Wednesday, January 18, 2017

বিজ্ঞানে ভবিষ্যতবাণী: রহস্য উৎঘাটন

বিজ্ঞানে ভবিষ্যতবাণীঃ রহস্য উৎঘাটন 

                                                                      মুহাম্মাদ আলী রেজা
ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা ঠিক ঠিক বলে দেয়া আর যথারীতি  সেসব সংঘটিত হওয়া ভবিষ্যদ্বাণীর আওতাভুক্ত। আবার বহু শ্রেণীভুক্ত হতে পারে ভবিষ্যদ্বাণী। যুগে যুগে বিজ্ঞাননির্ভর ভবিষ্যদ্বাণী, জ্যোতিষী, রাশিফল ও হস্তরেখা বিশারদদের ভবিষ্যদ্বাণী, বিভিন্ন যুগে মহাপুরুষ, নবী-রাসূলদের ভবিষ্যদ্বাণী। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে এটা খুব সহজেই ধরা পড়বে, আজকের সভ্যতা যত বেশি অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে তত বেশি হারে ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। আজকাল ভোরে ঘুম থেকে উঠলেই শুরুর আগেভাগে জেনে নিতে হয়, দিনটি কেমন যাবে। মানুষের সার্বিক কর্মব্যস্ততা এবং জীবনযাত্রা পাল্টে যাওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ছুটতে হচ্ছে শহর থেকে শহরে এবং দেশ থেকে দেশে। হরেক রকমের আবহাওয়ার মোকাবেলা করতে হয়। তুষারপাত, শূন্যের নিচে তাপমাত্রা, প্রচণ্ড গরম বা তাপদাহ, প্রবল বৃষ্টি, ঝড়, অর্থাৎ যে রকম আবহাওয়ায় ভবিষ্যদ্বাণী থাকুক, আগেভাগে জেনে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হবে। ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে রক্ষা করা সহজ হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপদ্রুত অঞ্চলের লোকদের আগেভাগেই নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে। ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে জানমালের ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে।
আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপে এল নিনো ও লা নিনার গতিবিধি পরীক্ষা করে বাংলাদেশী রাশেদ চৌধুরী বন্যা পূর্বাভাসের এক নতুন পদ্ধতি বা মডেল উদ্ভাবন করেছেন। তার এই উদ্ভাবিত ‘এনসো ভিত্তিক পূর্বাভাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্ভরযোগ্য। এই পদ্ধতিতে ছয় মাস আগেই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব। আট বছর ধরে এই সাফল্য বজায় রেখেছে রাশেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত পদ্ধতি। [প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩]
সমগ্র বিশ্বের কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের বার্ষিক পঞ্জিকা বা ভবিষ্যদ্বাণী এখন অনায়াসে পাওয়া যায়। নামাজ, রোজার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার বলে দেয় প্রাত্যহিক জীবনে আমরা কত বেশি ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছরই প্রকাশিত হচ্ছে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যালম্যানাক (জ্যোতির্বিদ্যার বর্ষপঞ্জি) যার সাহায্যে পৃথিবীর যে স্থানে আপনি থাকুন না কেন, সেই স্থান থেকে কখন কোন মুহূর্তে কোন কোন নত্র, ছায়াপথ গ্রহ ও নক্ষত্ররাজি ইত্যাদি দেখা যাবে তা জানতে পারবেন এবং অনায়াসে সেগুলো দেখতে পাবেন। জ্যোতির্বিদ্যার বর্ষপঞ্জিতে পৃথিবীর সব জায়গার বছরব্যাপী নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ রয়েছে, যে সময়ে ওই স্থান থেকে কোন কোন নক্ষত্র , ছায়াপথ, গ্রহ-উপগ্রহ ইত্যাদি দৃষ্টিগোচর হবে। তার অর্থ কোটি কোটি ছায়াপথ ও নক্ষত্ররাজি একটি পরিকল্পিত নিয়মেই মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছে; শুধু সে কারণেই এ ধরনের চুলচেরা হিসাব করে ঠিক ঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হচ্ছে।
এর একটি উজ্জ্বল প্রমাণ ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ নাসার ভবিষ্যদ্বাণী : ১৬ মার্চ ২৮৮০ সালে একটি গ্রহাণু (DA-১৯৬০) মহাকাশ থেকে আছড়ে পড়বে। এটা প্রতি সেকেন্ডে ৯ মাইল (১৫ কিমি) বেগে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। এই সংঘর্ষের সম্ভাবনার অনুপাত ৩০ শতাংশ বলা হয়েছে। বাস্তবে বিজ্ঞানীরা এসব ভবিষ্যদ্বাণী করেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং তাত্ত্বিক চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে। অকাট্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকলে এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী দেয়া যায় না। বাস্তব দুনিয়ায় আমরা তখনই কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা, বিষয় বা ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম , যদি মূল ঘটনা বা বিষয়টি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত হয়। এ ছাড়া ভবিষ্যদ্বাণী করার প্রশ্ন ওঠে না। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক একটি মহাশূন্য যানকে মঙ্গল গ্রহের মাটি, আবহাওয়া, গঠন প্রকৃতি ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহের জন্য পৃথিবী থেকে পাঠানো হলো। যানটির সব যন্ত্রপাতি সেভাবেই তৈরি, সন্নিবেশিত ও নিয়ন্ত্রিত করা হবে যাতে এটি পূর্বপরিকল্পিত সব কাজ ঠিক ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সম হয়। যানটি যেহেতু পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত তাই সহজেই এর মিশনের প্রতিটি মুহূর্তের সব খবরাখবর যেমন এটি কোথায়, কখন থাকবে এবং কী করবে তা আগেই বলে দেয়া যায়। ওপরের উদাহরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, শুধু পরিকল্পিত ঘটনার ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী দেয়া বাস্তব এবং যুক্তিসম্মত। একই যুক্তিতে আমাদের মহাবিশ্ব যদি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে শুধু সে ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান বা যুক্তিসম্মতভাবে ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব হবে। অতএব, মহাবিশ্বের যেকোনো ব্যাপারে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হওয়ার অর্থ দাঁড়ায়, মহাবিশ্ব নিছক দুর্ঘটনার ফসল নয় বা স্বয়ংক্রিয়ভাবেও এটা সৃষ্ট নয়। ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার এক রহস্যময় অভিপ্রেত। বিজ্ঞানীর দূরভিসারী জিজ্ঞাসা সেখানে বিমূঢ় হয়ে যায়। বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতিও সেখান থেকে স্তব্ধ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু সেই অনন্ত মহাজাগতিক রহস্যের প্রতিভাস বিজ্ঞানীর মনকে এই নিশ্চিত প্রত্যয়ে উদ্বেল করে তোলে যে, এই মহাবিশ্বের একজন নিয়ন্তা রয়েছেন। তিনি অলৌকিক জ্ঞানময়, তাঁর সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাকে কল্পনা করা যায় না।’
সাম্প্রতিক বিশ্বে বিজ্ঞান পরিমণ্ডলে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তোলপাড় সৃষ্টি করা সংবাদ হলো, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিজ্ঞানীদের মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলার ঘোষণা। মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্বের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আইনস্টাইন আজ থেকে ১০০ বছর আগে। 
লাইগো শনাক্তকরণ যন্ত্র এই সঙ্কেত পায়। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, এটা পৃথিবীর কোনো নিজস্ব তরঙ্গ সঙ্কেত নয়, এটি হচ্ছে ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দু’টি কৃষ্ণ গহ্বরের মিলনের ফলে সৃষ্ট মহাকর্ষ তরঙ্গেরই সঙ্কেত। 
বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণী : যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানীরা যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং পরে বর্তমান সময় পর্যন্ত সেসব ফলপ্রসূ হয়েছে; তার কিছু বর্ণনা এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
১]  বৈজ্ঞানিক মেন্ডেলিফ ১৮৬৯ সালে বিজ্ঞানের সূক্ষ্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে পিরিয়ডিক টেবিলে বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের অস্তিত্ব, ধর্ম, আণবিক ওজন ইত্যাদির বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যেগুলোর অস্তিত্বের কোনো রকম ধারণাই ওই সময় পর্যন্ত কারো বিন্দুমাত্র ছিল না। বর্তমান সময় পর্যন্ত সেসব মৌলিক পদার্থ ঠিকই আবিষ্কৃত হয়েছে আর সবাই হতবাক এবং বিস্ময়াভিভূত হয়েছে এটা দেখে যে, এই মৌলিক পদার্থগুলোর ধর্ম, গুণাবলি এবং আণবিক ওজন হুবহু মিলে যায় মেন্ডেলিফের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একটা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মেন্ডেলিফ রাসায়নিক পদার্থের আণবিক ওজন বৃদ্ধির জন্য শতাধিক বছরেরও বহু আগে যে পদ্ধতি তৈরি করেছেন, তার জন্য একই প্রকার ধর্মের অধিকারী মৌলিক পদার্থের সংগঠনের পর্যায়বৃত্তি বা পিরিয়ডিক টেবিলকে কেউ কি যুক্তিসম্মতভাবে শুধু আকস্মিক ব্যাপার অথবা নিছক অপরিকল্পিত বিগ ব্যাং অর্থাৎ সেই মহাবিস্ফোরণ নামে দুর্ঘটনার মতো কিছু বলে মেনে নিতে পারে?
২] জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক ১৯০০ সালে প্রস্তাব করেন যে, আলো বিকিরিত হতে পারে শুধু বিশেষ প্যাকেটে (Packet)। এর নাম দিয়েছিলেন তিনি কোয়ান্টা। ১৯২৬ সালে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ তার বিখ্যাত অনিশ্চয়তাবাদে (Uncertainty Principle) প্রয়োগের মাধ্যমে সর্বপ্রথম এর যথার্থতা প্রমাণ করেন।
৩] আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে আলোর বিচ্যুতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এর চার বছর পর ১৯১৯ সালে এক ব্রিটিশ অভিযাত্রী দল একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, আলো সত্যি সত্যি সূর্য দ্বারা বিচ্যুত হয়।
৪] আইনস্টাইনের ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদ (১৯১৫) একটি ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে, পৃথিবীর মতো ভরসম্পন্ন কোনো বস্তুপিণ্ডের সন্নিকটে সময়ের গতি শ্লথ বলে মনে হবে; খুব উঁচুতে অবস্থিত কোনো ব্যক্তির মনে হবে নিচের সব ঘটনাই একটু দেরিতে ঘটছে। ৪৭ বছর পর ১৯৬২-তে এই ভবিষ্যদ্বাণীটি পরিক্ষা করা হয়। একটি জলধারের স্তম্ভের ওপরে ও নিচে এক জোড়া নির্ভুল ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছিল। যে ঘড়িটা নিচে ছিল অর্থাৎ পৃথিবীর নিকটতর; দেখা গেলো এর গতি ধীরতর। এ তথ্যের সাথে ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদের নির্ভুল মিল রয়েছে। আধুনিককালে পৃথিবীর ওপরে বিভিন্ন উচ্চতায় স্থাপিত বিভিন্ন ঘড়ির দ্রুতির পার্থক্যের যথেষ্ট ব্যবহারিক গুরুত্ব রয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে আগত সঙ্কেতের ভিত্তিতে নির্ভুল নৌ এবং বিমান চালনা ব্যবস্থার প্রচলনের সাথে সাথে এর গুরুত্বও বেড়েছে। ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদ ভবিষ্যদ্বাণী অগ্রাহ্য করা হলে অবস্থানের হিসাবে কয়েক মাইল পর্যন্ত ভুল হতে পারে।
৫] ফরাসি পদার্থবিদ ডি ব্রোগলি ১৯২৪ সালে বিশ্বের বিজ্ঞানী সমাজের কাছে সনির্বন্ধ আবেদন জানিয়েছিলেন : আলোক রশ্মি হচ্ছে তরঙ্গ কিন্তু এটা যখন পদার্থের শক্তি এবং ভরবেগ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়, তাহলে একই যুক্তিতে আলোক রশ্মির মতো পদার্থ রশ্মিও কেন এই একই ধরনের আচরণ দেখাবে না? ওই সময় এটি ছিল ব্রোগলির এক যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণী : আলোক তরঙ্গ, জল তরঙ্গ অর্থাৎ অন্যসব তরঙ্গের মতোই পদার্থও একই ধর্ম প্রদর্শন করবে। তিন বছর পর ১৯২৭ সালে পদার্থের তরঙ্গায়িত রূপটি সর্বপ্রথম চোখে পড়ে ডেডিসন এবং গারমানের পরীক্ষা। বর্তমান সময় পর্যন্ত সব পদার্থের অণু-পরমাণুর তরঙ্গ ধর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। আজকের কোয়ান্টাম বিজ্ঞান বলছে : কণিকা ও তরঙ্গের মধ্যে দ্বিত্ব রয়েছে। পদার্থ কার্যত তরঙ্গের স্বচ্ছ রূপ মাত্র। ওদিকে হাজার বছরেরও অনেক আগে সূরা আন নূরের আয়াত ৩৫ বলছে, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল তথা মহাবিশ্বের সব কিছুই তরঙ্গ, নূর অথবা আলো। 
৬] বিজ্ঞানী ডিরাক ১৯৩০ সালে প্রোটনের অস্তিত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করে এক বিস্ময়কর ফল পেয়েছেন। এই গণনায় ক্ষুদ্র একদল কণিকার অস্তিত্বের সন্ধান মিলল। কোনো পরীক্ষার সাহায্য না নিয়েই শুধু খাতা-কলমের সাহায্যে ডিরাক নতুন এই কণিকার অস্তিত্ব সম্পর্কে এক মতবাদ প্রকাশ করেন। দুই বছর পর এন্ডারসন ডিরাকের কল্পিত এই কণিকার অস্তিত্ব প্রমাণ করলেন। মূলত এই কণিকাটি আর কিছু নয়, পজিটিভ চার্জবিশিষ্ট ইলেকট্রন যার নামকরণ হয়েছে পজিট্রন।
৭] জাপানি বিজ্ঞানী ইউকাওয়া ১৯৩৬ সালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন যে, এক নতুন মৌল কণিকা রয়েছে যা নিউকিয়াসে নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে শক্তির আদান-প্রদান ঘটাচ্ছে। কণিকাটির নাম রাখা হলো মেসন। পরে নভোরশ্মি নিয়ে গবেষণা করাকালে এই কণিকাটির অস্তিত্ব পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
৮] নিউট্রিনো কণিকার অস্তিত্বের ঘোষণা দিলেন বৈজ্ঞানিক পাউলি। তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে বিটা কণিকা নির্গমনের বিষয় নিয়ে পরীক্ষা করতে কতগুলো সমস্যার উদয় হলো, যার সমাধান কোনো প্রকারেই হচ্ছিল না। এ কারণে পাউলি প্রস্তাব করলেন, বিটা নির্গমন প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনের সাথে নিউকিয়াস থেকে আরো একটি তড়িৎবিহীন ক্ষুদ্র কণিকার নির্গমন যদি ধরে নেয়া হয় তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি ১৯৩০ সালে ওই কণিকার নাম দিলেন নিউট্রিনো। তবে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় ১৯৫০ সালে, যখন পারমাণবিক চুল্লিগুলো নানা ধরনের কণা উৎপাদন শুরু করেছিল। এতদিন ধারণা করা হতো, নিউট্রিনো ভারবিহীন একটি কণা। কিন্তু ২০১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী দুই বিজ্ঞানী নিউট্রিনোর রহস্য ভেদ করে প্রমাণ করেন নিউট্রিনোর ভর আছে। নোবেল কমিটি ঘোষণা দিয়েছে- কণা সম্পর্কিত পদার্থবিজ্ঞান ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে এই তাকাকি ও আর্থারের গবেষণায় বড় ধরনের সাফল্য এসেছে। 
৯] জর্জ গ্যামো এবং ব্যালয় আলফার ১৯৪৮ সালে তাদের একটি বিখ্যাত গবেষণাপত্রে মহাবিশ্বের উত্তপ্ত প্রাথমিক অবস্থার একটি চিত্র প্রকাশ করেন যেখানে তারা একটি উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মহাবিশ্বের আদি পর্বের অতি উত্তপ্ত অবস্থার বিকিরণ (ফোটনরূপে) এখনও থাকা উচিত। তবে তার তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে চরম শূন্যের (২৭৩ ডিগ্রি) কয়েক ডিগ্রি বেশি হতে পারে। ১৯৬৫ সালে এই বিকিরণই পেঞ্জিয়াস ও উইলসন আবিষ্কার করেন।
১০] মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী মারে গেলমান ১৯৬১ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, এক বিশেষ ধরনের কণিকার অস্তিত্বের, যার নাম ওমেগা মাইনাস। এর তিন বছর পর সত্যি সত্যি একটি কণিকার সন্ধান মিলে যায়, যার ধর্ম ও গুণাবলি গেলমানের দেয়া বর্ণনার অনুরূপ।
১১] রহস্যময় ঈশ্বর কণার ভবিষ্যদ্বাণী : বিজ্ঞানী হিগস ও ইংলাতসহ একদল কণাতত্ত্ববিদ ১৯৬০ সালে অতিপারমাণবিক কণার (সাব অ্যাটমিক পার্টিকেল) ভরের উৎস খুঁজতে যেয়ে একটি মডেল প্রস্তাব করেছিলেন। মডেলটিতে অনুপস্থিত একটি কণিকার কথা বলা হয়, যার নাম দেয়া হলো হিগস বোসন; দু’জন বিজ্ঞানীর নাম অনুসরণে। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান অনুসারে, আমাদের এই মহাবিশ্বের সব কিছুই ভর পেয়েছে এই হিগস বোসন কণার কাছ থেকে। তাই এই কণাটির সন্ধান পাওয়া মানে, এক হিসেবে মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করা। এ কারণেই কণাটি পরিচিতি পেয়ে যায় ঈশ্বর কণা নামে। ষাটের দশকে এই কণার অস্তিত্ব আবিষ্কারে বিস্তর গবেষণা চলতে থাকে। ১৯৫২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভার কাছে মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনে স্থাপিত, সুবিশাল যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের মাধ্যমে অর্ধশতাব্দী পর অবশেষে আবিষ্কৃত হয়েছে কাঙ্ক্ষিত ওই কণার অস্তিত্ব। বলা হয়, বিজ্ঞানের গবেষণায় গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন এটি।
১২] ভারহীন কণা ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ এর অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণীর ৮৫ বছর পর ২০১৫-তে আবিষ্কার হলো। ১৯২৯ সালে হারম্যান ভাইল নামের এক বিজ্ঞানী এমন একটি কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। এরপর পরীক্ষাগারে চলে ব্যাপক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা। অবশেষে, ৮৫ বছরের মাথায় বাংলাদেশী বিজ্ঞানী জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে একদল পদার্থবিজ্ঞানীর নিরন্তর প্রচেষ্টায় সেই কণা পরীক্ষাগারে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ভাইল ফার্মিয়ন কণার ভর নেই। এটি ইলেকট্রনের মতো পথ চলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না। এই আবিষ্কারের পর শুধু তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানই পাল্টে যাবে না, ইলেক্ট্রনিক ও কম্পিউটার দুনিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।  
 ১৩] সাধারণ আপেক্ষিকতা বোঝাতে গিয়ে এক’‌শ বছর আগে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কথা জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। দুই ব্ল্যাকহোল পরষ্পরের কাছে এলে ধ্বংস হয়ে যায়। যার পরিণামে সৃষ্টি হয় মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। কিন্তু তাত্ত্বিক প্রমাণ ছাড়া এর বাস্তব অস্তিত্বই অজানা ছিল। অবশেষে ২০১৫ সালে লিগো গবেষণাগারে ধরা পড়ে এরকমই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য পদার্থবিদ্যায়   20017 নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী— রেইনার ওয়েসিস, ব্যারি বরিশ এবং কিপ থ্রোন।
মঙ্গলবার তাদের নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ‘‌অজানা বিশ্বের খবরাখবর জোগাড় করতে তারা সম্পূর্ণ নতুন এবং ভিন্ন পথ দেখিয়েছেন।’‌
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির পক্ষে  বলা হয়েছে, মহাবিশ্ব থেকে আসা তরঙ্গ নিয়ে ভবিষ্যতে যারা কাজ করবেন তাদের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে এই বিজ্ঞানীদের গবেষণা। মহাবিশ্ব থেকে আগত বার্তা গ্রহণ এবং বিশ্লেষণও হবে তাদের দেখানো পথেই। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরার জন্য যে লিগো গবেষণাগার রয়েছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এই তিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। নোবেল কমিটির পক্ষে জানানো হয়েছে, ‘এদের আবিষ্কার বিশ্বকে নড়িয়ে দিয়েছে।’‌ ‌
১৪] দেশনন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার এক গ্রন্থে আলোচনার প্রসঙ্গক্রমে সূরা আয-যারিয়াতের ৪৭ আয়াতটি এভাবে ভাষান্তর করেছেন ''We created the heaven with a twist of the (divine) hand. And surely we are expanding it.'' বইটির ৬৩ ও ৬৪ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি আরো লিখেছেন, ‘মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে এবং তারপর থেকে মহাবিশ্ব ছড়িয়ে পড়ছে (Expanding Universe). বাস্তবে আমরা দেখছি ঐতিহাসিকভাবে আমাদের বিজ্ঞান তখন একেবারে তিমির অন্ধকারে ছিল''। এর এক হাজার বছরেরও অনেক পরে ১৯২২ সালে এক যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণী ছিল আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যানের। মহাবিশ্ব সম্পর্কে তিনি দু’টি সহজ সরল অনুমান করেছিলেন আমরা যে দিকেই দৃষ্টিপাত করি না কেন; মহাবিশ্বের রূপ একই রকম দেখায় এবং আমরা যদি মহাবিশ্বের কোনো স্থান থেকে পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে মহাবিশ্বকে একই রকম দেখাবে। শুধু এ দুটো অনুমান থেকে ফ্রিডম্যান দেখিয়েছিলেন, মহাবিশ্বকে স্থির মনে করা আমাদের উচিত নয়। মূলত এটি ছিল যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণী। সাত বছর পর ১৯২৯ সালে এডউইন হাবল প্রকাশ করেন যে, মহাবিশ্ব স্থিতাবস্থায় নেই। যে ছায়াপথটি যতদূরে অবস্থিত তার দূরাপসারণের গতিও তত বেশি। হাবলের এই যুগনির্দেশক পর্যবেক্ষণের অর্থ হলো, অতীত যুগে মহাবিশ্বের সব বস্তুপিণ্ড পরস্পরের নিকটবর্তী ছিল। দশ কিংবা কুড়ি হাজার মিলিয়ন বছর আগে সব নীহারিকা একই জায়গায় ছিল। সুতরাং সে সময় মহাবিশ্বের ঘনত্ব ছিল অসীম। হাবলের এই আবিষ্কারই শেষ পর্যন্ত মহাবিশ্বের সূচনার প্রশ্নকে বিজ্ঞানের অঙ্গনে নিয়ে আসে। 
যুগান্তকারী এই পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হয়, একটা কালের অস্তিত্ব ছিল যার নাম দেয়া হয়েছে বৃহৎ বিস্ফোরণ (Big Bang)। তখন ছিল অসীম ক্ষুদ্র মহাবিশ্ব এবং এর ঘনত্ব ছিল অসীম। এরকম পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানের সব জানা বিধিই ভেঙে পড়ে। সুতরাং স্বভাবতই ভেঙে পড়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণই বিপরীত। মহাবিশ্বের বৃহৎ বিস্ফোরণ এবং দূরাপসারণ গতির সব ব্যাপারই শুধু সুপরিকল্পিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত হলেই যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীদের সব ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হতে পারে এটি আমরা ধারাবাহিকভাবে দেখতে পারছি।

অন্য দিকে, তাপ গতিবিদ্যার প্রথম সূত্র বলছে : এরূপ যন্ত্র তৈরি করা একেবারেই অসম্ভব, যেটি শূন্য থেকে শক্তি বানাতে পারবে এবং অবিরাম চলবে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতেই থাকবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ঘুরে ফিরে যে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে : মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও বিকাশ পরিকল্পিত বিধায় এর যেকোনো ব্যাপারেই যৌক্তিক বিজ্ঞানসম্মত ভবিষ্যদ্বাণী সব সময় ফলপ্রসূ হতে দেখা যায়। বিশিষ্ট প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞানী পাল কায়েন্স ইবারসোল্ডের মতে : ‘এই মহাবিশ্বের জন্ম সম্পর্কে বিজ্ঞান আপাত দৃষ্টিতে খুবই মহাপ্লাবনিক একটি তত্ত্ব দাঁড় করাতে পারে। তারই ফলে ছায়াপথ ও নক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করতে পারে। কিন্তু কোথা থেকে এই সৃষ্টির জন্য জড়পদার্থ ও শক্তি এসেছে এবং কেনই বা এই মহাবিশ্বটি এমনিভাবে গঠিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যাই বিজ্ঞানে জুটবেনা’। 

প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আমাদের কাছে স্পষ্ট। ভরশক্তির অবিনাশিতাবাদ তত্ত্ব বলছে, নতুন করে যেকোনো কিছু সৃষ্টি করা যেমন কখনো বিজ্ঞানে সম্ভব নয়, তেমনি স্পষ্টত বলে দিচ্ছে যে, এমনকি তুচ্ছ কোনো কিছুর বিনাশও একেবারেই অসম্ভব। শুধু আছে বস্তুশক্তির রূপান্তর, নতুন করে নেই কোনো সৃষ্টি, ধ্বংস বা বিনাশ। মহাবিশ্বের বর্তমান অস্তিত্ব প্রমাণ করে, এটি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত বিধায় বিজ্ঞান ও যুক্তিভিত্তিক ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হতে দেখা যায়। 
এসব ভবিষ্যদ্বাণী সাধারণ মানসেও যুক্তিসঙ্গত এবং বাস্তবসম্মত মনে করা হলেও এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ইতিহাসে বাস্তবে পরীক্ষিত, যেগুলোর পেছনে নেই কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা ভিত্তি। কিন্তু এসব ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি সত্যিই সংঘটিত হয়ে সবাইকে হতবাক করছে। এই ভবিষ্যদ্বাণীর কার্যকারণ বিষয়ে আমরা এখন আলোকপাত করব।
মধ্যযুগে বেতার তো দূরের কথা, টেলিফোনের অস্তিত্বও ছিল না। সেই সময়ে শাহ নেয়ামতুল্লাহ ফারসিতে কাসিদা (কবিতা) লিখেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি অনেক কিছুর মধ্যে এটাও উল্লেখ করেন, শেষ যুগে বা জামানায় এমন যন্ত্র আবিষ্কার করা হবে যেন মনে হবে আকাশ থেকে ওহি নাজিল হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কথাও তিনি বর্ণনা করেছেন। কোন কোন দেশ যুদ্ধে অংশ নেবে এবং কত লোক নিহত হবে, এসব অনেক কিছু তার কাসিদায় রয়েছে। লিখেছেন, ১০০ বছর পরই ইংরেজ ভারত ছেড়ে চলে যাবে। একটি ঘটনা উল্লেখ না করলে নয়, যে ঘটনাটি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি লিখেছিলেন, ইংরেজরা চলে গেলে ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ-সংঘর্ষ লেগে থাকবে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ব্যাপারে তার কবিতায় এসেছে, দুই ঈদের মধ্যবর্তী সময়ে এটি ঘটবে। ঈদুল আজহা আমরা যুদ্ধের মধ্যে উদযাপন করেছি, কিন্তু ঈদুল ফিতর আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পালন করছি। কাসিদার পুস্তকটি বহু আগে লেখা কি না এটা নিশ্চিত হতে একজন ফারসি ভাষায় অভিজ্ঞ ব্যক্তির শরণাপন্ন হই। তিনি আমাকে নিশ্চিত করেন, এর ভাষাটি উল্লিখিত সময়কালের। দুই ঈদের মধ্যবর্তী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হবে, এত বছর আগে কী করে তা তিনি লিখে গেলেন? এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীর কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে?
এখন থেকে সাড়ে চার শ’ বছরেরও বেশি আগে ফ্রান্সের এক অতীন্দ্রিয় ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ট্রাডেমাস অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, যার সব ফলপ্রসূ না হলেও কিছু বাস্তবায়ন হয়ে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। সাড়ে চার শ’ বছরেরও আগে কবিতার ছন্দে তিনি লিখেছেন ‘ঝড়, মহামারী অথবা যুদ্ধ পারস্যের রাজার পতন ঘটাবে না। এটা বিশ্বাসের (ঈমান) ওপর ভিত্তি করে হবে এবং শুরু হবে ফ্রান্স থেকে।’ ভবিষ্যদ্বাণীটি এখানে তুলে দেয়া হলো : 'Rain,fame and war will not cease in Persia,too great a faith will betray with the monarch.These (actions) started in France will end there.A secret sign for one to be sparing' এখানে স্মরণযোগ্য : আয়াতুল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে নির্বাসিত হয়ে সেখান থেকেই ইসলামি বিপ্লবের নেতৃত্ব প্রদান করে শেষে বিজয়ী হন।
বিশ্বে সাড়া জাগানো ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনাটি সম্পর্কে নস্ট্রাডেমাসের কবিতায় এই উপমা ব্যবহার হয়েছে : টুইন টাওয়ার মানব নির্মিত পর্বত এবং বিমান-ধাতব পাখি। বাস্তব প্রেক্ষাপটে এসব ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হওয়ার সামান্যতম ব্যাখ্যা ও বিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে জুটবে না। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন তার পেছনে গভীর বৈজ্ঞানিক যুক্তি, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা থাকার কারণে এসব ফলপ্রসূ হলে তা তেমন কোনো আলোড়ন সৃষ্টি না করলেও যে বিষয়টি এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ তা হচ্ছে মহাবিশ্ব সুপরিকল্পিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত সৃষ্টি বিধায় এর কোনো ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হচ্ছে এবং ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়া অন্য প্রকৃতির ভবিষ্যদ্বাণী সফল হওয়ার পেছনে কোনো যুক্তি বা ব্যাখ্যা আছে কি? প্রসঙ্গক্রমে বাস্তবে সংঘটিত দু’টি সত্য ঘটনা উল্লিখিত হচ্ছে।
১. শেখ সাদীর এক কাছের বন্ধু তার মৃত্যুর আগমুহূর্তে নিকটাত্মীয়স্বজনকে অসিয়ত করলেন : তার জানাজার নামাজ যেন শেখ সাদী পড়ান। তিনি মৃত্যুবরণ করলে আত্মীয়স্বজন কিভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে শেখ সাদীকে খবর দেবে, এ নিয়ে সংশয়ে পড়ল। তখন বরফ আবিষ্কৃত হয়নি। অন্য দিকে শেখ সাদীকে লোক পাঠিয়ে খবর দিয়ে নিয়ে আসতে কয়েক মাস লেগে যাবে। এত দিনে লাশ পচে গলে যাবে। ঠিক এই কঠিন মুহূর্তে শেখ সাদী এসে হাজির। তিনি বহু আগেই রওনা দিয়েছিলেন এখানে আসার জন্য। বন্ধুর শেষ ইচ্ছা অনুসারে তিনিই জানাজার নামাজ পড়ালেন।
২. আমার এক আত্মীয় মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, যিনি মোহাদ্দেস এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। ঢাকার মহাখালী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আগেভাগেই তিনি কিভাবে যেন জেনে যান, কোন দিন তিনি মারা যাচ্ছেন। প্রথমে তিনি তার এক আত্মীয়কে খবর দিয়ে হাসপাতালে এনে বললেন, ‘গওহরডাঙ্গা মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে যেন তার কবরটি মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী পীরে কামেল সদর রহ:-এর কবরের পাশে দেয়া হয়। তিনি গওহরডাঙ্গা মাদরাসার কর্তৃপরে কাছে এ কথা জানালে তারা সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘তিনি মারা যাবেন না, আমাদের মাঝেই বেঁচে থাকবেন।’ সময় ঘনিয়ে আসছে। বুধবার তার স্ত্রীকে তিনি বললেন, ‘তুমি অনেক কষ্ট করেছ। আমি আর দুই দিন আছি। তারপর আর কষ্ট করতে হবে না।’ পরদিন তার ভায়রা হাসপাতালে তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি তাকে বলেন, ‘আমি তো মাত্র এক দিন আছি।’ অর্থাৎ শুক্রবার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। কিভাবে তিনি তার মৃত্যুর সময়ক্ষণের ঠিক ঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হলেন? ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কিত এসব ঘটনার সরাসরি কোনো ব্যাখ্যা আজকের বিজ্ঞান, যুক্তি, দর্শন আমাদের উপহার দেয়নি। এর পরোক্ষ সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এভাবে করা যেতে পারে যিনি মহাবিশ্বের সব কিছুর স্রষ্টা, তাঁর জ্ঞান সব কিছুরই ওপরে। কারণ তিনিই তো মহান স্রষ্টা। সমুদ্রের অতল গভীরে, অরণ্যের নিভৃত কোণে, মহাকাশের নীহারিকা-ছায়াপথসমেত প্রতিটি অঞ্চলে কোথায় কী হচ্ছে সবই তার জ্ঞাত। এ মুহূর্তের সব খবর যেমন তিনি রাখেন, তেমনি অতীতের সব কিছু তিনিই জানেন। কোটি কোটি বছর পর ভবিষ্যতে কী হবে, তা জেনেই পরিকল্পিতভাবে তিনি এসব বানিয়েছেন। বর্ণিত আছে, তিনি আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির সেরা) মানুষকে তার ছুরতে বানিয়েছেন, আদমকে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন আর ফেরেশতাকুল তাঁরই নির্দেশে আদমকে সিজদা করেছে। ফেরেশতারা মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রখরতার কাছে নতিস্বীকার করে তাকে সিজদাহ করতে বাধ্য হয়েছে। স্রষ্টাই ভবিষ্যৎ জানেন। মানুষ যেহেতু স্রষ্টারই ছুরতে তৈরি, এর ফলে মানুষের পক্ষে এটা সম্ভবপর হওয়া অসম্ভব হয়তো কিছু নয়। ঘটনাপ্রবাহ পূর্বাহ্ণেই কিছু আঁচ বা আভাস পাওয়া কিঞ্চিৎ স্রষ্টাপ্রদত্ত ক্ষমতা , কৌশল এবং শক্তিকে সম্ভাব্য সব প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে রূহানি শক্তিও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ শক্তির বলে ঈসা আ:-এর খেতাব রূহুল্লাহ (আল্লাহর রূহ) এবং তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারতেন আল্লাহর কুদরতে। বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়া অন্য ভবিষ্যদ্বাণীর যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী ফলপ্রসূ হওয়ার কার্যকারণ একটি : মহান স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে এমন কোনো সুযোগ রেখেছেন কেবল যার ফলে এটি সম্ভব হচ্ছে। মানুষ যেমন নতুন করে কিছু বানাতে বা ধ্বংস করতে সম নয়। তেমনি প্রকৃতির কোনো নিয়ম পাল্টাতে একেবারেই অক্ষম। বর্ণিত আছে, স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মানুষ শুধু প্রকৃতির ইচ্ছার কাছে (ইসলামের ওপর বা আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ) মাথা নত করতে বাধ্য। ইসলাম হচ্ছে আত্মসমর্পণ। মহাবিশ্বের সব কিছুই আত্মসমর্পিত হয়ে একটি নির্ধারিত নিয়মরীতি অনুসরণ করছে এবং সেভাবেই চলছে। নির্ধারিত নিয়মে মহাবিশ্বের সবই আবর্তিত হচ্ছে এর অর্থ দাঁড়ায়, এ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী যুক্তিসম্মত। তবে এ কথা বা বিষয়টি স্পষ্ট, কোনো ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী হলে সেটি ফলপ্রসূ হওয়ার পরই এটি আমাদের বিশেষ নজরে পড়ে। শেষ জামানা সম্পর্কে শেষ নবী সা:-এর অনেক ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে; এসবের আলামতও ধারাবাহিকভাবে সম্প্রসারিত হয়ে পুঞ্জীভূত রূপে প্রকাশের প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। শেষ নবী সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে :
১) সময় খুব দ্রুত বয়ে যাবে। [বুখারী, মুসলিম, ও আহমাদ] এ কথাটির অর্থ ও তাৎপর্য হচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন ও সামাজিক জীবনে কর্মব্যস্ততার পরিধি এত বেড়ে যাবে যে, মনে হবে, সময় যেন দ্রুত চলে যাচ্ছে। আগের মানুষের গড় আয়ু অনেক কম হলেও জীবনের সময়কে তারা উপভোগ করে ধীরে ধীরে ব্যবহার করেছে। আধুনিক জীবনযাত্রায় গড় আয়ু কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেলেও সময়ের সাথে প্রতিযোগিতায় মানুষ দিশেহারা। প্রতিদিনের রুটিন কাজের মধ্যে রয়েছে হরেক রকমের বাড়তি কাজ। ফলে প্রত্যেকেরই মনে হয়, যেন সময় হুহু করে চলে যাচ্ছে যেটি অতীতকালে অনুভূত হয়নি। সম্প্রতি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি বক্তব্য দেখলে মনে হবে যেন, তা আমাদের সবারই অনুভূতির প্রতিধ্বনি। জনৈক চিন্তাবিদ লিখেছেন : ‘দিনগুলো যেন খুব তাড়াতাড়ি ফুরাচ্ছে আজকাল। বছরগুলোও চোখের পলকে চলে যাচ্ছে। এই সে দিন গেল জন্মদিন, এখনো চুপসানো বেলুন দেয়ালে ঝুলে আছে; আর এখনই কিনা আরেক জন্মদিন চলে এলো। আগে দিন ফুরাতো না। ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠব; তখন কবে উঠব কবে উঠব করি, দিন যায়, মাস যায় কিন্তু বছর তবু যায় না।’ সময় যে পাল্লা দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে এই অনুভূতিটি সবার ভেতরেই প্রবলভাবে কাজ করছে। ভাবতে অবাক লাগে, এই ভবিষ্যদ্বাণীটি কত আগে দেয়া হয়েছিল।
 ২) দাসী প্রভুর জন্ম দেবে : অর্থাৎ, সন্তানেরা মায়ের সাথে ক্রীতদাসীর মতো আচরণ করবে। পৃথিবীর সব দেশে এমনকি উন্নত বিশ্বেও সন্তানদের এই প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাতীয় টিভির অনুষ্ঠানে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করতে দেখেছি। 
৩) প্রাচুর্য এত বেশি হবে যে, ‘রাস্তার লোকেরাও দালানকোঠা বানানোর প্রতিযোগিতা করবে।’ একসময়ের বিশ্বে অনুন্নত শ্রেণীভুক্ত বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জেও এখন সুউচ্চ ইমারত লক্ষণীয়। ২০১৮ সালে LDC থেকে উন্নয়নশীলদেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্যে জাতিসংঘে আবেদন করবে বাংলাদেশ। আবেদন গৃহীত হলে ২০১৮ তে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। ধারাবাহিকভাবে সব দেশের সম্পদ বেড়েই যাবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
 ৪) নারীদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হবে : নারী পুরুষের চেয়ে বেশি হবে। নারী ও পুরুষের অনুপাত ৫০ : ১ দাঁড়াবে। বর্তমান বিশ্বে সব দেশেই নারীদের গড় আয়ু সাধারণত পুরুষদের চেয়ে বেশি। অন্য দিকে, নারী শিশুদের জন্মহারও পুরুষদের চেয়ে বেশি। x, y ক্রোমসোমের মিলনের আনুপাতিক হারের ওপর নির্ভর করে শিশু ছেলে না মেয়ে হবে। x ও y-এর মিলনে কেন কন্যাশিশু জন্মের সম্ভাব্যতা বেড়ে যায়, এর বৈজ্ঞানিক কারণ বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না লিখেছে একটি ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ম্যাগাজিন যেটি দেখেছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বে ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার লক্ষণীয়। 
৫) নতুন নতুন রোগের উদ্ভব হবে। কোনো কোনো রোগের প্রতিষেধক উদ্ভাবিত করা সম্ভব হবে না। এ পর্যন্ত রোগের তালিকায় নিত্য নতুন নাম সংযোজিত হয়ে চলছে। বিশ্বে অটিটিস্টিক রোগীর সংখ্যা আকাশ ছোঁয়া রূপ ধারন করতে চলছে বলে পরিসংখ্যান বলছে। গ্রিক শব্দ অটিস্টিক "নিজ" - এরা নিজেদের মাঝে নিজেদের গুঁটিয়ে রাখে। কারো দিকে তাকাতে চায় না, কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না, বন্ধুত্ব করতে চায় না। সবচেয়ে বিশ্বয়কর ব্যপার হলো, বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না এর কারণ কি! জিকা ভাইরাসের নতুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে। কুরে কুরে মস্তিষ্ক শেষ করে দিচ্ছে এই ভাইরাস।অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ওপর এই ভাইরাসের প্রভাব এত ভয়াবহ যে, নবজাতকের মাথা শরীরের তুলনায় অস্বাভাবিক ছোট আকারের হচ্ছে। অসম্পূর্ণ মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মানো এই শিশুদের জীবনভর সেভাবেই বাঁচতে হবে বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন। এইডস রোগের প্রতিষেধক এখনো পাওয়া যায়নি। অনিরাময়যোগ্য আরো কিছু রোগ রয়েছে।
 ৬) বাদ্যযন্ত্র এবং গানবাজনার ব্যাপক প্রসার ঘটবে। বহু ধরনের বাদ্যযন্ত্র এখন বিশ্ববাজারে। এ হার বেড়েই চলছে। সাথে সাথে বাড়ছে সঙ্গীতের প্রসার।
 ৭) হত্যাকাণ্ড এত বেশি বৃদ্ধি পাবে যে, যাকে মারা হলো সে জানতেও পারবে না, কেন তাকে হত্যা করা হলো। সমগ্র বিশ্বে হত্যার ছড়াছড়ি এবং সংখ্যাধিক্য এ রকম আভাস দিচ্ছে এবং হত্যাযজ্ঞের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়ে চলছে উন্নত বিশ্ব সহ সব দেশে।যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের প্রতিবেদন জানাচ্ছে,  ২০১৫-এর আগের দশকে বন্দুকধারীদের হামলায় মারা গেছে ২ লাখ ৮০ হাজার ২৪ জন! প্রতিবছর ওই দেশে লক্ষাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়।এক বছরের মধ্যে ২৭৩তম এবং এক মাসের মধ্যে ২৯তম গুলিবাজির ঘটনায় মারা গেল ৫৯ জন। 
৮) নারীরা এমন পোশাক-পরিচ্ছদে নিজেদের আবৃত করবে যে, মনে হবে না কোনো পোশাক পরেছে। বিভিন্ন দেশে বিকিনি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যরে পোশাকের প্রতি নারীদের আকর্ষণ ও ঝোঁক প্রবণতা এখানে উল্লেখ করার মতো।
 ৯) ভাগ্য গণনার ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে। টেলিভিশনে এবং খবরের কাগজে প্রাত্যহিক রাশিফল পর্যালোচনা এটি প্রমাণ করে।
১০) ইসলামের অনুসারী অন্য যে কোনো ধর্মের চেয়ে বশি হবে।
পিউ রিসার্চ সেন্টার (Pew Research Center) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জনমত জরিপ পরিচালনাকরী একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সারাবিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে জনমত জরিপ পরিচালনা করা এবং এর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করাই যাদের মূল সেবা। পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।সম্প্রতি পিউ রিসার্চ সেন্টার একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে- যা কিছুটা অবাক হবার মতই। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় দ্রুত বর্ধনশীল একমাত্র ধর্মবিশ্বাস হচ্ছে ইসলাম। ২০৭০ সালের মধ্যে ইসলামই হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্ম। এটি একটি দীর্ঘ গবেষণামূলক জরিপের ফলাফল।বর্তমানে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হলো ইসলাম। আর সবচেয়ে বেশি অনুসারী হলো খ্রীস্টান ধর্ম বিশ্বাসের।গবেষণায় আরো দেখানো হয়েছে, ২০১০ সালে পৃথিবীর সবেচেয় বেশি মুসলিম জনগোষ্ঠী বসবাস করতো ইন্দোনেশিয়ায় কিন্তু ২০৫০ সালে সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাসকারী দেশ হবে ভারত। ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত ইন্দোনেশিয়াকেও ছাড়িয়ে যাবে। তবে তখনও এটি একটি হিন্দু প্রধান দেশই থাকবে। এ সময় যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে খ্রীস্টান জনগোষ্ঠী ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। আর ২০৫০ সালে ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ হবে মুসলিম। পৃথিবীর প্রতি ১০জন খ্রিস্টানের চারজন বাস করবে সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলোতে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি ৫০ জনের একজন হবে মুসলমান।জরিপের গবেষণায় দেখানো হয়, ২০১০ সালে বিশ্বে ১.৬ বিলিয়ন মুসলিম এবং ২.১ বিলিয়ন খ্রিস্টান ছিল। ২০১৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যার হিসেবে মুসলিম হবে ২.৭৬ বিলিয়ন এবং খ্রিস্টান হবে ২.২৯ বিলিয়ন। আরো বলা হয়েছে যদি উভয় ধর্মেই এই বৃদ্ধির হারে অব্যাহত থাকে, তবুও ২০৭০ সালে ইসলামের অনুসারীদের সংখ্যা বেশি হবে।  
                                                           সূত্র : পিউরিসার্টসেন্টার, দ্য টেলিগ্রাফ, সিএনএন ও বিবিসি বাংলা।প্রতি পাঁচটি দেশের মধ্যে একটিতে রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে।  মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং উত্তর ইউরোপে অফিসিয়ালি রাষ্ট্রধর্ম পালনকারী ৪৩টি দেশের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম রাষ্ট্র, ২৭টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। এসব দেশ কয়টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম?এশিয়া, সাব-সাহারা আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত। ৫৩ ভাগ দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ধর্মের কথা উল্লেখ নেই এবং ৫ ভাগ দেশ কোনো ধর্মকেই স্বীকৃতি দেয়নি। পিউ কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এসব তথ্য দেখা গেছে।
ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টিতে রাষ্ট্রধর্ম খ্রিস্টান। বিশ্বের ২৮টি দেশ খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাসকে পছন্দ করে থাকে। আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধ রাষ্ট্র দু’টি। ইসরাইলের রাষ্ট্রধর্ম ইহুদি। কোন দেশেই হিন্দু ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত নয়।
‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোতে অনেক নিয়ম-নীতি বা বিধি-নিষেধ থাকে। কিন্তু প্রায়ই বৈষম্য দেখা যায় আইনি বা কর সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা, রিয়েল এস্টেট বা সম্পত্তির মালিকানা এবং রাষ্ট্র কর্তৃক আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে। এছাড়া রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস ও ধর্মীয় চর্চার বাধ্যবাধকতার কারণে সংখ্যালঘু ধর্মীয়গোষ্ঠিগুলোর ওপর বিধি-নিষিধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়’।
‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক দেশই তাদের ইতিহাসের প্রথম দিকে রাষ্ট্রধর্মকে স্বীকৃতি দিয়েছে কিন্তু বর্তমানে এর সঙ্গে কমই জড়িত রয়েছে। অন্যদিকে স্বল্প কিছু দেশ সব নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রধর্ম পালন বাধ্যতামূলক করেছে’।
১০টি দেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং সক্রিয়ভাবে ধর্মকে প্রতিহত করা হয়। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু দেশ। এসব দেশে ধর্মীয় প্রার্থনা থেকে শুরু করে ধর্মীয় গ্রুপগুলো কর্তৃক  জনসম্মুখে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণায় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সরকারি কর্তৃপক্ষ।
সূত্র : দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
.........................................................................................................................
এসব ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহের সা: প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনাপ্রবাহে আরো ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের দৃষ্টিতে পড়ে থাকে। বহুল পঠিত ও আলোচিত একটি : একদা রাসূলুল্লাহর সা: সহধর্মিণীগণ জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সা:, আপনার মৃত্যুর পর আমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে আপনার সাক্ষাৎ লাভ করবে?’ ‘যার হাত বেশি বড় (দানশীল), সে’; জবাবে তিনি বললেন। উম্মুল মুমিনিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন হজরত জয়নব (রা:) এবং তিনি এই সৌভাগ্যের অধিকারী হন। নিঃসন্দেহে এই ভবিষ্যদ্বাণীটির ব্যাখ্যা বিজ্ঞানে অসম্ভব।
প্রকৃতপক্ষে এসব ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাখ্যা যান্ত্রিক ও ডিজিটাল বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে কোনোভাবেই সম্ভব না হলেও ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে আর তা যথাযথভাবে ফলপ্রসূ হতে দেখা যাচ্ছে। এই সফলতার কার্যকারণের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ কী হতে পারে?
বাস্তবতার আলোকে বলা যায়, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সব কিছুর জ্ঞান একমাত্র মহান স্রষ্টার রয়েছে। সবই তিনি জ্ঞাত, নিযুত কোটি বছর পরে কী ঘটবে তিনি তা জ্ঞাত। তা না হলে তিনি এর স্রষ্টা হতে পারতেন না। গভীর সমুদ্রের অতল তলে, অরণ্যের নিভৃত কোণে, মহাকাশের সুদূর অন্তরীে কোথায় কী ঘটছে, এমনকি প্রত্যেক মানুষের মনের অভ্যন্তরে কী কথা লুকিয়ে আছে, কী ভাবছে মানুষ, এসবই স্রষ্টার নখদর্পণে। কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তা। বর্ণিত আছে, তিনি মানুষকে সৃষ্টির সেরা বানিয়েছেন, নিজ ছুরতে তৈরি করেছেন, নিজ রূহ আদমকে ফুঁকে দিয়েছেন। ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে ঘটার পরই এটাকে ফলপ্রসূ ভবিষ্যদ্বাণী বলা হয়। অন্যথায় ঘটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, না ঘটলে এটি আর ভবিষ্যদ্বাণী হয় না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে নিযুত কোটি ঘটনার মধ্যে দু-একটি ছিটেফোঁটা ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী আমরা জানছি এবং ফলপ্রসূ হতে দেখছি। তবে সার্বিক বিবেচনায় যে বিষয়টি স্পষ্ট : মহাবিশ্ব সুচিন্তিত, সুনিয়ন্ত্রিত, সুপরিকল্পিত বিধায় এর যেকোনো ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব এবং তা ফলপ্রসূ হতে দেখা যায়। আইনস্টাইনের সে উক্তিটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে এক অকল্পনীয় মহাজ্ঞানী সত্তার রহস্যময় অভিপ্রেত।’ 

লেখক : সাবেক শিক্ষক,পদার্থবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/104556#sthash.NgcZ2VHD.dpuf

No comments:

Post a Comment