মুহাম্মাদ আলী রেজা; নয়া দিগন্তঃ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬,শনিবার
মহাবিশ্ব প্রসারমান। এ আবিষ্কারটি বিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম বৌদ্ধিক বিপ্লবগুলোর অন্যতম। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা কি কখনো ভাবার সুযোগ পাই; ছায়াপথগুলো প্রতি সেকেন্ডে ৭০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি গতিতে প্রসারিত হচ্ছে? প্রত্যাশিত হিসাবের চেয়েও দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ধারণার চেয়ে পাঁচ থেকে ৯ শতাংশ দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে। ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে ঘটা বিগব্যাং থেকে পাওয়া বিকিরণ পরিমাপ করে যে হিসাব বের করা হয়েছিল, তার সাথে মিলছে না বর্তমানে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার। প্রসারনশীল মহাবিশ্বের এই অভিক্রিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার উপমার মাধ্যমে সহজেই উপলব্ধি করা যাবে। রাস্তায় চলন্ত একটি গাড়ি যখন কাছে এগিয়ে আসে তখন এর ইঞ্জিনের শব্দের তিব্রতা তীব্রতর হয় এবং গাড়িটি যখন কাছে এসে দূরে অপসারণ করে, তখন শব্দের তীব্রতা নিম্রতর হয়ে থাকে। আলোকের তরঙ্গের আচরণও একই রকম। আলোকের স্পন্দাঙ্ক খুব বেশি সেকেন্ডে ৪০ থেকে ৭০ লাখ। এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্পন্দাঙ্ক। আমাদের দৃষ্টিতে যা বিভিন্ন বর্ণ হিসেবে প্রতিভাত হয় সেগুলো হলো আলোকের বিভিন্ন স্পন্দাঙ্ক। সর্বনিম্ন স্পন্দাঙ্ক দেখা যায় বর্ণালীর লালের দিকে। তারকা যদি আমাদের দিকে আসে তাহলে প্রতি সেকেন্ডে আমরা যে স্পন্দাঙ্ক পাবো তা বেড়ে যাবে, যেমনটি শব্দ শ্রোতার দিকে এগিয়ে আসার সময় ঘটে থাকে। অনুরূপভাবে তারকা যদি আমাদের কাছ থেকে দূরে অপসারনমান হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছে যে তরঙ্গগুলো পৌঁছাচ্ছে তার স্পন্দাঙ্ক হবে ক্ষুদ্রতর। তারকার আলোর স্পন্দাঙ্ক মেপে এর লাল বিচ্যুতি হলে স্পষ্টত বোঝা যাবে, তারকাগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সূরা আজ জারিয়ার ৪৭ আয়াতে নভোমণ্ডল প্রসারিত হচ্ছে উল্লিখিত হয়েছে : ‘নভোমণ্ডল নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।’
'মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না।' [ সুরা মু’মিন ৪০:৫৭ ]
এডউইন হাবল ১৯২৯সালে প্রকাশ করেন, মহাবিশ্ব স্থিতাবস্থায় নেই। যে ছায়াপথটি যত দূরে অবস্থিত, তার দূরে সরে যাওয়ার গতিও তত বেশি। দেখা যায় ১০লাখ আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ২২.৪ কিলোমিটার বেগে এবং ২০ লাখ আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ৪৪.৮ কিলোমিটার বেগে দূর সরছে। অবাক বিস্ময়ের সাথে ভাবার বিষয়,বাস্তবে প্রতিনিয়ত মহাবিশ্ব আমাদের থেকে কত দূরে বিস্তৃতি লাভ করছে! আমরা ক’জন গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখেছি, প্রকৃত ঈমানের স্বাদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে হলে সর্বশেষ বিজ্ঞানের নভোমণ্ডল ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে ন্যূনতম একটি ধারণা একেবারে না থাকলেই নয়? প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, ঈমানের সত্যিকার স্বাদ পাওয়ার জন্য এসব তথ্য জেনে কী হবে? মুজাদ্দেদ ইমাম গাজ্জালি রহ: সেই মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ। বর্তমানে মহাকাশ বিজ্ঞানের যে বিকাশ হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে মধ্যযুগে এই বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা কোন পর্যায়ে ছিল, তা সহজেই অনুমেয়। সেই যুগে তার একটি উপমা এখানে তুলে ধরলে আমরা একেবারে চমকে উঠব! তিনি তার সময়ের এবং পরে সব কালের ঈমানদারদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন একটি উপমার মাধ্যমে, আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান সুদৃঢ় করার অতি সহজ একটি পথ। এটি হচ্ছে ঈমানদারদের দৌড় শুধু মসজিদ নয়, বরং মহাকাশ বা মহাবিশ্ব সম্পর্কে যে ব্যক্তির কোনো ধারণাই নেই, তার ঈমানের স্বাদ বা স্তর হচ্ছে একজন Impotent (নপুংসক)-এর মতো, যার কোনো অনুভূতিই নেই নর-নারীর দৈহিক সম্পর্কের আসল মজা সম্পর্কে। বাস্তব দুনিয়ায় সবচেয়ে মজাদার, অপার ফুর্তির কোনো কিছু থেকে থাকলে তা হচ্ছে একমাত্র এটি। তেমনি গাজ্জালি রহ:-এর মতে, প্রকৃত ঈমানের আসল স্বাদ বা তৃপ্তি পেতে প্রয়োজন এবং পাওয়ার সহজ পথ হচ্ছে আল্লাহ পাকের অপার রহস্য মহাবিশ্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া। ঈমানদারদের তাচ্ছিল্য করে প্রচলিত কথায় বলে ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ’! কিন্তু আমরা ক’জন ওয়াকিবহাল, সে সময়ে সমরকন্দ, দামেস্ক, কায়রো আর করডোভায় প্রথম বড় বড় মানমন্দির গড়ে তোলেন আরব মুসলমানেরা। মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন, যে সব ১২ বছরের ওপরে দীর্ঘায়িত হয়েছিল। সে সময়ের মুসলিম বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞান কোন অবস্থানে পৌঁছেছিল তার বর্ণনা একটি ঘটনায় ফুটে ওঠে। সন্ন্যাসী গারভাট (দ্বিতীয় সিলভেস্ট নামে তিনি ৯৯৯ সালে পোপ হন) যখন কর্ডভার মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে খ্রিষ্ট ধর্মাচরণে পুনরায় ফিরে এলেন তখন লোকে বলা বলি করে- , তিনি নাকি সেখানে শয়তানের সাথে দহরম পর্যন্ত করে এসেছেন।
পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ স্থল। স্থলভাগে সাতশ’ কোটি মানুষ ছাড়াও রয়েছে কোটি কোটি জীবজন্তু, পশুপাখি, খেত খামার, রাস্তাঘাট, পাহাড়-পর্বত, বিশাল মরুদ্যান, বনজঙ্গল ও আরো কত কী। আর এত সবকিছু নিয়েই আমাদের আবাসভূমি পৃথিবী, যার বিশালত্ব কল্পনা করাও অনেক দুরূহ নয় কি? তাহলে রাতের আকাশের অগণিত তারকা ও ছায়াপথ?
মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কিত বিজ্ঞানের সর্বশেষ চিত্রঃ
আমাদের সূর্য একটি অতি সাধারণ তারকা। এর আকার তারকাগুলোর গড় আকারের মতোই। আমাদের বাসভূমির তারকা সূর্যের ব্যাস ১৪ লাখ কিলোমিটার। এর অর্থ হলো ১০৯টি পৃথিবী সূর্যের পৃষ্ঠে সাজিয়ে রাখা যায়। এটি এত বড় যে, ১৩ লাখ পৃথিবী এর মধ্যে ভরে রাখা যায়। আমাদের সৌরগ্রহগুলো সূর্যের চতুর্দিকে চাকতির মতো জায়গাজুড়ে আছে, যার দূরত্ব সূর্য থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন কিলোমিটার। একটি তারকার বর্ণনা যদি এমন হয়, সে ক্ষেত্রে মহাবিশ্বে তারকার সংখ্যা কত? বাস্তবে বিশাল সংখ্যার তারকা নিয়ে একটি ছায়াপথ। তাহলে মহাবিশ্বে তারকা ও ছায়াপথ আসলে কয়টি? Kornreich মহাবিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথ ধরে একটি মোটামুটি হিসাব বের করেছেন ছায়াপথের ১০ হাজার কোটি তারকার সাথে এই সংখ্যা গুণ করলে হয় ১০০ অকটিলিয়ন (octillion) তারকা। তার মানে দাঁড়ায়, এক-এর সাথে ২৯টি শূন্য। Kornreich জোর দিয়ে বলেন, এটা সাধারণ হিসাব, তবে গভীর পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আরো বেশি। ১৩ অক্টোবর ২০১৬, নাসা থেকে পাওয়া তথ্য হচ্ছে, দুই ট্রিলিয়ন ছায়াপথ আছে মাত্র ১০ শতাংশ মহাবিশ্বের মধ্যে; কিন্তু ছায়াপথগুলোর ৯০ শতাংশের খোঁজ এখনো বাকি। ছায়াপথ হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম, যেখানে মিলিয়ন থেকে বিলিয়নসংখ্যক তারা মাধ্যাকর্ষণের টানে একসাথে আটকে থাকে।গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ‘অদৃশ্যমান’ ছায়াপথগুলোকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। কেননা, এসব ছায়াপথ টেলিস্কোপের আওতায় আসে না। সেখান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, মানুষের ধারণারও বাইরে রয়ে গেছে আরো লাখ লাখ ছায়াপথ। (সূত্র:গার্ডিয়ান) এর অর্থ দাঁড়ায়, মহাবিশ্বে ২০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথও ছাড়িয়ে যেতে পারে! আবার দেখা যায়, সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের চেয়ে ৫০০ গুণ শুধু বড় নয়, সেই সাথে এক লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল, তার ভর ৩০ লাখ সূর্যের সমান হয়ে থাকে। যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে তারকা গণনা করেন, সেক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে। ছায়াপথগুলো মহাকাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না থেকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে একে অপর থেকে বহু দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে। সব ছায়াপথ এক করলে তারা মহাশূন্যের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ স্থান দখল করবে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী পর্যন্ত এর আওতার অনেক বাইরে।
ছায়াপথ কত বড়?
এত বড় যে, বড় ধরনের ছায়াপথের আড়াআড়ি দূরত্ব ১০ লাখ আলোকবর্ষেরও বেশি হবে {এক বছরে প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে যে দূরত্ব অতিক্রম করা যায়, সেটি হলো এক আলোকবর্ষ=৯.৪ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার।}আমরা এমন একটি ছায়াপথে থাকি, যেটা আড়াআড়ি মাপে প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ।আমাদের ছায়াপথটি ধীর গতিতে ঘূর্ণায়মান। এর সর্পিল বাহুগুলোয় অবস্থিত তারকাগুলো প্রায় কয়েকশ’ (১০ লাখে এক মিলিয়ন) মিলিয়ন বছরে একবার করে কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। সবচেয়ে ছোট ছায়াপথের নাম ডর্ফ, যার প্রশস্থতা কয়েক হাজার আলোকবর্ষেরদূরত্বের।অ্যান্ড্রোমেডা ছায়াপথটির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব হবে দুই লাখ ৫০ হাজার আলোকবর্ষ। মজার বিষয় হচ্ছে, এই মুহূর্তে মহাবিশ্বের দিকে তাকালে দূর অতীতের মহাবিশ্বকে আমরা আসলে কিন্তু দেখতে পাবো, কেন না এই সময়ে দূর তারকা ছায়াপথ থেকে আলো এসে কেবল আমাদের কাছে পৌঁছেছে। যে কোয়াসারগুলো এখন আমরা দেখছি, সেই আলো আমাদের কাছে পৌঁছতে শত শত কোটি বছর লেগে গেছে। আমাদের নিকটতম তারকা Proxima Centauri থেকে আলো আসতে লাগবে ৪.৩ বর্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধিক বিক্রীত ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়ের বই অ্যা হিস্ট্রি অব গড বইটিতে বর্ণিত হয়েছে ‘আল কুরআনে সব সময়ই বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আল্লাহর নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্য উদঘাটনের জন্য। আর এ কারণে ইসলামের অনুসারীরা যুক্তি ও কারণকে এড়িয়ে না গিয়ে গভীর মনোযোগ এবং বিশেষ কৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ করছে। এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পরে দেখা যায়, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারাল সায়েন্স) মুসলমানদের এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে তোলার, যা কখনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ বা সংঘর্ষ ঘটায়নি, খ্রিষ্টান ধর্মের ক্ষেত্রে যেটা দেখা গেছে। কাজেই মহাবিশ্বের সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ ও রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমেই শুধু আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া ও তার নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে। ঈমান বাড়ানোর পথ বা উপায় হলো সৃষ্টি রহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা। আমরা ক'জন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির খবর রাখিঃ -
আরবিতে‘জুমলাহ’অর্থবাক্যহলেও দুনিয়ার সব মুসলমান কুরআন পাকের বাক্যকে বাক্য (জুমলাহ) না বলে আয়াত বলে থাকে। আসলে আয়াত অর্থ নিদর্শন।যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধিক বিক্রীত বই হচ্ছে,ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়ের ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’। এতে বর্ণিত হয়েছে,‘কুরআন পাকে সব সময়ই বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আল্লাহ পাকের নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্য উদঘাটনের বিষয়কে আর এ কারণেই ইসলামের অনুসারীরা যুক্তি ও কারণকে এড়িয়ে না গিয়ে গভীর মনোযোগ এবং সবিশেষ কৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ করছেআর এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পরে দেখা যায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারাল সায়েন্স) মুসলমানদের এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, যা কখনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ বা সংঘর্ষ ঘটায়নি।অথচ খ্রিষ্টান ধর্মে সেটা দেখা গেছে।’
হাদিস শরিফে আছে ‘সৃষ্টির রহস্য নিয়ে কিছু সময় চিন্তাভাবনা করা, সারা রাত নফল এবাদত থেকেও উত্তম।’ মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ভাষায় ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরাভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়, বিজ্ঞানের সমাগত চূূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে; কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্তা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়; কিন্তু তাঁকে কল্পনা করা যায় না।’ যে ছায়াপথটি যত দূরে অবস্থিত, তার দূরাপসরণের গতিও তত বেশি। প্রতিনিয়ত মহাবিশ্ব কত বিস্তৃতি লাভ করছে। আবার যেহেতু সব ছায়াপথ মহাকাশের ১০ লাখ ভাগের মাত্র এক ভাগ জায়গা দখল করে আছে, সে ক্ষেত্রে ১০ পৃথিবীর সমান নিম্নস্তরের জান্নাত হওয়াটা একেবারে সাধারণ ঘটনা। ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত।'
লেখক : সাবেক পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়