Wednesday, January 18, 2017

প্যারিস সন্ত্রাস ও বুশের ৯/১১ কি একই সূত্রে গাঁথা?

                                                                                              - মুহাম্মাদ আলী রেজা

ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করে সাড়া জাগানো আলোচিত ওয়েবসাইট ‘উইকিলিকস’ প্যারিসে হামলার জন্য আমেরিকা ও তার মিত্রদের অভিযুক্ত করেছে। অনলাইনে এক টুইট বার্তায় আরো বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও লিবিয়ায় চরমপন্থীদের অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়ার ফল এটি। পরের দিন আর এক টুইট বার্তায় ওয়েব সাইটটি বলে, প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক নিহত হয়েছে। অন্য দিকে ইরাক ও সিরিয়ায় দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এই দুই মৃত্যুর সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যে উগ্রপন্থীদের প্রতিপালন করছে তার সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে।
প্যারিসে একযোগে ছয়টি স্থানে হামলা। এতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় প্যারিস। ১২৮ জন নিহত ও কয়েক শ’ মানুষ আহত হয়। ইসলামি স্টেটের ছদ্মাবরণে এই যে ভয়াল তাণ্ডব, প্রশ্ন ওঠে আইএসের এ ভয়ঙ্কর রূপের সাথে এক হাজার ৩০০ বছরের ইসলামি সভ্যতা ও জগতের সাথে কোনো ধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়! নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ এবং হত্যার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সরব হয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ইমাম (বিবিসি)।
‘ইতঃপূর্বে আমি বলেছি ৯/১১ হামলায় আমি জড়িত নই। মুসলিম হিসেবে আমি যথাসম্ভব মিথ্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। বিশ্ব বাণিজ্য-কেন্দ্রে হামলার ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না। তা ছাড়া নিরীহ মহিলা, শিশু ও অন্য লোকজনের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোর নির্দেশ আছে ইসলামের। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও এ নীতি প্রযোজ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই মহিলা, শিশু ও সাধারণ মানুষের সাথে সব ধরনের দুর্ব্যবহার করে যাচ্ছে।’
(পাকিস্তানি দৈনিক উম্মতের (করাচি) সাথে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে সাক্ষাৎকারে ওসামা বিন লাদেন।) প্রকৃত প্রস্তাবে নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার জন্য লেলিয়ে দিয়ে দুনিয়ার সব মুসলিম উম্মতের গায়ে আইএস বর্বরতার মোহর দেয়ার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠী।
প্রকৃত পক্ষে প্যারিসে যে বর্বরতা ঘটানো হয়েছে সেই একই চিত্র ফুটে উঠেছিল বুশের ৯/১১ নাটক মঞ্চস্থে। ৯/১১ ভয়াল সন্ত্রাসী হামলার এক দশক পূর্তিতে বিবিসি, রয়টার ও এএফপি পরিবেশিত সংবাদ হচ্ছে- ‘আসলে কী ঘটেছিল ২০০১ সালের এ দিনে? সত্যিই কী আল কায়েদা সে দিন মার্কিন শৈর্যে আঘাত হেনেছিল নাকি সবই পাতানো। সে প্রশ্ন রয়ে গেছে অনেকের কাছে।’
প্রেসিডেন্ট ডব্লিউ বুশকে কেন ৯/১১ নাটক মঞ্চস্থ করতে বিশ্ববাসী দেখল, আর কেনই বা তিনি এ পথ বেছে নিয়েছিলেন?
জন্মলগ্ন থেকেই য্ক্তুরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন ও রাজনীতি ইহুদিলবি প্রভাবিত এবং বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত। বুশ যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন সে সময় বড় ধরনের এক অঘটন ঘটে যায়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আলগোর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কট্টর ইহুদি লিবারম্যানকে মনোনীত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন অখ্রিষ্টান প্রার্থী হন। নিশ্চিতভাবে আমেরিকান ইহুদিদের সব ভোট আলগোরের পাল্লায় যাচ্ছে আর এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার একটি মাত্র পথ অবশিষ্ট ছিল- ইহুদিদের ভোটের বিপরীতে সব আমেরিকান মুসলিমদের ভোট। আর ঠিক এই সময়ে হোয়াইট হাউসে চাঁদ-তারা পতাকা ওঠানো হয়েছে। স্বাধীনতার পর হোয়াইট হাউজে খ্রিষ্টান ও ইহুদি এই দুই ধর্মের পতাকা উড়ত। কারণ তারা সংখ্যায় অনেক ছিল। দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে ইহুদিদের সংখ্যা টপকিয়ে যায় মুসলমানেরা। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয় এখন থেকে তিন ধর্মের পতাকা উড়বে হোয়াইট হাউসে। ওই সময় মিডিয়ায় সাড়া জাগিয়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত বেড়ে চলা ধর্ম ইসলাম। জাস হপকিন্স যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়। বাল্টিমোরে এর দুইটি ক্যাম্পাস। আমি হোম উড ক্যাম্পাসে গবেষণা করছি। এখানে লাইব্রেরির বেসমেন্টের দেয়ালে একটি নিউজ আমার দৃষ্টিতে আসে। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করছেন। বাইরে এসে পরে জানতে পারি পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন। 'Daughters of Another Path' নামে একটি বই হাতে পাই। দেখতে পাই এই বইটিতে ফুটে উঠেছে আমেরিকান রমণীদের ইসলাম গ্রহণের কথামালা। বইটি এত জনপ্রিয় যে, সাথে সাথে ফ্রেঞ্চ ভাষায় ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত হয়। ইন্টারনেটে একটি মেয়ে লিখেছে- ‘বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি। এ তো আমারই কথা। প্রথমে আব্বা আম্মাকে পড়তে দিয়ে বলি, এ বইতে পাবে, কেন আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছি।’ বইটি আমার এত ভালো লেগেছিল যে ঠিক করলাম অনুবাদ করব। এসে দেখি ২০০০ সালেই বইটি বাংলায় ঢাকা থেকে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইট। বইটিতে আছে আমেরিকান মেয়েরা কেন পরিত্যাগ করছে তাদের এত দিনকার খ্রিষ্টীয় পরিবেশ আর পছন্দ করছে ইসলামকে। যে ধর্মে আছে শৃঙ্খলা, আত্মসমর্পণ ও ভিন্নরূপ হওয়ার বিধান।
আমেরিকায় দ্রুত বেড়ে চলা ধর্ম হওয়ায় মুসলমানদেরকে সমাজে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে বা কোণঠাসা করার মানসে আইনে প্রয়োগ করা হয় Secret evidence। এই গোপনীয়তার সুযোগ নিয়ে মুসলমানদের জেলে ঢোকান হতো। আর এই Secret evidence-এর প্রয়োগ শুধু মুসলমানদের ক্ষেত্রেই দেখা যেত। এখানকার সব আমেরিকান মুসলিমদের একমাত্র দাবি ছিল এটির অবসান। বুশের নির্বাচনে জেতার জন্য দরকার ছিল মুসলিম ভোট। তিনি এই সুযোগটি কাজে লাগান। আলগোরের সাথে নির্বাচনী বিতর্কে তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিক্রেট এভিডেন্সকে তিনি Discriminitory (পক্ষপাত/ বৈষম্যমূলক) মনে করেন। আলগোর জবাবে বললেন, তিনি তা মনে করেন না। বাস্তবে ঐতিহাসিকভাবে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জাতীয় নির্বাচনী বিতর্কে মুসলমানদের পক্ষে কথা বললেন। তার বিনিময়ে আমেরিকান মুসলমানেরা এক জোট হয়ে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে বুশের পক্ষ নেন। দরজায় কড়া নেড়ে শেষে ইহুদি লবির বিপরীতে বুশকে বিজয়ী করেন। আগে মুসলমানেরা ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে ভোট দিতেন; জোটবদ্ধভাবে এক পাল্লায় এবারই প্রথম। নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ইনভেস্টরস ডেইলি এক নিবন্ধে মন্তব্য করে আমেরিকান মুসলমানদের জন্য এটা বিজয়ের চেয়ে বেশি ছিল। মসজিদে এটি বিতরণ হচ্ছিল যার একটি আমি পাই।
মুসলিম আমেরিকান ভোটে বিজয়ী বুশ উপলব্ধি করলেন- এভাবে চললে একদিন মুসলমানেরা ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট ব্যাংকই মূল ক্ষমতা। দ্রুত বেড়ে ওঠা ধর্ম ইসলামকে ঠেকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।
ডেভিড গোল্ডস্টেইন কানাডার মন্ট্রিল থেকে প্রকাশিত ‘দ্য গেজেট’ পত্রিকায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য খোদ বুশকে দায়ী করে বিন লাদেনকে বেকসুর খালাস দিয়ে বাস্তবসম্মত যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন- এ কাজ বিন লাদেনকে দিয়ে সম্ভব নয়।’ বুশের অনেক উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি ইসলামকে নির্মূল করা। আর সে কারণে তার প্রথম ভাষণে ক্রুসেডের ডাক দিয়েছিলেন।
হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা চার্লিশি বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসন টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগন ভবনে ৯/১১ এর তাণ্ডব চালিয়েছে। ২০ মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘ্য এক চলচ্চিত্রে এই হামলার অষ্টম বার্ষিকীর প্রাক্কালে এ দাবি করেন। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ও সোচ্চার হওয়ার জন্য মার্কিন জনগণের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মতে ৯/১১ এর ঘটনা ছিল একটি ষড়যন্ত্র। বিশ্বের মানুষকে এ ঘটনা দিয়ে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। বিমানের যাত্রী ও ক্রুদের মৃতদেহ পাওয়া গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের অবশ্যই শনাক্ত করা হতো।
জাতিসঙ্ঘের ৬৫তম অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনিজাদ বলেন- ৯/১১ একটি মিথ্যা ঘটনা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম অজুহাত। এ হামলা ছিল গোয়েন্দা সংস্থার জটিল দৃশ্যকল্প ও কর্মকাণ্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন জেন্সের নেতৃত্বে ৭৫ জন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর অভিযোগ- নিউ ইয়র্ক ও পেন্টাগনে হামলা যাত্রীবাহী বিমানের নয়। এটা ছিল ভেতর থেকেই সংঘটিত। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে অধ্যাপক স্টিভেন বলেন, আফগান গুহায় বসে কিছু লোক এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের এ তত্ত্বকে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। টুইন টাওয়ারের ধ্বংস্তূপ পরীক্ষায় নিশ্চিত প্রমাণ মিলেছে ভবন ধসিয়ে দেয়ার বিস্ফোরক ব্যবহারের।
লেখক : জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক
- See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/77901#sthash.moVkKRBw.dpuf

No comments:

Post a Comment