Monday, June 20, 2016

বুশের ক্ষত ওবামা ঢাকবেন কিভাবে!

বুশের ক্ষত ওবামা ঢাকবেন কিভাবে!

দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ এবং বিশ্ব মোড়ল হওয়ার পরেও বিশ্ব মানচিত্রে আমেরিকা বলে কোনো দেশেরই অস্তিত্ব নেই। তা হলে আমেকিরান কারা? এই জটিলতা বা অস্পষ্টতার কারণে অনেকে মার্কিনি বলে ডেকে থাকে। বাস্তবে সারা দুনিয়ার লোকেরা যাদের এই মুহূর্তে আমেরিকান বলে জানেন, তারা আর কেউ নন, কেবল উত্তর আমেরিকার একটি দেশ আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের (ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকা) নাগরিক। আসলে কিন্তু উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা এই দুই মহাদেশের সব দেশের লোকই আমেরিকান হওয়ার দাবিদার। যেমনটি আফ্রিকান, এশিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান অর্থাৎ অন্য সবার জন্য প্রযোজ্য। সে ক্ষেত্রে ইউএসএ’র নাগরিকেরা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কেবল নিজেদের আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দেয়ার একচেটিয়া অধিকার হাতিয়ে বা ছিনিয়ে নিয়েছে। আবার মজার বিষয় হলো, এভাবে আমেরিকান হওয়ার মনোপলি বাগিয়ে নেয়ার পরও খোদ আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে কিন্তু অফিসিয়ালি কোনো আমেরিকানই খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাস্যকর বটে? এ আবার কেমন কথা? এ দেশের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি জনস হপকিন্সের এক ছাত্র স্টুডেন্ট ম্যাগাজিনে এক নিবন্ধে লিখেছেন : জন্মগতভাবে আমেরিকান হয়েও অফিসিয়ালি বলতে বা লিখতে পারি না সরাসরি যে, আমি আমেরিকান। কেননা এই সাথে আবার বলতে হয় কিভাবে বা কোন পরিচয়ে আমেরিকান? চায়নিজ, জাপানিজ, স্প্যানিশ, ব্রিটিশ, আফ্রিকান, ইতালীয়, অস্ট্রেলিয়ান ইত্যাদি হরেক রকমের আমেরিকান গিয়ে গড়ে উঠেছে আজকের গোটা আমেরিকান জাতি। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ বা জাতি নেই, যারা আজকের আমেরিকার নাগরিক নয়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকানই হয়ে দাঁড়িয়েছে একমাত্র জাতি যেটি দুনিয়ার সব দেশ ও জাতির এক জগাখিচুড়ি সংমিশ্রণের ফসল। প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের ভাষায়, জাতি হিসেবে আমরা অভিবাসীর জাতি। আবার মজার ব্যাপার হলো, আদিবাসীরা নিজ দেশে থেকেও সরাসরি বলতে পারে না আমেরিকান। ইন্ডিয়ান হিসেবে তাদের পরিচয় দিতে হয়। যদিও ঐতিহাসিভাবে তাদের কেউই এ দেশে ভারত থেকে আসেনি এবং তাদের পূর্বপুরুষের কেউই এমনকি ইন্ডিয়া দেখেনি বা না কোনো ইন্ডিয়ান ভাষা জানত! তার পরেও আজ অবধি তারা এ দেশে ইন্ডিয়ান হিসেবেই বেঁচে বা টিকে আছে। কলম্বাসের এক ঐতিহাসিক ভুলের জন্য আমেরিকার আদিবাসীরা ইন্ডিয়ান খেতাবটি পেয়েছিল। কলম্বাসের সময়ে ইউরোপ জানত না পৃথিবীর মানচিত্রে আমেরিকা বলে কোনো জায়গা আছে। ইতালীয় নাবিক কলম্বাস ভারতে আগমনের সমুদ্র রুট আবিষ্কারের জন্য নৌযাত্রা করেন। ভুলক্রমে তিনি এক নতুন জনপদে পৌঁছে যান, যেটি পরে জানা যায় উত্তর আমেরিকা। ভারতে পৌঁছে গেছি ধারণা থেকে পরে এই দেশের সবাইকে তিনি ইন্ডিয়ান বলে ডাকেন আর সেই থেকে আজো তারা ইন্ডিয়ান বা আমেরিকান।

যদিও ঐতিহাসিকভাবে এ কথা প্রচারিত যে, কলম্বাস আমেরিকার আবিষ্কারক কিন্তু মার্কিন মুল্লুকের বিভিন্ন জনপদে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ ও গবেষণায় এমন কিছু ঐতিহাসিক তথ্য ও উপাদান বেরিয়ে এসেছে, যার ফলে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক এবং ঐতিহাসিকেরা ইতোমধ্যে দাবি করেছেন, ইতালীয় নাবিক কলম্বাস আমেরিকার প্রকৃত আবিষ্কারক নন। কলম্বাসের বহু আগে প্রায় ৫০০ বছর আগেই আফ্রিকান ও স্প্যানিশ আরব মুসলমানেরা আমেরিকার মাটিতে পৌঁছে যান। শিলালিপি, আরবীয় মুদ্রা ও অস্ত্রপাতির সন্ধান পেয়ে গবেষকেরা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির এক কনফারেন্সে এর কিছু নমুনা ও তথ্য দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল।

আমেরিকার সর্বত্রই নিট অ্যান্ড কিন। তার পরও এ দেশে কোনো ডাস্টবিন নেই। অবাক হলাম জেনে যে, ডাস্টবিন কী তা-ও অনেকে জানে না। ব্রিটিশ শব্দ ডাস্টবিন এটাকে এরা বলে ট্রাশ ক্যান। টয়লেট/ল্যাট্রিনও নেই এ দেশে। তা হলে উপায়? এটা কি পরীর দেশ? শৌচাগারের সামনে লেখা রেস্টরুম সাথে পুরুষ/মহিলার ছবি। এ দেশে কোনো গ্রাউন্ড ফোর নেই। ব্রিটিশদের কাছে ফার্স্ট ফোর হচ্ছে দোতলা, ফোর্থ ফোর পাঁচতলা আর এখানে একতলা একতলাই এবং দশতলা দশতলাই। লিফটে পাঁচ নম্বর বোতাম টিপলে ছয়তলা নয় পাঁচতলায় পৌঁছে যাবেন। আমরা হিসাব এবং কাজের সুবিধার্থে ইঞ্চি, গজ, ফুট, মাইল ঝেঁটিয়ে বিদায় দিয়েছি কিন্তু আমেরিকানরা পুরনোটাই আঁকড়ে ধরে বসে আছে। ওজন মাপের জন্য গ্রাম, কিলোগ্রাম বদলে পাউন্ড, তাপমাত্রা মাপতে সেলসিয়াসের বদলে ফারেন হাইট ডিগ্রি ব্যবহৃত হয়। রাস্তার ডান দিকে ড্রাইভ করে আর বাতি নেভাতে সুইচে নিচের দিকে আর জ্বালাতে ওপরের দিকে চাপ দেয়া হয়। এসব খুঁটিনাটি বিষয় হলেও হঠাৎ করে অবাক হতে হয় অন্য একটি ব্যাপারে। রিলেটিভিটি সাইন্স বলছে, কেবল আলোর চেয়ে গতিবেগ বেশি হলে সময় বা কারো বয়স ওঠানামা করতে পারে। কিন্তু অন্য দেশ থেকে এখানে এসেই বয়স এক বছর পর্যন্ত কমে বা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এটা হয় ভুলক্রমে। আমরা তারিখ লিখতে প্রথমে দিন পরে মাস উল্লেখ করি। ১২/১ বলতে আমাদের কাছে জানুয়ারির ১২ তারিখ আর ওখানে ১ ডিসেম্বর।

আপনি কেমন আছেন জিজ্ঞাসায় এখানে বলবে, What’s up? অথবা How you doing? বেশ কিছু আমেরিকানের ইংরেজি শব্দ তাদের নিজস্ব! আমি তামাশা করছি বলতে বলবে I am Kidding। যদিও Kidding এর বদলে ব্রিটিশ শব্দ Joking। আমেরিকানরা এ যাবৎ হাত দিয়ে ফুটবল খেলেছে। আর পা দিয়ে ফুটবল খেলার নাম দিয়েছে সকার। কেন এ দেশের লোকেরা পা দিয়ে না খেলে হাত দিয়ে ফুটবল খেলে? তার ইতিহাস লিখেছে স্থানীয় ম্যাগাজিন। অতীতে পৃথিবীর অন্য সব দেশের মতোই আমেরিকানরা পা দিয়েই ফুটবল খেলত। দেশের শীর্ষস্থানীয় দু’দলের মধ্যে উত্তেজনাকর খেলা। সেরা দু’দলের মধ্যে এক দলের দলনেতা ছিলেন সে সময়কার শীর্ষ ফুটবল ব্যক্তিত্ব। খেলা চলছে তো চলছেই। কেউই গোল করতে পারছে না। এক দলনেতা যিনি সে সময় সেরা ফুটবলার, আকস্মিক বল হাতে নিয়ে দৌড় দিয়ে হুঙ্কার ছেড়ে চ্যালেঞ্জ করলেন : তোমাদের হারাতে আমাদের পায়ের দরকার নেই হাত দিয়েই হারিয়ে দেবো। এভাবে পায়ের বদলে হাত দিয়ে ফুটবল শুরু হলো আর আদি ফুটবল খেলা হলো সকার। বাল্টিমোর শহরে গাড়ি ড্রাইভ করছেন, এক স্থানে চোখে পড়বে, রাস্তার পাশে উঁচু করে দেয়াল গেঁথে বড় করে লেখা : আপনার সন্তানকে শিখান- সতীত্ব নোংরা শব্দ নয়। আমাদের মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, ভার্জিনিটি নোংরা শব্দ, এ কোন ধরনের কথা হলো? যে মেয়ের ছেলে বন্ধু নেই তার খেতাব ভার্জিন। মেয়েটির কোনো গুণ, যোগ্যতা এবং আকর্ষণ নেই বলেই সে বয়ফ্রেন্ড পায়নি। এ ধরনের মনোভাব থেকে জন্ম হয়েছে ‘ভার্জিনিটি নোংরা শব্দ’। সে জন্য অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে দেয়াল লিখনের মাধ্যমে। আমাদের সমাজে সতী শব্দটি কোনোকালেই খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হয়নি, আর এটা কখনো ভাবাও যায় না। এই সমাজে নোংরামি কোনপর্যায়ে উন্নীত হলে সতীত্বকে নোংরা শব্দ মনে করার আবহাওয়া সৃষ্টি হতে পারে? বেসবল খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম। খেলা দেখছি। ক’টি মেয়েকে ক্যান্ডি উপহার দিতে দেখলাম। একটি হাতে পেয়ে খুলে দেখি গায়ে একটি কাগজে লেখা PURE LOVE এবং ফোন নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা। বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, ডেটিং, লিভ টুগেদার- হরেক রকম ব্যাপারস্যাপার। সব পথ ঘুরেফিরে এখন সামাজিক আন্দোলন PURE LOVE পেতে। জাতীয় টিভির এক অনুষ্ঠানে এক ব্যক্তি দাবি করছে, সে ১০০ জনের সাথে ডেটিং করেছে। গুনে গুনে ১০০ পূরণ করে বলছে শুনে পরিচালকের প্রশ্ন : কেন? জবাব হলো, মহিলার সংখ্যা এত বেশি কুকুরের মতো। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও এটি সমাজের একটি প্রতিচ্ছবিও বটে।

সব রাজ্যেই দেখা যাচ্ছে পাত্রীরা তাদের চেয়ে কম শিক্ষিত পাত্রদের জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করছেন। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, মেয়েরা শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেদের থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। নারী বিশেষজ্ঞদের অভিমত : নিজেদের স্বার্থেই মেয়েদের এই সুবিধা গ্রহণ করা উচিত নয়। তার পরও এখন পর্যন্ত নির্বাচনে কোনো মহিলা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সৌভাগ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য দিকে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, সংসদে বিরোধী দলনেত্রী, প্রধান বিরোধী দলনেত্রী, সংসদের স্পিকার নারী। যেন নারী নেতৃত্বের স্বর্গভূমিতে অবগাহন করি আমরা।

ক্লিনটন ক্ষমতায়। হোয়াইট হাউজে ইসলামের চাঁদ তারা পতাকা উড়ছে। লাদেন-আলকায়েদা তখনো আত্মপ্রকাশ করেনি। কে ঘটাল এটা? মিডিয়ায় হই চই পড়ে গেল। পরের দিন পতাকা উধাও হয়ে যায় এবং মিডিয়ায় এটা প্রকাশিত হলে তার পর থেকেই এটা আকাশে শোভা পাচ্ছে। অবাক কাণ্ড : হোয়াইট হাউজ জানে না কারা পতাকা চুরি করেছিল এবং পরে কে বা কারা এটা যথাস্থানে উড়িয়েছে? স্বাধীনতার পর থেকে হোয়াইট হাউজের আকাশে খ্রিষ্টান এবং ইহুদি এই দু’ধর্মের পতাকা উড়ত। কারণ হিসেবে তখন এই দু’ধর্মের লোক ছিল অধিক সংখ্যায়। অন্য কোনো ধর্মের লোক এদের ধারেকাছে ছিল না। দেখতে দেখতে এক এক করে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে ইহুদিদের সমান হয়ে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। তখন সিদ্ধান্ত হয় এখন থেকে তিন ধর্মের পতাকা হোয়াইট হাউজে উড়বে। ওই সময় মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত একটি খবর ছিল আমেরিকায় দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম ইসলাম। জনস হপকিনস আমেরিকার সেরা মেডিক্যাল রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়। এর বাল্টিমোরের হোমউড় ক্যাম্পাসের লাইব্রেরির বেসমেন্টের দেয়ালে আটকানো একটি তথ্য আমার চোখে পড়ে। লেখা ছিল : প্রতি বছর আমেরিকায় এক শত হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করছে। পরে মিডিয়ায় আবার দেখতে পাই পুরুষের চেয়ে মহিলারা ইসলাম গ্রহণে এগিয়ে। মুভি, নাটক, সিরিয়াল সর্বত্র একই কথা ও প্রপাগান্ডা- মুসলিম পরিবার, সমাজ ও দেশে নারীরা দাসীর মতো জীবন কাটায়। এত হই চই ও প্রচারের পরেও নারীরা নারী স্বাধীনতার দেশে কেন এই ধর্মে আসছে? সেই মুহূর্তে আমেরিকান ইতিহাসে এক চাঞ্চল্যকর নাটকীয় ঘটনা ঘটে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন- আলগোরের সাথে জুনিয়র বুশের। বুশ নিশ্চিত হলেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী আলগোর ইহুদি ভোট পাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে খ্রিষ্টান ভোট প্রায় সমান্তরালভাবে দু’দলের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ইহুদি লবি এত বেশি সক্রিয় এবং সুসংগঠিত যে, তারা যে দিকে সমর্থন দেয় সেই পক্ষই জয়ী হয়। আর মুসলিম ভোট অপরিকল্পিত হওয়ায় প্রত্যেকে নিজস্ব পছন্দে ভোট দিত। ফলে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এই ভোটের প্রভাব ছিল একেবারে শূন্য। আর সে জন্য মুসলিম ভোট কোনোকালে ফ্যাক্টর হিসেবে কখনো বিবেচিত হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বুশ লক্ষ করলেন, সব মুসলিম ভোট যদি তার পাল্লায় আসে কেবল তখনই তিনি ইহুদি লবির সমর্থন ব্যতিরেকে জিততে পারেন। বুশ মুসলিম ভোট পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এই সময়ে মুসলিম সমাজের একমাত্র প্রাণের দাবি ছিল : জননিরাপত্তা আইনে সেক্রেট অ্যাজেন্ডা রহিত করা, কেননা এই আইনের ফাঁকফোকরে ফেলে শুধু মুসলমান আমেরিকানদের জেলে ভর্তি করা হতো। আর এ উদ্দেশ্যেই আইনটি বানানো হয়েছিল। বুশ মুসলমানদের প্রাণের এই দাবি হৃদয় দিয়ে অনুভব করলেন। ঘোষণা দিলেন ক্ষমতায় গেলে এই আইন তুলে নেবেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বুশ বিতর্কে প্রসঙ্গটি তুলে বললেন : জননিরাপত্তা আইনে সেক্রেট এভিডেন্স তিনি ডিসক্রিমিনেটরি (বিভেদমূলক) মনে করেন। ক্ষমতায় গেলে তিনি এটি উঠিয়ে দেবেন। জবাবে আলগোর বলেন- তিনি এটা মনে করেন না। আমেরিকায় মুসলিম ভোট এবারই প্রথম একপাল্লায় পড়ে। বুশ বিজয়ী হন। এবার নির্বাচনে মুসলিম ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে জয় ছিনিয়ে নেয় বলে মিডিয়া এটি গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করে। নির্বাচিত হয়ে বুশ কিন্তু মুসলমানদের দেয়া তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা তো করেনইনি উপরন্তু ৯/১১ এর মতো সুদূরপ্রসারী নীলনকশা প্রণয়ন করেন এটা নিশ্চিত করতে, যাতে ভবিষ্যতে মুসলিম ভোট ব্যাংক ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে পড়ে।

বুশের প্রত্যক্ষ মদদে যে ৯/১১ সংঘটিত হয়েছিল গত ক’বছর এই বার্ষিকীতে আমি ডকুমেন্টসহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি নয়া দিগন্তে। উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন জোন্স এবং ৭৫ জন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর সেই বক্তব্য, নিউ ইয়র্ক ও পেন্টাগনে হামলা যাত্রীবাহী বিমানের নয়, এটা ছিল ভেতর থেকে সংঘটিত ঘটনা, আফগান গুহায় বসে কিছু লোক এবং ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারী এমন ঘটনা ঘটিয়েছে এটা হতে পারে না। সরকারের এই তত্ত্বকে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি।

সার্বিক বিবেচনায় বুশের একটি তত্ত্বই প্রাধান্য পেয়েছিল : ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে তার মতো যেন মুসলিম ভোট ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে না হয়। লাদেনকে বন্দী করে বিচারের কাঠগড়ায় না এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বের অভিজ্ঞ মহল জানে, এ কাজ লাদেনের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের দি বাল্টিমোর সান এবং কানাডার দি গেজেট এ জন্য বুশ এবং সিআইএকে সরাসরি দায়ী করেছে।

ইতিহাস যাকেই দায়ী করুক, ৯/১১-এর বাহানায় সিআইএ নির্যাতন-নিপীড়নের যে তাণ্ডব চালিয়েছে তার চিত্র বিশ্ববাসী প্রমাণসহ দেখতে শুরু করেছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মাটি থেকেই প্রমাণ উঠে আসছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অন্তহীন যুদ্ধের এ ভয়াল চিত্রটি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলো- সভ্যতার সঙ্ঘাত ও যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় যুক্তরাষ্ট্র কত বেশি বাড়াবাড়ি করেছে। গুয়ানতানামো বে নামের নিপীড়ন কেন্দ্রের চিহ্ন ওবামা মুছে ফেলতে চান, কিন্তু মানবতার এই আর্তনাদ তিনি থামাবেন কিভাবে। এই ক্ষত ঢাকবেন কী দিয়ে!


লেখক : সাবেক শিক্ষক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- See more at: http://www.dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=OTM3ODI=&s=Nw==#sthash.NMDE0tng.dpuf

No comments:

Post a Comment