Friday, September 6, 2019

বিশ্ব সভ্যতার মূল কাঠামো গঠণে ইবাদতের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ?

     বিশ্ব সভ্যতার  মূল কাঠামো গঠণে ইবাদতের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ?
  প্রচলিত বিশ্বাস ও ধারনা হচ্ছে উপাসনা বা ইবাদত করা হয় একমাত্র পরকালে স্বর্গ বা বেহেশত লাভের জন্য। তাই উপাসনা/ ইবাদত একমাত্র পরকাল কে কেন্দ্র করে আবর্তিত।ইহকালের জীবনে মানবসভ্যতা ইবাদত থেকে কি পাচ্ছে সে বিষয়টা গৌণ বা উপেক্ষিত। মূলত শিক্ষা ও বিজ্ঞান এই দুই কাঠামোর উপরে আজকের বিশ্বসভ্যতা তিলে তিলে গড়ে উঠেছে এবং ইতিহাস বলছে ইসলামে আল্লাহ্‌র প্রতি ইবাদতের প্রক্রিয়া/পদ্ধতি বিশ্বে শিক্ষা, জ্ঞান ও বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা বাড়িয়ে মানব জাতিকে আজকের সভ্যতা উপহার দিয়েছে। তবে যে প্রশ্নটা আসা একেবারেই স্বাভাবিকঃ উপাসনা বা ইবাদতে তো কেবলমাত্র স্রষ্টার প্রশস্তি, প্রশংসা আর গুণকীর্তনই করা হয়ে থাকে। আর সে পদ্ধতি/প্রক্রিয়া কিভাবে বিশ্বকে বিজ্ঞানে ও শিক্ষায় সভ্য করে আজকের বিশ্ব সভ্যতা নির্মাণের পথ দেখিয়েছে?আসলে ইসলামে ইবাদতের ধারনাটাই গতনাগতিক প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাস/ধারনা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। শুরুতে মসজিদে জ্ঞান চর্চা ছিল অন্যতম বড় ইবাদত।সে কারনে
১)বর্তমান মুসলিম বিশ্বে স্বনামধন্য আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মূলত আদিতে ছিল একটি মসজিদ। মসজিদ হিসেবে এটির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু মসজিদ জ্ঞানচর্চার মূলকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো এটি ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয়ে শেষে একটি বিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।
    বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৮৫৯ সালে একটি মসজিদের অংশহিসেবে। মরক্কোর এই কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয়টি হচ্ছে ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়।গিনেস বুকের রেকর্ড অনুসারেও মরক্কোর ফেজ নগরীর কারওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাতেমা নামে এক মহীয়সী নারী পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সব অর্থ ব্যয় করেছিলেন তার সমাজের লেখকদের জন্য একটি মসজিদ তৈরির পেছনে। এই মসজিদ হয়ে ওঠে ধর্মীয় নির্দেশনা এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোচনার স্থান। মসজিদটি পুরোপুরি নির্মাণে লেগে যায় ২৭৮ বছর। ইতালির বোনায় ১০৮৮ সালে প্রথম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তারও আগে কারওয়াইন হয়ে ওঠে এক বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়।ফেজকে তখন বলা হতো ‘বাগদাদ অব দ্য ওয়েস্ট’।
The oldest existing, and continually operating educational institution in the world is the University of Karueein, founded in 859 AD in Fez, Morocco. The University of Bologna, Italy, was founded in 1088 and is the oldest one in Europe.
'পৃথিবীর মধ্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও'- এ ধরনের আয়াতের প্রেরণায় মুসলামানেরা তাদের ইবাদতখানা পবিত্র মসজিদকেও বিজ্ঞান চর্চা ও অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করেছেন।
 মুজাদ্দেদ ইমাম গাজ্জালি রহ: লিখেছেন ‘কোনো মুসলমান যদি প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিাক্ষা শেষে মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে, সে ধর্মীয় শিক্ষারই সওয়াব লাভ করবে।' 
      ‘ইসলামের এক গৌরবময় কীর্তি হচ্ছে কুরআন, হাদিস ও মুসলিম বিধান শাস্ত্র ফিকাহর অধ্যয়ন অনুশীলনের অনুরূপ অন্যসব জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনাকেও সমান আসন ও মর্যাদা দিয়েছে এবং মসজিদের মধ্যেই তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’ 
২)ইবাদতের নির্যাস হচ্ছে জিকির (স্রষ্টাকে স্মরন)।ইবাদতের মানসে কেবলমাত্র এই কাজটি করতে যেয়ে ইসলামের অনুসারীরা আজকের বিজ্ঞানের জন্ম দেয় যে রেকর্ডটি লাইব্রেরী অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত আছে। আসলে ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে আল্লাহ্‌র জিকির(স্মরণ)। নামাজে/প্রার্থনায় স্রষ্টার যে সব প্রশস্তি, গুণকীর্তন হয় এর সবই কিন্ত তাকে স্মরণের জন্যই। আবার আল্লাহ্‌কে স্মরণ করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা / মাধ্যম হচ্ছে তার সৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ, সৃষ্টি কৌশলের উপরে চিন্তা ও গবেষণা করে এই বিশ্বাস/ সিদ্বান্তে উপনীত হওয়া যে যিনি এর স্রষ্টা তিনি কত বড় মাপের ক্ষমতাবান হলেই কেবল মাত্র তাঁর পক্ষেই এরকম অলৌকিক কিছু করা সম্ভবপর। কার্যত দেখা যাচ্ছে বিশ্বের বা প্রকৃতির সব কিছু নিয়েই গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা বড় ধরনের ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহ পাককেই স্মরণ করা যাচ্ছে এবং মুল ইবাদতের দাবি পূরণ করছে। আবার এ প্রক্রিয়ায় এক ঢিলে দু’ পাখি ধরা হচ্ছে- একদিকে বিশ্ব জগতের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচনে স্রষ্টার অপার ক্ষমতা হৃদয়ঙ্গম করে তাকে স্মরণ/জিকিরের মাধ্যমে সামগ্রিক ইবাদতের আসল শর্ত পুরন করা হচ্ছে সেই সাথে আবার সৃষ্টি রহস্য জেনে/উন্মোচন করে বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মানব জাতিকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জিত হচ্ছে। 'পৃথিবীর মধ্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও'- এধরনের আয়াতের প্রেরণায় মুসলামানেরা তাদের ইবাদতখানা পবিত্র মসজিদকেও বিজ্ঞানচর্চা ও অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করেছেন। একমাত্র এ কারনে ইসলাম মানবজাতিকেউপহার দিতে সক্ষম হয়েছে আজকের প্রচলিত বিজ্ঞানকে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধিক বিক্রীত বই হচ্ছে, ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়ের ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’। এতে বর্ণিত হয়েছে,‘কুরআন পাকে সব সময়ই বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছেআল্লাহ পাকের নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্য উদঘাটনের বিষয়কে। আর এ কারণে ইসলামের অনুসারীরা যুক্তি ও কারণকে এড়িয়ে না গিয়ে গভীর মনোযোগ এবং বিশেষ কৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ করছে। এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পরে দেখা যায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারালসায়েন্স) মুসলমানদের মধ্যে এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, যা কখনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ বা সংঘর্ষ ঘটায়নি। অথচ খ্রিষ্টান ধর্মে সেটা দেখা গেছে।’ ‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ গ্রন্থে প্রফেসর রাও লিখেছেন,‘কুরআন পাকে যতগুলো আয়াত মৌলিক(ফরজ)ইবাদত সম্পর্কিত তার চেয়ে অনেক বেশি সেই সম্পর্কিত আয়াত যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রকৃতিবা সৃষ্টিরহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা,পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের। আরবীয় মুসলমানেরা এই প্রেরণায় প্রকৃতির রহস্য নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শুরু করে দিয়েছিলেন, যেটা বর্তমান সময়ের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও গবেষণার মূলনীতির ভিত্তি নির্মাণ করে, যা অজ্ঞাত ছিল গ্রিকদের কাছে।’
"যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে‏ গবেষণা করে, (তাঁরা বলে) হে আমাদের প্রভু, আপনি এসব কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেন নি। সকল পবিত্রতা আপনার-ই। আমাদেরকে আপনি দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করুন"। [সূরা আলে ইমরান - ১৯১]

মূলত প্রকৃতির সব কিছুই আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন; যেমন বায়ু, পানি, গাছপালা, মাটি, প্রাণী, সমুদ্র, পাহাড় পর্বত এবং আরো কত কি? এসবই আল্লাহ পাকের বিশেষ উপহার। এগুলোর কোনো কিছু মানুষ বানাতে পারে না। আজকের বিজ্ঞানের উদ্ভাবক একটি ধর্ম, এই ঐতিহাসিক রেকর্ডটি সংরক্ষিত রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগার লাইব্রেরী অব কংগ্রেসে। ঐতিহাসিকভাবে আদিতে বিজ্ঞান বলতে শুধু পদার্থবিজ্ঞানকে বোঝানো হতো। বর্তমানেও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, তত্ত্ব এবং আবিষ্কৃত কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি ব্যতিরেকে বিজ্ঞানের অপরাপর শাখাগুলো হয় ‘ভোঁতা’, না হয় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, রোবট, ইন্টারনেট অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সব কিছু কিন্ত প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পদার্থবিজ্ঞানেরই ফসল বা অবদান। প্রাণ পদার্থবিজ্ঞান, ভূপদার্থবিজ্ঞান,মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি হরেকরকম নামকরণ থেকে সহজেই ধারণা করা যায়, মূল বিজ্ঞান পরিবারে পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থান তার কেন্দ্রে। চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে শিক্ষকতা করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় জন্স হপকিন্সে প্রাণ পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করেছি কিন্তু কোথাও শুনিনি, দেখিনি, পাইনি পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবক একটি ধর্ম।! বিশ্বের সচেতন এবং অভিজ্ঞ মহল অবগত যে, রসায়ন, গণিত এবং জ্যোতিষশাস্ত্রে ইসলামের অনুসারীরা অভূতপূর্ব যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবক ইসলাম ধর্ম এ রেকর্ডটি কোথায় লিপিবদ্ধ রয়েছে তা দেখার জন্য লাইব্রেরী অব কংগ্রেসে ঘুরে আসা যেতে পারে।২০০ বছরেরও বেশি পুরনো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই পাঠাগারের সব বই ওয়াশিংটন ডিসির তিনটি ভবনে সংরক্ষিত। ১৮৯৭ সালের জেফারসন ম্যাগনিফিসেন্ট ভবনটি শুধু দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখাহয়েছে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিশাল সংগ্রহশালার মধ্য থেকে ২০০টি ঐতিহাসিক পুস্তক ভবনটির দ্বিতীয় তলার ট্রেজারি গ্যালারিতে সংরক্ষিত রয়েছে। এই তলার মাঝখানেএকটি বড় গম্বুজ। গম্বুজের মধ্যে একেকটি চিত্রের নিচে একেকটি দেশের নাম। ব্যতিক্রম চোখে পড়ল, এতদেশের মধ্যে এক স্থানে শুধু একটি ধর্মের নাম। কোন দেশ কী উদ্ভাবন বাআবিস্কার করেছে, সেটি গাইড আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। দেশের নামের বদলে যে চিত্রের নিচে ‘ইসলাম’ লেখা ছিল, সেটি দেখিয়ে গাইড আমাদের বলেন, এটার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবন করেছে ইসলাম ধর্ম। ওই সময়েবাল্টিমোরে ICNA (ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা) বার্ষিক সম্মেলন চলছিল। প্রফেসর রাওয়ের লেখা ‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ বইটি হাতে পাই। লেখকের বর্ণনা মতে, রবার্ট ব্রিফল্ট তার বিখ্যাত বই দ্য মেকিং অব হিউম্যানিটিতে অনেক উদাহরণ পরিবেশন করে সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে‘আমাদের বিজ্ঞান আরব মুসলমানদের কাছে ঋণী শুধু এটুকুর জন্য নয় যে, বিজ্ঞানকে তারা কেবল চমকপ্রদ আবিষ্কার অথবা বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপহার দিয়েছে। বিজ্ঞান আরবীয় সংস্কৃতির কাছে আরো অনেক বেশি ঋণী। বিজ্ঞান তার নিজের অস্তিত্বের জন্য ঋণী।’ একই লেখক কথাটির ব্যাখ্যায়বলেছেন, গ্রিকরা নিয়মাবদ্ধ ও সর্বজনীন করা এবং তত্ত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ বাতলে দিয়েছিল, কিন্ত ধৈর্য ধরে গবেষণার পদ্ধতি, সন্দেহাতীত জ্ঞানকে পুঞ্জীভূতকরণ, বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষুদ্র ব্যাপারেও বিশদ পরীক্ষণ পদ্ধতি, বিস্তারিত ও দীর্ঘ প্রসারিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান এসবই গ্রিকমানসিক ধাত বা মেজাজে ছিল বহিরাগত। আমরা যেটাকে আজ বিজ্ঞান বলি, তার উত্থান ইউরোপে হয়েছিল নতুন পদ্ধতি গবেষণার ফলে এবং পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপন ও গণিতশাস্ত্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে পদ্ধতিগুলো গ্রিকদের কাছে অজানা ছিল... ইউরোপকে আরবীয় মুসলমানেরা এসব মূলনীতি ওপদ্ধতিগুলো পরিচয় করিয়ে দেয়। রবার্ট ব্রিফল্ট যেসব উদাহরণ থেকে এই মন্তব্যে পৌঁছেছেন সেসবের মধ্যে রয়েছে : মুসলিম উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইবনে বতুতা বিশ্বের সব অঞ্চল থেকে উদ্ভিদ সংগ্রহ করে যে গ্রন্থ লিখেছেন সেটিকে World famous : The Giant Bible & The Giant Bible of Maing তে অধ্যবসায়ের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অপর দিকে আল বিরুনি ৪০ বছর ভ্রমণ করেছিলেন খনিজবিদ্যা সম্পর্কিত (মিনারোলজি) নমুনা সংগ্রহের জন্য এবং মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমনসব পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত চালিয়েছেন, যেসব পর্যবেক্ষণ ১২ বছর দীর্ঘায়িত হয়েছিল। পক্ষান্তরে অ্যারিস্টটল পদার্থবিজ্ঞানের ওপর একটি বই লিখেছেন, এমনকি কোনো পরীক্ষা না চালিয়েই এবং প্রকৃতির ইতিহাসেরওপর গ্রন্থ রচনা করেছেন একেবারেই নিশ্চিত না হয়ে, অসতর্কতার সাথে বলেছেন প্রাণীদের চেয়ে মানুষেরঅর্ধেক দাঁত রয়েছে এ তথ্য অতি সহজেই অনুসন্ধান করা যেত। গ্যালেন, যিনি ক্লাসিক্যাল অ্যানাটমির নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ, জানিয়েছিলেন যে নিচের চোয়াল দু’টি হাড় দিয়ে গঠিত। এ প্রতিবেদনটি শতাব্দীধরে গ্রহণ করে নেয়া হয়েছিল একেবারে কোনো আপত্তি ছাড়াই, যখন পর্যন্ত না আবদুল লতিফ কষ্ট স্বীকারকরে মানুষের কঙ্কাল পরীক্ষা করে এর সত্য-মিথ্যা যাচাই করলেন।

নিচের তালিকা বলে দিচ্ছে বিজ্ঞান জগতে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানঃ

* রসায়নের জনক— জাবির ইবনে হাইয়ান
* বিশ্বের সেরা ভূগোলবিদ— আল-বিরুনি

* আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক— ইবনে সিনা

* হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল আবিষ্কারক—ইবনুল নাফিস

* বীজগণিতের জনক— আল-খাওয়ারিজমি

* পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী— আল-ফারাবি

*আলোক বিজ্ঞানের জনক— ইবনে আল-হাইসাম

* এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক— ওমর খৈয়াম

*সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী— আল-কিন্দি

* গুটিবসন্ত আবিষ্কারক— আল-রাযী

* টলেমির মতবাদ ভ্রান্ত প্রমাণকারী —আল-বাত্তানি
*ত্রিকোণমিতির জনক — আবুল ওয়াফা
*স্টাটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা — ছাবেত ইবনে কোরা
* পৃথিবীর আকার ও আয়তন নির্ধারণকারী—বানু মুসা
* মিল্কিওয়ের গঠন শনাক্তকারী — নাসিরুদ্দিন তুসি
*এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী — আবু কামিল
* ল’ অব মোশনের পথ প্রদর্শক— ইবনে বাজ্জাহ
*ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক — ইবনে ইউনূস
* পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী— আল-ফরগানি
* পৃথিবীর প্রথম নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কনকারী— আল-ইদ্রিসী
* বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবিষ্কারক —আল-জাজারি
* সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমাণকারী—আল-জারকালি

*বীজগণিতের প্রতীক উদ্ভাবক — আল-কালাসাদি
স্পষ্টত ঐতিহাসিক বাস্তবতা বলছে, ধর্ম বিজ্ঞানবিরোধী এবং এ দুয়ে সহাবস্থান সাংঘর্ষিক, অন্যান্য ধর্মের সাথে এ ধরনের বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলেও ইসলামের ব্যাপারে এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, সত্যিকার বিজ্ঞান বলতে আজ আমরা যেটাকে বলে থাকি এবং বুঝে থাকি, ইসলামের অনুসারীরা তাদের ধর্মের ইবাদতের প্রয়োজনে এই আদি বিজ্ঞানের উদ্ভাবক।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একমাত্র ইসলামই তার ইবাদতখানাকে জ্ঞান বিজ্ঞানের অনুশীলন কেন্দ্র বানিয়ে বিশ্বকে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়েছে সেই সাথে ইবাদতের ফলস্বরূপ আদি বিজ্ঞান [পদার্থ বিজ্ঞান] উদ্ভাবন করে আজকের বিশ্বকে বৈজ্ঞানিক সভ্যতা অর্জনের পথ বাতলিয়ে দিয়ে সভ্য করেছে।
মুসলিমগণ তাদের প্রতিবেশীকে যতো তাড়াতাড়ি জয় করেছে,ততো তাড়াতাড়ি জয় করেছে বিজ্ঞান জগতকে। (১) প্রাচীন মিসর, চীন কিংবা ভারতে আমরা সুশৃঙ্খল বৈজ্ঞানিক রীতি-পদ্ধতি দেখতে পাই না। প্রাচীন গ্রীসে মাত্র এর সামান্য উপস্থিতি দেখা যায়। পুনর্বার এর অনুপস্থিতি চোখে পড়ে। কিন্তু আরবদের এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান-স্পৃহা প্রবল ছিলো। তাদেরকেই আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করা যায়
(২) মধ্যযুগের প্রথম অংশে আরব ছাড়া আর কোন জাতিই মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে এতোখানি অবদান রাখতে পারেনি। এর জন্য আরব উপদ্বীপের সকল আরব কৃতিত্বের দাবিদার। কয়েক শতাব্দী ধরে আরবি ছিল জ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চার ভাষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রগতির হাতিয়ার। কেবল দূরপ্রাচ্য ছাড়া গোটা বিশ্ব সভ্যতা দ্বারা উপকৃত হয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শতক অবধি আরবি ভাষায় দর্শন, চিকিৎসা, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ভূগোলের উপর যত রচনা হয়েছে মানবজাতির কোন ভাষায় তা হয়নি। (৩) যখন রোম, গ্রিক ,কার্তেজ বা ফরাসি জগতে বিদ্যার কোনো বালাই ছিল না, তখন ইউরোপের উপকণ্ঠে মুসলমানরা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে যাচ্ছিলেন। যেগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইউরোপের শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। মূলত এরই মাধ্যমে ইউরোপ সভ্যতার আলো দেখতে পায়। এটাই অত্যন্ত স্পষ্ট যে, স্পেনের আরবরাই পশ্চিম ইউরোপে আধুনিক শিক্ষার মৌলিক উৎস।
(৪) তথ্যসূত্রঃ
(১) জন উইলিয়াম ড্রেপার, দি ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট অফ ইউরোপ, খন্ড ১, পৃ. ৩৩৫।
(২) জওহরলাল নেহেরু, গ্লিম্পসেস অফ ওয়াল্ড হিস্ট্রি, পৃ. ১৫৫।
(৩) ফিলিপ কে হিট্টি, দি হিস্ট্রি অফ এ্যারাবস, পৃ. ৫৮৮।
(৪) স্টাডিজ ইন দ্য হিস্ট্রি অফ মেডিয়েভেল সাইন্স, সি এইচ হাসকিন, পৃ. ৩।

No comments:

Post a Comment