Tuesday, November 26, 2024

 19নভেম্বর 2020 সালের মূল্যায়ন ফেসবুকে; এখন কোন পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় কি,?:::::::::*&*

জান্নাত লাভের নির্ভেজাল প্রকৃত দেশ ও একমাত্র  সরল দল আসলেই   কোনটি?                       

বর্তমানে  ধারাবাহিকভাবে  ১৭৯ দেশের  দুর্নীতির   র‍্যংস- সবচেয়ে কম দুর্নীতিপরায়ণ দেশ  থেকে উপরে যে সব দেশঃ   নিউজিল্যান্ড- ১..... ইসরাইল -৩৫...... সৌদিআরব-৫১ .....    বাংলাদেশ১৪৬ ... .ইরান-১৪৬ ..................

2023 সালের রিপোর্টে ইসরাইল 33 আর সৌদি আরব 53 এবং বা লাদেশ149---- ইরান ও 149 ( এই দু দেশ সমানে সমান)এই হচ্ছে আজকের মুসলিম বিশ্বে ইসলামের  পরিস্কার  চিত্র।


.

https://www.transparency.org/en/cpi/2020/index/nzl


  আজকে সবচেয়ে বড় প্রশ্নঃ  প্রচলিত ইবাদত সংস্কৃতিতে  দুর্নীতি চর্চায় কেন বিদ্যমান  শুভঙ্করের ফাঁকি! বর্তমান বিশ্বে    ক'জন  মুসলিম  বিষয়টিতে  সত্যি সত্যি  একদম  সজাগ/সচেতন?


            মুসলিম সমাজে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ধাঁধাঃ জান্নাত লাভের শর্ত মিটাতে নামাজ,রোজার মত প্রচলিত সব ইবাদতকে কোরআন পাকে সরাসরি একেবারে না রাখার কারন বিষয়টি মুসলিম সমাজে বলতে গেলে  সম্পূর্ণই  উপেক্ষিত/ অনুপস্থিত/ অবহেলিত।কেন?

একই  সাথে সমাজে প্রচলিত  জোরালো উন্মাদনাঃ সমগ্র জীবনভর  সৎকর্মশীল  হবার সাধনা প্রায় একেবারেই  ছেড়ে দিয়ে অনায়াসে কত বেশি ভুরি ভুরি পাহাড় সম উচ্চতার  সওয়াব অর্জন করা যায় সে জন্যই  নিরলস অর্থহীন সাধনা/ প্রতিযোগিতা। [উদাহ্ রনঃ না বুঝে অসংখ্যবার  কোরআন খতম, কোটি কোটি সওয়াব লাভের প্রচলিত খতমে তারাবী , অর্থ না জেনে /বুঝে তোতা পাখির মত সব জিকির -ইবাদত ইত্যাদি।]

ইমাম হাসান আল বসরী (৬৪২-৭২৮ খৃঃ) বলেনঃ 'কুরআনকে নাযিল করা হয়েছে এর নির্দেশনা বলীর ভিত্তিতে কাজ করার জন্য কিন্ত তা না করে তারা এর {আবৃতিকে কাজ} হিসাবে ধরে নিয়েছে।'


বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে বড় এবং মারাত্মক ভুল ধারনা যা অবশ্যই মুসলিম দেশ/ সমাজকে বিশেষভাবে প্রভাবিত এবং গভীরভাবে    আলোড়িত করে চালিত করছেঃ জান্নাত লাভের জন্য ঈমান সেই সাথে নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাতই সর্বসাকুল্যে যথেষ্ট, একদম যেন সবই। যদিও এই দাবির সমর্থনে একটি আয়াতও কিন্ত  নেই/খুজে পাওয়া যাবেনা  তথাপিও  এই প্রচলিত ভ্রান্ত বিশ্বাস  নিয়ে  বলতে গেলে কারও কোন মাথা ব্যাথা পর্যন্ত  ময়দানে একেবারেই  দেখা যায়না !        সাধারন গন মানুষের  অজান্তে সব সময় যে ভ্রান্ত ধারনা ও বিশ্বাস মনের   অত্যন্ত গভীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে  কাজ করে থাকেঃ  কোন রকম ভাবে      জান্নাত পাবার  জন্য   ইসলাম ধর্মে যেন এর বাইরে  অতিরিক্ত বিশেষ কিছুর ই  আর দরকার নেই/শরিয়তে  আর কিছু একদম রাখাই হয়নি।কার্যতঃ  দুনিয়ার সব মুসলমানের আপাত মারাত্মক এই  ভ্রান্ত দৃঢ় বিশ্বাসই তাদেরকে     সামগ্রিকভাবে  ভীষণভাবে বিপথগামী করে বিশ্বে অধিকতর দুর্নীতিপরায়ণ  দেশ/জাতি/ ধর্মের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেঃ  'কালেমা ,নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত এই পাচ  কাজে  ফাঁকি না দিলে জান্নাতে সে অনায়াসে হেলে দুলে  যেতে পারবেই আর  জান্নাত তার জন্য যেন অবধারিত।'জান্নাত যেন হবে তার ছেলের হাতের মোয়া!'

আসলে বাস্তবে কিন্ত জান্নাত লাভের সব আয়াতেই সোজা সুজি ২ টি শর্ত পালন অপরিহার্য করা হয়েছে যেথায় নামাজ-রোজার মত প্রচলিত এবাদতের প্রত্যক্ষভাবে একেবারে উল্লেখই কিন্ত নাই। আমরা পর্যালোচনা  করবঃ কেন উল্লেখ নাই?                                            জান্নাতে  যাবার জন্য মাত্র দুটি শর্ত রাখা হয়েছে  যা অবশ্য অবশ্যই পুরন করতে হবে অন্যথায়  পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ জাহান্নামঃ

১) ঈমান

২) সৎকর্মশীল জীবন।

*#*@*  সেক্ষেত্রে অবশ্য স্বভাবতই প্রশ্ন আসেঃ সারা দুনিয়ার মুসলিম সমাজে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত নিয়ে তাহলে এত কঠোরতা এবং বাড়াবাড়ি কেন করা হয় যদি এ গুলো জান্নাত লাভের শর্তের মধ্যে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত্ নাই থাকে বা করা না হয়ে থাকে? সারাজীবনভর কলেমা,নামজ,রোজা, হজ্ব,জাকাত এই সব কাজ যথাযথভাবে করেও জান্নাতের টিকিট যদি কপালে নাই জোটে তবে জান্নাত লাভের শর্ত পুরনের  সবচেয়ে মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ একেবারে পরিহার করে এত ঘটা করে জগতের মুসলিম জাতি এসবের   অহেতুক সাধনা    কেন করে চলছে তো চলছেই?                                   

        

       মুলত কালেমা,নামাজ,রোজা, হজ্ব ও জাকাত কে কেবলমাত্র  ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ/খুঁটির সাথে তুলনা/কল্পনা  করা হয়েছে,তাত্ত্বিকভাবে এর বেশি কিছু নয়। খুঁটি ছাড়া যেমন ঘরের স্থায়িত্ব/অস্তিত্ব ধারনা করা সম্ভবই  নয় তেমনি এই পাচ স্তম্ভ বাস্তবে ইসলামকে মজবুত করে দাড় করাতে কেবল ভুমিকা রাখে মাত্র, এর বেশি কিছু নয়। কেবল মাত্র শুধু খাম্বা দিয়েই বা  কোন খাম্বা ছাড়াই  ঘর তৈরি আদৌ সম্ভব নয়  সেই সাথে অবশ্যই  প্রয়োজন ছাদ,দরজা,জানালা, টয়লেট, রুম ইত্যাদি অনেক কিছুরই। তেমনি ইসলামের পাঁচ খুঁটিই  মুলত কক্ষনো  শেষ কথা নয় সেই সাথে জরুরী  সারাজীবন ভর ছালিহাত/ সৎচরিত্র যা ব্যক্তি জীবনে ইসলামকে পূর্ণতা দিতে মূখ্য ভুমিকা রাখে। কিন্ত গভীর লজ্জাজনক সত্যঃ দুর্ভাগ্যবশত   বাস্তবতা হচ্ছে দুনিয়ার প্রায় সব মুসলিমজাতি বলতে গেলে  কেবলমাত্র কার্যত পাচ স্তম্ভকে ঘর ধরে নিয়ে / বানিয়ে  সেই কল্পিত  ঘর  নামক শর্ট কাট সংক্ষিপ্ত ইসলামের ঘরে  বসবাস করে আত্মতুষ্টি  লাভ করছে।  পরোক্ষভাবে হলেও সত্য-বর্তমানে সকলের অজান্তে মুসলিমদের ব্যবহারিক জীবনে কেবলমাত্র  এই পাচ স্তম্ভের অনুশীলনের  না্ম  আসলে  কিন্ত দাঁড়িয়েছে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী  শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম।

      প্রকৃতপক্ষে কিন্ত ইসলামে নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে এসব সঠিক/ যথারিতি / নিষ্ঠার সাথে পালন করলে একজন ব্যক্তি সারা জীবন ধরে প্রাত্যহিক জীবনে অবশ্য অবশ্যই সৎকর্মশীল হয়ে গড়ে  উঠবে এবং সে এ সবের   লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে  অবহেলা না করলে তার জীবনে নিঃসন্দেহে এর কোন বিচ্যুতি/ ব্যাতিক্রম হবার একেবারেই সম্ভাবনা বা সুযোগ  নেই এবং কখনো হতে পারেনা।  তার পরেও দুনিয়ায় মুসলিম জাতির কপালে  কেন এই করুন অশনি সঙ্কেত , কেন এমন অঘটন অবিরতই মুসলিম জগতে ঘটেই চলছে?                                                                                 [ 1* যদিও ইসলামের মত স্বভাবত  অন্য সব  ধর্মেও  ধর্মাচরনের  আসল লক্ষ্য  হচ্ছেপ্রাত্যহিক জীবনে অবশ্যই সততার সাথে জীবন  গঠন ও পরিচালনা  করা।


2*লেখা পড়া তথা শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য কিন্ত জ্ঞান অর্জন্ আর সেই অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো।জ্ঞান যদি অর্জিত না হয় তা হলে সেটি কখনও শিক্ষা  অর্জন  হতে পারেনা।


3* তেমনি যে কোনো ধরনের খাদ্য গ্রহণের লক্ষ্য হচ্ছে দেহকে প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টি সরবরাহ করা। যে সব খাদ্য শক্তি ও পুষ্টি যোগাতে পারেনা তা খাদ্যের  অন্তর্ভুক্ত হতে  পরেনা।

******একই যুক্তিতেঃ নামাজ রোজা পালন করলো কিন্ত  বাস্তবে প্রাত্যহিক   জীবনে এর কোনোই  সুফল  দেখা গেলোনা অর্থাৎ সারা জীবন সে 'অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত' থেকে সৎকর্মশীল হতে পারলোনা ,তার নামজ রোজা  একেবারেই  প্রশ্নবিদ্ধ এবং শুভঙ্করের ফাঁকি নয় কি?]

      কোরআন পাকে জান্নাত লাভের সব আয়াতে বিশ্বাসের সাথে সৎকর্ম শীল হওয়াটা্ অত্যাবশ্যকীয় ধরা হয়েছে। দিনের ২৪ ঘণ্টার আংশিক কিছু সময় সৎ থেকে অন্য/বাকি সময়ে অসৎ থাকলে সৎকর্মশীল হিসেবে বাস্তবে পরিচয় দেবার কোনো সুযোগ একেবারেই কিন্ত নেই। আসলে  দিনের ২৪ ঘণ্টার  সব কাজে / সব মুহূর্তে সৎ কর্মশীল হতে হবে/ হবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবেই।। শেষ বিচারের দিন খুটিনাটি সব কিছুই দিবালোকের মত ফাঁস হয়ে যাবে।তখন বাঁচার কিন্ত আর কোনো উপায়ই  অবশিষ্ট থাকবেনা।           

        দৃশ্যত বাহ্যিক দৃষ্টিতে প্রচলিত অর্থে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে- দুনিয়ার বাকি সব ধর্ম, দেশ, জাতি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সৎ হবার জোড় সবক দেয়, যে   কারনে তারা তুলনামুলক ভাবে মুসলিম দেশ  থেকে  কম দুর্নীতিপরায়ণ।  অপরদিকে অভ্যাস/প্রথা গত ভাবে      মুসলিম জাতি  প্রচলিত অর্থে  চরিত্রবান বলতে সারা জীবনভর প্রতিটি  কাজেই  সততা না বুঝিয়ে কেবলমাত্র বিশেষভাবে যৌন জীবনে সৎ থাকার গুরুত্ব  অত্যাধিক দিয়ে থাকে।  ফলে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়ঃ ব্যাবহারিক জীবনে  দৈনন্দিন/প্রাত্যহিক  প্রতিটি কাজে  সততাকে   সামাজিক  জীবন থেকে বাদ দিয়ে সমাজ জীবনকে   অনায়াসে  কলুষিত করার সুজোগ সৃষ্টি হয়েছে  মুসলিম দুনিয়ায়।সম্ভবত সে কারনে মুসলিম দেশ/জাতি অন্যদের থেকে দুর্নীতিতে বর্তমান জগতে  সগৈরবে  একধাপ এগিয়ে থাকলেও জাতি হসাবে  মোটেও কিন্ত একটুও সজাগ বা সচেতন নয় - কেন বিশ্বে  তাদের ধর্মের অনুসারীদের এই অধঃপতন ও  পশ্চাৎপদতা অন্যদের থেকে ?                     

    মুসলিম দুনিয়ায়  বাস্তবে  ধর্মীয় শিক্ষা, ওয়াজ - নসিহত,সমাবেশ,  দ্বীনের কার্যক্রমে  সচরাচর  সার্বিকভাবে  কখনও কিন্ত অতি জোর দিয়ে ফলাও করে গুরুত্ব সহকারে বলিষ্ঠ কণ্ঠে  প্রচারের সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি  কথাটি বলার- ' জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে সৎকর্ম। আর সব গুণ থাকলেও অসৎকর্মশীল ব্যক্তি জান্নাতের সীমানার ধারে্র কাছেও কিন্ত কক্ষনো ঘেষতে পারবে না।'

           ছালিহাত শব্দটি কোরআনে ৬৪ বার ব্যাবহার করা হয়েছে জান্নাত পাবার অন্যতম শর্ত হিসাবে, ঈমানের সাথে এটি না থাকলে জান্নাতে যায়গা  তো দুরের কথা ঘ্রাণও কিন্ত  জুটবেনা।  একমাত্র  সংশ্লিষ্ট  বিষয়টি জথাযত গুরুত্ব না দেওয়া ও ব্যাপক প্রচারের অভাবে মুসলিম জাতি সামগ্রিকভাবে   সৎকর্মশীল হবার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে সম্পূর্ণ উদাসিন, যার ভয়াবহ ফল সংক্রমিত হয়েছে জাতি সত্তায়।এছাড়া  সৎকর্মশীল না হলে ধর্ম কর্ম করে কোনই লাভ নেই,  জান্নাত তো জুটবেনাইনা  উপরন্ত  জাহান্নামে যাওয়া ছাড়া আর কোন  উপায়ও  নাইঃ এই  সত্যের আওয়াজ  বজ্রকন্ঠে চারিদিকে  ধ্বনিত ও প্রচারিত হলে এই জাতির  অভ্যন্তরীণ  দৈনন্দিন  পরিবেশেও  পরিবর্তন সংগঠিত হয়ে অপর বিজাতীয়  জাতি,ধর্ম ও দেশের  মতই সৎকর্মশীল মানব  তৈরি হতে দেখা যেত।


             আসলে কিন্ত নামাজি, ঈমানদার, দ্বীনদার হওয়ার মূল কথা হচ্ছে নির্ভেজাল   সৎকর্মশীল হওয়া। বাহ্যিকভাবে যত বড় বুজর্গ, পীর, মস্তবড় দ্বীনদার হোক না কেন একমাত্র ঈমানদার সৎকর্মশীলরাই জান্নাতে যায়গা পাবে।জান্না্ত পেতে হলে্ অবশ্য অবশ্যই কেবল আংশিক নয় বরং সারাজীবন ফুলটাইমই সৎকর্মশীল হতে হবে, শেষ বিচারের মাঠে সে ক্ষেত্রে কোনো রকম ছাড় কিন্ত নেই।

'নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।'-সূরা আনকাবূত (২৯:৪৫)

"রোজা হলো (পাপাচার থেকে রক্ষার) ঢাল স্বরূপ।........ " (বুখারী-১৮৯৪)

"যে ব্যক্তি মিথ্যা পরিত্যাগ করলো না, আল্লাহ তা'য়ালা তার পানাহার ত্যাগ কবুল করেন না" (বুখারী-১৯০৩)

অসৎ ব্যাক্তির ইবাদত মূল্যহীন আর জান্নাত লাভে কোনো কাজেই আসবেনা। জান্নাতের জন্য সমগ্র জীবন  ঈমানের সাথে সৎকাজ করার দৃঢ় মানসিকতা অবশ্য থাকতেই হবে যেটা কোরআন পাকে বিভিন্ন আয়াতে তাগিদ করা হয়েছে।দৃশ্যত এ বিষয়ে কোন  রকমই ছাড় কিন্ত  রাখা হয়নি।


আসমান উচু পরিমাণ নেকী অর্জন করেও প্রকৃত সঠিক কথা হচ্ছে, সারা জীবন যাদের হক নষ্ট করা হয়েছে নিজের উপার্জিত  মূলধনের সব নেকী দিয়ে তাদের সাথে বিনিময় করতে হবে। আর এভাবে পরিশোধ করতে করতে আগেই যদি নেকী সব শেষ হয়ে যায় সেক্ষত্রে প্রাপকের গুনাহ নিজের কাঁধে নিয়ে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনে জ্বলতে হবে।

হাদিসে এসেছেঃবিড়ালের সাথে সঠিক আচরণ না করার জন্য জনৈক দ্বীনদার মহিলাকে পর্যন্ত জাহান্নামে   যেতে হয়।                                                                    

               আর সৃষ্টির সেরা যে কোন বনি আদমের সাথে  দুর্নীতির ঘোমটার আড়ালে  অযাচিত ব্যাবহার বা আচরণ করা হলে তার পরিণাম কি হতে পারে সহজে অনুমেয়, সে বিষয়টি  দুনিয়ার মুসলিমগন গুরুত্ব সহকারে   কখন ও   একটিবারও  ভেবে দেখেছে/ প্রচার করেছে কি?  তাহলে কি  দুর্নীতিপরায়ণ দেশ/ জাতির তকমা পেত?

রাসুলুল্লাহ(দঃ)কে তার সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল- গীবত কি জিনার চেয়েও মারাত্মক? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, কারণ কোনো ব্যক্তি জিনার পর (বিশুদ্ধ) তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে, তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না। (মুসলিম)                          

     আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত , হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে?  সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল (সঃ) ভালো জানেন।         

        তিনি বলেন, তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহ (সঃ) বলেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গীবত করলে আর তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছো।(মুসলিম)                         

        ইসলামে অপবাদ কারীর শাস্তি কিন্ত অত্যন্ত ভয়াবহ কঠোর। আবার সার্বিকভাবে দেখলে কিন্ত গীবতকে বলা যায় অনেক দুরথেকে  পরোক্ষ ভাবে গুনাহ  করা। আর  তার থেকেই  যদি  কোন পরিত্রাণ না  জোটে  তবে ভেবে দেখা জরুরী, মানুষের সাথে প্রত্যক্ষভাবে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির সাজা কত কঠিন/ ভয়াবহ হবে?

      

       নবী (দঃ) বলেছেন, "আসল সর্বহারা আর রিক্ত মানুষ হচ্ছে তারা, কেয়ামতের দিন রোজা, নামাজ, অনেক হজ্ব, দান খয়রাত নিয়ে হাজির হবে কিন্তু দুর্নীতি করে সম্পদ দখল, অন্যদের হক না দেয়া,মানুষের উপর অত্যাচারের কারণে রিক্ত হস্তে জাহান্নামে যাবে।"

    বাস্তবতা হচ্ছেঃ সত্যিই পরিতাপের বিষয়,মুসলিম দেশ ও জাতি বর্তমান বিশ্বে অপর সব দেশ ও জাতি থেকে দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে। সব দেশ গুলোর দুর্নীতির সুচক এটা প্রমান করে চোখে আঙুল দিয়ে মুসলিম দেশ ও জাতিকে দেখিয়ে দিচ্ছে।

বিশ্বে সবেচেয়ে বেশি দুর্নীতি হওয়া দেশের তালিকায় টানা পাঁচ বছর শীর্ষ অবস্থানে ছিল সমগ্র বিশ্বে মসজিদের দেশ হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ।

   এবারের সিপিআই অনুযায়ী ৬৮ স্কোর এবং সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী গতবারের মতই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। এর পরের অবস্থানে ৪১ স্কোর নিয়ে ৮০তম স্থানে রয়েছে ভারত। এরপরে শ্রীলঙ্কা ৩৮ স্কোর নিয়ে ৯৩ তম অবস্থানে রয়েছে। ৩২ স্কোর পেয়ে ১২০তম অবস্থানে রয়েছে ইসলামী রিপাবলিক পাকিস্তান। অন্যদিকে ২৯ স্কোর পেয়ে ১৩০তম অবস্থানে মালদ্বীপ। বাংলা দেশের অবস্থান?

এরপর ২০১৮ এর সমান স্কোর ২৬ পয়েন্ট নিয়ে ১৪৬ তম অবস্থানে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের পরে ১৬ স্কোর পেয়ে সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী ১৭৩ তম অবস্থানে রয়েছে তালেবান স্বর্গ ভুমি আজকের  আফগানিস্তান।                                                                                                             অর্থাৎ সর্বনিম্ন থেকে গণনা অনুযায়ী আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশ সিপিআই সূচক অনুয়ায়ী ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর মধ্যে সপ্তমবারের মত এবারওদ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে।  এই হচ্ছে মসজিদের দেশ তাবলীগের মারকাজ  বাংলাদেশের সার্বিক গৌরবময় চিত্র। ইসলামের কেন্দ্র ভূমি  সৌদি আরবের অবস্থান ৫১।  আর  ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল ৩৫। তার অর্থ, স্পষ্টতই দুর্নীতিতে ইসরাইল থেকে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে সৌদি আরব।বাস্তবতা হচ্ছেঃ ইহুদি, খ্রিষ্টান সব ধর্মের কাছেই মুসলিম দেশ, জাতি ও ধর্মের শোচনীয় গৈরবময়  নতি স্বীকার।

     অপরদিকে  মাত্র {১} হচ্ছে  নিউজল্যান্ড, ডেণ্ মার্ক, ফিনল্যান্ড এর মত দেশগুলো।  

                            এ ক্ষেত্রে কোরআনের স্পষ্ট ফয়সালা কি?

আসলে   খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জান্নাত লাভের প্রায় সব আয়াতেই স্পষ্টত সরাসরি উল্লেখিত হয়েছে 'ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে ' কথাটি। ঈমান আনবে কিন্ত সেই সাথে দুর্নীতি পরায়ণ  জীবন  লালন  করবে সেই ইমানদারের জন্য জান্নাত নেই। সে জন্য জান্নাত লাভের সব আয়াতেই ঈমানের সাথে সৎকর্মশীল হবার  শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

১] ' .....কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও।.........'                      

  [ সুরা বাকারা ২:১৪৮ ]

২]'সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে .............'              [সূরা বাকারা আয়াত ২ঃ১৭৭]

৩] 'নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে ............. তারাই বেহেশতবাসী, সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে।' [ সুরা হুদ ১১:২৩ ]

৪] আর যারা তাঁর কাছে আসে এমন ঈমানদার হয়ে যায় সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে সুউচ্চ মর্তবা।[ সুরা ত্বা-হা ২০:৭]

যে ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, সে জুলুম ও ক্ষতির আশঙ্কা করবে না।                           [ সুরা ত্বা-হা ২০:১১২]

৫]যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:১৪]

৬] সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে আছে পাপ মার্জনা এবং সম্মানজনক রুযী।[সুরা হাজ্জ্ব ২২:৫০ ]

৭] তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ কে খুব স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। নিপীড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ। [ সুরা শু’য়ারা ২৬:২২৭ ]

৮] তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে।    [ সুরা কাসাস ২৮:৬৭ ]

৯] আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিল, তার বলল, ধিক তোমাদেরকে, যারা ঈমানদার এবং সৎকর্মী, তাদের জন্যে আল্লাহর দেয়া সওয়াবই উৎকৃষ্ট। এটা তারাই পায়, যারা সবরকারী।[ সুরা কাসাস ২৮:৮০ ]

১০] যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তদপেক্ষা উত্তম ফল পাবে এবং যে মন্দ কর্ম নিয়ে আসবে, এরূপ মন্দ কর্মীরা সে মন্দ কর্ম পরিমানেই প্রতিফল পাবে।                        [সুরা কাসাস ২৮:৮৪ ]

১১] আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।                             [ সুরা আনকাবুত ২৯:৭ ]

১২] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব।         [ সুরা আনকাবুত ২৯:৯ ]

১৩] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদে স্থান দেব, যার তলদেশে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কত উত্তম পুরস্কার কর্মীদের।[ সুরা আনকাবুত ২৯:৫৮ ]

১৪] যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে;            [ সুরা রূম ৩০:১৫ ]

১৫] যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে যাতে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে প্রতিদান দেন। নিশ্চয় তিনি কাফেরদের ভালবাসেন না। [সুরা রূম ৩০:৪৫ ]

১৬] যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত।  [ সুরা লুকমান ৩১:৮ ]

১৭] যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে।                                [ সুরা লুকমান ৩১:২২ ]

১৮] যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত।[সুরা সাজদা৩২:১৯]

১৯] তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মান জনক রিযিক প্রস্তুত রেখেছি।   [সুরা আহযাব ৩৩:৩১]

২০] তিনি পরিণামে যারা মুমিন ও সৎকর্ম পরায়ণ, তাদেরকে প্রতিদান দেবেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [সুরা সা’বা ৩৪:৪ ]

২১] তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করবে না। তবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তারা তাদের কর্মের বহুগুণ প্রতিদান পাবে এবং তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।  [সুরা সা’বা ৩৪:৩৭ ]

২২] আমি এভাবেই সৎকর্ম পরায়নদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।                        

   [সুরা সাফফাত ৩৭:৮০]

২৩] এভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।[সুরা সাফফা৩৭:১২১]

২৪] যে মন্দ কর্ম করে, সে কেবল তার অনুরূপ প্রতিফল পাবে, আর যে, পুরুষ অথবা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তথায় তাদেরকে বে-হিসাব রিযিক দেয়া হবে।  [সুরা মু’মিন ৪০:৪০]

২৫] অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়, আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং কুকর্মী। তোমরা অল্পই অনুধাবন করে থাক। [সুরা মু’মিন ৪০:৫৮]

২৬] নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।      [সুরা হা-মীম৪১:৮]

২৭] যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ,তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?  [সুরা হা-মীম ৪১:৩৩]

২৮] যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না। [সুরা হা-মীম ৪১:৪৬]

২৯]যে সৎকাজ করছে, সে নিজের কল্যাণার্থেই তা করছে, আর যে অসৎকাজ করছে, তা তার উপরই বর্তাবে।অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। [সুরা যাসিয়া ৪৫:১৫]

৩০] যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম।                [সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:১২]

৩১]কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।      [সুরা ইনশিকাক ৮৪:২৫]

৩২] যারা ঈমান আনেওসৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নির্ঝরিণীসমূহ। এটাই মহাসাফল্য।     [সুরা বুরূজ ৮৫:১১]

৩৩] তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।           [সুরা তীন ৯৫ঃ৬]

৩৪] ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।’ ‘তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর।’                                   [সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮: ৭-৮]

ধর্মীয় বিধি নিষেধ মানা যার যার ব্যক্তিগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং এটি আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার বিষয়। কিন্তু সামাজিক বিধি নিষেধ মেনে চলা একজন বান্দার সাথে অন্য বান্দার মধ্যকার বিষয়। অন্য কথায় ইসলামিক নীতিমালা যদি মুসলমানরা নিজেদের জীবনে ব্যবহারিক প্রয়োগ না করে, মুসলিম সমাজ দুর্নীতিতে ছেয়ে যাবে যার ভয়াবহ চিত্র মুসলিম দেশ গুলোতে।


লক্ষ, নিযুত, কোটি ছওয়াব পাবার ধান্ধায় যদি মুল এবাদত প্রক্রিয়া থেকে সৎকর্মশীল হওয়ার এবাদতকে ঝাটিয়ে বাদ রাখা হয় সে ক্ষেত্রে পরকালে কারও কপালে জান্নাত তো জুটবেইনা  বরং ইহকালে দুর্নীতিপরায়ণ দেশ ও জাতি হিসাবে  বিশ্বে পরিচিত হয়ে আজকের মত সুনাম কুড়াতে হবে!

আল্লাহ মুসলিম জাতি ও মুসলিম দেশ সমূহকে হেফাজত করে আমাদের  মুসলিম উম্মাহর সকলকে ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যেয়ে জান্নাত লাভের তৈফিক দিন। আমিন।

Tuesday, August 27, 2024

 নয়াদিগন্তের বিস্ময়কর কাণ্ড ?  


               নয়াদিগন্ত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক গ্যারি গিলমোরের গবেষণা মূলক একটি  লেখার নিচে আমার পূর্বের একটি লেখা যুক্ত করে সেটিও পড়ার জন্য অনুরোধ রেখেছে ! কেন?  


রহস্যটা পড়লেই ........। সাথে সাথে ঈমানও বাড়তে পারে শত  সহস্র গুন!~ যেন ম্যাজিক !


আসলে বিজ্ঞান সুপার কল্প কাহিনী  হার মেনে এখন যদি প্রকৃতিরই  বাস্তবতা হ্য়, নিঃসন্দেহে স্রষ্টার অপার ক্ষমতা বুঝতে এসব ঘটনা  খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, সে সাথে ঈমান শত সহস্রগুণ বাড়াতে ভুমিকা রাখবে।


                    ক> সমুদ্র তীরের বালুকণার  চেয়ে তারা  বেশি  


                     খ> সেকেন্ডে ৭০ মাইলের ও বেশি বেগে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।


নয়াদিগন্ত অন লাইনে ২৭ জুলাই ২০১৮, ১২:০৮  যে লেখাটি উপহার দিয়েছে।


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~


 ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক গ্যারি গিলমোরঃ


বেশিরভাগ ছায়াপথে আমাদের ছায়াপথের মতোই তারা থাকে। মহাবিশ্বের তারার মোট সংখ্যা পৃথিবীর বালুকণার চেয়ে বেশি’—এমন দাবি করেছেন একজন অ্যামেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

আশির দশকের নিজের জনপ্রিয় টিভি শো কসমস-এ তিনি এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু এটা কতটা সত্যি?

এটা কি আসলে গণনা করা সম্ভব?


আমরা এখন সেটাই মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করব :

                                           ছায়পথের সংখ্যা

অধ্যাপক গ্যারি গিলমোর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যিনি মহাবিশ্বে তারার সংখ্যা গণনা করছেন অনেক বছর যাবত।

যুক্তরাজ্যের চালানো প্রকল্প গাইয়া’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

এর মধ্যে রয়েছে একটি ইউরোপীয় মহাকাশযান, যেটি এখন আকাশের মানচিত্র তৈরির কাজ করছে।

আমাদের মহাবিশ্বে কত তারা আছে, তা গণনার জন্য গাইয়া দল এখন তাদের ডাটা ব্যবহার করে মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের একটি বড় ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেছে।

অধ্যাপক গিলমোর বলছেন, প্রতিটি তারার পরস্পরের থেকে দূরত্ব অনুযায়ী পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে দুইশো কোটির চেয়ে বড় তারা রয়েছে।

অর্থাৎ ইউরোপের অংশে যদি মোট তারার এক শতাংশ থাকে, তাহলে আমাদের ছায়াপথে হয়তো সব মিলে কুড়ি হাজার কোটি তারা আছে। কিন্তু এতো কেবল একটি ছায়াপথের হিসাব।

                                          সার্বজনীন চিত্র

সৌভাগ্যজনকভাবে, মহাবিশ্বে আমাদের ছায়াপথ একটি টিপিক্যাল বা সাধারণ ধরণের।

বেশিরভাগ ছায়াপথে আমাদের ছায়াপথের মতোই তারা থাকে।

অধ্যাপক গিলমোর বলছেন, সে কারণে আমরা একে গড় হিসাব তৈরির কাজে লাগাতে পারি।

অর্থাৎ যদি মোট ছায়াপথের সংখ্যা ধারণা করা যায়, তাহলে তারার সংখ্যা বের করা সম্ভব হবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য সেটা হয়তো বড় সমস্যা নয়।

মহাবিশ্বে যদি দশ হাজার ছায়াপথ থাকে, মনে রাখতে হবে একেকটিতে হয়তো কুড়ি হাজার করে তারা আছে।

                                  এবার সাগর তীরের অংক

শুরুতেই ধরে নিতে হবে, বিশ্বের সব সাগরের তীরে ঠিক কি পরিমাণ বালু থাকে।

এজন্য সমুদ্র পৃষ্ঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা পরিমাপ করতে হবে।

সেজন্য সাগরের তীরের হিসাব করলে হবে না, হিসাব করতে হবে উপকূলীয় এলাকার পরিমাপের।

এ নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারেন না তেমন, কারণ উপকূলীয় এলাকার মাপ বাড়ে কমে, স্থির থাকে না।

তারপরেও বিবিসি একজনের সঙ্গে কথা বলেছে যিনি একটি সংখ্যা জানিয়েছেন।

উপকূল নিয়ে গবেষণা করে এমন প্রতিষ্ঠান ডেল্টারসের গবেষক জেনাডি ডনসিটস বলছেন, পুরো পৃথিবীর উপকূলের পরিমাপ করা বিশাল দুঃসাধ্য এক কাজ।

ওপেন স্ট্রীটম্যাপের মতো ফ্রিম্যাপ ব্যবহার করে কম্পিউটার ডাটার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বরফাচ্ছন্ন এলাকাসহ উপকূলীয় এলাকার দৈর্ঘ্য ১১ লাখ কিলোমিটারের মতো।

যার মধ্যে তিন লাখ কিলোমিটার এলাকা বালুময় সৈকত।

এখন যদি তারার সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করতে হয়, তাহলে দেখা যাবে, মহাবিশ্বে তারার সংখ্যা ১০ সেক্সটিলিয়ন, যেখানে বালুকণার সংখ্যা হবে চার সেক্সটিলিয়ন।

তাহলে এটি ঠিকই যে মহাবিশ্বে বালুকণার চেয়ে তারার সংখ্যা বেশি। সূত্র : বিবিসি

                                                                                         আরো পড়ুন :

প্রসারণশীল মহাবিশ্ব

                                                                   মুহাম্মাদ আলী রেজা, ০২ অক্টোবর ২০১৬

                                  

মহাবিশ্ব প্রসারমাণ- এ আবিষ্কারটি বিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম বৌদ্ধিক বিপ্লবগুলোর অন্যতম। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা কি কখনো ভাবার সুযোগ পাই,  প্রতি সেকেন্ডে  ৭০ [৭৪.৩  যোগ অথবা বিয়োগ ২.১]  কিলোমিটারের চেয়ে বেশি   ও  প্রতি মেঘাপারসেকে (১  মেঘাপারসেক হচ্ছে প্রায়  ৩ মিলিয়ন আলোক বর্ষ)] ছায়াপথগুলো দুরাপসরণ করছে?


আসলে প্রত্যাশিত হিসাবের চেয়েও দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ধারণার চেয়ে ৫ থেকে ৯ শতাংশ দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে। ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর আগে ঘটা বিগব্যাঙ থেকে পাওয়া বিকিরণ পরিমাপ করে যে হিসাব বের করা হয়েছিল, তার সাথে মিলছে না বর্তমানে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার।

প্রসারণশীল মহাবিশ্বের এই অভিক্রিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার উপমার মাধ্যমে সহজেই উপলব্ধি করা যাবে। রাস্তায় চলন্ত একটি গাড়ি যখন কাছে এগিয়ে আসে তখন এর ইঞ্জিনের শব্দের তীব্রতা তীব্রতর হয় এবং গাড়িটি যখন কাছে এসে দূরে অপসারণ করে, তখন শব্দের তীব্রতা নিম্নতর হয়ে থাকে। আলোকের তরঙ্গের আচরণও একই রকম। আলোকের স্পন্দাঙ্ক খুব বেশি- সেকেন্ডে চার থেকে সাত লাখ মিলিয়ন। এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্পন্দাঙ্ক। আমাদের দৃষ্টিতে যা বিভিন্ন বর্ণ হিসেবে প্রতিভাত হয় সেগুলো হলো- আলোকের বিভিন্ন স্পন্দাঙ্ক। সর্বনিম্ন স্পন্দাঙ্ক দেখা যায় বর্ণালীর লালের দিকে। তারকা যদি আমাদের দিকে আসে তাহলে প্রতি সেকেন্ডে আমরা যে স্পন্দাঙ্ক পাব তা বেড়ে যাবে, যেমনটি শব্দ শ্রোতার দিকে এগিয়ে আসার সময় ঘটে থাকে। অনুরূপভাবে তারকা যদি আমাদের কাছ থেকে দূরে অপসারমাণ হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছে যে তরঙ্গগুলো পৌঁছাচ্ছে তার স্পন্দাঙ্ক হবে দ্রুততর। তারকার আলোর স্পন্দাঙ্ক মেপে এর লাল বিচ্যুতি হলে স্পষ্টত বোঝা যাবে, তারকাগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরাপসরণ করছে।

সূরা আয জারিয়ার ৪৭ আয়াতে নভোমণ্ডল প্রসারিত হচ্ছে উল্লিখিত হয়েছেঃ  ' নভোমণ্ডল নির্মাণ করেছি আমার  ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।'

এডউইন হাবল ১৯২৯ সালে প্রকাশ করেন যে, মহাবিশ্ব স্থিতাবস্থায় নেই। যে ছায়াপথটি যত দূরে অবস্থিত তার দূরাপসারণের গতিও তত বেশি। দেখা যায়- এক মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ২২ দশমিক ৪ কিলোমিটার বেগে এবং দুই মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ৪৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার বেগে দূরাপসরণ করছে। অবাক বিস্ময়ের সাথে ভাবার বিষয়, বাস্তবে প্রতিনিয়ত মহাবিশ্ব আমাদের থেকে কত দূরে বিস্তৃতি লাভ করছে!

আমরা ক’জন গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখেছি, প্রকৃত ঈমানের স্বাদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে হলে সর্বশেষ বিজ্ঞানের নভোমণ্ডল ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে ন্যূনতম একটি ধারণা একেবারে না থাকলেই নয়? প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক- ঈমানের সত্যিকার স্বাদ পাওয়ার জন্য এসব তথ্য জেনে কী হবে? মুজাদ্দেদ ইমান গাজ্জালি রহ: সেই মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ। বর্তমানে মহাকাশ বিজ্ঞানের যে বিকাশ হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে মধ্যযুগে এই বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা কোন পর্যায়ে ছিল, তা সহজেই অনুমেয়। সেই যুগে তার একটি উপমা এখানে তুলে ধরলে আমরা সকলেই একেবারে চমকে উঠব!

তিনি তার সময়ের এবং পরে সব কালের ঈমানদারদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন একটি উপমার মাধ্যমে, আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান সুদৃঢ় করার অতি সহজ একটি পথ। এটি হচ্ছে- ঈমানদারদের দৌড় শুধু মসজিদ নয়, বরং মহাকাশ বা মহাবিশ্ব সম্পর্কে যে ব্যক্তির কোনো ধারণাই নেই, তার ঈমানের স্বাদ বা স্তর হচ্ছে একজন Impotent  ব্যাক্তির মতো, যার কোনো অনুভূতিই নেই নর-নারীর দৈহিক সম্পর্কের আসল মজা সম্পর্কে। বাস্তব দুনিয়ায় সবচেয়ে মজাদার, অপার ফুর্তির কোনো কিছু থেকে থাকলে তা হচ্ছে একমাত্র এটি। তেমনি গাজ্জালি রহ:-এর মতে, প্রকৃত ঈমানের আসল স্বাদ বা তৃপ্তি পেতে প্রয়োজন এবং পাওয়ার সহজ পথ হচ্ছে আল্লাহ পাকের অপার রহস্য মহাবিশ্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া। ঈমানদারদের তাচ্ছিল্য করে প্রচলিত কথায় বলে- ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ’! কিন্তু আমরা ক’জন ওয়াকিবহাল, সে সময়ে সমরকন্দ, দামেস্ক, কায়রো আর করডোভায় প্রথম বড় বড় মানমন্দির গড়ে তুলে আরব মুসলমানেরা। মুসলিম জ্যোতিবেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন ,যে সব ১২ বছরের ওপরে দীর্ঘায়িত হয়েছিল। সে সময়ের মুসলিম বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞান কোন অবস্থানে পৌঁছেছিল তার বর্ণনা একটি ঘটনায় ফুটে ওঠে।

সন্ন্যাসী গারভাট (দ্বিতীয় সিলভেস্ট নামে তিনি ৯৯৯ সালে পোপ হন) যখন করডোভার মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে খ্রিষ্ট ধর্মাচরণে পুনরায় ফিরে এলেন তখন লোকে রটাল, তিনি নাকি সেখানে শয়তানের সাথে দহরম পর্যন্ত করে এসেছেন।

পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ স্থল। এ স্থলভাগে সাত শ’ কোটি মানুষ ছাড়াও রয়েছে কোটি কোটি জীবজন্তু, পশুপাখি, ক্ষেত-খামার, রাস্তাঘাট, পাহাড়-পর্বত, বিশাল বিশাল মরুদ্যান, বনজঙ্গল এবং  আরো কত কী। আর এরকম সবকিছু নিয়েই আমাদের আবাসভূমি পৃথিবী, যার বিশালত্ব কল্পনা করাও অনেক দুরূহ নয় কি? তাহলে রাতের আকাশের অগণিত তারকারাজি ও ছায়াপথ?

মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কিত বিজ্ঞানের সর্বশেষ খবরাখবর-

আমাদের সূর্য একটি অতি সাধারণ তারকা। এর আকার তারকাগুলোর গড় আকারের মতোই।

আমাদের বাসভূমির তারকা সূর্যের ব্যাস ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কিলোমিটার। এর অর্থ হলো ১০৯টি পৃথিবী সূর্যের পৃষ্ঠে সাজিয়ে রাখা যায়। এটি এত বড় যে, ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন পৃথিবী এর মধ্যে ভরে রাখা যায়। আমাদের সৌরগ্রহগুলো সূর্যের চতুর্দিকে চাকতির মতো জায়গাজুড়ে আছে, যার দূরত্ব সূর্য থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন কিলোমিটার। একটি তারকার বর্ণনা যদি এমন হয়, সে ক্ষেত্রে মহাবিশ্বে তারকার সংখ্যা কত? বাস্তবে বিশাল সংখ্যার তারকা নিয়ে একটি ছায়াপথ। তাহলে মহাবিশ্বে তারকা ও ছায়াপথ আসলে কয়টি?

Kornreich (কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের 'Ask an Astronomer'  এর  ফাউনডার) মহাবিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথ ধরে একটি রাফ হিসাব বের করেছেন- ছায়াপথের ১০০ বিলিয়ন তারকার সাথে এই সংখ্যা গুণ করলে হয় ১০০ অকটিলিয়ন (octillion) তারকা। তার মানে ১ এর সাথে ২৯টা শূন্য। Kornreich জোর দিয়ে বলেন, এটা সাধারণ হিসাব, তবে গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আরো বেশি।

দেখা যায়, ছায়াপথের সংখ্যা হবে ১০০ থেকে ১২৫ বিলিয়ন।

NASA (13 October 2016 ) থেকে পাওয়া তথ্য হচ্ছে,দুই ট্রিলিয়ণ(20লাখকোটি)ছায়াপথআছে মাত্র ১০শতাংশ মহাবিশ্বের মধ্যে। কিন্ত ছায়াপথগুলোর ৯০ শতাংশর খোজ এখনও বাকি। ছায়াপথ হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম যেখানে মিলিয়ন থেকে বিলিয়ন সংখ্যক তারা মাধ্যাকষনের টানে এক সাথে আটকে থাকে। গানিতিক মডেল  ব্যবহার করে জ্যোতিবিজ্ঞানীরা ‘অদৃশ্যমান’ ছায়াপথগুলোকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন । কেননা এই সব ছায়াপথ টেলিস্কোপের আওতায় আসে না।সেখান থেকে ই ধারনা করা হচ্ছে, মানুষের ধারনারও বাইরে রয়ে গেছে আরও লাখ লাখ ছায়াপথ। সূত্রঃ গার্ডিয়ান।


তার মাণে দাড়ায় মহাবিশ্বে ২০ ট্রিলিয়ণ ছায়াপথও ছাড়িয়ে  যেতে পারে! 

আবার সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের চেয়ে পাঁচ শ’ গুণ শুধু বড় নয়, সেই সাথে এক লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল তার ভর তিন মিলিয়ন সূর্যের সমান হয়ে থাকে। আপনি যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে তারকা গণনা করেন, সে ক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে। ছায়াপথগুলো মহাকাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না থেকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে একে অপর থেকে বহু দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে। সব ছায়াপথ এক করলে তারা মহাশূন্যের এক মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ স্থান দখল করবে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী পর্যন্ত এর কাছে হার মানবে।

                                        ছায়াপথ কত বড়?

এত বড় যে, বড় ধরনের ছায়াপথের আড়াআড়ি দূরত্ব এক মিলিয়ন আলোকবর্ষেরও বেশি হবে [এক বছরে প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে যে দূরত্ব অতিক্রম করা যায়, সেটি হলো- এক আলোকবর্ষ (৯ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার।)]

আমরা এমন একটি ছায়াপথে থাকি, যেটা আড়াআড়ি মাপে প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ। আমাদের ছায়াপথটি ধীর গতিতে ঘূর্ণায়মান। এর সর্পিল বাহুগুলোতে অবস্থিত তারকাগুলো প্রায় কয়েক শ’ মিলিয়ন বছরে একবার করে কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে।

সবচেয়ে ছোট ছায়াপথের নাম ডর্ফ, যার প্রশস্ত কয়েক হাজার আলোকবর্ষের দূরত্বের। অ্যান্ড্রোমেডার ছায়াপথটির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব হবে দুই লাখ ৫০ হাজার আলোকবর্ষ। মজার বিষয় হচ্ছে, এই মুহূর্তে মহাবিশ্বের দিকে তাকালে দূর অতীতের মহাবিশ্বকে আমরা আসলে কিন্তু দেখতে পাবো, কেননা এই সময়ে দূর তারকা ছায়াপথ থেকে আলো এসে কেবল আমাদের কাছে পৌঁছেছে। যে কোয়সারগুলো এখন আমরা দেখছি, সেই আলো আমাদের কাছে পৌঁছতে শত শত কোটি বছর লেগে গেছে। আমাদের নিকটতম তারকা Proxima Centauri থেকে আলো আসতে লাগবে ৪ দশমিক ৩ বর্ষ।                           যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধিক বিক্রীত ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়ের বই ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’ পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে, ‘কুরআন পাকে সব সময়ই বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আল্লাহ পাকের নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্য উদঘাটনের জন্য। আর এ কারণে ইসলামের অনুসারীরা যুক্তি ও কারণকে এড়িয়ে না গিয়ে গভীর মনোযোগ এবং বিশেষ কৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সব কিছুকে পর্যবেণ করছে। এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পরে দেখা যায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারাল সায়েন্স) মুসলমানদের এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে তোলার, যা কখনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ বা সংঘর্ষ ঘটায়নি, খ্রিষ্টান ধর্মের ক্ষেত্রে যেটা দেখা গেছে। কাজেই মহাবিশ্বের সব কিছুকে পর্যবেণ ও রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমেই কেবল আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া ও তার নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে। ঈমান বাড়ানোর পথ বা উপায় হলো সৃষ্টি রহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা। হাদিস শরিফে আছে- সৃষ্টিরহস্য নিয়ে কিছু সময় চিন্তাভাবনা করা, সারা রাত নফল এবাদত থেকেও উত্তম।

মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ভাষায়, ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দুরভিসারি জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়- বিজ্ঞানের সমাগত চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে; কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্ত্রা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায় কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’


প্রতিনিয়ত মহাবিশ্ব কত বিস্তৃতি লাভ করছে! আবার যেহেতু সব ছায়াপথ মহাকাশের  দশ লাখ ভাগের মাত্র এক ভাগ জায়গা দখল করে আছে, সে ক্ষেত্রে ১০ পৃথিবীর সমান নিম্নস্তরের জান্নাত হওয়াটা একেবারে সাধারণ ঘটনা। ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত।’


আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন, "আল্লাহ্‌ পাক বলেন - জান্নাতে এমন নেয়ামত তৈরী করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান যার কথা শোনেনি, এবং কোন মানুষের কল্পনায়েও যা আসেনি।" জান্নাতে অসুস্থ্যতা ও বার্ধক্যতা নেই, চির যৌবন লাভ করবে জান্নাতবাসীরা, রাসুলুল্লাহ (দঃ) একদিন বলেন, "বৃদ্ধদের জান্নাতে যায়গা হবে না।" নিকটে অবস্থানরত এক বৃদ্ধা এ কথা শুনে কেঁদে ফেলেন। যখন তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলো, তিনি বললেন, "আমি বৃদ্ধা হয়ে গেছি। আগে যদি মারা যেতাম, জান্নাত লাভের সৌভাগ্য হত।" তাঁকে আশ্বস্ত করে রাসুল (সাঃ) বললেন, "জান্নাতবাসী সকলেই চির যৌবন লাভ করবে, অতঃএব ভয়ের কিছু নেই।"

Saturday, July 6, 2024

দুর্নীতিতে শীর্ষে হয়ে ও 100% নিশ্চয়তা জান্নাতের?

  কুরআনের আঙ্গিনায় আমরা 

------------------------------------------ 

দুর্নীতিতে শীর্ষে হয়েও জান্নাতের ১০০% নিশ্চয়তা?      মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ । 

               মুহাম্মদ আলীরেজা                             

তুলনামুলক ভাবে পশ্চিমা বিশ্বের লোকদের আমাদের চেয়ে অধিক সামাজিক এবং সাধারণভাবে সৎকর্মশীল হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে।যারা ইউরোপ,আমেরিকা গিয়েছেন বা থাকেন, তাদের ধারনাও  নিঃসন্দেহে এমনটিই হয়ে থাকে।প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক, আমাদের গতানুগতিক প্রচলিত ধর্ম,বিশ্বাস ও সংস্কৃতি কেন আমাদেরকেও সেভাবে তৈরি করতে আপাত ব্যর্থ প্রমানিত হচ্ছে,কোনো ভাবেই কেন যেন পারছেইনা? গভীর বিশ্লেষণে দেখা যাবে মূল কারন কিন্ত অত্যন্ত সুক্ষ-এক স্থানে { বেহেশত লাভের ত্রুটিপূর্ণ গতানুগতিক ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ,শিক্ষা,প্রথা,ও নির্দেশনা।} ফলে প্রচলিত সংস্কৃতির  ঘূর্ণিপাকে যেন হাবু ডুবু খাচ্ছে  সবাই। অসৎ কর্মশীল হয়ে জান্নাত লাভের কোনো রকম সুযোগ ইসলামে একেবারেই না থাকার পরেও কেন যেন এদেশের জনতার ভিতরে সেরা দুর্নীতি পরায়ণ হবার  সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে চলছে তো চলছেই। এর অন্যতম একটি কারনঃ সার্বিক বিষয় এবং পরিবেশ বিবেচনায় না এনে ওয়াজ মাহফিলে শর্ট কাট সামান্য কিছু ইবাদতের মাধ্যমে  বেহেশতের ১০০% গ্যারান্টি লাভের ভ্রান্ত ধারনা  সৃষ্টি/জাগ্রত করে মানুষকে সামগ্রিকভাবে অসৎ কর্মশীল হতে পরোক্ষভাবে হলেও কিছুটা উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা হয়ে থাকে। এত সহজে এবং অনায়াসেই যদি ১০০% গ্যারান্টি সহ বেহেশত পাবার সুযোগ থাকে তাহলে প্রাত্যহিক জীবনে সার্বক্ষণিক ২৪ ঘণ্টা একনাগারে জীবনভর সৎকর্মশীল হওয়ার বা থাকার এত কষ্ট ও সাধনা করার  প্রয়োজনটা কোথায়, নিরবিচ্ছিন্নভাবে জীবনভর গাধার মত বেগার খাটা এই পরিশ্রম করার কোন মানে হয় কি? সারাজীবনে কেবলমাত্র একটি হজ, শবে কদরের এক রাত,মসজিদ-মাদ্রাসায়  কিছু দান খয়রাত এরকম কিছু কিছু গুটিকয়েক বাছাই করা  যৎসামান্য সহজ কাজ ও পদ্ধতির মাধ্যমে চিরস্থায়ী নিবাস বেহেশত পাওয়া গেলে আর কি চাই? সবচেয়ে কম বিনিয়োগে সর্বাধিক প্রাপ্তি-অনন্ত জীবনের সুখ শান্তি আর কি! মসজিদের দেশ যার প্রতিটি যায়গায় আজান শুনা যায়, যে দেশে জুমাহ এবং তারাবীহ তে মসজিদ কানায় কানায় ভর্তি হ্য়, সে দেশ যদি দুর্নীতিতে সমগ্র বিশ্বে শিরোপা লাভের একবারও যদি দুর্ঘটনাক্রমে হলেও কখনও কৃতিত্ব অর্জন করতে  সক্ষম হয়, তার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্বের বাকি সব দেশ থেকে বেশি অসৎকর্মশীল মানুষ এ দেশেই থাকে, তৈরি হয় বা জন্ম নেয়। দেশটি যেন  বিশ্বের দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যের বৃহত্তম মিলন মেলা,সমাবেশ কেন্দ্র। জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে সৎকর্ম। আর সব গুণ থাকলেও অসৎকর্মশীল ব্যক্তি জান্নাতের ধারেকাছেও যেষতেই পারবে না। নামাজি, দ্বীনদার হওয়ার মূল কথা হচ্ছে সৎকর্মশীলতা। বাহ্যিকভাবে যত বড় বুজর্গ,মোল্লা, পীর, দ্বীনদার হোক না কেন একমাত্র ঈমানদার ও সৎকর্মশীলরাই জান্নাতে যাবে। জান্নাতে যাওয়ার শর্ত হচ্ছে সারাজীবন পার্টটাইম নয় ফুলটাইমই সৎকর্মশীল হতেই হবে। কারণ প্রতিটি কাজের, মুহূর্তের এবং নিয়তের ওপরই নির্ভর করবে সে কোন ধরনের সৎকর্মশীল। সুবিধাবাদী সৎকর্মশীল না মন-মানসিকতা ও কাজে কর্মে  প্রকৃত অর্থে পরিপূর্ণভাবেই সার্বিক  জীবনে  সৎকর্মশীল!

ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত  ইসলামের বুনিয়াদ বা ভিত হলেও  কুরআনে একটি আয়াতও পাওয়া যাবে না যেখানে বলা হয়েছে, এই পাঁচটি কাজের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যাবে? কুরআন পাকে জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে যত আয়াত দেখা যায়, সেগুলোতে আরো একটি গুণের অধিকারী হতেই হবে জান্নাতের জন্য। না হলে জান্নাত কখন ও কপালে জুটবেই না। জান্নাত লাভের জন্য তাকে অবশ্যই সৎকর্মশীল হতেই হবে। কিন্ত দুর্ভাগ্য বশত এদেশে প্রচলিত ধরাবাঁধা বিশ্বাস ও ধারনা হচ্ছে কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতেই কেল্লাহ ফতেহ। কারও যেন ভাববার একটুও সময়/অবকাশই নেই যে শুধু এসব দিয়ে কপালে জান্নাত জুটার  কোনো সম্ভাবনাই নেই। মূলত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সৎকর্মশীল হিসেবে তৈরি করা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘(হে নবী!) আপনি নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’[২৯: ৪৫]

জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে বিশ্বাসের সাথে সর্বত্র সৎকর্মের কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে। জান্নাত লাভের সব আয়াতেই বিশ্বাসের সাথে সৎকর্মশীল হওয়াটা জরুরি ধরা হয়েছে। অসৎ দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের কোনো ক্ষমা নেই স্পষ্ট ভাবে থাকার পরেও প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে-একবার হজে সারাজীবনের গুনাহ মাফ হ্য়ে যাবে। শুনতে শুনতে সমাজ জীবনে এমন ধারনা/ বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে – সারা জীবন অপকর্ম করে শেষ জীবনে হজ করলেই নিশ্চিত জান্নাত। কিন্ত প্রচলিত ধারনামতে  সবচেয়ে সহজ গুনাহ গীবতের মত কাজ গুলোও কি মাফ হবে? ‘গীবত জিনার চেয়েও বড় পাপ।’ জিনার সাজা মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় সাহাবীরা অবাক বিস্ময়ে জানতে চাইলেন- তা কি করে হতে পারে? রাসুলুল্লাহ(দঃ) বলেন যে, জিনাহ (যেটা অবশ্যই রেপ নয়) করে আল্লাহ পাকের দরবারে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করেও দিতে পারেন। এটা আল্লাহর সাথে বান্দার বিশেষ সম্পর্কের ব্যাপার। কিন্ত গীবতের ক্ষেত্রে আর একটি পক্ষ জড়িত- যার গীবত করা হয়েছে তার থেকে মাফ অর্জন করে আনতে হবে তা নাহলে নীতিগত ভাবে আল্লাহ নিজের থেকে গুনাহ মাফ করবেননা। প্রশ্ন করা হল  যদি এটা সত্য হয়! উত্তর হল সত্য হলেই সেটা গীবত আর মিথ্যা হলে অপবাদ প্রদান যেটা আরও জঘন্য ধরণের অপরাধ, শাস্তিও সেরূপ।  সমাজজীবনে গীবতের মত  নিত্তনৌমিত্তিক ডালভাতের মত সাধারণ পাপের ব্যাপারটা যদি এরকম হয় সে ক্ষত্রে ভীষণভাবেই ভাববার /চিন্তার বিষয় নয় কি? - দুর্নীতির পাপের পাল্লাটা তুলনামূলক ভাবে কত সহস্র লক্ষ কোটি গুন বেশি ভারী হবে বা হতে পারে! কিন্ত এ সত্ত্বেও এর থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোজার সামগ্রিক কোনো প্রচেষ্টা বলা চলে এ দেশে কিন্ত কোনো মহলকে আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নীয়ে বা কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছেনা।সমাজে চলছে সব কিছুতে,সব যায়গায় দুর্নীতির সুপার প্রতিযোগিতা। বিশ্বের বাকি সব দেশকে টপকিয়ে  মুসলিমদের এদেশে কিন্ত কেন এই নোঙরা প্রতিযোগিতা? যেন কারও কোনো মাথা ব্যাথা নেই।-‘তোমরা মুমিন নও যদি পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল না হও?’ শুনে সাহাবীরা বলেন, ‘আমরা তো সবাই একে অপরের প্রতি  সহানুভুতিশীল।’ প্রকৃত অর্থে সহানুভূতি দেখাতে হবে সবার প্রতি কেবলমাত্র আত্মীয়স্বজন ও মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না ব্যাখ্যা করে রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেন।  কাজেই কোনো শব্দের বা কথার অর্থ অনুধাবন করার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন সার্বিক পরিস্থিতি বা অবস্থার প্রেক্ষাপট সাপেক্ষে মূল বিষয়টা বিবেচনা করা। সব কথা ও বক্তব্যকে কেবলমাত্র গ্রহণযোগ্য মনে করা হবে যখন ইসলামের মূল স্প্রিটের সাথে সেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা  সে বিষয়টা প্রমানিত হলে। একদা রাসুলুল্লাহ(দঃ) বলেন- বুড়াদের বেহেশতে যায়গা নেই। শুনে এক বুড়ী কেঁদে ফেললেন। কান্নার কারন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আনেক বয়স হয়ে গেছে, বুড়ী হয়ে গেছি কপাল খারাপ। আগে যদি মারা যেতাম বেহেশত কপালে জুটত। তখন তাকে সান্তনা দিয়ে বলা হল- ভয়ের কোনো কারণই নেই। বেহেশতে সকলেই চির যৌবন প্রাপ্ত হবে। সেই অর্থে কেবল বুড়া / বুড়ী দের জান্নাতে স্থান মিলবেনা। তাই কোন শব্দের প্রকৃত অর্থ অনুধাবনের জন্য চাই কোন প্রেক্ষাপটে, পরিবেশে ও প্রসঙ্গে কথাটা বলা হয়েছে তাও যথার্থ ভাবে অনুধাবন করতে হবে। ইসলামের মূল শিক্ষা ও স্প্রিট কে বিরুদ্ধাচরণ করে কোন কিছু গ্রহণের সুযোগ নেই।

১] সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে; বরং বড় সৎকাজ হলো ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সব নবী-রাসূলের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিুক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী, তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী আর তারাই পরহেজগার।’ [২-১৭৭]


জান্নাত লাভের জন্য ঈমান আনার সাথে সাথে সৎকর্ম করার কথা যে সব আয়াতে রয়েছে, তার একটি তালিকাঃ


২] আর সবার জন্যই রয়েছে কেবলা একেক দিকে, যে দিকে সে মুখ করে (এবাদত করবে)। কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে আ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। [ ২:১৪৮ ]

৩] যে ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, সে জুলুম ও ক্ষতির আশঙ্কা করবে না। [  ২০:১১২ ]

৪]  এবং ইসমাঈল, ই'দ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী। আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ। [২১:৮৫-৮৬ ]

৫]  যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। [  ২২:১৪ ]

৬] সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে আছে পাপ মার্জনা এবং সম্মানজনক রুযী।                    [  ২২:৫০ ]

৭] তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে।[সুরা কাসাস ২৮:৬৭]

৮] আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিল, তার বলল, ধিক তোমাদেরকে, যারা ঈমানদার এবং সৎকর্মী, তাদের জন্যে আল্লাহর দেয়া সওয়াবই উৎকৃষ্ট। এটা তারাই পায়, যারা সবরকারী। [  ২৮:৮০ ]

৯] যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তদপেক্ষা উত্তম ফল পাবে এবং যে মন্দ কর্ম নিয়ে আসবে, এরূপ মন্দ কর্মীরা সে মন্দ কর্ম পরিমানেই প্রতিফল পাবে। [  ২৮:৮৪ ]

১০]আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব। [ ২৯:৭ ]

১১] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব। [ ২৯:৯ ]

১২] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদে স্থান দেব, যার তলদেশে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কত উত্তম পুরস্কার কর্মীদের। [  ২৯:৫৮ ]

১৩] যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে; [  ৩০:১৫ ]

১৪] যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে যাতে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে প্রতিদান দেন। নিশ্চয় তিনি কাফেরদের ভালবাসেন না। [  ৩০:৪৫ ]

১৫] যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত। [  ৩১:৮ ]

১৬] সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর ওয়াদা যথার্থ। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। [ ৩১:৯ ]

১৭] যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে। [  ৩১:২২ ]

১৮]  যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত। [  ৩২:১৯ ]

১৯]  তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মান জনক রিযিক প্রস্তুত রেখেছি। [  ৩৩:৩১ ]

২০]তিনি পরিণামে যারা মুমিন ও সৎকর্ম পরায়ণ, তাদেরকে প্রতিদান দেবেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [  ৩৪:৪ ]

২১] আমি এভাবেই সৎকর্ম পরায়নদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। [  ৩৭:৮০ ]

২২] এভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।   [  ৩৭:১২১ ]

২৩]যে মন্দ কর্ম করে, সে কেবল তার অনুরূপ প্রতিফল পাবে, আর যে, পুরুষ অথবা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তথায় তাদেরকে বে-হিসাব রিযিক দেয়া হবে। [  ৪০:৪০ ]

২৪] অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়, আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং কুকর্মী। তোমরা অল্পই অনুধাবন করে থাক। [  ৪০:৫৮ ]


২৫] নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। [  ৪১:৮ ]

২৬] যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?  [  ৪১:৩৩ ]

২৭] যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না।  [৪১:৪৬ ]

২৮]যে সৎকাজ করছে, সে নিজের কল্যাণার্থেই তা করছে, আর যে অসৎকাজ করছে, তা তার উপরই বর্তাবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। [  ৪৫:১৫ ]

২৯] যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। [  ৪৭:১২ ]

৩০] যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী। [ ৫২:২১ ]

৩১]কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। [  ৮৪:২৫ ]

৩২] যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নির্ঝরিণীসমূহ। এটাই মহাসাফল্য। [  ৮৫:১১ ]

৩৩] ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।’ [  ৯৮:৭ ]

৩৪]‘তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর।’ [  ৯৮:৮ ]


এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে   সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ও কাজে সৎ হতে হবে বা সততার পরিচয় দিতে হবে। সৎকর্মশীলতার প্রতিযোগিতা সারাজীবন করে যেতে হবে। দিনের কিছু সময় সৎ থেকে অন্য সময় অসৎ থাকলে সৎকর্মশীল হিসেবে পরিচয় দেবার সুযোগ একেবারেই নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সৎ হতে/থাকতে হবে। দিনের কিছু কাজে সৎ আর বাকিটায় অসৎ এই  সব ফাঁস হয়ে পড়বে।

জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে  ইমানের সাথে সত কর্ম শীল 

   হবার শর্ত সবযায়গাতেই  জুড়ে দেওয়া হয়েছে।এক মুহুর্তের জন্যে ঈমান দুর্বল হয়ে গেলে বা না থা কলে যেমন একজন মোমিন মুসলমানের  জরুরী কাজ হবে সাথে সাথেই তওবা করে নিজকে জরুরী ভিত্তিতে সংশোধন করে নিয়ে ঈমানকে মজবুত করে নেওয়া ।তেমনি কোন সময়ে/ কর্মে অপকর্মে জড়িত হলে সাথে সাথে ই জরুরী ভিত্তিতে তওবা করে প্রতিজ্ঞা করতে হবে- ইমানের মতোই সতকাজ থেকে সে কখনও কস্মিনকালেও বিচ্যুত হবেনা।আর কখনও খারাপ কাজ হযে  গেলে সাথে সাথেই  তার কাফফারা দিতে  হবে এবং প্রতিজ্ঞা করতে  হবে ইমানের  মত ভালো কাজ ও একই গুরুত্ব দিয়ে সব সময়ই   করার। কারন ইমানের  সাথে সাথে সত কর্ম করতে আল্লাহ পাক কঠোরভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন সব যায়গা তেই।


 এত গুলো আয়াত থাকার পরও বাংলাদেশ কেন বাকি সব দেশের লোকদের থেকে দুর্নীতিপরায়ণতায় জাহান্নামের দিকে সবার অগ্রভাগে?

Thursday, June 20, 2024

সত্যি কার আসল এবাদতের খোঁজে

 সত্যিকার আসল এবাদতের খোজে?

*****************

তথাকথিত প্রচলিত এবাদত বনাম  জান্নাতের আসল ইবাদত ।

                                   *********

জাতি হিসেবে মুসলিমদেরএবাদতের মূল   বিষয়  নিয়েই  অনাকাঙিক্ষত  তামাশা-ক'জন ভেবে দেখেছেন /মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে ছেন এই তামাশার বিষয়টি  কতটা   ভয়ংকর ?

মুসলিম জাতি আসলে কি  আল্লাহর প্রকৃত ইবাদত করছে? কি না সবই তামাশা,নাটক চালিয়ে -- অজান্তে  ইসলাম কে জগতের অপর  সব ধর্মের তুলনায়/নিকটে ঠুনকো ধর্ম হিসাবে বাস্তবে  তুলে ধরছে ,কার্যত  বানাচ্ছে। উম্মার ক'জন মুসলিম এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাস্তবে  সত্যি কার অর্থে সজাগ/সচেতন?

* তথাকথিত প্রচলিত আমল' এর মারাত্মক ভুল  ধারণার সংশোধন জরুরী  দরকার/অপরিহার্য । *

 আসলেই চলমান ইসলামে

 'আমলের' বিষয়ে  মুসলমানদের মূল জ্ঞানেই কিন্ত  সম্পূর্ণ একেবারেই  ভুল ঢুকানো হয়েছে। ফলে জীবনের কাজ- কর্ম এই 'আমলে'একেবারেই  অন্তর্ভূক্ত হয় নি। ফলে বাস্তবেই ইসলামের অনুসারীরা হযবরল জাতি/ ধর্মে পর্যবসিত হয়ে বিশ্বের দরবারে  দাঁড়িয়েছে।

 মহান আল্লাহ বলেন, " যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদের (এবিষয়ে) পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তোমাদের মধ্যে ' কর্মে ' উত্তম - - -" সূরা মুলক, ০২। 

 সাদাকাল্লাহুল আজীম।

ড: নজরুল ইসলামের "আমলের প্রচলিত ধারনার সংশোধন জরুরী" সম্পর্কিত কথার উপরে ফেসবুকে বিতর্ক দেখে বিতর্কের ইতি টানার জন্য নিচের লেখাটি post  করছি।সব উওর নিঃসনেদহে  লেখাটি তে মিলবে ইনশাহআললাহ। সকলেরই   ্রতিক্রিয়া আশা করছি ।সংশ্লিষ্ট সকলকেই দেখার ও প্রতিক্রিয়ার জন্য  অনুরোধ থাকছে।

******************

এক পলকে জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চিত অদ্বিতীয় চাবি।

----------------------------

আমরা কি কখনও গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখছি,কার্যত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একদম ভুল ব্যাখ্যা সাধারণ জনমনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। প্রচলিত ধারণা  সৃষ্টি হয়েছে, পাঁচটি কাজ বা দায়িত্ব পালনের নাম ইসলাম। আসলে হাদিসে উপমাটি দিয়ে ইসলামকে একটি বাড়ির সাথে তুলনা করে ধারনা দেওয়া হয়েছে:স্তম্ভ ছাড়া যেমন কোনো বাড়ির কল্পনাও সম্ভব নয়, তেমনি ইসলাম পাঁচ (ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত) স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন আসেঃ শুধু স্তম্ভ থাকলেই কি বাড়ির অস্তিত্ব বাস্তবে কখনও কল্পনা করা সম্ভব? বাড়ির পরিপূর্ণতার জন্য দরকার ছাদ, দেয়াল, জানালা-দরজা, আসবাবপত্র, রান্নাঘর, শয়নকক্ষ আরো কত কি? এ সব কিছু মিলেই না হয় একটা বাড়ি!তবে সব কিছুর আগে দরকার স্তম্ভ, যার ওপর গড়ে উঠবে বাড়িটি।ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সামগ্রিক ইসলামের বুনিয়াদ বা ভিত। কুরআনে একটি আয়াতও পাওয়া যাবে না যেখানে বলা হয়েছে, এই পাঁচটি কাজের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যাবে? কুরআন পাকে জান্নাতে যাওয়ার শর্ত হিসেবে যত আয়াত দেখা যায়, সেগুলোতে  মূলত  দুটি গুণের অধিকারী হতেই হবে জান্নাতের জন্য।না হলে জান্নাত কারও কপালে  কক্ষনও   জুটবেই না। জান্নাত লাভের জন্য তাকে অবশ্যই  ঈমানের সাথে সাথে সৎকর্মশীল হতেই হবে। মূলত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের আসল  উদ্দেশ্য  হচ্ছে মানুষকে সৎকর্মশীল হিসেবে তৈরি করা।  জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে বিশ্বাসের সাথে সর্বত্র সৎকর্মের কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে। জান্নাত লাভের সব আয়াতেই বিশ্বাসের সাথে সৎকর্মশীল হওয়াটা্  একান্ত আবশ্যকীয়  ধরা হয়েছে। এটা ছাড়া কোনো  অবস্থতাতে আর কোনোভাবে ফাকি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়নি্।

এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বা বিষয় হচ্ছে  সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এবং কাজে সৎ হতে হবে বা সততার পরিচয় দিয়ে চলতে হবে। সৎকর্মশীলতার প্রতিযোগিতা সারাজীবন করে যেতে হবে। দিনের আংশিক কিছু সময় সৎ থেকে অন্য সময় অসৎ থাকলে সৎকর্মশীল হিসেবে পরিচয় দেয়ার সুযোগ একেবারেই নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সৎ হতে হবে। দিনের কিছু কাজে সৎ আর বাকিটায় অসৎ এই প্রতারণার সুযোগ একেবারেই নেই। সৎকর্মশীল মানুষ সারাজীবন সৎকর্মের ওপর অবিচল থাকবে। শেষ বিচারের দিন সব ফাঁস হয়ে পড়বে।  মুসলিম জাতির  মর্যাদার সবচেয়ে বড় 

 ঐতিহাসিক সংবাদ:ইসলামের মূল ঘাঁটি- সৌদিই  বর্তমানে/আজকে ইজরায়েলের ও  উপরে দুর্নীতির rank এ(Transparency International)। 

আমাদের এই তথাকথিত 

 মসজিদের দেশ যার প্রতিটি জায়গায় আজানের ধ্বনি শোনা যায়, সে দেশ যদি  কখনও দুর্নীতিতে  বিশ্ব শিরোপা লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, তার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্বের সব দেশ থেকে বেশি অসৎকর্মশীল মানুষ এ দেশে। অবাক কাণ্ডঃ মসজিদের দেশ কি করে দুর্নীতিবাজদের  ঘাটি হয়? জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে সৎকর্ম। আর সব গুণ থাকলেও অসৎকর্মশীল ব্যক্তি জান্নাতের সীমানার ধারে্র কাছেও ঘেষতে পারবে না। নামাজি, দ্বীনদার হওয়ার মূল কথা হচ্ছে সৎকর্মশীল হওয়া। বাহ্যিকভাবে যত বড় বুজর্গ, পীর,  মস্তবড় দ্বীনদার হোক না কেন একমাত্র  ঈমানদার ও সৎকর্মশীলরাই জান্নাতে যায়গা পাবে। জান্নাতে যাওয়ার শর্ত হচ্ছে সারাজীবন পার্টটাইম নয় ফুলটাইমই সৎকর্মশীল হতে হবে। কারণ প্রতিটি কাজের, মুহূর্তের এবং নিয়তের ওপরই নির্ভর করবে সে কোন ধরনের সৎকর্মশীল। সুবিধাবাদী সৎকর্মশীল না মন-মানসিকতা ও কাজে,কর্মে প্রকৃত অর্থে জীবনের সব সময়ে ও তৎপরতায় সার্বক্ষণিক ভাবে সৎকর্মশীলঃ শেষ বিচার দিবসে এ সবই পরখ করে দেখা হবে।

অসৎ  ব্যাক্তির ইবাদত  মূল্যহীন আর জান্নাত লাভের জন্য ঈমানের সাথে সৎকাজ  করার দৃঢ় মানসিকতা অবশ্য থাকতেই হবে যেটা কোরআন পাকে বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। প্রশ্ন আসে বিশ্বের  অন্যান্য  জাতির চেয়ে মুসলমানরা কি করে ক্ষেত্র বিশেষে অধিকতর  অসৎ ও দুর্নীতিপরায়ণ হতে পারে? এর একটি  সহজ ব্যাখ্যা হতে পারে সাধারন মুসলমানরা কোরআন আবৃত করে কিন্ত বুঝে পড়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। ইমাম হাসান আল  বসরী (৬৪২-৭২৮ খৃঃ) বলেনঃ 'কুরআনকে নাযিল করা হয়েছে এর নির্দেশনা বলীর ভিত্তিতে কাজ করার জন্য কিন্ত তা না করে তারা এর আবৃতিকে কাজ হিসাবে ধরে নিয়েছে।' দুনিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়,   তুলনামুলক   ভাবে পশ্চিমা   বিশ্বের লোকদের    মুসলিম  সমাজের  চেয়ে অধিক    সামাজিক    এবং  সৎকর্মশীল    হিসাবে মনে করা হয়ে  থাকে।যারা ইউরোপ,   আমেরিকা গিয়েছেন বা থাকেন,   তাদের ধারনাও   নিঃসন্দেহে এমনটিই হয়ে থকার কথা।  প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক, আমাদের  চলমান ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতি কেন আমাদেরকেও সেভাবে তৈরি করতে আপাত ব্যর্থ প্রমানিত হচ্ছে,কোনো ভাবেই কেন যেন পাশ্চাত্ত্যের সাথে প্রতিযো গিতায় পারছেনা।গভীর বিশ্লেষণে দেখা যাবে মূল কারন কিন্ত অত্যন্ত সুক্ষ-এক স্থানে     {বেহেশত লাভের ত্রুটিপূর্ণ গতানুগতিক ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ,শিক্ষা,প্রথা,ও নির্দেশনা।}ফলে প্রচলিত সংস্কৃতির ঘূর্ণিপাকে যেন হাবু ডুবু খাচ্ছে  সবাই। অসৎ কর্মশীল হয়ে জান্নাত লাভের কোনো রকম সুযোগ ইসলামে একেবারেই না থাকার পরেও কেন যেন এক  শ্রেণীর মুসলিমদের ভিতরেই চলে আসছে  দাড়ি, টুপি, নামাজি, হাজি সেজে  অঘোষিত এই  দুর্নীতির  প্রতিযোগিতায় নামতে।  জীবনে একবার হজ করলেই যেন কেল্লাহ ফতেহঃ সারা জীবন ভর  আবার সৎ থাকা?  আসমান উচু পরিমাণ নেকী অর্জন করেও সঠিক কথা হচ্ছে, সারা জীবন যাদের হক নষ্ট  করা হয়েছে নিজের অর্জিত   মূলধন   নেকী দিয়ে তাদের সাথে বিনিম্ য় ক্ রতে হবে। আর এভাবে পরিশোধ করতে করতে আগেই নেকী  সব শেষ হয়ে যায় সেক্ষত্রে প্রাপকের গুনাহ নিজের কাঁধে নিয়ে দোযোগে যেতে হবে।প্রথমে দেখা যাক কোরআনের আলোকে  সৎকাজের ব্যাখ্যাঃ

সৎকাজ কী?----

পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারা আয়াত১৭৭ : ‘ সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।" এখন আমরা বিশ্লেষণ করতে পারি,আমাদের  কি বার্তা  পরিবেশন করছে জান্নাত লাভের আয়াত সমূহঃ

১] আর সবার জন্যই রয়েছে কেবলা একেক দিকে, যে দিকে সে মুখ করে (এবাদত করবে)। কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।                [ সুরা বাকারা ২:১৪৮ ]

২] যে ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে,সে জুলুমওক্ষতির আশঙ্কা করবে না।          [ সুরা ত্বা-হা ২০:১১২ ]

৩]এবং ইসমাঈল, ই'দ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন,তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী। আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ। [ সুরা আম্বিয়া ২১:৮৫-৮৬ ]

৪]  যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।          [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:১৪ ]

৫] সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে আছে পাপ মার্জনা এবং সম্মানজনক রুযী।[সুরা হাজ্জ্ব২২:৫০]

৬] তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ কে খুব স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। নিপীড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ। [ সুরা শু’য়ারা ২৬:২২৭ ]

৭] তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে। [ সুরা কাসাস ২৮:৬৭ ]

৮] আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিল,তার বলল, ধিক তোমাদেরকে, যারা ঈমানদারএবংসৎকর্মী,তাদের জন্যে আল্লাহর দেয়া সওয়াবই উৎকৃষ্ট।এটা তারাই পায়, যারা সবরকারী। [সুরা কাসাস ২৮:৮০]

৯] যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তদপেক্ষা উত্তম ফল পাবে এবং যে মন্দ কর্ম নিয়ে আসবে, এরূপ মন্দ কর্মীরা সে মন্দ কর্ম পরিমানেই প্রতিফল পাবে।[সুরা কাসাস ২৮:৮৪]

১০]আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব। [ সুরা আনকাবুত ২৯:৭ ]

১১] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব। [ সুরা আনকাবুত ২৯:৯ ]

১২] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদে স্থান দেব, যার তলদেশে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কত উত্তম পুরস্কার কর্মীদের। [ সুরা আনকাবুত ২৯:৫৮ ]

১৩] যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে;                  [ সুরা রূম ৩০:১৫ ]

১৪] যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে যাতে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে প্রতিদান দেন। নিশ্চয় তিনি কাফেরদের ভালবাসেন না। [ সুরা রূম ৩০:৪৫ ]

১৫] যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত।       [ সুরা লুকমান ৩১:৮ ]

১৬] সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর ওয়াদা যথার্থ। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। [ সুরা লুকমান ৩১:৯ ]

১৭] যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে। [ সুরা লুকমান ৩১:২২ ]

১৮]  যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত। [ সুরা সাজদা ৩২:১৯ ]

১৯]  তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মান জনক রিযিক প্রস্তুত রেখেছি।      [সুরা আহযাব ৩৩:৩১]

২০]তিনি পরিণামে যারা মুমিন ও সৎকর্ম পরায়ণ, তাদেরকে প্রতিদান দেবেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সুরা সা’বা ৩৪:৪ ]

২১] তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করবে না। তবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তারা তাদের কর্মের বহুগুণ প্রতিদান পাবে এবং তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে। [ সুরা সা’বা ৩৪:৩৭ ]

২২] আমি এভাবেই সৎকর্ম পরায়নদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।[ সুরা সাফফাত ৩৭:৮০ ]

২৩] এভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। [ সুরা সাফফাত ৩৭:১২১ ]

২৪]যে মন্দ কর্ম করে, সে কেবল তার অনুরূপ প্রতিফল পাবে, আর যে, পুরুষ অথবা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তথায় তাদেরকে বে-হিসাব রিযিক দেয়া হবে। [সুরা মু’মিন ৪০:৪০]

২৫] অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়, আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং কুকর্মী। তোমরা অল্পই অনুধাবন করে থাক।    [সুরা মু’মিন ৪০:৫৮]

২৬] নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।[সুরা হা-মীম৪১:৮]

২৭] যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ,তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?   [সুরা হা-মীম ৪১:৩৩]

২৮] যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না।              [সুরা হা-মীম ৪১:৪৬]

২৯]যে সৎকাজ করছে, সে নিজের কল্যাণার্থেই তা করছে, আর যে অসৎকাজ করছে, তা তার উপরই বর্তাবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।  [সুরা যাসিয়া ৪৫:১৫]

৩০] যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। [সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:১২]

৩১]যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী। [ সুরা তুর ৫২:২১ ]

৩২]কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। [সুরা ইনশিকাক ৮৪:২৫]

৩৩] যারা ঈমান আনেওসৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নির্ঝরিণীসমূহ। এটাই মহাসাফল্য। [ সুরা বুরূজ ৮৫:১১ ]

৩৪]‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।’  [সুরা  বাইয়্যেনাহ ৯৮:৭ ]

৩৫]‘ তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর।’              [ সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৮]

 আল্লাহ আমাদেরসকলকে   ঈমানদার      অবস্থায় সৎকর্ম   সম্পাদন করে সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যেয়ে জান্নাত লাভের তৈফিক দিন। আমীন।

Thursday, June 6, 2024

জোতির্ময় মহাবিশেবর সাথে quantum physics এর ঐক্য তান।ব

 "কোরাআনের আঙ্গিনায় আমরা"- প্রকাশিত :-

একেবারেই কিন্ত  ভিন্ন   ধর্মী বিষয়/  উপস্থাপনা-

জোতির্ময় মহাবিশ্বের  সাথে সর্ব শেষ  quantum physics এর সাথে  দারুণ  ঐক্য তান:-পাঠক প্রতিক্রিয়া:                    //খুব ভালো সহজ ব্যাখ্যা ক্রমাগতভাবে। Best wishes for doing great job.//

*******************************

বিশ্বের সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর সাড়াজাগানো  সাংঘাতিক  ঐতিহাসিক ঘটনা:সব ধর্মের আধ্যাত্মিক বক্তব্যের সাথে ( অদৃশ্য লোকের  জোতির্ময়    মহা বিশ্ব)-- সর্ব শেষ  Quantum physics একই সুরে ঐকমত্য পোষন করছে যা আসলে বাস্তবে একেবারে  কোন ভাবেই  কি বোঝা/বোঝানোর উপায় আছে? হাজার হাজার বছর আগে ভাগে  কি ভাবে  প্রায় সব ধর্মের ই তাত্ত্বিক গন এই নিগূঢ় সর্বশেষ কোযানটাম   তত্ত্বের  মূল কথার সন্ধান পেয়েছেন? শেষে কিনা নোবেলজয়ী আইনস্টাইন  পর্যন্ত তালগোল পাকিয়ে ফেলেন প্রতিষ্ঠিত  হাইজনবর্গের অনিশ্চয়তা  তত্ত্বে।তিনি quantum mechanics এর এই  uncertainty principles  এর বিরোধীতা করে দাবি  করেন: সৃষ্টিতে কোন  রকম অনিশ্চয়তা/ লটারি থাকার কোন প্রশ্নই উঠে না-(বাস্তবে তিনি কিন্ত  সুপার   আস্তিক  ছিলেন)। তার মতে:গড তার সৃষ্টির   সব কিছু ই স্বাভাবিক নিয়মে যথাযথ ভাবে  করেছেন-লটারি বা অনিশ্চয়তার কোন রকম অবকাশ ই সৃষ্টি তে রাখেননি ।বিষয়টির  সার্বিক ফয়সালার জন্য তিনি বরং  সরাসরি হাইজেনের সাথে দেখা করে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দেন এটি ।কিন্ত হাইজেন যুক্তি সহকারে আইনস্টাইন কে উল্টো দেখিয়ে দেন: তিনি যদি তার অনিশ্চয়তা নীতি মানতে রাজী  না হন তাহলে যেটার জন্যে তিনি নোবেল পেয়েছেন সেটিও প্রমান করতে অসুবিধায় পড়েবন । "আপনার নোবেল তত্ত্বের স্বার্থে আমার এই অনিশ্চয়তার নীতি আপনাকে মেনে নিতেই হবে । " হাইজেনের অনিশ্চয়তা নীতির সাথে  আইনস্টাইনের "ফটো ইলেকট্রিক এফেক্ট " নোবেল তত্ত্বের  সাথে  গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল বিধায়  আইনস্টাইনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় ।তিনি কথার মারপ্যাঁচের আশ্রয় নিয়ে এই যাত্রায় সরাসরি বললেন:এ বিষয়ে বিজ্ঞান একেবারে প্রাথমিক অবস্থা য় রয়েছে ।সে জন্যে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে ।

-----------------------------

(২৪ঃ৩৫)'আল্লাহ আকাশমন্ডলীওপৃথিবীর জ্যোতি।' প্রসঙ্গত  আলোচণায়  এসেছেঃ  'মধ্যযুগে মনসুর আল হাজ্জাজের আনাল হক দাবি।'

  পৃথিবীর সব শক্তির উৎস হচ্ছে সূর্য রশ্নি। আলো কে বলা হয় তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ। এই আলো উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে মূখ্য ভূমিকা রাখে আর সব প্রাণিজগৎ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বেঁচে আছে উদ্ভিদের দ্বারা। খনিতে যে কয়লা, গ্যাস, তেল পাওয়া যায় তারও উৎস হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ। ঘুরে ফিরে যে বিষয়টি এসে দাঁড়ায় সেটি হচ্ছে সব শক্তির মূলে রয়েছে  আলো।

স্পষ্টত আমরা দেখতে পাচ্ছি আলো সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আলো দেখতে কেমন? মূলত আলো হচ্ছে এক প্রকার তরঙ্গ /ঢেউ। ফরাসী পদার্থবিদ ডিব্রোগলি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন আলো তরঙ্গ হয়েও কোন পদার্থের উপর পড়লে এটি সেই পদার্থের সাথে মিশে যায়। পদার্থ এটাকে আত্মস্থ করে ফেলতে সক্ষম হয়। এতে তাঁর মাথায় আসেঃ আলোক রশ্নি তরঙ্গ হবার পরেও এটা যদি কোন পদার্থ শোষণ করে নিতে পারে তাঁর অর্থ দাঁড়ায় পদার্থ ও আলো একই প্রকৃতির কারণেই এটি সম্ভবপর হয়। ১৯২৪ সালে তিনি সারা দুনিয়ার বিজ্ঞানী সমাজের প্রতি সনির্বন্ধ আবেদন জানান এই বিষয়টার প্রতি দৃষ্টি প্রদর্শনের জন্যঃ আলো হচ্ছে তরঙ্গ কিন্তু এটা যখন পদার্থে শক্তি এবং ভরবেগ সরবরাহ করতে সমর্থ হয় তাহলে একই যুক্তিতে পদার্থ ও রশ্নি এবং  প্রকৃতপক্ষে  আলোর  মতই তরঙ্গ প্রকৃতি প্রদর্শন করবে। বিজ্ঞানী ডিব্রোগলি এই প্রস্তাবের মাধ্যমে আসলে বলতে চেয়েছিলেন, বাস্তবে আমরা  কেন ভাবতে পারব না যে একটি চলমান ইলেকট্রন অথবা অপর কোন কণাকে ও পদার্থ তরঙ্গ হিসেবে যেটাও কিন্ত অন্য পদার্থকে আলো রশ্নির মতো শক্তি ও দ্রুতি প্রদান করবে। ইতিহাসের ঐ সময়টিতে প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল ডিব্রোগলির এক যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণীঃ পদার্থ  ও   কার্যত জল তরঙ্গ, আলো তরঙ্গ ইত্যাদির মতো তরঙ্গ প্রকৃতি প্রদর্শন করবে। ইতিহাসে  পদার্থের তরঙ্গায়িত রুপ বা প্রকৃতিটি সর্বপ্রথম চোখে ধরা পড়ে ডেভিসন এবং গারমানের হাতে। এ দু’বিজ্ঞানী পরীক্ষাগারে নিকেল ধাতু ফলকের উপর ইলেকট্রন রশ্নি ফেলে তাঁর সাহায্যে ইলেকট্রনের বিক্ষেপন সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা করছিলেন। আকস্মিকভাবে বায়ুর সংস্পর্শে এসে নিকেলের উপর অক্সাইডের আবরণ পড়ায় নিকেল ফলক হতে তাপ প্রয়োগে অস্কাইডের আবরণ অপসারণ করা হলো। কিন্তু ঘটে গেলো এক অভূতপূর্ব আশ্চর্যজনক ঘটনা - বিজ্ঞানীদ্বয় ইলেকট্রনের পরিমাত্রা এর রশ্নির মত একবার সর্বাধিক আর একবার সর্বনিম্ন হতে দেখে এ থেকে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন - ডিব্রোগলির মতবাদ অনুসারে পদার্থ কণা তরঙ্গ সদৃশ বিধায় নিকেল স্ফটিক দিয়ে ইলেকট্রন রশ্নির ব্যতিচার হয়েছে। তাঁর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ইলেকট্রন আসলে ঢেউ বা তরঙ্গ। কিন্তু ঢেউ বা তরঙ্গ বলতে কিন্তু আমরা কী বুঝিয়ে থাকি? পানিতে সৃষ্ট তরঙ্গ সহজে আমাদের চোখে ধরা দিলেও অন্যান্য তরঙ্গ যেমন শব্দ, আলো বা বেতার তরঙ্গ কিন্তু আমরা দেখতে পাই না। একটি স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের যে কোন অংশে আন্দোলন তৈরী হলে আন্দোলন টি মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হলে তাকে তরঙ্গ (Wave) বলে অভিহিত করা হয়। আলো তরঙ্গের বেলায় যে আন্দোলন অগ্রসর হয় তা কোন জড় পদার্থের গতির জন্য হয় না। এটা হয়ে থাকে তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের গতির জন্য। এ কারণে মাধ্যমের কোন সাহায্য ছাড়াই সূর্য থেকে পৃথবী পর্যন্ত মুক্তভাবে আলোর বিস্তার লাভ সম্ভব হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ্য, তরঙ্গ যখন পথ চলে সেই সাথে কিন্তু সংশ্লিষ্ট মাধ্যমটি সামগ্রিকভাবে স্থানান্তর হয় না। মাধ্যমের বিভিন্ন অংশগুলো কেবল সীমিত পথে তাদের সাম্য অবস্থানের দু পাশে এদিক-ওদিক স্পন্দিত হতে থাকে। পদার্থ কণিকা ইলেকট্রন আসলে  ঢেউ/তরঙ্গ ছাড়া আর কিছু নয় এই অদ্ভূত আবিষ্কারের  পর অন্য সব কণিকার ক্ষেত্রে যেমন প্রোটন, নিউট্রন এবং বাকি সব ধরণের পরমাণুর বেলায়ও পর্যায়ক্রমে এই তরঙ্গের আচরন  আবিষ্কৃত  হতে থাকে। ১৯৯৪ তে আয়োডিন অণুর ক্ষেত্রে তরঙ্গায়িত এই ধর্ম পরিদৃষ্ট হয় যে অণুটি ইলেকট্রনের চেয়ে কেবলমাত্র পাঁচ লাখ গুন ভারীই নয়, গঠনে তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। এদিকে ১৯৯৯ সালে ৬০ অথবা ৭০ টি কার্বণ অণু দিয়ে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের রসায়নবিদরা দেখতে ফুটবলের মতো যে কৃত্রিম অণু ফুলারেঞ্জ (বাকীবলস) তৈরী করেন এরাও আলোর মতো তরঙ্গ ধর্ম প্রদর্শন করে। সম্প্রতি নভোচারীরা বাস্তবে মহাকাশেও প্রকৃতিতে এই অণুর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। উল্লেখ্য, ক্ষুদ্র কণা যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, অণু, পরমাণু তরঙ্গ প্রকৃতি প্রদর্শন করলেও বড়  এবং জটিল বস্তুর ক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের ফিরে যেতে হয় সেই অতি পরিচিত নন কোয়ান্টাম জগতে। এর অর্থ দাঁড়ায় ইলেকট্রন বা অন্য সব কণা, অণু বা পরমাণু নিজেদের মধ্যে ব্যতিচার তৈরীতে সফল হলেও বড় ধরণের বস্ত উদাহরণ স্বরুপ কাঠ বিড়ালি কিন্তু পরস্পরের মধ্যে ব্যতিচার তৈরীতে অক্ষম। আর এটা প্রকৃতিতে এজন্য সম্ভব নয় যা প্রানীদের অস্তিত্ব রক্ষারই মোক্ষম উপায় এবং বেচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক।সুবিখ্যাত বিজ্ঞানী শ্রোয়েডিংগার তার পরমাণুবাদে জড় স্বভাবকে একদম বাদ দিয়ে পরমাণু এবং তার উপাদান ইলেকট্রন, প্রোটনকে শুধু ঢেউ বা তরঙ্গের গুচ্ছরুপে কল্পনা করেন, যা পরিশেষে তরঙ্গ বলবিদ্যার উদ্ভব ঘটায়। পদার্থের তরঙ্গায়িত এই ধর্মের জন্য আজকের কোয়ান্টাম বিজ্ঞান বলছেঃ কণিকা এবং তরঙ্গের মধ্যে দ্বিত্ব রয়েছে। কোন কোন উদ্দেশ্যে কণিকাগুলোকে তরঙ্গরুপে চিন্তা করলেই উত্তম। অন্যদিকে কোয়ান্টামের অনিশ্চয়তা নীতিটি আবার দাবী করে যে, কোন কণিকার অবস্থানও দ্রুতি নির্ভুল ভাবে জানা বা নির্ণয় করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।  এর কারণ কোন কিছুকে সঠিক/নিশ্চিত ভাবে জানার জন্য তার অবস্থান এবং সেই অবস্থানে তার বেগও জানতে হবে। কিন্তু কোয়ান্টামের অনিশ্চয়তা তত্ত্বটি পরিস্কার ভাবে বলে দিচ্ছেঃ প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন একটি কণার অবস্থান যত নির্ভুল ভাবে মাপার চেষ্টা করা যাবে, তার দ্রুতির মাপও হবে তত কম নির্ভুল এবং এর বিপরীত ও সত্য হবে। আবার অনিশ্চয়তার এই সীমা কনিকাটির অবস্থান মাপনের উপরও নির্ভরশীল নয়। সুতরাং হাইজেনের এই তত্ত্বটি হয়ে দাড়িয়েছে বিশ্বের একটি মূলগত অনতিক্রমণীয় ধর্ম। প্রকারন্তরে তাই স্পষ্টত মনে হচ্ছে সব কিছু যেন এক অদৃশ্য জগতের হাতছানিতে বিদ্যমান, এর রহস্য ভেদ আমাদের এই সর্বশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমেও সম্ভব হবে না এবং তার কোন সুযোগ প্রকৃতি আমাদের জন্য খোলা রাখেনি। প্যানইথিজম বা অদ্বৈতবাদের ধারণার সাথে আজকের কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের কোথাও যেন একটা যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায়। দুনিয়ার বিভিন্ন ধর্মের সূফী/যোগীদের মধ্যে অদ্বৈতবাদের একটি ধারা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। প্যানইথিজম এর এই ধারার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি দার্শনিক মতবাদও, ইসলামে সূফীদের এই অদ্বৈতবাদ বা ফানাহফিল্লাহর (আত্ম বিলুপ্তির) পথকে সাংঘাতিক পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অদ্বৈতবাদের একটি ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ঘটনা হচ্ছে মধ্যযুগে মনসুর আল হাজ্জাজের আনাল হক দাবি। এ দাবির মাধ্যমে তিনি সমাজে তুলকালাম বাধিয়ে দেন। হক আল্লাহ তাআলার গুনবাচক নাম হওয়ায় আনাল হকের তাৎপর্য মনে করা হয় নিজেকে খোদা বলে দাবি করা যেটা কুফরি বা খোদাদ্রোহীতার সমপর্যায়ে পড়ে।  হাল্লাজের একটি কবিতা হচ্ছে, “আমি সে (স্রষ্টা) যাকে ভালোবাসি আমি। যাকে আমি ভালোবাসি সে আমি (স্রষ্টা)।” এ দাবি প্রত্যাহারের জন্য প্রচন্ডভাবে চাপ প্রয়োগ করা হলে  অস্বীকার করে তিনি বলেন, “যে সত্যের খোজ আমি লাভ করেছি তাকে মিথ্যা বলব কীভাবে?” যখন তাকে মৃত্যুদন্ডের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, সেখানে জড়ো হওয়া লোকদের দিকে তাকিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে এই প্রার্থনাটি তিনি করেন - “যারা তাদের ধর্মের প্রতি প্রবল ভাবাবেগের বশবর্তি হয়ে এবং তোমার আনুকূল্য লাভের আশায় এভাবে জড়ো হয়েছে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে, হে প্রভু তাদের মাফ করে দাও এবং তাদের প্রতি করুনা করো। আমার কাছে যথার্থই তুমি যা ফাঁস করেছো, যদি তাদের কাছে ফাঁস হতো, তারা এটা করত না, যা করছে। তাদের কাছে যা গোপন রেখেছ আমার কাছে তা গোপন না করলে আমাকে এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হত না।” (সুত্রঃ  ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর “অ্যা হিস্ট্রি অব গড” যেটি যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ বিক্রিত একটি বই।) ইসলামি বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদ মুজাদ্দিদ ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) যুক্তি দেখান, “হাল্লাজ ব্লাসফেমাসের (খোদাদ্রোহীতার) অভিযোগে অভিযুক্ত না হলেও তার কাজটি ছিলো অবিজ্ঞের মতো।” আনাল হক (আমি স্রষ্টা) অথবা ফানাফিল্লাহ (আত্মবিলুপ্তি) এসব ব্যপারে মুজাদ্দিদ আলফেমানি (রহঃ) এর অভিমত, “আধ্যাতিক সাধনার এক পর্যায়ে সাধক দেখতে পান সৃষ্টি এবং স্রষ্টাতে কোন বিভেদ নেই। সব কিছুতেই সে শুধু স্রষ্টাকে দেখতে পায়। এর পরের স্তরটি জিল্লিয়াত, যেখানে সাধক দেখতে পান সব কিছুই মহান আল্লাহ রব্বুলের নূরে (আলোতে/তরঙ্গে) দোল খেয়ে ফিরছে” নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডলের সব কিছুই আল্লাহ পাকের নূরে সৃষ্ট - অনেকের কাছে এটা প্রবাদও। “আল্লাহু নূরু ছামাওয়াতি অল আরদ” - আয়াতটির ব্যাখ্যায় অনেকে এরকমটি বুঝিয়ে থাকেন বা মনে করেন। মুজাদ্দিদ আলফেসানির (রহঃ) মতে, “আধ্যাত্মিক সাধনার তৃতীয় বা শেষ স্তরটি হচ্ছে আবদিয়াত, যে স্তরে সাধক বুঝবে আল্লাহ পাক মহা মহীয়ান, চির গরীয়ান। অনুভূতি দিয়ে তাকে ধরা যায় না। সব চিন্তা, অনুভূতি ব্যর্থ হয়ে তার দুয়ার হতে ফিরে আসে।”

স্পষ্টত এখানে লক্ষণীয় - অত্যাধুনিক কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের সাথে আধ্যাত্মিক সাধনা জগতের মধ্যকার এক গভীর যোগসুত্র আমাদের চোখে ভেসে উঠেছে। পদার্থ ও শক্তি দিয়ে গঠিত মহাবিশ্ব; শক্তি ও ভরের নতুন করে সৃষ্টি নেই, নেই কোন বিনাশ, আছে শুধু রুপান্তর। তার অর্থ সবই অবিনশ্বর।  এ সবই আবার অদৃশ্য জগতের থেকে আগত। আর সবই আলো/তরঙ্গ/নূর। সর্বত্রই স্রষ্টা বিরাজমান। সব চিন্তা, সাধনা, গবেষণা তার দুয়ার হতে ফিরে আসে। “তাকে জানা সম্ভব নয়। এটাই তাকে জানার একমাত্র পথ।” - প্রথম খলিফা আবুবকর (রাঃ)।মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ভাষায়, “নিশ্চই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্ত্বার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দুরভিসারি জিজ্ঞাসা সেখানে বিমুঢ় হয়ে যায় - বিজ্ঞানের সমাগত চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে, এই মহা বিশ্বের একজন নিয়ন্ত্রা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায় - কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।” বিশিষ্ট প্রানপদার্থবিদ ইবারসোল্ডের মতে, “বিজ্ঞানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা, পরমাণু, নক্ষত্র, ছায়াপথ, প্রাণ ও সকল অলীক গুণের অধিকারী মানুষ কেন রয়েছে এই প্রশ্ন কখনও ব্যাখ্যা করবে না। বিজ্ঞান এই মহাবিশ্বের জন্ম সম্পর্কে আপাত দৃষ্টিতে খুবই যুক্তিযুক্ত মহাপ্লাবনিক একটা তত্ত্ব দাঁড় করাতে পারে, তারই ফলে ছায়াপথ, নক্ষত্র, সবকটি গ্রহও পরমাণু সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করতে পারে। কিন্তু কোথা থেকে এই সৃষ্টির জন্য জড় পদার্থ আর শক্তি এসেছে এবং কেন এই মহাবিশ্ব এমনভাবে গঠিত ও সুশৃঙ্খলাবদ্ধ, সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা বা ধারনা বিজ্ঞানে জুটবে না।”

Wednesday, May 22, 2024

ঈমান মজবুত পাকা করার স্বার্থে যা করতে হবে

 ঈমানকে পাকাপোক্ত,  দৃঢ় মজবুতের জন্য নভোমণ্ডল/মহাকাশের  ধারনা থাকাটা প্রত্যেকের জন্যই কেন গুরুত্বপূর্ণ/আবশ্যিক ?

ইমপটেনট ব্যক্তি তুল্য ঈমান বনাম সজীব তরতাজা ঈমানের পার্থক্যটি খুজলে বিষয়টি বুঝতে অতি সহজ হবারই কথা! ইমাম গাজ্জালির মতেঃ মহাকাশ সম্পর্কে যাদের কোনো রকম ধারনাই নেই তাদের ঈমানের স্তর হচ্ছে একজন ইমপটেনট ব্যাক্তির মতই যার মেকিং লাভের অপার মজা সম্পর্কে কোনো ধারনা/অনুভুতি একদমই নেই। কাজেই ভেবে দেখুন না একবারঃ- ঈমানের সত্যিকার স্বাদ/ তৃপ্তি পেতে হলে নভোমণ্ডল সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারনা থাকাটা প্রত্যেক ভালো ঈমানদারদের জন্য একান্ত আবশ্যক/ অপরিহার্য নয় কি?

স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন; 'মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝেনা।'[সুরামু’মিন৪০:৫৭] ঈমানকে সুদৃঢ়, মজবুত ও পাকাপোক্ত করতে দরকার আল্লাহর অসীম শক্তি, ক্ষমতা সম্পর্কে মোটামুটি একটা স্পষ্ট ধারনা থাকা/ তার অসীম সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে কমপক্ষে কিছ্টা হলেও উপলব্ধি।আল্লাহ পাকের সৃষ্ট দৃশ্যমান প্রকৃতি তথা মহাকাশ/ নভোমণ্ডলের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এটা সহজেই অনুধাবন কিন্ত সম্ভব।
মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানের সর্বশেষ চিত্রঃ
[১] সমুদ্র তীরের বালুকণার চেয়ে তারা বেশি। আবার সবচেয়ে ছোট তারাটিও ক্ষুদ্র বালুকনার চেয়ে যে কত প্রকাণ্ড বড় তা কখন ওকি কল্পনা করাও সম্ভব? হাতের মাত্র এক মুষ্টি বালুকনায় বালুকনার সংখ্যা কত হবে? সে ক্ষেত্রে সব সমুদ্রতীরের বালুর সংখ্যা!
প্রথমে দেখা যেতে পারে- সব সমুদ্র তীরের বালুকনার সংখ্যা কত?
শুরুতেই ধরে নিতে হবে,বিশ্বের    সাগরের   তীরে   ঠিক   কি পরিমাণ বালু থাকে।এজন্য সমুদ্র পৃষ্ঠের দৈর্ঘ্য,   প্রস্থ এবং   গভীরতা পরিমাপ করতে হবে।
সেজন্য সাগরের তীরের হিসাব করলে হবে নাহিসাব   করতে   হবে উপকূলীয়   এলাকার   পরিমাপের।
 নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারেন না তেমন,   কারণ উপকূলীয়     এলাকার মাপ বাড়ে কমেস্থির থাকে না।
তারপরেও বিবিসি একজনের সঙ্গে কথা বলেছে যিনি একটি সংখ্যা জানিয়েছেন। উপকূল নিয়ে গবেষণা করে এমন  প্রতিষ্ঠান ডেল্টারসের গবেষক জেনা ডিডনসিটস বলছেনপুরো পৃথিবীর উপকূলের পরিমাপ করা বিশাল দুঃসাধ্য এক      কাজ। ওপেন স্ট্রীটম্যাপের মতো ফ্রিম্যাপ  ব্যবহার   করে   কম্পিউটার  ডাটার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে  বরফাচ্ছন্ন  এলাকা সহ উপকূলীয়  এলাকার দৈর্ঘ্য ১১ লাখ   কিলোমিটারের মতো।
যার মধ্যে তিন লাখ কিলোমিটার এলাকা বালুময় সৈকত।এখন যদি তারার সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করতে হয়,   তাহলে দেখা যাবেমহাবিশ্বে তারার সংখ্যা১০ সেক্সটিলিয়ন,যেখানে  বালুকণার সংখ্যা হবে চার সেক্সটি লিয়ন 
তাহলে এটি ঠিকই যে মহাবিশ্বে  বালুকণার চেয়ে   তারার   সংখ্যা বেশি। সূত্র : বিবিসি
আমাদের সূর্য একটি অতি সাধারণ তারকা। এর আকার তারকাগুলোর গড় আকারের মতোই।আমাদের বাসভূমির তারকা সূর্যের ব্যাস ১৪ লাখ কিলোমিটার। এর অর্থ হলো ১০৯টি পৃথিবী সূর্যের পৃষ্ঠে সাজিয়ে রাখা যায়। এটি এত বড় যে, ১৩ লাখ পৃথিবী এর মধ্যে ভরে রাখা যায়। একটি তারকার বর্ণনা যদি এমন হয়, সেক্ষেত্রে মহাবিশ্বে তারকার সংখ্যা কত? বাস্তবে বিশাল সংখ্যার তারকা নিয়ে একটি ছায়াপথ। তাহলে মহাবিশ্বে তারকা ও ছায়াপথ আসলে কয়টি? Kornreich মহাবিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথ ধরে একটি মোটামুটি হিসাব বের করেছেন ছায়াপথের ১০ হাজার কোটি তারকার সাথে এই সংখ্যা গুণ করলে হয় ১০০অকটিলিয়ন (octillion) তারকা। তার মানে দাঁড়ায়, ১- এরসাথে ২৯টি শূন্য। Kornreich জোর দিয়ে বলেন, এটা সাধারণ হিসাব, তবে গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আরো বেশি। ১৩ অক্টোবর ২০১৬, নাসা থেকে পাওয়া তথ্য হচ্ছে, দুই ট্রিলিয়ন ছায়াপথই আছে মাত্র ১০ শতাংশ মহাবিশ্বের মধ্যে; কিন্তু ছায়াপথগুলোর ৯০ শতাংশের খোঁজ এখনো বাকি। আবার দেখা যায়, সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের চেয়ে ৫০০ গুণ শুধু বড় নয়, সেই সাথে একলাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল, তার ভর ৩০ লাখ সূর্যের সমান হয়ে থাকে। যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে তারকা গণনা করা হয়, সেক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে। সব ছায়াপথ এক করলে সে সব মহাশূন্যের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ স্থান দখল করবে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী পর্যন্ত এর আওতার অনেক বাইরে।
{২} আপনি কি কখনও ভাবতে/কল্পনাও করতে পারেনঃ সেকেন্ডে মহাবিশ্বের পরিধি বাড়ছে ৪৫ মাইল । মুলত মহাবিশ্ব অবিরাম সম্প্রসারিত হয়ে চলছে তা আবার সেকেন্ডে ৭০ মাইলের ও বেশি গতিতে। মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে কেবল এটাই কিন্ত মানুষের কল্পনায়ও ভাবা একেবারেই অসাধ্য/ অসম্ভব। সর্বশেষ বিজ্ঞান কিন্ত বলছেঃ সেকেন্ডে ৭০ মাইলের ও বেশি বেগে মহাবিশ্ব দূরে প্রসারিত হচ্ছে।
১৩ দশমিক  বিলিয়ন বছর আগে ঘটা বিগব্যাঙ থেকে পাওয়া বিকিরণ পরিমাপ করে যে হিসাব বের করা হয়েছিলতার সাথেমিলছে না বর্তমানে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার।নাসা ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সির দেয়া তথ্য অনুযায়ীধারণার চেয়ে  থেকে  শতাংশ দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে।প্রতিসেকেন্ডে৭০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি   প্রতিমেঘাপারসেকে ( মেঘাপারসেক হচ্ছে প্রায়   মিলিয়ন আলোক বর্ষছায়াপথগুলো দুরাপসরএকরছে।দেখাযাচ্ছেঃ  প্রত্যাশিত হিসাবের  চেয়েও দ্রুতগতিতে  সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। প্রসারণশীল মহাবিশ্বের এই অভিক্রিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার উপমার মাধ্যমে সহজেই কিন্ত উপলব্ধি করা যাবে। রাস্তায় চলন্ত একটি গাড়ি যখন কাছে এগিয়ে আসে তখন এর ইঞ্জিনের শব্দের তীব্রতা তীব্রতর হয় এবং গাড়িটি যখন কাছে এসে দূরে অপসারণ করে,তখন শব্দের তীব্রতা নিম্নতর হয়ে থাকে। আলোকের তরঙ্গের আচরণও একইরকম।আলোকের স্পন্দাঙ্ক খুব বেশিসেকেন্ডে চার থেকে সাত লাখ মিলিয়ন। এর রয়েছে বিভিন্নধরনের স্পন্দাঙ্ক। আমাদের দৃষ্টিতে যা বিভিন্ন বর্ণ হিসেবে প্রতিভাত হয় সেগুলো হলো-আলোকের বিভিন্ন স্পন্দাঙ্ক। সর্বনিম্ন স্পন্দাঙ্ক দেখা যায় বর্ণালীর লালের দিকে।তারকা যদিআমাদের দিকে আসে  তাহলে প্রতি সেকেন্ডে আমরা যে স্পন্দাঙ্ক পাব তা বেড়ে যাবে,   যেমনটি শব্দ শ্রোতার   দিকে এগিয়ে আসার সময় ঘটে থাকে। অনুরূপভাবে তারকা যদি আমাদের কাছথেকে দূরে অপসারমাণ হয়সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছেযে   তরঙ্গগুলো পৌঁছাচ্ছে তার  স্পন্দাঙ্ক  হবে দ্রুততর।তারকার আলোর স্পন্দাঙ্ক মেপে এর লাল বিচ্যুতি হলে স্পষ্টত বোঝা যাবে,তারকাগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরাপসরণ   করছে।
এবার একবার ভেবে দেখি- আজ থেকে হাজার বছরের ও আগে নাযিলকৃত কোরআনের সূরা আজ জারিয়ার ৪৭ আয়াতে নভোমণ্ডল প্রসারিত হচ্ছে উল্লিখিত হয়েছে :
‘নভোমণ্ডল নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।’[৫১ঃ৪৭]
একজন জান্নাতবাসির সবচেয়ে ছোট জান্নাতের আকৃ্তি/পরিধি হবে আমাদের পৃথিবীর ১০ গুন। জান্নাতে যারা যাবেন তাদের সুখের ধরন কেউ কল্পনাও করতে পারে কি?
ঈমানদারদের সাধারণত অনেকটা তাচ্ছিল্য করে প্রচলিত কথায় বলা হয়ে থাকেঃ ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ’! কিন্তু আমরা ক’জন ওয়াকিবহাল; ইসলামের সোনালী  যুগে- সমরকন্দ, দামেস্ক, কায়রো আর করডোভায় প্রথম বড় বড় মানমন্দির গড়ে তোলেন আরব মুসলমানেরা। মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ  চালিয়েছেন, যে সব ১২ বছরের ওপরে দীর্ঘায়িত হয়েছিল। সে সময়ের মুসলিম বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞান কোন অবস্থানে পৌঁছেছিল তার বর্ণনা একটি ঘটনায় ফুটে ওঠে। সন্ন্যাসী গারভাট (দ্বিতীয় সিলভেস্ট নামে তিনি ৯৯৯ সালে পোপ হন) যখন কর্ডোভার  মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে খ্রিষ্ট ধর্মাচরণে পুনরায় ফিরে এলেন তখন লোক মুখে প্রচার হয়ঃ তিনি নাকি সেখানে শয়তানের সাথে দহরম পর্যন্ত করে এসেছেন।       
মূলতঃ ঈমানকে শক্তিশালী করার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে  আল্লাহ্‌র ক্ষমতা, শক্তি সর্বোপরি তার সৃষ্টিকে অবলোকন করে এই ধারনা  পাওয়া / বিশ্বাস অর্জন করা- যিনি এসব অলৌকিক কাজ অনায়াসেই সম্পন্ন করতে পারেন বা এসব কিছুই একেবারে শূন্য থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি তা হলে কত বড় ক্ষমতাবান /  অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী?আইনস্টাইনের  ভাষায়ঃ   ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়। বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে যে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্তা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’