ইমাম গাজ্জালি নপুংসক
ঈমানদার বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন?
মুহাম্মাদ আলীরেজা
নপুংসক বুঝাতে তিনি
কোন জেন্ডার উল্লেখ না করে সব ঈমানদারদের শ্রেণী/স্তর বর্ণনা করেছেন মাত্র।
সেই মধ্যযুগে ইমাম গাজ্জালি খুলুকে মুসলিমীন
গ্রন্থে লিখেছেন, মহাকাশের তারকা,নক্ষত্র সম্পর্কে যাদের কোন ধারনা নেই তাদের
ঈমানের উপমা হচ্ছে একজন Impotent (নপুংসক )
ব্যক্তির সমতুল্য যাদের লাভ মেকিং এর অপার মজা/ ফুর্তি/স্বাদ সম্পর্কে কোনো
অনুভুতিই নেই। একটু চিন্তা করে প্রশ্ন করিঃ বর্তমান যুগে বসে তিনি এই কথাটি কি
ভাবে উপস্থাপন করতেন? তাঁর মতেঃ প্রকৃত ঈমানের
সত্যিকার স্বাদ পেতে জরুরী মহাকাশ ধারনাও। তাহলে দেখিঃসর্বশেষ বিজ্ঞানে আজকের মহাকাশ ঈমান বাড়াতে /সুদৃঢ় করতেঈমানদারদের জন্য কি বার্তা দেয়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
< প্রসঙ্গক্রমে
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্যঃ‘আমরা
এখন আকাশে যে নক্ষত্র ও তারকাগুলো দেখি, সেগুলোর মধ্যে অসংখ্য তারকার নাম আরবিতে, কারণ মুসলিমরাই এগুলো আবিষ্কার করে এবং তারাই এগুলোর নাম দেন।
আমরা ক’জন ওয়াকিবহাল, সে সময়ে সমরকন্দ, দামেস্ক, কায়রো আর করডোভার প্রথম বড় বড় মানমন্দির গড়ে তোলেন
আরব মুসলমানেরা। মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন, যে সব ১২ বছরের
ওপরে দীর্ঘায়িত হয়েছিল। সে সময়ের মুসলিম বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞান কোন অবস্থানে পৌঁছেছিল তার বর্ণনা একটি ঘটনায় ফুটে
ওঠে:
সন্ন্যাসী গারভাট (দ্বিতীয় সিলভেস্ট নামে তিনি ৯৯৯ সালে পোপ হন) যখন করডোভার মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে খ্রিষ্ট ধর্মাচরণে পুনরায় ফিরে এলেন
তখন লোকে বলে,
তিনি নাকি সেখানে শয়তানের সাথে দহরম
পর্যন্ত করে এসেছেন। ইতিহাস সাক্ষ দিচ্ছে,মহাকাশ গবেষণাকে তখন পশ্চিমাদের
কাছে অনেকটা শয়তানি ফালতু কাজ হিসাবে বিবেচিত হত।’>
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
*আমাদের সূর্য একটি অতি সাধারণ তারকা।
*এর আকার তারকাগুলোর গড় আকারের মতোই।
*আমাদের বাসভূমির তারকা সূর্যের ব্যাস ১৪ লাখ কিলোমিটার।
*এর অর্থ হলো ১০৯টি পৃথিবী সূর্যের পৃষ্ঠে সাজিয়ে রাখা যায়।
*এটি এত বড় যে, ১৩ লাখ পৃথিবী এর মধ্যে ভর্তি করা যায়।
*আমাদের সৌরগ্রহগুলো সূর্যের চতুর্দিকে চাকতির মতো জায়গাজুড়ে আছে,
*যার দূরত্ব সূর্য থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন কিলোমিটার।
*একটি তারকার বর্ণনা যদি এমন হয়, সে ক্ষেত্রে মহাবিশ্বে তারকার সংখ্যা কত?
*বাস্তবে বিশাল সংখ্যার তারকা নিয়ে একটি ছায়াপথ। তাহলে মহাবিশ্বে তারকা ও ছায়াপথ আসলে কয়টি?
*Kornreich মহাবিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথ ধরে একটি মোটামুটি হিসাব বের করেছেন
* ছায়াপথের ১০ হাজার কোটি তারকার সাথে এই সংখ্যা গুণ করলে হয় ১০০ অকটিলিয়ন (octillion) তারকা।
*তার মানে দাঁড়ায়, এক-এর সাথে ২৯টি শূন্য।
*Kornreich জোর দিয়ে বলেন, এটা সাধারণ হিসাব,
*তবে গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আরো বেশি।
*১৩ অক্টোবর ২০১৬, নাসা থেকে পাওয়া তথ্য হচ্ছে, দুই ট্রিলিয়ন ছায়াপথ আছে মাত্র ১০ শতাংশ মহাবিশ্বের মধ্যে;
*কিন্তু ছায়াপথগুলোর ৯০ শতাংশের খোঁজ এখনো বাকি।
*ছায়াপথ হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম, যেখানে মিলিয়ন থেকে বিলিয়নসংখ্যক তারা মাধ্যাকর্ষণের টানে একসাথে আটকে থাকে।
*গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ‘অদৃশ্যমান’ ছায়াপথগুলোকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।
*কেননা, এসব ছায়াপথ টেলিস্কোপের আওতায় আসে না।
*সেখান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, মানুষের ধারণারও বাইরে রয়ে গেছে আরো লাখ লাখ ছায়াপথ (সূত্র:গার্ডিয়ান) ।
*এর অর্থ দাঁড়ায়, মহাবিশ্বে ২০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথও ছাড়িয়ে যেতে পারে! *আবার দেখা যায়, সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের চেয়ে ৫০০ গুণ শুধু বড় নয়,
*সেই সাথে এক লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল।
*ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল,
*তার ভর ৩০ লাখ সূর্যের সমান হয়ে থাকে।
*যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে তারকা গণনা করা হয়,
* সেক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে।
*ছায়াপথগুলো মহাকাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না থেকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে একে অপর থেকে বহু দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে।
* সব ছায়াপথ এক করলে তারা মহাশূন্যের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ স্থান দখল করবে,
* যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী পর্যন্ত এর আওতার অনেক বাইরে।
ছায়াপথ কত বড়?
*এত বড় যে, বড় ধরনের ছায়াপথের আড়াআড়ি দূরত্ব
ছায়াপথ কত বড়?
*এত বড় যে, বড় ধরনের ছায়াপথের আড়াআড়ি দূরত্ব
* ১০ লাখ আলোকবর্ষেরও বেশি হবে ।
*এক আলোকবর্ষ=৯.৪ ট্রিলিয়ন কিলোমিটারঃ
*এক বছরে প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে যে দূরত্ব অতিক্রম করা যায় সেটি হলো ১ আলোকবর্ষ ।
*আমরা এমন একটি ছায়াপথে থাকি,
*যেটা আড়াআড়ি মাপে প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ।
*আমাদের ছায়াপথটি ধীর গতিতে ঘূর্ণায়মান।
*এর সর্পিল বাহুগুলোয় অবস্থিত তারকাগুলো প্রায় কয়েকশ মিলিয়ন বছরে একবার করে কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে।
*সবচেয়ে ছোট ছায়াপথের নাম ডর্ফ,
*যার প্রশস্থতা কয়েক হাজার আলোকবর্ষের দূরত্বের।
*অ্যান্ড্রোমেডা ছায়াপথটির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব হবে দুই লাখ ৫০ হাজার আলোকবর্ষ।
*মজার বিষয় হচ্ছে, এই মুহূর্তে মহাবিশ্বের দিকে তাকালে
*দূর অতীতের মহাবিশ্বকে আমরা আসলে কিন্তু দেখতে পাবো,
*কেন না এই সময়ে দূর তারকা ছায়াপথ থেকে আলো এসে কেবল আমাদের কাছে পৌঁছেছে।
*যে কোয়াসারগুলো এখন আমরা দেখছি, সেই আলো আমাদের কাছে পৌঁছতে শত শত কোটি বছর লেগে গেছে।
সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব
*সূরা আয্যারিয়ার ৪৭ আয়াতে নভোমণ্ডল প্রসারিত হচ্ছে উল্লিখিত হয়েছে। ‘নভোমণ্ডল নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।’
*মহাবিশ্ব প্রসারমান, এই আবিষ্কারটি বিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম বৌদ্ধিক বিপ্লবগুলোর অন্যতম। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা কি কখনো ভাবার সুযোগ পাই ছায়াপথগুলো প্রায় ৭০ কিমি/সেকেন্ড গতিতে দূরাপসরণ করছে?
* নাসা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সিএর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ধারণার চেয়ে পাঁচথেকে নয়শতাংশ দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে। *এডউইন হাবল ১৯২৯ সালে প্রকাশ করেন যে, মহাবিশ্ব স্থিতাবস্থায় নেই। যে ছায়াপথটি যত দূরে অবস্থিত তার দূরাপসারণের গতিও তত বেশি। *প্রতিনিয়ত মহাবিশ্ব কত বিস্তৃতি লাভ করছে!
*আবার যেহেতু সব ছায়াপথ মহাকাশের দশ লাখ ভাগের মাত্র এক ভাগ জায়গা দখল করে আছে, সে ক্ষেত্রে ১০ পৃথিবীর সমান নিম্নস্তরের জান্নাত হওয়াটা একেবারে সাধারণ ঘটনা নয়কি? *মহাবিশ্বের সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ ও রহস্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমেই কেবল আল্লাহকে খুঁজে পাওয়াও তার নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে।
*ঈমান বাড়ানোর পথ বা উপায় হলো সৃষ্টি রহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা।
*হাদিসশরিফেআছেঃ সৃষ্টিরহস্য নিয়ে কিছু সময় চিন্তাভাবনা করা, সারা রাত নফল এবাদত থেকেও উত্তম।
* মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ভাষায়: ‘নিশ্চয়ইএর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত।
*বিজ্ঞানীর দুরভিসারি জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায় বিজ্ঞানের সমাগত চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে; *কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে, *এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্ত্রা রয়েছেন।তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়
*তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায় কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’
লেখকঃ সাবেক সিক্ষক, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়