Thursday, May 26, 2016

বুশের টুইন টাওয়ার হামলার কৌশল ও কারণ

Wednesday, September 11, 2013


বুশের টুইন টাওয়ার হামলার কৌশল ও কারণ


মুহাম্মদ আলী রেজা

ঐতিহাসিক নয়-এগারোর মহা আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিশ্ব কম্পিত হামলার নেপথ্যে যে যৌক্তিক কারণ ও কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল তার গভীর বিশ্লেষণের জন্য প্রথমেই মনোযোগ এবং দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন আমেরিকার যুগপৎ অভ্যন্তরীণ ঘটনাপ্রবাহের দিকে। ক্লিনটন  তখন মসনদে। আমি বাল্টিমোরে, ঘুম থেকে উঠে একদিন এক অবিশ্বাস্য নাটকীয় সংবাদ জানতে পারি। হোয়াইট হাউজে ইসলামের চাঁদ তারা পতাকা উড়ছে। ভয়ের কিছু ছিল না, কারণ আলকায়েদার জন্ম তখনো হয়নি এবং বিন লাদেনেরও পাত্তা ছিল না যিনি হোয়াইট হাউজে এসে এ ধরনের অঘটন ঘটানোর হিম্মত রাখেন। তবে সে সময় এখানকার মিডিয়ায় একটি ঝড় বয়ে যাচ্ছিল : যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত সম্প্রসারণশীল ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। এ সময়টিতে আমি বাল্টিমোর জন্স হপকিন্সে গবেষণা করছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাল্টিমোরের হোমউড ক্যাম্পাসের লাইব্রেরির বেসমেন্টের ওয়ালের একটি তথ্য আমার চোখে পড়ে : প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে এক শত হাজার মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করছে। মিডিয়ার অন্য সূত্রে জানতে পারি, এই এক লাখ নও মুসলিমের মধ্যে মহিলার সংখ্যা বেশি। পাশ্চাত্য ভাবধারায় লালিত পালিত মুক্ত হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মেয়েরা এত ঝুঁকি নিয়ে কেন ইসলামকে পছন্দ করছে যেখানে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, আত্মসমর্পণ ও ভিন্ন রূপ হওয়ার বিধান। আমেরিকার স্বাধীনতাপ্রাপ্তির সময় জনসংখ্যার বেশির ভাগ ছিল খ্রিষ্টান। এর পর ছিল ইহুদি। অন্যান্য ধর্মের লোক আনুপাতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল না। সরকারিভাবে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, খ্রিষ্টান ও ইহুদি এই দুই ধর্মের পতাকা হোয়াইট হাউজে উড়ানো হবে। ক্লিনটনের  সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি সংখ্যা যেখানে ছয় মিলিয়ন ছিল সে ক্ষেত্রে মুসলমানের সংখ্যা ছয় মিলিয়ন থেকে ধীরে ধীরে সাত মিলিয়নও ছাপিয়ে যায় বলে শোনা যায়। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে হোয়াইট হাউজে তিনটি ধর্মের পতাকা উড়বে। বড় প্রশ্ন হলো : এই হারে ধর্মান্তরিত হলে এর প্রভাব তো অচিরে হোয়াইট হাউজের নির্বাচনের ওপরও পড়তে বাধ্য। মুসলমানদের ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে বা এখানকার মুসলমান অধিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও মন্থর গতি অনায়াসে কার্যকর করা গেলেও ধর্মান্তরিত হওয়ার এই হার বন্ধ করার তো কোনো আইনগত উপায় খোলা নেই। বছরে এক লাখ মানুষের ধর্মান্তরের এই হার যে সময়ের সাথে সাথে আরো গতি পাবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? ভয়ঙ্কর, দানবীয় এমন কোনো ঘটনা সংঘটিত করতে হবে যাতে আমেরিকানরা  সহজে বুঝতে পারবে মুসলমানেরা তাদের এক নম্বর শত্রু, জাতি হিসেবে তারা পৈশাচিক, দানবীয়, বর্বর, ভয়ঙ্কর। কাজেই আমেরিকানদের ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করার উপায় এটিই। এর সাথে যুক্ত হবে মিডিয়ার ব্যাপক প্রচার। ইহুদি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। রেডিও, টিভি, পত্রপত্রিকা, মুভি, ধারাবাহিক নাটক, টকশো, প্রেক্ষাগৃহ সর্বত্রই শুরু করে দেয়া হয় মুসলিম ও আরববিরোধী প্রপাগান্ডার তুফান, যেটি হয়ে দাঁড়ায় টুইন টাওয়ারে ভয়ঙ্কর হামলার মতোই বীভৎস। সিগ ও ওয়্যাগ দ্য ডগ এ দু’টি মুভি থিয়েটারে আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল যা ছিল খুব বেশি মুসলিমবিরোধী। এমনকি পাবলিক টিভিতে এক ঘণ্টার ডকুমেন্টারি ফিল্ম ' জিহাদ ইন আমেরিকা'  শিরোনামে দেখানো হয়। মূল কথা, মিডিয়া সুকৌশলে একটি বার্তা আমেরিকানদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নেয় যে, মুসলমানেরা সন্ত্রাসী, মুসলমান হওয়া মানে সন্ত্রাসী হওয়া এবং এই লক্ষ্যে তারা জিহাদ করছে এই ভূখণ্ডে। এসব প্রপাগান্ডা থেকে এটা সহজেই উপলব্ধি করা যায় ইসলাম ফোবিয়া ইহুদি লবি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে কত বেশি প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০১ সালে নয়-এগারোতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম হামলা হলেও এই একই জায়গায় প্রায় আট বছর আগে ১৯৯৩-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুসলমানেরা সন্ত্রাসী এটা প্রমাণের সূচনার মাধ্যমে নীলনকশা প্রণীত হয়। বিশ্বনন্দিত সাময়িকী রিডার্স ডাইডেস্টে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে এই বিস্ফোরণের ওপর একটি নিবন্ধে বলা হয় : বোমা হামলার জন্য এ কেন্দ্রটি বেছে নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল- এই টুইন টাওয়ারে বিশ্বের সব দেশের এবং সব জাতির লোক অবস্থান করে এবং তাদের সংখ্যা একটি শহরের লোকসংখ্যার কাছাকাছি হবে। অতএব এ কেন্দ্রে কিছু হওয়ার অর্থ হচ্ছে এটি বিশ্বের সব জাতি ও দেশের এবং বিশ্ব অর্থনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। এফবিআই পরিচালক ১৯৯৩ তে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার জন্য অভিযুক্ত করেন ওমর আবদেল রহমানের অনুসারী মুহাম্মাদ সালেহকে। পরে প্রমাণিত হয় ইসরাইলের মোসাদ অপারেটিভ এই হামলার নেপথ্য নায়ক (সূত্র : সঙ্কটাপন্ন সময়ে বিব্রতকর প্রশ্ন- জেমস এস অ্যাডাম)। সিএনএনের প্রথম রিপোর্টে স্বীকার করা হয়, যদি বোমা হামলাকারীরা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ধ্বংস সাধনের পরিকল্পনা করত তাহলে বিস্ফোরক রাস্তার সমতলে বসাত, যার ফলে শত শত লোকের প্রাণহানি হতে পারত বা আহত হতো। বাল্টিমোর নিউট্রেন্ড পত্রিকা লেখে : বোমা হামলাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল, যার ফলে সবচেয়ে কম ক্ষতি হয়, সবচেয়ে কম লোক এর আওতায় পড়ে। অন্য দিকে আবার ভীষণভাবে বৃদ্ধি পায় প্রবলভাবে সাড়া জাগানো খবরের গুরুত্ব। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আসলে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে প্রথমে হামলা ছিল একটি আগাম অভ্যন্তরীণ কৌশল, যার লক্ষ্য ছিল প্রচারমাধ্যমে স্পর্শকাতর অনুভূতি তৈরি করে মুসলমানদের সন্ত্রাসী ব্র্যান্ডে চিত্রিত ও পরিবেশিত করা এবং মুসলমানদের ব্যাপারে আমেরিকানদের সতর্ক ও উত্তেজিত করা। ১৯৯৩ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয় মিডিয়া প্রপাগান্ডা বা সন্ত্রাস। নীলনকশার শেষ বা চূড়ান্ত পর্যায়টি ছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে আছড়ে পড়ল নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে দু’টি যাত্রীবাহী বিমান। অতঃপর আগুন, ধোঁয়া, তাসের ঘরের মতো দু’টি টাওয়ার ভেঙে পড়ল। এ ছবি গোটা বিশ্ব কতবার দেখেছে হিসাব নেই। যেমনটি দেখেছে পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে আর একটি বিমান ভেঙে পড়ার স্থির চিত্র; তবে শুধু স্থির চিত্র। পেন্টাগনের ওপর বিমান ভেঙে পড়ার ভিডিও ফুটেজ বুশ প্রশাসন প্রকাশ করেনি। ‘ওপেন’ ক্যালিফোর্নিয়ার একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যার সদস্যদের মধ্যে আছেন নোয়াম চমস্কি, পিট সিগার, আছেন সাংবাদিক, সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, সন্ত্রাসবাদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা। সিএনএনের একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ‘ওপেন’ দাবি করেছেÑ বিমানের নাক টাওয়ারে স্পর্শের মুহূর্তেই বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছে ককপিটে। ওপেন-এর বক্তব্য বিমানের ককপিটে কী এমন থাকতে পারে যাতে সেখানে ওই রকম বিস্ফোরণ ঘটে। ট্রেড সেন্টারের দু’টি টাওয়ারের প্রতিটি বিমানের ধাক্কা খাবার ঠিক আগ মুহূর্তেই একই ধরনের আগুনের ঝলকানি দেখা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া এরকম নিয়ন্ত্রিতভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব নয়। বিমানে কি তা হলে ক্ষেপণাস্ত্র ছিল? যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন জোন্সের নেতৃত্বে ৭৫ জন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর অভিযোগ নিউ ইয়র্ক ও পেন্টাগনে হামলা যাত্রীবাহী বিমানের নয়, এটা ছিল ভেতর থেকে সংঘটিত ঘটনা। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে অধ্যাপক স্টিভেন বলেন, ভেঙে পড়া টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপ পরীক্ষার পর সেখানে ভবন ধসিয়ে দেয়ার বিস্ফোরক ব্যবহারের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে। জোন্স বলেন, আফগান গুহায় বসে কিছু লোক এবং ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারী এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের এই তত্ত্বকে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মতে, নয়-এগারোর ঘটনা একটি ষড়যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে তা সত্য নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন : পেন্টাগনে আসলে বিমান নয়, রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছিল। কারণ বিমানের যাত্রীদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। কথিত বিমানের জ্যামিতিকভাবে গোলাকার মুখ সৃষ্টি কেবল কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যেই করা সম্ভব। বিশ্বের মানুষকে এ সম্পর্কে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। যাত্রী ও ক্রুদের মৃতদেহ পাওয়া গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অবশ্যই তাদের শনাক্ত করা হতো। যাত্রীবাহী জেট বিমানের ব্লাক বক্স থেকে প্রাপ্ত ড্যাটার সাথে গণিত শাস্ত্রবিদ, ভূকম্পন বিশারদ ও ধ্বংসের ঘটনা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের অভিমতের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের দি বাল্টিমোর সান 'CIA Could be Behind 11 September Terrorist Attack' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কানাডার মন্ট্রিল থেকে প্রকাশিত দি গেজেট পত্রিকায় ডেভিড গোল্ডস্টেইন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য খোদ প্রেসিডেন্ট বুশকে দায়ী করে বিন লাদেনকে এ অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে একাধিক বাস্তবসম্মত যুক্তি দিয়ে বলেছেন, এ কাজ কোনোভাবেই বিন লাদেনকে দিয়ে সম্ভব নয়। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য বর্ণনায় বলেন, এ দু’টি দালান আশপাশে হেলে বা কাত হয়ে পড়ার বদলে ভেঙে নিচে দেবে গেছে। বিমানের আঘাতে ধসে পড়েছে বলে মনে হয়নি বরং মনে হয়েছে পরিকল্পিতভাবে ভবন দু’টি ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ভবনটি একইভাবে ধসে পড়েছে; কিন্তু এই ভবনে কোনো বিমান আঘাত হানেনি। আশপাশের ভবনগুলোর কোনো রকম ক্ষতি ছাড়া কিভাবে তৃতীয় ভবনটি ধসে পড়ল? পেন্টাগনে যে ভবনটি হামলা করেছিল তার ধ্বংসাবশেষের খোঁজ কেন পাওয়া গেল না বা আরোহীদের ছিন্ন ভিন্ন মৃতদেহ ও বিমানের ব্লাক বক্সের খোঁজ মিলল না কেন? ওপেন প্রশ্ন তুলেছে  গোটা বিশ্ব টিভিতে দেখেছে, গল গল করে ঘন সাদা ধোঁয়ার আস্তরণের মধ্যে ভেঙে পড়েছে ট্রেড সেন্টারের টাওয়ার; কিন্তু সাদা ধোঁয়া কেন? ওপেনের দুই বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ কানাডার কারবেল ও ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজির ফ্রেডি সিম্প্যাকসান জানাচ্ছেন, বিস্ফোরকের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড, কার্বন ও সালফারের মিশ্রণ ছিল। তা না হলে এই পরিমাণ ছাইবিহীন সাদা ধোঁয়ার জন্ম হতে পারে না। তা হলে কি দূর নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণও ঘটানো হয়েছিল টাওয়ারে? ওপেন গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে পেন্টাগন বিস্ফোরণ নিয়েও। একটি অত্যাধুনিক নজরদারি ক্যামেরায় তোলা একটি ছবির প্রতিটি ফ্রেম এক সেকেন্ডের ৮০০ ভাগে ভাগ করে ওপেন দেখাচ্ছে নীল আকাশ আর তার পরেই পেন্টাগনের একটি বাহুতে বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ, ভয়াবহ আগুন; কিন্তু বিমানের কোনো চিহ্নই নেই। তা হলে বিমান ভেঙে পড়ল কোথা থেকে? নয়-এগারোর ভয়াল সন্ত্রাসী হামলার দশক পূর্তির পরেও বিবিসি, রয়টার, এএফপি পরিবেশিত সংবাদ : ‘আসলে কী ঘটেছিল ২০০১-এর এই দিনে? সত্যিই কী আলকায়েদা সে দিন মার্কিন শৈর্যে আঘাত হেনেছিল নাকি সবই পাতানো। সে প্রশ্নটি রহস্যময় রয়ে গেছে আজো অনেকের কাছে।’ নাইন-ইলেভেনের কে মূল নায়ক  বুশ না লাদেন? ২০০৫ সালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি স্বীকার করেন, লাদেন কোথায় সে সম্পর্কে তারা প্রাথমিক ধারণা রাখেন; কিন্তু তাকে কৌশলগত কারণে আটক করা হচ্ছে না। তার যুক্তি ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় লাদেন জড়িত এ অভিযোগের সপক্ষে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। আর সে জন্যই তাকে শেষে গ্রেফতার না করে অ্যাবোটাবাদ সেনানিবাসে অভিযান চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ পথ বেছে নিয়েছে কারণ লাদেনের বিচার হলে নাইন-ইলেভেনের এমন কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে যেত, যা আমেরিকানদের জন্য সুখবর হতো না।  ক্লিনটনের  মেয়াদ শেষে জুনিয়র বুশ রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হন। ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হন আলগোর যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রার্থী বেছে নেন কট্টর ইহুদি লিবারম্যানকে। পরিস্থিতির নাটকীয় মোড়ে জুনিয়র বুশ স্পষ্টত দেখতে পান সব ইহুদি ভোট ডেমোক্র্যাটদের পাল্লায় যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবারই কোনো ইহুদি হোয়াইট হাউজের নির্বাচনে প্রার্থিতার মনোনয়ন পায়। নির্বাচনে ভরাডুবি থেকে বাঁচার তার একমাত্র উপায় অবশিষ্ট ছিল মুসলিম আমেরিকানদের ভোট। তিনিই একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যিনি সরাসরি ভোট ভিক্ষা করলেন আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে। তিনি মুসলমান সম্প্রদায়ের অনুকূলে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা আইনে সংযোজন করা হয়েছিল সিক্রেট ইভিডেন্স আর কথিত এই ইভিডেন্সের ফাঁদে ফেলা হতো শুধু মুসলমানদের এবং তাদের বেছে বেছে জেলে ভর্তি করা হতো। বুশ আলগোরের সাথে টিভি বিতর্কে সরাসরি বললেন, তিনি জয়ী হলে সিক্রেট ইভিডেন্স আইন তুলে দেবেন। কারণ তিনি এটাকে পক্ষপাতমূলক মনে করেন। আলগোর জবাবে বলেন, তিনি এটাকে পক্ষপাতমূলক মনে করেন না। [সূত্র : লেখক তখন যুক্তরাষ্ট্রে, টিভি বিতর্ক দর্শক] অতীতে আমেরিকান মুসলিম ভোট অপরিকল্পিতভাবে দুই দলে পড়ত, ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী তারা ভোট দিত; কিন্তু এবারই প্রথম মুসলমানদের ভোট এক পাল্লায় পড়ল। বুশ জয়ী হলেন, নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে ইনভেস্টরস বিজনেস ডেইলি এক নিবন্ধে লিখল : আমেরিকান মুসলমানদের জন্য এটা বিজয়ের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। বুশ ক্ষমতার মসনদে গিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে সিক্রেট ইভিডেন্স বহাল রাখেন আর হোয়াইট হাউজ নির্বাচনকে চিরতরে মুসলিম ভোট প্রভাব বলয়মুক্ত রাখার নীলনকশা হিসেবে নাইন-ইলেভেন নাটক মঞ্চস্থ করেন। মুসলিম উম্মাহর এবং আমেরিকান মুসলমানদের অবশ্য করণীয় হচ্ছে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ধারা সৃষ্টি করা।

লেখক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক

লেখাটি দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় ১১/৯ তারিখে প্রকাশিত।
 নয়াদিগন্তের লিঙ্ক এখানে

No comments:

Post a Comment