ঈমানকে পাকাপোক্ত, দৃঢ় মজবুতের জন্য নভোমণ্ডল/মহাকাশের ধারনা থাকাটা প্রত্যেকের জন্যই কেন গুরুত্বপূর্ণ/আবশ্যিক ?
ইমপটেনট ব্যক্তি তুল্য ঈমান বনাম সজীব তরতাজা ঈমানের পার্থক্যটি খুজলে বিষয়টি বুঝতে অতি সহজ হবারই কথা! ইমাম গাজ্জালির মতেঃ মহাকাশ সম্পর্কে যাদের কোনো রকম ধারনাই নেই তাদের ঈমানের স্তর হচ্ছে একজন ইমপটেনট ব্যাক্তির মতই যার মেকিং লাভের অপার মজা সম্পর্কে কোনো ধারনা/অনুভুতি একদমই নেই। কাজেই ভেবে দেখুন না একবারঃ- ঈমানের সত্যিকার স্বাদ/ তৃপ্তি পেতে হলে নভোমণ্ডল সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারনা থাকাটা প্রত্যেক ভালো ঈমানদারদের জন্য একান্ত আবশ্যক/ অপরিহার্য নয় কি?
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন; 'মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝেনা।'[সুরামু’মিন৪০:৫৭] ঈমানকে সুদৃঢ়, মজবুত ও পাকাপোক্ত করতে দরকার আল্লাহর অসীম শক্তি, ক্ষমতা সম্পর্কে মোটামুটি একটা স্পষ্ট ধারনা থাকা/ তার অসীম সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে কমপক্ষে কিছ্টা হলেও উপলব্ধি।আল্লাহ পাকের সৃষ্ট দৃশ্যমান প্রকৃতি তথা মহাকাশ/ নভোমণ্ডলের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এটা সহজেই অনুধাবন কিন্ত সম্ভব।
মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানের সর্বশেষ চিত্রঃ
[১] সমুদ্র তীরের বালুকণার চেয়ে তারা বেশি। আবার সবচেয়ে ছোট তারাটিও ক্ষুদ্র বালুকনার চেয়ে যে কত প্রকাণ্ড বড় তা কখন ওকি কল্পনা করাও সম্ভব? হাতের মাত্র এক মুষ্টি বালুকনায় বালুকনার সংখ্যা কত হবে? সে ক্ষেত্রে সব সমুদ্রতীরের বালুর সংখ্যা!
প্রথমে দেখা যেতে পারে- সব সমুদ্র তীরের বালুকনার সংখ্যা কত?
শুরুতেই ধরে নিতে হবে,বিশ্বের স ব সাগরের তীরে ঠিক কি পরিমাণ বালু থাকে।এজন্য সমু দ্র পৃষ্ঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা পরিমাপ করতে হবে।
সেজন্য সাগরের তীরের হিসাব করলে হবে না, হিসাব করতে হবে উপকূলীয় এলাকার পরিমাপের।
এ নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারেন না তেমন, কারণ উপকূলীয় এলাকার মাপ বাড়ে কমে, স্থির থাকে না।
তারপরেও বিবিসি একজনের সঙ্গে কথা বলেছে যিনি একটি সংখ্যা জানিয়ে ছেন। উপকূল নিয়ে গবেষণা করে এম ন প্রতিষ্ঠান ডেল্টারসের গবেষক জেনা ডিডনসিটস বলছেন, পুরো পৃথিবীর উপকূলের পরিমাপ করা বিশাল দুঃসাধ্য এক কা জ। ওপেন স্ট্রীটম্যাপের মতো ফ্রিম্যাপ ব্যবহার করে কম্পিউটার ডাটার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বরফাচ্ছন্ন এলাকা সহ উপকূলীয় এলাকার দৈর্ঘ্য ১১ লাখ কিলোমিটারের মতো।
যার মধ্যে তিন লাখ কিলোমিটার এলা কা বালুময় সৈকত।এখন যদি তারার সংখ্যার সঙ্গে তু লনা করতে হয়, তাহলে দেখা যাবে, মহাবিশ্বে তা রার সংখ্যা১০ সেক্সটিলিয়ন,যেখানে বালুকণার সংখ্যা হবে চার সেক্ সটি লিয়ন ।
তাহলে এটি ঠিকই যে মহাবিশ্বে বালু কণার চেয়ে তারার সংখ্যা বেশি। সূত্র : বিবিসি
আমাদের সূর্য একটি অতি সাধারণ তারকা। এর আকার তারকাগুলোর গড় আকারের মতোই।আমাদের বাসভূমির তারকা সূর্যের ব্যাস ১৪ লাখ কিলোমিটার। এর অর্থ হলো ১০৯টি পৃথিবী সূর্যের পৃষ্ঠে সাজিয়ে রাখা যায়। এটি এত বড় যে, ১৩ লাখ পৃথিবী এর মধ্যে ভরে রাখা যায়। একটি তারকার বর্ণনা যদি এমন হয়, সেক্ষেত্রে মহাবিশ্বে তারকার সংখ্যা কত? বাস্তবে বিশাল সংখ্যার তারকা নিয়ে একটি ছায়াপথ। তাহলে মহাবিশ্বে তারকা ও ছায়াপথ আসলে কয়টি? Kornreich মহাবিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ছায়াপথ ধরে একটি মোটামুটি হিসাব বের করেছেন ছায়াপথের ১০ হাজার কোটি তারকার সাথে এই সংখ্যা গুণ করলে হয় ১০০অকটিলিয়ন (octillion) তারকা। তার মানে দাঁড়ায়, ১- এরসাথে ২৯টি শূন্য। Kornreich জোর দিয়ে বলেন, এটা সাধারণ হিসাব, তবে গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আরো বেশি। ১৩ অক্টোবর ২০১৬, নাসা থেকে পাওয়া তথ্য হচ্ছে, দুই ট্রিলিয়ন ছায়াপথই আছে মাত্র ১০ শতাংশ মহাবিশ্বের মধ্যে; কিন্তু ছায়াপথগুলোর ৯০ শতাংশের খোঁজ এখনো বাকি। আবার দেখা যায়, সবচেয়ে বড় তারকাগুলো সূর্যের চেয়ে ৫০০ গুণ শুধু বড় নয়, সেই সাথে একলাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত যে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল, তার ভর ৩০ লাখ সূর্যের সমান হয়ে থাকে। যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে তারকা গণনা করা হয়, সেক্ষেত্রে এই হারে সব তারকা গুনতে পাঁচ হাজার বছর লাগবে। সব ছায়াপথ এক করলে সে সব মহাশূন্যের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ স্থান দখল করবে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাস্তবে মহাশূন্য এত বিশাল যে, বিজ্ঞানের সুপার কল্পকাহিনী পর্যন্ত এর আওতার অনেক বাইরে।
{২} আপনি কি কখনও ভাবতে/কল্পনাও করতে পারেনঃ সেকেন্ডে মহাবিশ্বের পরিধি বাড়ছে ৪৫ মাইল । মুলত মহাবিশ্ব অবিরাম সম্প্রসারিত হয়ে চলছে তা আবার সেকেন্ডে ৭০ মাইলের ও বেশি গতিতে। মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে কেবল এটাই কিন্ত মানুষের কল্পনায়ও ভাবা একেবারেই অসাধ্য/ অসম্ভব। সর্বশেষ বিজ্ঞান কিন্ত বলছেঃ সেকেন্ডে ৭০ মাইলের ও বেশি বেগে মহাবিশ্ব দূরে প্রসারিত হচ্ছে।
১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর আগে ঘটা বিগব্যাঙ থেকে পাওয়া বিকিরণ পরিমাপ করে যে হিসাব বের করা হয়েছিল, তার সাথেমিলছে না বর্তমানে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার।নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ধারণার চেয়ে ৫ থেকে ৯ শতাংশ দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে।প্রতিসেকেন্ডে৭০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি ওপ্রতিমেঘাপারসেকে (১ মেঘাপারসেক হচ্ছে প্রায় ৩ মিলিয়ন আলোক বর্ষ) ছায়াপথগুলো দুরাপসরএকরছে।দেখাযাচ্ছেঃ প্রত্যাশিত হিসাবের চেয়েও দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। প্রসারণশীল মহাবিশ্বের এই অভিক্রিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার উপমার মাধ্যমে সহজেই কিন্ত উপলব্ধি করা যাবে। রাস্তায় চলন্ত একটি গাড়ি যখন কাছে এগিয়ে আসে তখন এর ইঞ্জিনের শব্দের তীব্রতা তীব্রতর হয় এবং গাড়িটি যখন কাছে এসে দূরে অপসারণ করে,তখন শব্দের তীব্রতা নিম্নতর হয়ে থাকে। আলোকের তরঙ্গের আচরণও একইরকম।আলোকের স্পন্দাঙ্ক খুব বেশি- সেকেন্ডে চার থেকে সাত লাখ মিলিয়ন। এর রয়েছে বিভিন্নধরনের স্পন্দাঙ্ক। আমাদের দৃষ্টিতে যা বিভিন্ন বর্ণ হিসেবে প্রতিভাত হয় সেগুলো হলো-আলোকের বিভিন্ন স্পন্দাঙ্ক। সর্বনিম্ন স্পন্দাঙ্ক দেখা যায় বর্ণালীর লালের দিকে।তারকা যদিআমাদের দিকে আসে তাহলে প্রতি সেকেন্ডে আমরা যে স্পন্দাঙ্ক পাব তা বেড়ে যাবে, যেমনটি শব্দ শ্রোতার দিকে এগিয়ে আসার সময় ঘটে থাকে। অনুরূপভাবে তারকা যদি আমাদের কাছথেকে দূরে অপসারমাণ হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছেযে তরঙ্গগুলো পৌঁছাচ্ছে তার স্পন্দাঙ্ক হবে দ্রুততর।তারকার আলোর স্পন্দাঙ্ক মেপে এর লাল বিচ্যুতি হলে স্পষ্টত বোঝা যাবে,তারকাগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরাপসরণ করছে।
এবার একবার ভেবে দেখি- আজ থেকে হাজার বছরের ও আগে নাযিলকৃত কোরআনের সূরা আজ জারিয়ার ৪৭ আয়াতে নভোমণ্ডল প্রসারিত হচ্ছে উল্লিখিত হয়েছে :
‘নভোমণ্ডল নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।’[৫১ঃ৪৭]
একজন জান্নাতবাসির সবচেয়ে ছোট জান্নাতের আকৃ্তি/পরিধি হবে আমাদের পৃথিবীর ১০ গুন। জান্নাতে যারা যাবেন তাদের সুখের ধরন কেউ কল্পনাও করতে পারে কি?
ঈমানদারদের সাধারণত অনেকটা তাচ্ছিল্য করে প্রচলিত কথায় বলা হয়ে থাকেঃ ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ’! কিন্তু আমরা ক’জন ওয়াকিবহাল; ইসলামের সোনালী যুগে- সমরকন্দ, দামেস্ক, কায়রো আর করডোভায় প্রথম বড় বড় মানমন্দির গড়ে তোলেন আরব মুসলমানেরা। মুসলিম জ্যোতির্বেত্তারা এমন সব পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন, যে সব ১২ বছরের ওপরে দীর্ঘায়িত হয়েছিল। সে সময়ের মুসলিম বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞান কোন অবস্থানে পৌঁছেছিল তার বর্ণনা একটি ঘটনায় ফুটে ওঠে। সন্ন্যাসী গারভাট (দ্বিতীয় সিলভেস্ট নামে তিনি ৯৯৯ সালে পোপ হন) যখন কর্ডোভার মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে খ্রিষ্ট ধর্মাচরণে পুনরায় ফিরে এলেন তখন লোক মুখে প্রচার হয়ঃ তিনি নাকি সেখানে শয়তানের সাথে দহরম পর্যন্ত করে এসেছেন।
মূলতঃ ঈমানকে শক্তিশালী করার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্র ক্ষমতা, শক্তি সর্বোপরি তার সৃষ্টিকে অবলোকন করে এই ধারনা পাওয়া / বিশ্বাস অর্জন করা- যিনি এসব অলৌকিক কাজ অনায়াসেই সম্পন্ন করতে পারেন বা এসব কিছুই একেবারে শূন্য থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি তা হলে কত বড় ক্ষমতাবান / অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী?আইনস্টাইনের ভাষায়ঃ ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়। বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে যে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্তা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’