজ্ঞানী হিগস ও ইংলাতসহ একদল কণাতত্ত্ববিদ ১৯৬০ সালে অতিপারমাণবিক কণার (সাব অ্যাটমিক পার্টিকেল) ভরের উৎস খুঁজতে যেয়ে একটি মডেল প্রস্তাব করেছিলেন। মডেলটিতে অনুপস্থিত একটি কণিকার কথা বলা হয়, যার নাম দেয়া হলো হিগস বোসন; দু’জন বিজ্ঞানীর নাম অনুসরণে। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান অনুসারে, আমাদের এই মহাবিশ্বের সব কিছুই ভর পেয়েছে এই হিগস বোসন কণার কাছ থেকে। তাই এই কণাটির সন্ধান পাওয়া মানে, এক হিসেবে মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করা। এ কারণেই কণাটি পরিচিতি পেয়ে যায় ঈশ্বর কণা নামে। ষাটের দশকে এই কণার অস্তিত্ব আবিষ্কারে বিস্তর গবেষণা চলতে থাকে। ১৯৫২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভার কাছে মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনে স্থাপিত, সুবিশাল যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের মাধ্যমে অর্ধশতাব্দী পর অবশেষে আবিষ্কৃত হয়েছে কাঙ্ক্ষিত ওই কণার অস্তিত্ব। বলা হয়, বিজ্ঞানের গবেষণায় গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন এটি।
১২. ভারহীন কণা ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ এর অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণীর ৮৫ বছর পর ২০১৫-তে আবিষ্কার হলো। ১৯২৯ সালে হারম্যান ভাইল নামের এক বিজ্ঞানী এমন একটি কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। এরপর পরীক্ষাগারে চলে ব্যাপক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা। অবশেষে, ৮৫ বছরের মাথায় বাংলাদেশী বিজ্ঞানী জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে একদল পদার্থবিজ্ঞানীর নিরন্তর প্রচেষ্টায় সেই কণা পরীক্ষাগারে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ভাইল ফার্মিয়ন কণার ভর নেই। এটি ইলেকট্রনের মতো পথ চলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না। এই আবিষ্কারের পর শুধু তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানই পাল্টে যাবে না, ইলেক্ট্রনিক ও কম্পিউটার দুনিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। 
১৩. দেশনন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার এক গ্রন্থে আলোচনার প্রসঙ্গক্রমে সূরা আয-যারিয়াতের ৪৭ আয়াতটি এভাবে ভাষান্তর করেছেন ''We created the heaven with a twist of the (divine) hand. And surely we are expanding it.'' বইটির ৬৩ ও ৬৪ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি আরো লিখেছেন, ‘মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে এবং তারপর থেকে মহাবিশ্ব ছড়িয়ে পড়ছে (Expanding Universe). বাস্তবে আমরা দেখছি ঐতিহাসিকভাবে আমাদের বিজ্ঞান তখন একেবারে তিমির অন্ধকারে ছিল''। এর এক হাজার বছরেরও অনেক পরে ১৯২২ সালে এক যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণী ছিল আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যানের। মহাবিশ্ব সম্পর্কে তিনি দু’টি সহজ সরল অনুমান করেছিলেন আমরা যে দিকেই দৃষ্টিপাত করি না কেন; মহাবিশ্বের রূপ একই রকম দেখায় এবং আমরা যদি মহাবিশ্বের কোনো স্থান থেকে পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে মহাবিশ্বকে একই রকম দেখাবে। শুধু এ দুটো অনুমান থেকে ফ্রিডম্যান দেখিয়েছিলেন, মহাবিশ্বকে স্থির মনে করা আমাদের উচিত নয়। মূলত এটি ছিল যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণী। সাত বছর পর ১৯২৯ সালে এডউইন হাবল প্রকাশ করেন যে, মহাবিশ্ব স্থিতাবস্থায় নেই। যে ছায়াপথটি যতদূরে অবস্থিত তার দূরাপসারণের গতিও তত বেশি। হাবলের এই যুগনির্দেশক পর্যবেক্ষণের অর্থ হলো, অতীত যুগে মহাবিশ্বের সব বস্তুপিণ্ড পরস্পরের নিকটবর্তী ছিল। দশ কিংবা কুড়ি হাজার মিলিয়ন বছর আগে সব নীহারিকা একই জায়গায় ছিল। সুতরাং সে সময় মহাবিশ্বের ঘনত্ব ছিল অসীম। হাবলের এই আবিষ্কারই শেষ পর্যন্ত মহাবিশ্বের সূচনার প্রশ্নকে বিজ্ঞানের অঙ্গনে নিয়ে আসে। 
যুগান্তকারী এই পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হয়, একটা কালের অস্তিত্ব ছিল যার নাম দেয়া হয়েছে বৃহৎ বিস্ফোরণ (Big Bang)। তখন ছিল অসীম ক্ষুদ্র মহাবিশ্ব এবং এর ঘনত্ব ছিল অসীম। এরকম পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানের সব জানা বিধিই ভেঙে পড়ে। সুতরাং স্বভাবতই ভেঙে পড়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণই বিপরীত। মহাবিশ্বের বৃহৎ বিস্ফোরণ এবং দূরাপসারণ গতির সব ব্যাপারই শুধু সুপরিকল্পিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত হলেই যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীদের সব ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হতে পারে এটি আমরা ধারাবাহিকভাবে দেখতে পারছি।

অন্য দিকে, তাপ গতিবিদ্যার প্রথম সূত্র বলছে : এরূপ যন্ত্র তৈরি করা একেবারেই অসম্ভব, যেটি শূন্য থেকে শক্তি বানাতে পারবে এবং অবিরাম চলবে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতেই থাকবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ঘুরে ফিরে যে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে : মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও বিকাশ পরিকল্পিত বিধায় এর যেকোনো ব্যাপারেই যৌক্তিক বিজ্ঞানসম্মত ভবিষ্যদ্বাণী সব সময় ফলপ্রসূ হতে দেখা যায়। বিশিষ্ট প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞানী পাল কায়েন্স ইবারসোল্ডের মতে : ‘এই মহাবিশ্বের জন্ম সম্পর্কে বিজ্ঞান আপাত দৃষ্টিতে খুবই মহাপ্লাবনিক একটি তত্ত্ব দাঁড় করাতে পারে। তারই ফলে ছায়াপথ ও নক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করতে পারে। কিন্তু কোথা থেকে এই সৃষ্টির জন্য জড়পদার্থ ও শক্তি এসেছে এবং কেনই বা এই মহাবিশ্বটি এমনিভাবে গঠিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যাই বিজ্ঞানে জুটবেনা’। 
প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আমাদের কাছে স্পষ্ট। ভরশক্তির অবিনাশিতাবাদ তত্ত্ব বলছে, নতুন করে যেকোনো কিছু সৃষ্টি করা যেমন কখনো বিজ্ঞানে সম্ভব নয়, তেমনি স্পষ্টত বলে দিচ্ছে যে, এমনকি তুচ্ছ কোনো কিছুর বিনাশও একেবারেই অসম্ভব। শুধু আছে বস্তুশক্তির রূপান্তর, নতুন করে নেই কোনো সৃষ্টি, ধ্বংস বা বিনাশ। মহাবিশ্বের বর্তমান অস্তিত্ব প্রমাণ করে, এটি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত বিধায় বিজ্ঞান ও যুক্তিভিত্তিক ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হতে দেখা যায়। এসব ভবিষ্যদ্বাণী সাধারণ মানসেও যুক্তিসঙ্গত এবং বাস্তবসম্মত মনে করা হলেও এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ইতিহাসে বাস্তবে পরীক্ষিত, যেগুলোর পেছনে নেই কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা ভিত্তি। কিন্তু এসব ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি সত্যিই সংঘটিত হয়ে সবাইকে হতবাক করছে। এই ভবিষ্যদ্বাণীর কার্যকারণ বিষয়ে আমরা এখন আলোকপাত করব।
মধ্যযুগে বেতার তো দূরের কথা, টেলিফোনের অস্তিত্বও ছিল না। সেই সময়ে শাহ নেয়ামতুল্লাহ ফারসিতে কাসিদা (কবিতা) লিখেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি অনেক কিছুর মধ্যে এটাও উল্লেখ করেন, শেষ যুগে বা জামানায় এমন যন্ত্র আবিষ্কার করা হবে যেন মনে হবে আকাশ থেকে ওহি নাজিল হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কথাও তিনি বর্ণনা করেছেন। কোন কোন দেশ যুদ্ধে অংশ নেবে এবং কত লোক নিহত হবে, এসব অনেক কিছু তার কাসিদায় রয়েছে। লিখেছেন, ১০০ বছর পরই ইংরেজ ভারত ছেড়ে চলে যাবে। একটি ঘটনা উল্লেখ না করলে নয়, যে ঘটনাটি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি লিখেছিলেন, ইংরেজরা চলে গেলে ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ-সংঘর্ষ লেগে থাকবে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ব্যাপারে তার কবিতায় এসেছে, দুই ঈদের মধ্যবর্তী সময়ে এটি ঘটবে। ঈদুল আজহা আমরা যুদ্ধের মধ্যে উদযাপন করেছি, কিন্তু ঈদুল ফিতর আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পালন করছি। কাসিদার পুস্তকটি বহু আগে লেখা কি না এটা নিশ্চিত হতে একজন ফারসি ভাষায় অভিজ্ঞ ব্যক্তির শরণাপন্ন হই। তিনি আমাকে নিশ্চিত করেন, এর ভাষাটি উল্লিখিত সময়কালের। দুই ঈদের মধ্যবর্তী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হবে, এত বছর আগে কী করে তা তিনি লিখে গেলেন? এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীর কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে?
এখন থেকে সাড়ে চার শ’ বছরেরও বেশি আগে ফ্রান্সের এক অতীন্দ্রিয় ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ট্রাডেমাস অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, যার সব ফলপ্রসূ না হলেও কিছু বাস্তবায়ন হয়ে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। সাড়ে চার শ’ বছরেরও আগে কবিতার ছন্দে তিনি লিখেছেন ‘ঝড়, মহামারী অথবা যুদ্ধ পারস্যের রাজার পতন ঘটাবে না। এটা বিশ্বাসের (ঈমান) ওপর ভিত্তি করে হবে এবং শুরু হবে ফ্রান্স থেকে।’ ভবিষ্যদ্বাণীটি এখানে তুলে দেয়া হলো : 'Rain,fame and war will not cease in Persia,too great a faith will betray with the monarch.These (actions) started in France will end there.A secret sign for one to be sparing' এখানে স্মরণযোগ্য : আয়াতুল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে নির্বাসিত হয়ে সেখান থেকেই ইসলামি বিপ্লবের নেতৃত্ব প্রদান করে শেষে বিজয়ী হন।
বিশ্বে সাড়া জাগানো ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনাটি সম্পর্কে নস্ট্রাডেমাসের কবিতায় এই উপমা ব্যবহার হয়েছে : টুইন টাওয়ার মানব নির্মিত পর্বত এবং বিমান-ধাতব পাখি। বাস্তব প্রেক্ষাপটে এসব ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হওয়ার সামান্যতম ব্যাখ্যা ও বিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে জুটবে না। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন তার পেছনে গভীর বৈজ্ঞানিক যুক্তি, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা থাকার কারণে এসব ফলপ্রসূ হলে তা তেমন কোনো আলোড়ন সৃষ্টি না করলেও যে বিষয়টি এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ তা হচ্ছে মহাবিশ্ব সুপরিকল্পিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত সৃষ্টি বিধায় এর কোনো ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হচ্ছে এবং ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়া অন্য প্রকৃতির ভবিষ্যদ্বাণী সফল হওয়ার পেছনে কোনো যুক্তি বা ব্যাখ্যা আছে কি? প্রসঙ্গক্রমে বাস্তবে সংঘটিত দু’টি সত্য ঘটনা উল্লিখিত হচ্ছে।
১. শেখ সাদীর এক কাছের বন্ধু তার মৃত্যুর আগমুহূর্তে নিকটাত্মীয়স্বজনকে অসিয়ত করলেন : তার জানাজার নামাজ যেন শেখ সাদী পড়ান। তিনি মৃত্যুবরণ করলে আত্মীয়স্বজন কিভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে শেখ সাদীকে খবর দেবে, এ নিয়ে সংশয়ে পড়ল। তখন বরফ আবিষ্কৃত হয়নি। অন্য দিকে শেখ সাদীকে লোক পাঠিয়ে খবর দিয়ে নিয়ে আসতে কয়েক মাস লেগে যাবে। এত দিনে লাশ পচে গলে যাবে। ঠিক এই কঠিন মুহূর্তে শেখ সাদী এসে হাজির। তিনি বহু আগেই রওনা দিয়েছিলেন এখানে আসার জন্য। বন্ধুর শেষ ইচ্ছা অনুসারে তিনিই জানাজার নামাজ পড়ালেন।
২. আমার এক আত্মীয় মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, যিনি মোহাদ্দেস এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। ঢাকার মহাখালী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আগেভাগেই তিনি কিভাবে যেন জেনে যান, কোন দিন তিনি মারা যাচ্ছেন। প্রথমে তিনি তার এক আত্মীয়কে খবর দিয়ে হাসপাতালে এনে বললেন, ‘গওহরডাঙ্গা মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে যেন তার কবরটি মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী পীরে কামেল সদর রহ:-এর কবরের পাশে দেয়া হয়। তিনি গওহরডাঙ্গা মাদরাসার কর্তৃপক্ষের   কাছে এ কথা জানালে তারা সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘তিনি মারা যাবেন না, আমাদের মাঝেই বেঁচে থাকবেন।’ সময় ঘনিয়ে আসছে। বুধবার তার স্ত্রীকে তিনি বললেন, ‘তুমি অনেক কষ্ট করেছ। আমি আর দুই দিন আছি। তারপর আর কষ্ট করতে হবে না।’ পরদিন তার ভায়রা হাসপাতালে তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি তাকে বলেন, ‘আমি তো মাত্র এক দিন আছি।’ অর্থাৎ শুক্রবার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। কিভাবে তিনি তার মৃত্যুর সময়ক্ষণের ঠিক ঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হলেন? ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কিত এসব ঘটনার সরাসরি কোনো ব্যাখ্যা আজকের বিজ্ঞান, যুক্তি, দর্শন আমাদের উপহার দেয়নি। এর পরোক্ষ সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এভাবে করা যেতে পারে যিনি মহাবিশ্বের সব কিছুর স্রষ্টা, তাঁর জ্ঞান সব কিছুরই ওপরে। কারণ তিনিই তো মহান স্রষ্টা। সমুদ্রের অতল গভীরে, অরণ্যের নিভৃত কোণে, মহাকাশের নীহারিকা-ছায়াপথসমেত প্রতিটি অঞ্চলে কোথায় কী হচ্ছে সবই তার জ্ঞাত। এ মুহূর্তের সব খবর যেমন তিনি রাখেন, তেমনি অতীতের সব কিছু তিনিই জানেন। কোটি কোটি বছর পর ভবিষ্যতে কী হবে, তা জেনেই পরিকল্পিতভাবে তিনি এসব বানিয়েছেন। বর্ণিত আছে, তিনি আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির সেরা) মানুষকে তার ছুরতে বানিয়েছেন, আদমকে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন আর ফেরেশতাকুল তাঁরই নির্দেশে আদমকে সিজদা করেছে। ফেরেশতারা মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রখরতার কাছে নতিস্বীকার করে তাকে সিজদাহ করতে বাধ্য হয়েছে। স্রষ্টাই ভবিষ্যৎ জানেন। মানুষ যেহেতু স্রষ্টারই ছুরতে তৈরি, এর ফলে মানুষের পক্ষে এটা সম্ভবপর হওয়া অসম্ভব হয়তো কিছু নয়। ঘটনাপ্রবাহ পূর্বাহ্ণেই কিছু আঁচ বা আভাস পাওয়া কিঞ্চিৎ স্রষ্টাপ্রদত্ত ক্ষমতা , কৌশল এবং শক্তিকে সম্ভাব্য সব প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে রূহানি শক্তিও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ শক্তির বলে ঈসা আ:-এর খেতাব রূহুল্লাহ (আল্লাহর রূহ) এবং তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারতেন আল্লাহর কুদরতে। বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়া অন্য ভবিষ্যদ্বাণীর যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হওয়ার কার্যকারণ একটি : মহান স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে এমন কোনো সুযোগ রেখেছেন কেবল যার ফলে এটি সম্ভব হচ্ছে। মানুষ যেমন নতুন করে কিছু বানাতে বা ধ্বংস করতে সম নয়। তেমনি প্রকৃতির কোনো নিয়ম পাল্টাতে একেবারেই অক্ষম। বর্ণিত আছে, স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মানুষ শুধু প্রকৃতির ইচ্ছার কাছে (ইসলামের ওপর বা আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ) মাথা নত করতে বাধ্য। ইসলাম হচ্ছে আত্মসমর্পণ। মহাবিশ্বের সব কিছুই আত্মসমর্পিত হয়ে একটি নির্ধারিত নিয়মরীতি অনুসরণ করছে এবং সেভাবেই চলছে। নির্ধারিত নিয়মে মহাবিশ্বের সবই আবর্তিত হচ্ছে এর অর্থ দাঁড়ায়, এ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী যুক্তিসম্মত। তবে এ কথা বা বিষয়টি স্পষ্ট, কোনো ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী হলে সেটি ফলপ্রসূ হওয়ার পরই এটি আমাদের বিশেষ নজরে পড়ে। শেষ জামানা সম্পর্কে শেষ নবী সা:-এর অনেক ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে; এসবের আলামতও ধারাবাহিকভাবে সম্প্রসারিত হয়ে পুঞ্জীভূত রূপে প্রকাশের প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। শেষ নবী সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে :
১) সময় তাড়াতাড়ি চলে যাবে। এ কথাটির অর্থ ও তাৎপর্য হচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন ও সামাজিক জীবনে কর্মব্যস্ততার পরিধি এত বেড়ে যাবে যে, মনে হবে, সময় যেন দ্রুত চলে যাচ্ছে। আগের মানুষের গড় আয়ু অনেক কম হলেও জীবনের সময়কে তারা উপভোগ করে ধীরে ধীরে ব্যবহার করেছে। আধুনিক জীবনযাত্রায় গড় আয়ু কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেলেও সময়ের সাথে প্রতিযোগিতায় মানুষ দিশেহারা। প্রতিদিনের রুটিন কাজের মধ্যে রয়েছে হরেক রকমের বাড়তি কাজ। ফলে প্রত্যেকেরই মনে হয়, যেন সময় হুহু করে চলে যাচ্ছে যেটি অতীতকালে অনুভূত হয়নি। সম্প্রতি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি বক্তব্য দেখলে মনে হবে যেন, তা আমাদের সবারই অনুভূতির প্রতিধ্বনি। জনৈক চিন্তাবিদ লিখেছেন : ‘দিনগুলো যেন খুব তাড়াতাড়ি ফুরাচ্ছে আজকাল। বছরগুলোও চোখের পলকে চলে যাচ্ছে। এই সে দিন গেল জন্মদিন, এখনো চুপসানো বেলুন দেয়ালে ঝুলে আছে; আর এখনই কিনা আরেক জন্মদিন চলে এলো। আগে দিন ফুরাতো না। ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠব; তখন কবে উঠব কবে উঠব করি, দিন যায়, মাস যায় কিন্তু বছর তবু যায় না।’ সময় যে পাল্লা দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে এই অনুভূতিটি সবার ভেতরেই প্রবলভাবে কাজ করছে। ভাবতে অবাক লাগে, এই ভবিষ্যদ্বাণীটি কত আগে দেয়া হয়েছিল।
 ২) দাসী প্রভুর জন্ম দেবে : অর্থাৎ, সন্তানেরা মায়ের সাথে ক্রীতদাসীর মতো আচরণ করবে। পৃথিবীর সব দেশে এমনকি উন্নত বিশ্বেও সন্তানদের এই প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাতীয় টিভির অনুষ্ঠানে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করতে দেখেছি। 
৩) প্রাচুর্য এত বেশি হবে যে, ‘রাস্তার লোকেরাও দালানকোঠা বানানোর প্রতিযোগিতা করবে।’ একসময়ের বিশ্বে অনুন্নত শ্রেণীভুক্ত বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জেও এখন সুউচ্চ ইমারত লক্ষণীয়। ২০১৮ সালে LDC থেকে উন্নয়নশীলদেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্যে জাতিসংঘে আবেদন করবে বাংলাদেশ। আবেদন গৃহীত হলে ২০১৮ তে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। ধারাবাহিকভাবে সব দেশের সম্পদ বেড়েই যাবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
 ৪) নারীদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হবে : নারী পুরুষের চেয়ে বেশি হবে। নারী ও পুরুষের অনুপাত ৫০ : ১ দাঁড়াবে। বর্তমান বিশ্বে সব দেশেই নারীদের গড় আয়ু সাধারণত পুরুষদের চেয়ে বেশি। অন্য দিকে, নারী শিশুদের জন্মহারও পুরুষদের চেয়ে বেশি। x, y ক্রোমসোমের মিলনের আনুপাতিক হারের ওপর নির্ভর করে শিশু ছেলে না মেয়ে হবে। x ও y-এর মিলনে কেন কন্যাশিশু জন্মের সম্ভাব্যতা বেড়ে যায়, এর বৈজ্ঞানিক কারণ বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না লিখেছে একটি ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ম্যাগাজিন যেটি দেখেছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বে ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার লক্ষণীয়। 
৫) নতুন নতুন রোগের উদ্ভব হবে। কোনো কোনো রোগের প্রতিষেধক উদ্ভাবিত করা সম্ভব হবে না। এ পর্যন্ত রোগের তালিকায় নিত্য নতুন নাম সংযোজিত হয়ে চলছে। বিশ্বে অটিটিস্টিক রোগীর সংখ্যা আকাশ ছোঁয়া রূপ ধারন করতে চলছে বলে পরিসংখ্যান বলছে। গ্রিক শব্দ অটিস্টিক "নিজ" - এরা নিজেদের মাঝে নিজেদের গুঁটিয়ে রাখে। কারো দিকে তাকাতে চায় না, কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না, বন্ধুত্ব করতে চায় না। সবচেয়ে বিশ্বয়কর ব্যপার হলো, বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না এর কারণ কি! জিকা ভাইরাসের নতুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে। কুরে কুরে মস্তিষ্ক শেষ করে দিচ্ছে এই ভাইরাস।অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ওপর এই ভাইরাসের প্রভাব এত ভয়াবহ যে, নবজাতকের মাথা শরীরের তুলনায় অস্বাভাবিক ছোট আকারের হচ্ছে। অসম্পূর্ণ মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মানো এই শিশুদের জীবনভর সেভাবেই বাঁচতে হবে বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন। এইডস রোগের প্রতিষেধক এখনো পাওয়া যায়নি। অনিরাময়যোগ্য আরো কিছু রোগ রয়েছে।
 ৬) বাদ্যযন্ত্র এবং গানবাজনার ব্যাপক প্রসার ঘটবে। বহু ধরনের বাদ্যযন্ত্র এখন বিশ্ববাজারে। এ হার বেড়েই চলছে। সাথে সাথে বাড়ছে সঙ্গীতের প্রসার।
 ৭) হত্যাকাণ্ড এত বেশি বৃদ্ধি পাবে যে, যাকে মারা হলো সে জানতেও পারবে না, কেন তাকে হত্যা করা হলো। সমগ্র বিশ্বে হত্যার ছড়াছড়ি এবং সংখ্যাধিক্য এ রকম আভাস দিচ্ছে এবং হত্যাযজ্ঞের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়ে চলছে সব দেশে।
৮) নারীরা এমন পোশাক-পরিচ্ছদে নিজেদের আবৃত করবে যে, মনে হবে না কোনো পোশাক পরেছে। বিভিন্ন দেশে বিকিনি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যরে পোশাকের প্রতি নারীদের আকর্ষণ ও ঝোঁক প্রবণতা এখানে উল্লেখ করার মতো।
 ৯) ভাগ্য গণনার ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে। টেলিভিশনে এবং খবরের কাগজে প্রাত্যহিক রাশিফল পর্যালোচনা এটি প্রমাণ করে।
এসব ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহের সা: প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনাপ্রবাহে আরো ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের দৃষ্টিতে পড়ে থাকে। বহুল পঠিত ও আলোচিত একটি : একদা রাসূলুল্লাহর সা: সহধর্মিণীগণ জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সা:, আপনার মৃত্যুর পর আমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে আপনার সাক্ষাৎ লাভ করবে?’ ‘যার হাত বেশি বড় (দানশীল), সে’; জবাবে তিনি বললেন। উম্মুল মুমিনিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন হজরত জয়নব (রা:) এবং তিনি এই সৌভাগ্যের অধিকারী হন। নিঃসন্দেহে এই ভবিষ্যদ্বাণীটির ব্যাখ্যা বিজ্ঞানে অসম্ভব।
প্রকৃতপক্ষে এসব ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাখ্যা যান্ত্রিক ও ডিজিটাল বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে কোনোভাবেই সম্ভব না হলেও ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে আর তা যথাযথভাবে ফলপ্রসূ হতে দেখা যাচ্ছে। এই সফলতার কার্যকারণের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ কী হতে পারে?
বাস্তবতার আলোকে বলা যায়, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সব কিছুর জ্ঞান একমাত্র মহান স্রষ্টার রয়েছে। সবই তিনি জ্ঞাত, নিযুত কোটি বছর পরে কী ঘটবে তিনি তা জ্ঞাত। তা না হলে তিনি এর স্রষ্টা হতে পারতেন না। গভীর সমুদ্রের অতল তলে, অরণ্যের নিভৃত কোণে, মহাকাশের সুদূর অন্তরীে কোথায় কী ঘটছে, এমনকি প্রত্যেক মানুষের মনের অভ্যন্তরে কী কথা লুকিয়ে আছে, কী ভাবছে মানুষ, এসবই স্রষ্টার নখদর্পণে। কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তা। বর্ণিত আছে, তিনি মানুষকে সৃষ্টির সেরা বানিয়েছেন, নিজ ছুরতে তৈরি করেছেন, নিজ রূহ আদমকে ফুঁকে দিয়েছেন। ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে ঘটার পরই এটাকে ফলপ্রসূ ভবিষ্যদ্বাণী বলা হয়। অন্যথায় ঘটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, না ঘটলে এটি আর ভবিষ্যদ্বাণী হয় না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে নিযুত কোটি ঘটনার মধ্যে দু-একটি ছিটেফোঁটা ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী আমরা জানছি এবং ফলপ্রসূ হতে দেখছি। তবে সার্বিক বিবেচনায় যে বিষয়টি স্পষ্ট : মহাবিশ্ব সুচিন্তিত, সুনিয়ন্ত্রিত, সুপরিকল্পিত বিধায় এর যেকোনো ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব এবং তা ফলপ্রসূ হতে দেখা যায়। আইনস্টাইনের সে উক্তিটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার রহস্যময় অভিপ্রেত।’ 

লেখক : সাবেক শিক্ষক,পদার্থবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/104556#sthash.NgcZ2VHD.dpuf

আজকের মহাকাশ, নিম্নতম জান্নাত ও ঈমানের স্বাদ

Thursday, April 7, 2016


আজকের মহাকাশ, নিম্নতম জান্নাত ও ঈমানের স্বাদ

মুহাম্মদ আলী রেজা
০৭ এপ্রিল ২০১৬,বৃহস্পতিবার
সবচেয়ে নিচুমানের জান্নাত আর প্রকৃত ঈমানের স্বাদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে হলে সর্বশেষ বিজ্ঞানের নভোমণ্ডল ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে ন্যূনতম একটি ধারণা একেবারে না থাকলেই নয়। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক- ঈমানের সত্যিকার স্বাদ পাওয়ার জন্য এসব তথ্য জেনে কী হবে? মুজাদ্দেদ ইমান গাজ্জালি রহ: সেই মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ, যে যুগে দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি। বর্তমানে মহাকাশ বিজ্ঞানের যে বিকাশ হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে মধ্যযুগে এই বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা কোন পর্যায়ে ছিল, তা সহজেই অনুমেয়। সেই যুগে তার একটি উপমা এখানে তুলে ধরলে আমরা একেবারে চমকে উঠব। তিনি তার সময়ের এবং পরে সব কালের ঈমানদারদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন একটি উপমার মাধ্যমে, আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান সুদৃঢ় করার অতি সহজ পথ। এটি হচ্ছে- মহাকাশ বা মহাবিশ্ব সম্পর্কে যে ব্যক্তির কোনো ধারণা নেই তার ঈমানের স্বাদ বা স্তর হচ্ছে একজন Impotent (নপুংসক)-এর মতো, যার কোনো অনুভূতিই নেই নর-নারীর দৈহিক সম্পর্কের মজা সম্পর্কে। বাস্তব দুনিয়ায় সবচেয়ে মজাদার, অপার তৃপ্তির বা ফুর্তির কোনো কিছু থেকে থাকলে তা হচ্ছে একমাত্র এটি। তেমনি গাজ্জালি রহ:-এর মতে, প্রকৃত ঈমানের আসল স্বাদ তৃপ্তি পেতে প্রয়োজন বা সহজ পথ হচ্ছে নভোমণ্ডল। মহাবিশ্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া।
বিশাল খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে চার দিকে তাকালে মনে হবে, আরেকটু এগোলেই যেন দিগন্তে পৌঁছা যাবে অথবা ওটাকে স্পর্শ করা যাবে। আসলে কি কাজটি এত সহজ? সামনে যেতে থাকলে দিগন্তও দূরে, আরো দূরে সরতেই থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে একপর্যায়ে দেখা যাবে পৃথিবীটাকে এক পাক ঘুরে এসে সেই যাত্রা শুরুর প্রথম জায়গায়ই ফিরে আসতে। কারণ পৃথিবী গোলাকার। এর চার ভাগের তিন ভাগই পানিবেষ্টিত। স্থলভাগের মাত্র ১ শতাংশের মধ্যে জগতের অর্ধেক মানুষ (সাড়ে তিন শ’ কোটি) বাস করে (নাসার সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট অনুসন্ধান তথ্য)। পৃথিবীর স্থলভাগে সাত শ’ কোটি মানুষ ছাড়াও রয়েছে কোটি কোটি জীবজন্তু, পশুপাখি, ক্ষেত-খামার, রাস্তাঘাট, পাহাড়-পর্বত, বিশাল মরূদ্যান ও বনজঙ্গল, গাছপালা, বৃক্ষরাজি এবং আরো কত কী। আর এত সব কিছু নিয়েই আমাদের আবাসভূমি পৃথিবী, যার বিশালত্ব কল্পনা করাও অনেক দুরূহ নয় কি? এত বিশাল দৈত্যকার পৃথিবীর তুলনায় নিম্নতম জান্নাতটির আকার কেমন হতে পারে আর কে পাবেন এটি? জাহান্নামের সব শাস্তি পূর্ণ করে মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি জান্নাতে যাবেন তিনি পাবেন এটি। নিম্নতম জান্নাতটি যে পৃথিবীর দশ গুণ হবে এটি তিরমিজিসহ অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে রয়েছে। সবচেয়ে নিচু স্তরের জান্নাত যদি এ রকম হয়, তাহলে উঁচু-নিচু সব স্তরের সব জান্নাতির জায়গার পরিমাণ কত বিশাল হবে সেটা কল্পনা ও চিন্তা করা সম্ভব কি?
মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কিত বিজ্ঞানের সর্বশেষ খবরাখবর
আমাদের সূর্য একটি অতি সাধারণ তারকা। এর আকার তারকাগুলোর গড় আকারের মতই। 
আমাদের বাসভূমির তারকা সূর্যের ব্যাস আট লাখ ৭০ হাজার মাইল। এর অর্থ হলো ১০৯টি পৃথিবী সূর্যের পৃষ্ঠে সাজিয়ে রাখা যায়। এটি এত বড় যে, ১৩ লাখ পৃথিবী এর মধ্যে ভরে রাখা যায়। আমাদের সৌরগ্রহগুলো সূর্যের চতুর্দিকে চাকতির মতো জায়গা জুড়ে আছে। যার দূরত্ব সূর্য থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন কিলোমিটার। একটি তারকার বর্ণনা যদি এমন হয় তাহলে মহাবিশ্বে তারকার সংখ্যা কত? বাস্তবে বিশাল সংখ্যার তারকা নিয়ে একটি ছায়াপথ। আবার একটি ছায়াপথেই থাকতে পারে বিলিয়নস, ট্রিলিয়নস তারকা।
মহাবিশ্বে ছায়াপথ কয়টি?
দেখা যায়, এদের সংখ্যা হবে ১০০ থেকে ১২৫ বিলিয়ন। সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের চেয়ে পাঁচ শ’ গুণ শুধু বড় নয়, সেই সাথে এক লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল তার ভর ৩০ লাখ সূর্যের সমান হয়ে থাকে। আপনি যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে তারকা গণনা করেন সে ক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে। ছায়াপথগুলো মহাকাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না থেকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে একে অপর থেকে বহু দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে। সব ছায়াপথ এক করলে তারা মহাশূন্যের দশ লাখ ভাগের এক ভাগ স্থান দখল করবে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী পর্যন্ত এর কাছে হার মানবে।
ছায়াপথ কত বড়?
এত বড় যে, বড় ধরনের ছায়াপথের আড়াআড়ি দূরত্ব ১০ লাখ আলোকবর্ষেরও বেশি হবে [এক বছরে প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে যে দূরত্ব অতিক্রম করা যায়, সেটি হলো এক আলোকবর্ষ (৯.৪ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার।)]
আমরা এমন একটি ছায়াপথে থাকি যেটা আড়াআড়ি মাপে প্রায় ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। আমাদের ছায়াপথটি ধীর গতিতে ঘূর্ণায়মান। এর সর্পিল বাহুগুলিতে অবস্থিত তারকাগুলি প্রায় কয়েকশ মিলিয়ন বছরে একবার করে কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। 
সবচেয়ে ছোট ছায়াপথের নাম ডর্ফ, যার প্রশস্ত কয়েক হাজার আলোকবর্ষের দূরত্বের। অ্যান্ড্রোমেডার ছায়াপথটির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব হবে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার আলোকবর্ষ। মজার বিষয় হচ্ছে, এই মুহূর্তে মহাবিশ্বের দিকে তাকালে দূর অতীতের মহাবিশ্বকে আমরা কিন্তু দেখতে পাবো, কেননা এই সময়ে দূর তারকা ছায়াপথ থেকে আলো এসে কেবল আমাদের কাছে পৌঁছেছে। যে কোয়সারগুলো এখন আমরা দেখছি, সেই আলো আমাদের কাছে পৌঁছতে শত শত কোটি বছর লেগে গেছে। আমাদের নিকটতম তারকা Proxima Centauri থেকে আলো আসতে লাগবে ৪.৩ বর্ষ।
সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব
মহাবিশ্ব প্রসারমান, এই আবিষ্কারটি বিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম বৌদ্ধিক বিপ্লবগুলোর অন্যতম। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা কি কখনো ভাবার সুযোগ পাই ছায়াপথগুলো প্রায় ৭০ কিমি/সেকেন্ড গতিতে দূরাপসরণ করছে?
   প্রত্যাশিত হিসাবের চেয়েও দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের এই দ্রুতগতি আমাদের দৈনন্দিন পদার্থবিদ্যার জ্ঞানের পরিধিকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে
এই আবিষ্কাররের মধ্য দিয়ে হয়ত আলবার্ট আইনস্টাইনের 'থিওরি অফ রিলেটিভিটির' উপর একটি চ্যালেঞ্জের প্রমাণ পাওয়া সম্ভব বলে ভাষ্য ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট-এর। বিজ্ঞানীদের মতে, এতদিন ভেবে আসা মহাবিশ্বের শতকরা ৯৫ ভাগ আলো বা রশ্মি বিকিরণ করে না, এমন ধারণাকে বাতিল করে দিতে পারে আবিষ্কারটি
  নাসা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ধারণার চেয়ে পাঁচ থেকে নয় শতাংশ দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে। ১৩৮০ বছর আগে ঘটা বিগ ব্যাঙ থেকে পাওয়া বিকিরণ পরিমাপ করে যে হিসাব বের করা হয়েছিল তার সঙ্গে মিলছে না বর্তমানে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার। এই অসামঞ্জস্যের একটি কারণ হতে পারে অনেকটা নিউট্রিনোর মতো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সাবঅ্যাটমিক পার্টিকেল। এই পার্টিকেলগুলো প্রায় আলোর গতিতে ছুটতে পারে।  
 এই অভিক্রিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার উপমার মাধ্যমে সহজেই উপলব্ধি করা যাবে। রাস্তায় চলন্ত একটি গাড়ি যখন কাছে এগিয়ে আসে তখন এর ইঞ্জিনের শব্দের তীক্ষ্মতা তীব্রতর হয় এবং গাড়িটি যখন কাছে এসে দূরে অপসারণ করে, তখন শব্দের তীক্ষ্মতা নিম্নতর হয়ে থাকে। আলোকের তরঙ্গের আচরণও একই রকম। আলোকের স্পন্দাঙ্ক খুব বেশি- সেকেন্ডে চার থেকে সাত লাখ মিলিয়ন। এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্পন্দাঙ্ক। আমাদের দৃষ্টিতে যা বিভিন্ন বর্ণ হিসেবে প্রতিভাত হয় সেগুলো হলো- আলোকের বিভিন্ন স্পন্দাঙ্ক। সর্বনিম্ন স্পন্দাঙ্ক দেখা যায় বর্ণালির লালের দিকে। তারকা যদি আমাদের দিকে আসে তাহলে প্রতি সেকেন্ডে আমরা যে স্পন্দাঙ্ক পাবো তা বেড়ে যাবে, যেমনটি শব্দ শ্রোতার দিকে এগিয়ে আসার সময় ঘটে থাকে। অনুরূপভাবে তারকা যদি আমাদের কাছ থেকে দূরে অপসারমান হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছে যে তরঙ্গগুলো পৌঁছাচ্ছে তার স্পন্দাঙ্ক হবে ক্ষুদ্রতর। তারকার আলোর স্পন্দাঙ্ক মেপে এর লাল বিচ্যুতি হলে স্পষ্টত বোঝা যাবে তারকাগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরাপসরণ করছে।
সূরা আয্যারিয়ার ৪৭ আয়াতে নভোমণ্ডল প্রসারিত হচ্ছে উল্লিখিত হয়েছে। ‘নভোমণ্ডল নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।’ এডউইন হাবল ১৯২৯ সালে প্রকাশ করেন যে, মহাবিশ্ব স্থিতাবস্থায় নেই। যে ছায়াপথটি যত দূরে অবস্থিত তার দূরাপসারণের গতিও তত বেশি। প্রতিনিয়ত মহাবিশ্ব কত বিস্তৃতি লাভ করছে! আবার যেহেতু সব ছায়াপথ মহাকাশের  দশ লাখ ভাগের মাত্র এক ভাগ জায়গা দখল করে আছে, সে ক্ষেত্রে ১০ পৃথিবীর সমান নিম্নস্তরের জান্নাত হওয়াটা একেবারে সাধারণ ঘটনা। ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত।’ আইনস্টাইন। 
আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন, "আল্লাহ্‌ পাক বলেন - জান্নাতে এমন নেয়ামত তৈরী করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান যার কথা শোনেনি, এবং কোন মানুষের কল্পনায়েও যা আসেনি।" জান্নাতে অসুস্থ্যতা ও বার্ধক্যতা নেই, চির যৌবন লাভ করবে জান্নাতবাসীরা, রাসুলুল্লাহ (দঃ) একদিন বলেন, "বৃদ্ধদের জান্নাতে দেখা যাবে না।" নিকটে অবস্থানরত এক বৃদ্ধা এ কথা শুনে কেঁদে ফেললেন। যখন তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলো, তিনি বললেন, "আমি বৃদ্ধা হয়ে গেছি। আগে যদি মারা যেতাম, জান্নাত লাভের সৌভাগ্য হত।" তাঁকে আশ্বস্ত করে রাসুল (সাঃ) বললেন, "জান্নাতবাসী সকলেই চির যৌবন লাভ করবে, অতঃএব ভয়ের কিছু নেই।" 
লেখক : সাবেক পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়