নয়া দিগন্ত
আজকের বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি কী?
মুহাম্মাদ আলী রেজা
ঢাকা, রবিবার,২১ মে ২০১৭
আরবিতে ‘জুমলাহ’ মানে বাক্য। দুনিয়ার সব মুসলমান কুরআন পাকের বাক্যকে বাক্য (জুমলাহ) না বলে আয়াত বলে। আয়াত মানে নিদর্শন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধিক বিক্রীত বই হচ্ছে, ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়ের ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’। এতে বর্ণিত হয়েছে, ‘কুরআন পাকে সব সময়ই বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আল্লাহ পাকের নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্য উদঘাটনের বিষয়কে। আর এ কারণে ইসলামের অনুসারীরা যুক্তি ও কারণকে এড়িয়ে না গিয়ে গভীর মনোযোগ এবং বিশেষ কৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ করছে। এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পরে দেখা যায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারাল সায়েন্স) মুসলমানদের এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, যা কখনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ বা সংঘর্ষ ঘটায়নি। অথচ খ্রিষ্টান ধর্মে সেটা দেখা গেছে।’
‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ গ্রন্থে প্রফেসর রাও লিখেছেন, ‘কুরআন পাকে যতগুলো আয়াত মৌলিক ইবাদত সম্পর্কিত তার চেয়ে অনেক বেশি সেই সম্পর্কিত আয়াত যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রকৃতি বা সৃষ্টিরহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা, পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের। আরবীয় মুসলমানেরা এই প্রেরণায় প্রকৃতির রহস্য নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শুরু করে দিয়েছিলেন, যেটা বর্তমান সময়ের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও গবেষণার মূলনীতির ভিত্তি নির্মাণ করে, যা অজ্ঞাত ছিল গ্রিকদের কাছে।’
"যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে, (তাঁরা বলে) হে আমাদের প্রভু, আপনি এসব কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সকল পবিত্রতা আপনার-ই। আমাদেরকে আপনি দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করুন"। [সূরা আলে ইমরান - ১৯১]
মূূলত প্রকৃতির সব কিছুই আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন; যেমন বায়ু, পানি, গাছপালা, মাটি, প্রাণী, সমুদ্র, পাহাড় এবং আরো কত অগণিত জিনিস। এসবই আল্লাহ পাকের বিশেষ উপহার। এগুলোর কোনো কিছুই মানুষ বানাতে পারে না। তেমনি কুরআন পাকের কোনো বাক্যের সমতুল্য কোনো বাক্যও মানুষের পক্ষে বানানো সম্ভব নয়। জগতের সব মুসলমান কুরআনের বাক্যকে শুধু ‘বাক্য’ না বলে এ কারণে ‘আয়াত’ (আল্লাহ পাকের নিদর্শন) বলে অভিহিত করেন বলে উল্লেখ করেছেন ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার বই ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’-এ। আজকের বিজ্ঞানের উদ্ভাবক একটি ধর্ম, এই ঐতিহাসিক রেকর্ডটি সংরক্ষিত রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগার ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’-এ। ঐতিহাসিকভাবে আদিতে বিজ্ঞান বলতে শুধু পদার্থবিজ্ঞানকে বোঝানো হতো। বর্তমানেও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, তত্ত্ব এবং আবিষ্কৃত কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি ব্যতিরেকে বিজ্ঞানের অপরাপর শাখাগুলো হয় ‘ভোঁতা’, না হয় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, রোবট, ইন্টারনেট অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সব কিছু প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পদার্থবিজ্ঞানেরই ফসল বা অবদান। প্রাণ পদার্থবিজ্ঞান, ভূপদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি হরেকরকম নামকরণ থেকে সহজেই ধারণা করা যায়, মূল বিজ্ঞান পরিবারে পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থান তার কেন্দ্রবিন্দুতে। চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় জন হপকিন্সে প্রাণ পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করেছি। কিন্তু কোথাও শুনিনি, দেখিনি, পাইনি পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবক একটি ধর্ম! বিশ্বের সচেতন এবং অভিজ্ঞ মহল অবগত যে, রসায়ন, গণিত এবং জ্যোতিষশাস্ত্রে ইসলামের অনুসারীরা অভূতপূর্ব যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবক ইসলাম ধর্ম- এ রেকর্ডটি কোথায় লিপিবদ্ধ রয়েছে তা দেখার জন্য লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে ঘুরে আসা যেতে পারে।
২০০ বছরেরও বেশি পুরনো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই পাঠাগারের সব বই ওয়াশিংটন ডিসির তিনটি ভবনে সংরক্ষিত। ১৮৯৭ সালের জেফারসন ম্যাগনিফিসেন্ট ভবনটি শুধু দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। প্রথম তলায় স্থায়ী প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে ডড়ৎষফ ভধসড়ঁং : ঞযব এরধহঃ ইরনষব ্ ঞযব এরধহঃ ইরনষব ড়ভ গধরহম। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিশাল সংগ্রহশালার মধ্য থেকে ২০০টি ঐতিহাসিক পুস্তক ভবনটির দ্বিতীয় তলার ট্রেজারি গ্যালারিতে সংরক্ষিত রয়েছে। এই তলার মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ। গম্বুজের মধ্যে একেকটি চিত্রের নিচে একেকটি দেশের নাম। ব্যতিক্রম চোখে পড়ল, এত দেশের মধ্যে এক স্থানে শুধু একটি ধর্মের নাম। কোন দেশ কী উদ্ভাবন করেছে, সেটি গাইড আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। দেশের নামের বদলে যে চিত্রের নিচে ‘ইসলাম’ লেখা ছিল, সেটি দেখিয়ে গাইড আমাদের বললেন, এটার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবন করেছে ইসলাম ধর্ম। ওই সময়ে বাল্টিমোরে আইসিএনএ-এর (ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা) বার্ষিক সম্মেলন চলছিল। প্রফেসর রাওয়ের লেখা ‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ বইটি হাতে পাই। লেখকের বর্ণনা মতে, রবার্ট ব্রিফল্ট তার বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য মেকিং অব হিউম্যানিটিতে অনেক উদাহরণ পরিবেশন করে সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে- ‘আমাদের বিজ্ঞান আরব মুসলমানদের কাছে ঋণী শুধু এটুকুর জন্য নয় যে, বিজ্ঞানকে তারা কেবল চমকপ্রদ আবিষ্কার অথবা বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপহার দিয়েছে। বিজ্ঞান আরবীয় সংস্কৃতির কাছে আরো অনেক বেশি ঋণী। বিজ্ঞান তার নিজের অস্তিত্বের জন্য ঋণী।’ একই লেখক কথাটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, গ্রিকরা নিয়মাবদ্ধ ও সর্বজনীন করা এবং তত্ত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ বাতলে দিয়েছিল, কিন্তু ধৈর্য ধরে গবেষণার পদ্ধতি, সন্দেহাতীত জ্ঞানকে পুঞ্জীভূতকরণ, বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষুদ্র ব্যাপারেও বিশদ পরীক্ষণ পদ্ধতি, বিস্তারিত ও দীর্ঘ প্রসারিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান- এসবই গ্রিক মানসিক ধাত বা মেজাজে ছিল বহিরাগত। আমরা যেটাকে আজ বিজ্ঞান বলি, তার উত্থান ইউরোপে হয়েছিল নতুন পদ্ধতি গবেষণার ফলে এবং পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপন ও গণিতশাস্ত্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে পদ্ধতিগুলো গ্রিকদের কাছে অজানা ছিল... ইউরোপকে আরবীয় মুসলমানেরা এসব মূলনীতি ও পদ্ধতিগুলো পরিচয় করিয়ে দেয়। রবার্ট ব্রিফল্ট যেসব উদাহরণ থেকে এই মন্তব্যে পৌঁছেছেন সেসবের মধ্যে রয়েছে : মুসলিম উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইবনে বতুতা বিশ্বের সব অঞ্চল থেকে উদ্ভিদ সংগ্রহ করে যে গ্রন্থ লিখেছেন সেটিকে World famous : The Giant Bible & The Giant Bible of Maing-তে অধ্যবসায়ের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অপর দিকে আল বিরুনি ৪০ বছর ভ্রমণ করেছিলেন মানিকবিদ্যা সম্পর্কিত (মিনারোলজি) নমুনা সংগ্রহের জন্য এবং মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত চালিয়েছেন, যেসব পর্যবেক্ষণ ১২ বছর দীর্ঘায়িত হয়েছিল। পক্ষান্তরে অ্যারিস্টটল পদার্থবিজ্ঞানের ওপর একটি বই লিখেছেন, এমনকি কোনো পরীক্ষা না চালিয়েই এবং প্রকৃতির ইতিহাসের ওপর গ্রন্থ রচনা করেছেন একেবারেই নিশ্চিত না হয়ে, অসতর্কতার সাথে বলেছেন- প্রাণীদের চেয়ে মানুষের অর্ধেক দাঁত রয়েছে এ তথ্য অতি সহজেই অনুসন্ধান করা যেত। গ্যালেন, যিনি ক্লাসিক্যাল অ্যানাটমির নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ, জানিয়েছিলেন যে নিচের চোয়াল দু’টি হাড় দিয়ে গঠিত। এ প্রতিবেদনটি শতাব্দী ধরে গ্রহণ করে নেয়া হয়েছিল একেবারে কোনো আপত্তি ছাড়াই, যখন পর্যন্ত না আবদুল লতিফ কষ্ট স্বীকার করে মানুষের কঙ্কাল পরীক্ষা করে এর সত্য-মিথ্যা যাচাই করলেন।
নিচের তালিকা বলে দিচ্ছে বিজ্ঞান জগতে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানঃ
রসায়নের জনক— জাবির ইবনে হাইয়ান
> বিশ্বের সেরা ভূগোলবিদ— আল-বিরুনি
> আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক— ইবনে সিনা
> হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল আবিষ্কারক—ইবনুল নাফিস
> বীজগণিতের জনক— আল-খাওয়ারিজমি
> পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী— আল-ফারাবি
> আলোক বিজ্ঞানের জনক— ইবনে আল-হাইসাম
> এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক— ওমর খৈয়াম
> সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী— আল-কিন্দি
> গুটিবসন্ত আবিষ্কারক— আল-রাযী
> টলেমির মতবাদ ভ্রান্ত প্রমাণকারী —আল-বাত্তানি
> ত্রিকোণমিতির জনক — আবুল ওয়াফা
> স্টাটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা — ছাবেত ইবনে কোরা
> পৃথিবীর আকার ও আয়তন নির্ধারণকারী—বানু মুসা
> মিল্কিওয়ের গঠন শনাক্তকারী — নাসিরুদ্দিন তুসি
> এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী — আবু কামিল
> ল’ অব মোশনের পথ প্রদর্শক— ইবনে বাজ্জাহ
> ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক — ইবনে ইউনূস
> পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী— আল-ফরগানি
> পৃথিবীর প্রথম নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কনকারী— আল-ইদ্রিসী
> বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবিষ্কারক —আল-জাজারি
> সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমাণকারী—আল-জারকালি
> বীজগণিতের প্রতীক উদ্ভাবক — আল-কালাসাদি
স্পষ্টত ঐতিহাসিক বাস্তবতা বলছে, ধর্ম বিজ্ঞানবিরোধী এবং এ দুয়ে সহাবস্থান সাংঘর্ষিক, অন্যান্য ধর্মের সাথে এ ধরনের বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলেও ইসলামের ব্যাপারে এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, সত্যিকার বিজ্ঞান বলতে আজ আমরা যেটাকে বলে থাকি এবং বুঝে থাকি, ইসলামের অনুসারীরাই সেই আদি বিজ্ঞানের উদ্ভাবক।
আবার ইতিহাস বলছে, বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৮৫৯ সালে একটি মসজিদের অংশ হিসেবে। মরক্কোর এই কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয়টি হচ্ছে ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। গিনেস বুকের রেকর্ড অনুসারেও মরক্কোর ফেজ নগরীর কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাতেমা নামে এক মহীয়সী নারী পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সব অর্থ ব্যয় করেছিলেন তার সমাজের লেখকদের জন্য একটি মসজিদ তৈরির পেছনে। এই মসজিদ হয়ে ওঠে ধর্মীয় নির্দেশনা এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোচনার স্থান। মসজিদটি পুরোপুরি নির্মাণে লেগে যায় ২৭৮ বছর। ইতালির বোনায় ১০৮৮ সালে প্রথম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তারও আগে কারওয়াইন হয়ে ওঠে এক বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। ফেজকে তখন বলা হতো ‘বাগদাদ অব দ্য ওয়েস্ট’।
The oldest existing, and continually operating educational institution in the world is the University of Karueein, founded in 859 AD in Fez, Morocco. The University of Bologna, Italy, was founded in 1088 and is the oldest one in Europe.
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ গ্রন্থে প্রফেসর রাও লিখেছেন, ‘কুরআন পাকে যতগুলো আয়াত মৌলিক ইবাদত সম্পর্কিত তার চেয়ে অনেক বেশি সেই সম্পর্কিত আয়াত যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রকৃতি বা সৃষ্টিরহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা, পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের। আরবীয় মুসলমানেরা এই প্রেরণায় প্রকৃতির রহস্য নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শুরু করে দিয়েছিলেন, যেটা বর্তমান সময়ের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও গবেষণার মূলনীতির ভিত্তি নির্মাণ করে, যা অজ্ঞাত ছিল গ্রিকদের কাছে।’
"যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে, (তাঁরা বলে) হে আমাদের প্রভু, আপনি এসব কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সকল পবিত্রতা আপনার-ই। আমাদেরকে আপনি দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করুন"। [সূরা আলে ইমরান - ১৯১]
মূূলত প্রকৃতির সব কিছুই আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন; যেমন বায়ু, পানি, গাছপালা, মাটি, প্রাণী, সমুদ্র, পাহাড় এবং আরো কত অগণিত জিনিস। এসবই আল্লাহ পাকের বিশেষ উপহার। এগুলোর কোনো কিছুই মানুষ বানাতে পারে না। তেমনি কুরআন পাকের কোনো বাক্যের সমতুল্য কোনো বাক্যও মানুষের পক্ষে বানানো সম্ভব নয়। জগতের সব মুসলমান কুরআনের বাক্যকে শুধু ‘বাক্য’ না বলে এ কারণে ‘আয়াত’ (আল্লাহ পাকের নিদর্শন) বলে অভিহিত করেন বলে উল্লেখ করেছেন ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার বই ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’-এ। আজকের বিজ্ঞানের উদ্ভাবক একটি ধর্ম, এই ঐতিহাসিক রেকর্ডটি সংরক্ষিত রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগার ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’-এ। ঐতিহাসিকভাবে আদিতে বিজ্ঞান বলতে শুধু পদার্থবিজ্ঞানকে বোঝানো হতো। বর্তমানেও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, তত্ত্ব এবং আবিষ্কৃত কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি ব্যতিরেকে বিজ্ঞানের অপরাপর শাখাগুলো হয় ‘ভোঁতা’, না হয় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, রোবট, ইন্টারনেট অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সব কিছু প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পদার্থবিজ্ঞানেরই ফসল বা অবদান। প্রাণ পদার্থবিজ্ঞান, ভূপদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি হরেকরকম নামকরণ থেকে সহজেই ধারণা করা যায়, মূল বিজ্ঞান পরিবারে পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থান তার কেন্দ্রবিন্দুতে। চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় জন হপকিন্সে প্রাণ পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করেছি। কিন্তু কোথাও শুনিনি, দেখিনি, পাইনি পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবক একটি ধর্ম! বিশ্বের সচেতন এবং অভিজ্ঞ মহল অবগত যে, রসায়ন, গণিত এবং জ্যোতিষশাস্ত্রে ইসলামের অনুসারীরা অভূতপূর্ব যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবক ইসলাম ধর্ম- এ রেকর্ডটি কোথায় লিপিবদ্ধ রয়েছে তা দেখার জন্য লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে ঘুরে আসা যেতে পারে।
২০০ বছরেরও বেশি পুরনো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই পাঠাগারের সব বই ওয়াশিংটন ডিসির তিনটি ভবনে সংরক্ষিত। ১৮৯৭ সালের জেফারসন ম্যাগনিফিসেন্ট ভবনটি শুধু দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। প্রথম তলায় স্থায়ী প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে ডড়ৎষফ ভধসড়ঁং : ঞযব এরধহঃ ইরনষব ্ ঞযব এরধহঃ ইরনষব ড়ভ গধরহম। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিশাল সংগ্রহশালার মধ্য থেকে ২০০টি ঐতিহাসিক পুস্তক ভবনটির দ্বিতীয় তলার ট্রেজারি গ্যালারিতে সংরক্ষিত রয়েছে। এই তলার মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ। গম্বুজের মধ্যে একেকটি চিত্রের নিচে একেকটি দেশের নাম। ব্যতিক্রম চোখে পড়ল, এত দেশের মধ্যে এক স্থানে শুধু একটি ধর্মের নাম। কোন দেশ কী উদ্ভাবন করেছে, সেটি গাইড আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। দেশের নামের বদলে যে চিত্রের নিচে ‘ইসলাম’ লেখা ছিল, সেটি দেখিয়ে গাইড আমাদের বললেন, এটার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবন করেছে ইসলাম ধর্ম। ওই সময়ে বাল্টিমোরে আইসিএনএ-এর (ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা) বার্ষিক সম্মেলন চলছিল। প্রফেসর রাওয়ের লেখা ‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ বইটি হাতে পাই। লেখকের বর্ণনা মতে, রবার্ট ব্রিফল্ট তার বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য মেকিং অব হিউম্যানিটিতে অনেক উদাহরণ পরিবেশন করে সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে- ‘আমাদের বিজ্ঞান আরব মুসলমানদের কাছে ঋণী শুধু এটুকুর জন্য নয় যে, বিজ্ঞানকে তারা কেবল চমকপ্রদ আবিষ্কার অথবা বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপহার দিয়েছে। বিজ্ঞান আরবীয় সংস্কৃতির কাছে আরো অনেক বেশি ঋণী। বিজ্ঞান তার নিজের অস্তিত্বের জন্য ঋণী।’ একই লেখক কথাটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, গ্রিকরা নিয়মাবদ্ধ ও সর্বজনীন করা এবং তত্ত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ বাতলে দিয়েছিল, কিন্তু ধৈর্য ধরে গবেষণার পদ্ধতি, সন্দেহাতীত জ্ঞানকে পুঞ্জীভূতকরণ, বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষুদ্র ব্যাপারেও বিশদ পরীক্ষণ পদ্ধতি, বিস্তারিত ও দীর্ঘ প্রসারিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান- এসবই গ্রিক মানসিক ধাত বা মেজাজে ছিল বহিরাগত। আমরা যেটাকে আজ বিজ্ঞান বলি, তার উত্থান ইউরোপে হয়েছিল নতুন পদ্ধতি গবেষণার ফলে এবং পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপন ও গণিতশাস্ত্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে পদ্ধতিগুলো গ্রিকদের কাছে অজানা ছিল... ইউরোপকে আরবীয় মুসলমানেরা এসব মূলনীতি ও পদ্ধতিগুলো পরিচয় করিয়ে দেয়। রবার্ট ব্রিফল্ট যেসব উদাহরণ থেকে এই মন্তব্যে পৌঁছেছেন সেসবের মধ্যে রয়েছে : মুসলিম উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইবনে বতুতা বিশ্বের সব অঞ্চল থেকে উদ্ভিদ সংগ্রহ করে যে গ্রন্থ লিখেছেন সেটিকে World famous : The Giant Bible & The Giant Bible of Maing-তে অধ্যবসায়ের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অপর দিকে আল বিরুনি ৪০ বছর ভ্রমণ করেছিলেন মানিকবিদ্যা সম্পর্কিত (মিনারোলজি) নমুনা সংগ্রহের জন্য এবং মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত চালিয়েছেন, যেসব পর্যবেক্ষণ ১২ বছর দীর্ঘায়িত হয়েছিল। পক্ষান্তরে অ্যারিস্টটল পদার্থবিজ্ঞানের ওপর একটি বই লিখেছেন, এমনকি কোনো পরীক্ষা না চালিয়েই এবং প্রকৃতির ইতিহাসের ওপর গ্রন্থ রচনা করেছেন একেবারেই নিশ্চিত না হয়ে, অসতর্কতার সাথে বলেছেন- প্রাণীদের চেয়ে মানুষের অর্ধেক দাঁত রয়েছে এ তথ্য অতি সহজেই অনুসন্ধান করা যেত। গ্যালেন, যিনি ক্লাসিক্যাল অ্যানাটমির নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ, জানিয়েছিলেন যে নিচের চোয়াল দু’টি হাড় দিয়ে গঠিত। এ প্রতিবেদনটি শতাব্দী ধরে গ্রহণ করে নেয়া হয়েছিল একেবারে কোনো আপত্তি ছাড়াই, যখন পর্যন্ত না আবদুল লতিফ কষ্ট স্বীকার করে মানুষের কঙ্কাল পরীক্ষা করে এর সত্য-মিথ্যা যাচাই করলেন।
নিচের তালিকা বলে দিচ্ছে বিজ্ঞান জগতে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানঃ
রসায়নের জনক— জাবির ইবনে হাইয়ান
> বিশ্বের সেরা ভূগোলবিদ— আল-বিরুনি
> আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক— ইবনে সিনা
> হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল আবিষ্কারক—ইবনুল নাফিস
> বীজগণিতের জনক— আল-খাওয়ারিজমি
> পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী— আল-ফারাবি
> আলোক বিজ্ঞানের জনক— ইবনে আল-হাইসাম
> এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক— ওমর খৈয়াম
> সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী— আল-কিন্দি
> গুটিবসন্ত আবিষ্কারক— আল-রাযী
> টলেমির মতবাদ ভ্রান্ত প্রমাণকারী —আল-বাত্তানি
> ত্রিকোণমিতির জনক — আবুল ওয়াফা
> স্টাটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা — ছাবেত ইবনে কোরা
> পৃথিবীর আকার ও আয়তন নির্ধারণকারী—বানু মুসা
> মিল্কিওয়ের গঠন শনাক্তকারী — নাসিরুদ্দিন তুসি
> এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী — আবু কামিল
> ল’ অব মোশনের পথ প্রদর্শক— ইবনে বাজ্জাহ
> ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক — ইবনে ইউনূস
> পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী— আল-ফরগানি
> পৃথিবীর প্রথম নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কনকারী— আল-ইদ্রিসী
> বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবিষ্কারক —আল-জাজারি
> সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমাণকারী—আল-জারকালি
> বীজগণিতের প্রতীক উদ্ভাবক — আল-কালাসাদি
স্পষ্টত ঐতিহাসিক বাস্তবতা বলছে, ধর্ম বিজ্ঞানবিরোধী এবং এ দুয়ে সহাবস্থান সাংঘর্ষিক, অন্যান্য ধর্মের সাথে এ ধরনের বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলেও ইসলামের ব্যাপারে এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, সত্যিকার বিজ্ঞান বলতে আজ আমরা যেটাকে বলে থাকি এবং বুঝে থাকি, ইসলামের অনুসারীরাই সেই আদি বিজ্ঞানের উদ্ভাবক।
আবার ইতিহাস বলছে, বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৮৫৯ সালে একটি মসজিদের অংশ হিসেবে। মরক্কোর এই কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয়টি হচ্ছে ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। গিনেস বুকের রেকর্ড অনুসারেও মরক্কোর ফেজ নগরীর কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাতেমা নামে এক মহীয়সী নারী পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সব অর্থ ব্যয় করেছিলেন তার সমাজের লেখকদের জন্য একটি মসজিদ তৈরির পেছনে। এই মসজিদ হয়ে ওঠে ধর্মীয় নির্দেশনা এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোচনার স্থান। মসজিদটি পুরোপুরি নির্মাণে লেগে যায় ২৭৮ বছর। ইতালির বোনায় ১০৮৮ সালে প্রথম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তারও আগে কারওয়াইন হয়ে ওঠে এক বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। ফেজকে তখন বলা হতো ‘বাগদাদ অব দ্য ওয়েস্ট’।
The oldest existing, and continually operating educational institution in the world is the University of Karueein, founded in 859 AD in Fez, Morocco. The University of Bologna, Italy, was founded in 1088 and is the oldest one in Europe.
বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে স্বনামধন্য আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মূলত আদিতে ছিল একটি মসজিদ। একটি মসজিদ হিসেবে এটির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু মসজিদ জ্ঞানচর্চার মূলকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো এটি ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয়ে শেষে একটি বিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।
‘ইসলামের এক গৌরবময় কীর্তি হচ্ছে কুরআন, হাদিস ও মুসলিম বিধান শাস্ত্র ফিকাহর অধ্যয়ন অনুশীলনের অনুরূপ অন্যসব জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনাকেও সমান আসন ও মর্যাদা দিয়েছে এবং মসজিদের মধ্যেই তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’ পাশ্চাত্য চিন্তাবিদের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্টত উপলব্ধি করা যায় দুনিয়ার সুখ, কল্যাণের জন্য মুসলমানেরা কাজ করছে আর তার বিনিময়ে আখেরাতের কল্যাণ লাভে তারা সফল হবে। ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে মেকিং লাভের জন্য পুরস্কৃত হবে’ রাসূলুুল্লাহ সা:-এর কাছ থেকে এ কথা শোনার পর সাহাবিরা জানতে চাইলেন, ‘যে কাজে আমরা সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি এবং মজা পাই তাতেও আমরা প্রতিদান পাবো?’ উত্তরে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তোমরা যদি এটা অনির্ধারিত পন্থায় নিতে তাহলে কি সে জন্য শাস্তি পেতে না?’ জবাবে উপস্থিত সাহাবিরা যখন বললেন ‘অবশ্যই পেতাম’, শুনে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তোমরা যে নির্ধারিত পন্থায় এটা উপভোগ করছো, সে জন্য তোমাদের পুরস্কৃত করা হবে।’ ইসলামে এমনকি জ্ঞানীদের ঘুমকেও ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
লেখক : সাবেক শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments:
Post a Comment